তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-০৪

0
522

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৪)

ফারাবি নিজের মনে কিছু একটা বিরবির করে তারপরে বললো..
– তুই কেন এখানে এসেছিস?
– আপনাকে ওইরকম লাগছে কেন আপনার কি হয়েছে?

তুহার কথা শুনে ফারাবি মাথা তুলে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল…
– এতটা ভালো করে খেয়াল‌ করেছিস আমাকে?

কথাটা শুনে বিশাল রাগ হলো তুহার। এমনিতেই জানতে এসেছে সেটা বড়ো কথা নয়, আর উনি ফাজলামি করতে ব্যস্ত।
– আপনার সাথে কথা বলাই বেকার আমি গেলাম।

তুহা বেড়িয়ে যেতে যাবে তার আগেই ফারাবি ওর হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
– কি হলো আমাকে এইভাবে আটকে রেখেছেন কেন?
– তোর সাহস খুব বেড়ে গেছে তাই না।
– কেন কি করলাম আমি।
– মেহতাবের সাথে তোর এত কি কথা?
– মেহতাব দা আমার কাজিন তাই কথা বলতে পারি।
– শুধু কাজিন না অন্য কিছু।
– মানে?
– মানে এটাই তুই কি মেহতাব কে পছন্দ করিস।
– আমার মাথা এতটাও খারাপ হয়ে যায়নি আমি কাজিনকে পছন্দ করবো। আর করলেও আপনাকে কেন বলবো।

তুহা রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। ফারাবি তুহার যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। তুহার রাগ আকাশ ছোঁয়া। না পারছে সহ্য করতে আর না পারছে কিছু বলতে।তুহাকে রাগে ফুলতে দেখে মেধা বললো..
-আবার ঝামেলা করেছিস দাদাই এর সাথে।
-ওই আমাকে কিছু বলবি না আমি শুধু জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু উনি তো আমাকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিলেন।
-আমি তোদের ব্যাপার স্যাপার কিছুই বুঝি না।

অন্যদিকে…
-মা আমি আর কতদিন আমার তাহু পাখিকে ছাড়া থাকবো। আমার যে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,ওকে হারিয়ে ফেলার ভয়টা তীব্রতর হচ্ছে। আমি কিভাবে এইসব থেকে মুক্তি পাবো মা প্লিজ আমার তাহুপাখিকে আমার কাছে এনে দাও না।

কাঁদো কাঁদো গলায় প্রেমিক পুরুষ তার মায়ের কাছে কথা গুলো বললো। ওনার কথা গুলো শুনে ওনার মা কাপড়ে মুখ গুঁজে বললো…
-বাবা সবকিছুই তো বিধাতার লিখন। তোর তাহু পাখি যদি তোর হয়ে থাকে তাহলে একদিন তোর কাছে ফিরে আসবেই আর তোর ভালোবাসাই ধরা দেবে অপেক্ষা কর।

ওনার মা ওখান থেকে চলে যায়। তুহার ছবিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে বললো…
-আচ্ছা তাহুপাখি তুমি অন্য কারোর মায়ায় পড়ে যাবে না তো। আর যদি পরে যাও তখন।আমি যে তোমার সুখের জন্য সবকিছু করতে পারবো কিন্তু আমার জীবনের সুখটাই যে হারিয়ে যাবে🥺

২ সপ্তাহ পর..

বাড়িতে একটা আমেজের সৃষ্টি হয়েছে। পরশুদিন মেধার দিদির এনগেজমেন্ট। তুহা,মেধা,মিহা আর কুহু তো লাফালাফি করতে ব্যস্ত। তাদের খুব আনন্দ হচ্ছে কথার বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গেছে খুব একটা আনন্দ করতে পারেনি তিশার বিয়েতে সবাই আনন্দ করবে সবাই খুব এক্সাইটিং।

তুহাকে আর মিহাকে মেধা আনতে এসেছে ওদের বাড়ি যাবার জন্য।তুহা ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাবার কাছে এসে বললো…
-বাবা আমি মেধাদের বাড়ি যাচ্ছি।
-সাবধানে যেও। আর একটা কথা ..
-কি?
– ওই ফারাবির থেকে দূরে থেকো। ওকে আমার পছন্দ নয় তাই ওর সাথে কোনো রকমের মেলামেশা করো না।

তুহা মনে মনে একটু চমকালো। বিষয়টা নতুন না। ফারাবি দেশে ছিলো না এতবছর যেদিন আবার ফিরে এসেছিলো সেদিন তুহার মা,মিহা ওই বাড়িতে গেলেও তুহা যাবার পারমিশন পাইনি। কখনোই একা একা মামার বাড়িতে থাকার অনুমতি পাইনি। কিন্তু কখনোই মেধাদের বাড়ি যাওয়া নিয়ে কিছুই বলতো না। কারনটা তুহার কাছে অজানা। কি রহস্য লুকিয়ে আছে তার বাবা ও মামার মাঝে,সেটা এখনো উদঘাটন করতে পারেনি।

তুহা বাবার কথায় সায় দিয়ে,মা ওহ বাবাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। ওর বাবা মা এনগেজমেন্টের দিন সকালে যাবে। কিন্তু ওরা দুই বোন না গেলে হয় তাই আগে থেকেই চলে যাচ্ছে।

মেধার বাড়ি পৌঁছেই তুহা ওর মামনি অর্থাৎ মেধার মাকে জড়িয়ে ধরলো।
-কেমন আছো মামনি।
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছিস মা।
– আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
– তোর মা কবে আসবে।
– রবিবারদিন সকলেই আসবে।
– আচ্ছা। তোরা বস আমি খাবারের ব্যবস্থা করি।

মেধার মা রান্নাঘরে চলে গেলেন। তুহা চুপচাপ বসে থাকবে এটা কিভাবে হতে পারে তাই চুপিচুপি তিশার ঘরে গেলো,তিশা ওর হবু বরের সাথে কথা বলছে বিছানায় বসে বসে। তুহা পেছন থেকে গিয়ে..
-ভাওওওওও

আচমকা হকচকিয়ে গিয়ে তিশা ফোন ফেলে দিলে বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকলো। ওইদিকে তুহা তো হাসতে হাসতে শেষ। তিশা রাগ দেখিয়ে বললো…
– তুহা রানি এটা কি ধরনের মজা আর একটু হলেই তো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো তো।
– আরে দিভাই এতটা সহজে তোমার কিছু হলে হয় নাকি,,তাহলে যে বিয়েটাই খেতে পারবো না। কলে কে ছিলো।
– তোর জিজু।
– সত্যি ( উৎফুল্ল হয়ে)
– হুম।

তুহা ফোনটা তুলে নিয়ে অয়ন ( তিশার হবু বর) এর সাথে ফোনালাপ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তিশা তুহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তুহা হেসে হেসে কথা বলছে অয়নের সাথে পেছন থেকে কেউ একজন গম্ভীর স্বরে বলল…
-কি হচ্ছে এখানে।

তুহা আর তিশা পেছনে তাকিয়ে দেখলো দ্যা গ্রেট ফারাবি দাঁড়িয়ে আছে।তুহা ফোনটা তিশার হাতে দিয়ে বললো..
– এই আপনি এখানে কি করছেন?

তুহার এমন প্রশ্নে ফারাবি প্রথমে ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে তারপরে হাসতে লাগলো…
– এই আপনি পাগলের মতো হাসছেন কেন। এই দিভাই রাঁচিতে একটা সিট বুক করতে বল জিজুকে।

তুহার এমন কথা শুনে ফারাবি হাসি বন্ধ করে দিয়ে তুহার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর লুকে চলে গিয়ে বললো…
– ম্যাম আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন এটা যেমন আপনার মামনির বাড়ি ঠিক তেমনি এটা আমার বড়ো মনির বাড়ি। আর সবথেকে বড়ো কথা হলো এই বিয়ের এনগেজমেন্টের সবকিছুর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমার উপরে তাই আমি না থাকলে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন হবেই না।
– এতটাও ভাব নেবার কিছু নেয়। এই দায়িত্ব তো আমাকে দিলে আমিও পারবো।
– তাই নাকি( বাঁকা হেসে)
– হুম
– ওকে তোকে আমি সবকিছুর নয় শুধুমাত্র একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। পরশু এনগেজমেন্টের সমস্ত আয়োজন তুই করবি এটাই করে দ্যাখা আর যদি কোনো গন্ডগোল হয়েছে তো তাহলে তূই শেষ।

ফারাবি কথাটা বলেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেলো। তুহা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। ফারাবিকে রাগানোর জন্য কথাটা বলেছিলো ওহ যে সত্যি সত্যি দায়িত্ব দিয়ে দেবে এটা ধারনার বাইরে ছিলো। তিশা ফোন কেটে দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন তুহা একটা ধাক্কা দিয়ে বললো…
-এই দিভাই বল না কি করবো আমি এখন।
-আরে তুহা রানি তোর কিসের চিন্তা।
-চিন্তা হবে না এতকিছুর দায়িত্ব কিভাবে পালন করবো আমি।
-চিন্তা করিস না জানু। তুই শুধু আল্লাহর নাম নিয়ে চালু করে দে ইনশাআল্লাহ সবকিছু ঠিক হবে।
-বলছো।
-হুম।
-ওকে। আমি তাহলে মেধার সাথে প্ল্যান করে নিই।

তুহা ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তুহার যাবার দিকে তাকিয়ে তিশা মনে মনে বললো…
— তুহা রানি তোর প্রেমিক পুরুষ থাকতে তুই ভাবলি কিভাবে তোকে সবার সামনে সে অপমান হতে দেবে। দাদাই তোর উপরে রাগ করে দায়িত্ব দিয়েছে,আর তোর প্রেমিক পুরুষ তোকে ওই দায়িত্ব থেকে উদ্ধার করবে। অপেক্ষা কর শুধু। আল্লাহ আমার বোনটাকে ভালো রেখো ওদের ভালোবাসা মিলিয়ে দিয়ো।

#চলবে….