তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-০৩

0
588

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৩)

তুহা দৌড়ে গিয়ে সামনে থাকা মানুষটা জড়িয়ে ধরলো। মাঠে থাকা উপস্থিত সকলেই ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।

-কেমন আছো। আজকে হুট করেই আসলে।

তুহা একনাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তুহা মানুষটার সামনে তুড়ি বাজাতেই তার ধ্যান ভেঙে গেলো। ধ্যান ফিরতেই তুহার দিকে তাকিয়ে বললো…
– বল।
– কখন থেকে তো বলছি তুমি তো হারিয়ে গিয়েছিলে।
– হারাই নি একটা কথা ভাবছিলাম।
– কি?
– তোকে নিয়ে আজ ঘুরবো।
– সত্যি।
– হুম।

তুহা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। অন্যদিকে কেউ একজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুহার দিকে।মেধাকে দূর থেকে ইশারা করে ডাকলো ফারাবি।মেধা কাছে যেতেই জিজ্ঞাসা করল..
– ছেলেটা কে?
– কোন ছেলেটা?
– তুহা যাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। ( দাঁতে দাঁত চেপে)
– ও ওটা তো তুহার ফুফাতো ভাই মেহতাব।

ফারাবির মুখটা লাল হয়ে গেলো। ও মেহতাব কে খুব ভালো করেই চেনে। মেধা ফারাবির মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বিরবির করলো।

মেহতাব খানম। তুহার ফুফাতো ভাই। মেহতাবরা দুইভাই এক বোন। ও সবার বড়ো, ও পড়াশোনা শেষ করে পারিবারিক ব্যবসায় অংশগ্রহণ করেছে।

তুহা মেহতাবের সাথে সারাদিন ঘুরে বাড়ি ফিরে দেখলো ফারাবি আগে থেকেই উপস্থিত আছে ওখানে। তুহা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মাকে ডাকতে লাগলো…
– মা মা একবার বাইরে এসো দ্যাখো কে এসেছে।
– কিরে চেঁচামেচি করছিস কেন।

বাইরে এসে খুশি হয়ে গেলেন..
-আরে মেহতাব বাবা কেমন আছো।
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো মামিমনি তুমি কেমন আছো।
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কতদিন পরে আসলে এতদিনে মনে পড়লো আমাকে।
– তোমাকে তো আমার প্রতিদিন মনেই পরে। কিন্তু জানো তো এতটা বিজি থাকি।
– মা তোমার ননদের ছেলে তো খুব বিজি একবারো আমার কথা মনেই করেনা।
– আমার তুহারানিকে কি আমি ভুলতে পারি বল। কিন্তু তোর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়না কিছু মনে করিস না এবার থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করবো খুশি তো।
– হুম খুব খুশি।

মেহতাব আর তুহার কথাবার্তা শুনে মিহা বিরক্ত মুখে বিরবির করে বললো..
-আমি বুঝি না দিভাই ওই মেহতাবের মাঝে কি পাই। আর ওই ছেলেও এলেই দিভাই এর সাথে চিপকে থাকে মনে হয় মাথা ফাটিয়ে দিই। ওর তুলনায় আমার হ্যান্ডসাম কত সুন্দর কিন্তু ওতো হ্যান্ডসামকে সহ্য করতেই পারে না অসহ্য।

মেহতাব আর তুহা দুজন বকবক করেই যাচ্ছে। পাশে যে ফারাবি বসে আছে তার খেয়ালই নেয়। ফারাবির মুখটা কেমন হয়ে আছে তুহার মা সেটা খেয়াল করে বললো..
-আরে ফারাবি তুই বাবা চুপচাপ বসে আছিস কেন। ওদের সাথে কথা বল না।
– না মামনি আমার বের হতে হবে আমি গেলাম।
– কিছু খেয়ে যাবি না বাবা।
– না অন্য একদিন খাবো। তবে আমার মিহার সাথে কিছু কথা আছে মিহা এখানে আয় তো।
– ওকে হ্যান্ডসাম।

মিহা আর ফারাবি ভেতরের ঘরে চলে যায়। তুহা একবার বাঁকা চোখে তাকিয়ে মেহতাবের সাথে কথা বলতে শুরু করে দেয়।

মিহা খুশি হয়ে বললো..
-কি বলবে হ্যান্ডসাম।
-কিছু না মিহা।
-অ্যা
-হুম,এই নে তোর চকলেট আমি গেলাম।

মিহার হাতে চকলেট দিয়ে চলে গেলো ফারাবি। মিহা একবার চকলেটের দিকে আর একবার ফারাবির যাবার দিকে তাকিয়ে আছে। কি হলো কিছুই বোধগম্য হলো না।

ফারাবি ঘর থেকে বের হয়ে যেতেই তুহা গটগট করে হেঁটে ঘরে আসলো। মিহার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো…
– কি বললো তোকে।

মিহা আচমকা তুহার এই প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে তুহার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে কি বললো। তুহা মিহার মাথায় একটা চাঁটি মেরে বললো..
-ওই বলবি তো ওই ফারাবি তোকে কি বললো।

মিহা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে তুহার দিকে। তার দিভাই তাকে ফারাবির বিষয়ে বলতে বলছে বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু সত্যি টা তো বললে হবে না।
-এখন যদি আমি দিভাইকে বলি হ্যান্ডসাম আমাকে কিছুই বলেনি তাহলে দিভাই আমাকে নিয়ে মজা করবে তার থেকে ভালো বলবোই না।(মনে মনে)

নিজের মনে কিছুক্ষন বিরবির করে তুহার দিকে তাকিয়ে বলল…
– তোকে বলবো কেন আমার হ্যান্ডসাম আমাকে কি বলেছে। আর তুই এত জানার জন্য আগ্রহী কেন সর এখান থেকে।

তুহা কিছু বলতে যাবে তার আগে ওর চোখ পড়লো মিহার হাতে থাকা চকলেটের দিকে। তুহা মিহার হাতে থেকে চকলেটটা নিয়ে বললো…
-যেমন বলবি না তেমন চকলেট ও পাবি না। আর এটা তো আমার পছন্দের চকলেট তাই আশা ছেড়ে দাও সোনা
– আরে ওটা তো হ্যান্ডসাম আমাকে দিয়েছে তোর অপছন্দের মানুষ দিয়েছে।
– তাতে কি হয়েছে। পছন্দের জিনিস তো তাই তুই ওটা পাবি না,আমি গেলাম বাই বাই।

তুহা চলে গেলো। সবকিছূই মিহার মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো। ফারাবি ডেকে এনে কিছু না বলে চকলেট দিয়ে চলে গেলো আর তুহা রাগ দেখিয়ে চকলেট নিয়ে চলে গেলো হচ্ছেটা কি?

– কিরে মিহা তুহা কোথায় গেলো।
– জানি না।

মিহা ওখান থেকে চলে গেলো মেহতাব হাঁ করে তাকিয়ে রইল।

রাতে মেহতাব এই বাড়িতেই ছিলো। তুহার বাবা মেহতাবকে খুব পছন্দ করেন। মিহা এখনো শকে আছে। তুহা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেয়ে চলে গেলো।

পরেরদিন…

তুহা কলেজে যেতেই মেধা ওকে ঘিরে ধরলো।ভ্রু কুঁচকে বললো….
– ওই কালকে নাচতে নাচতে তো মেহতাব দার সাথে চলে গেলি একবার ও বললি না।
– আরে মেহতাব দাকে দেখে প্রচুর পরিমাণে এক্সাইটিং ছিলাম তাই আর কিছুই মনে ছিলো না।
– তুই কি ওই মেহতাব কে পছন্দ করিস নাকি।
– আরে না সেরকম কিছুই না।
– আমার সন্দেহ হয় তোকে। তুই মনে হয় কাউকে লাইক করিস।
– করি তো আমার গোপন প্রেমিক পুরুষকে ( মনে মনে)
– কি হলো বল।
– ধ্যাত ওইসব বাদ দে বল।
– দিভাই এর বিয়ের কথা চলছে খুব তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে যাবে।
– সত্যি
– হুম
– কি মজা একটা বিয়ে খাবো।

মেধা আর তুহা দুজনেই খুশি হয়ে গেলো। খুশি এসে ওদের পাশে দাঁড়িয়ে বললো…

-কিরে কিসের জন্য এতটা খুশি।
-আরে খুশি কোথায় ছিলি এতক্ষন।
-এই আসলাম। বল কি কথা হচ্ছিলো।
– তিশা দির বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়ে গেছে তাই।
– এটা তো সত্যি খুব ভালো কথা।
– হুম।

কিছুক্ষন কথা বলে, ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো, ফারাবির ক্লাস ছিলো। সবাই চুপচাপ বসে আছে। ফারাবি ক্লাসে ডুকে বললো…

-গুড মর্নিং স্টুডেন্ট।

ফারাবির গলা শুনে তুহা সামনে তাকিয়ে থমকে গেলো। ফারাবির চোখ মুখগুলো ফ্যাকাশে লাগছে। মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমায় নি। তুহার মনের ভেতরে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে..
– উনি কি সারারাত ঘুমায় নি!

সারাটা ক্লাস ফারাবি চুপচাপ ছিলো পড়া দিয়ে গেছে কোনো কথা বলেনি এমন কি তুহার দিকে একবার ও তাকাই নি।

ক্লাস শেষ হতেই ফারাবি চলে যায়। তুহা অন্যমনস্ক হয়ে যায়। মেধা ওকে ধাক্কা দিয়ে বললো..
-কি হয়েছে।
– উনাকে দেখেছিস।
– কাকে দাদাইকে
– হুম
– হুম কেন?
– কিছু না। আমি আসছি।

তুহা ক্লাস থেকে বেরিয়ে সোজা ফারাবির কেবিনের দিকে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লে।

-কাম ইন।

তুহা দরজা ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখলো। ফারাবি মাথা নীচু করে বসে আছে। তুহা মৃদু স্বরে বলল..
– কি হয়েছে আপনার।

ফারাবি তুহার গলা শুনে চমকে সামনে তাকিয়ে দেখলো সত্যি তুহা এসেছে। ফারাবির মুখটা লাল হয়ে গেল।কিছুটা রাগ নিয়ে বললো…
-তুই কেন এখানে এসেছিস।
– আপনার কি হয়েছে,আপনাকে এইরকম লাগছে কেন।

ফারাবি তুহার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে কিছু বললো। তারপরে তুহার দিকে তাকিয়ে বলল…

#চলবে…