তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-০৭

0
389

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

#বোনাস_পার্ট (পর্ব_৭)

ফারাবি কথাটা এগিয়ে যেতে বললো…
– দ্যাখ আমি তোকে হোয়াটসঅ্যাপ এ সবকিছু পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুই দেখে নিয়ে বল পছন্দ হয়েছে কিনা।
– ওকে।

তুহা ফারাবির পাঠানো ছবিগুলো দেখলো, সত্যি খুব সুন্দর। কিছুক্ষন পর আবার ফারাবি কল করে ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিলো কলটা।

তিশার বিয়ের আয়োজন খুব দমে চলছে। বিয়ের আর মাত্র ১ সপ্তাহ বাকি আছে। কেনাকাটা আয়োজন সবকিছুই জোড় কদমে চলছে।

সব বোনগুলো একসাথে কনফারেন্স কলে আছে। কথা তিশাকে বললো…
– তিশা বিয়েতে কি পড়বি লেহেঙ্গা না শাড়ি।
– ভাবছি ওটাই বলো না তুমি।

সকলেই সবার মতো নিজের পছন্দ বলছে। তুহা সবার কথাতে কান না দিয়ে বললো…
– আমি বলবো শাড়িটাই বেস্ট হবে। কারন বাঙালি বিয়ে মানেই শাড়ি। শাড়িটা আমাদের ঐতিহ্য, আধুনিক স্টাইলের লেহেঙ্গা না পড়ে শাড়ি পড়েই বিয়ে করা ভালো।

তুহার কথাতে সকলেই সহমত হয়ে যায়। ওদের সব কথায় শুনেছিলো কাব্য আর ফারাবি। তবে ওরা ওখানেই আছে যে কথাটা তিশা,মেধা,তুহা আর মিহা জানে না। তুহার কথা শুনে কাব্য ফিসফিস করে ফারাবিকে বললো….
-দাভাই দেখেছিস আমাদের তুহাটা কতটা বড়ো হয়ে গেছে। কিভাবে কি সুন্দর করে কথাটা বললো। আমার না ওকে কি কিউট লাগে। মনে হয় টাস করে একটা কিস দিয়ে দিই।

কথাটা বলেই জিভ কাটলো কাব্য। ফারাবির দিকে তাকিয়ে দেখলো ফারাবি রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ফারাবি কাব্যকে কিছুই না বলে চুপ করে উঠে চলে গেলো।কাব্য মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

পরেরদিন…

আজকে সকলে মিলে বিয়ের শপিং করতে যাবে।সকলে বলতে বোনগুলো তার সাথে ফারাবি,কাব্য, মেধার মা আর ওইদিক থেকে অয়ন আসবে।যেহেতু এতগুলো মানুষ তাই দুটো‌ গাড়ি নিয়েছে।

একটা ড্রাইভার ড্রাইভ করবে আর একটা ফারাবি। প্রথম গাড়িতে কাব্য, মেধার মা,তিশা,কথা। আর দ্বিতীয় গাড়িতে ফারাবি,মেধা,কুহু,মিহা আর তুহা দুটো গাড়ির মাঝে দাঁড়িয়ে ভাবছে কোথায় বসবে। তুহাকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারাবি লাগালো‌ এক ধমক..
– এই যে ম্যাডাম আমরা কি চলে যাবো। না আপনার জন্য আজকে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো সারাদিন।
– যাচ্ছি।

তুহা কাঁচুমাচু হয়ে এসে দেখলো পেছনের তিনটে সিট বুকিং খালি আছে‌ শুধু ফারাবির পাশের সিটটা। তুহা ফারাবির আর ধমক খেতে চাই না তাই চুপচাপ বসে পড়লো। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে ফারাবি বললো…
– সিটবেল্টটা বেঁধে নে।

সারারাস্তা সকলে বকবক করলেও তুহা আর ফারাবি চুপ ছিলো।‌তুহার রাগ হয়েছে ওদের উপরে ওরা কিভাবে পারলো ওই পাষানের কাছে একাকে‌ রেখে চলে যেতে। তুহা ফোন টিপছে।

শপিং মলে এসে দেখলো অয়ন এসেছে। অয়নের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে তুহার মুখে হাসি ফুটলো।

– হাই তুমি এখানে।
– চলে এলাম কি করবো বল।
– ভালোই করেছো।

ফারাবী একটা রাগী লুক নিয়ে মেহতাবের দিকে তাকালো। শপিং মলে সারাটা ক্ষন ধরে তুহা মেহতাবের সাথে আছে। অনেকক্ষন ধরে মিহা ওদেরকে দেখছে। মেধা ওকে খোঁচা দিয়ে বললো…
– মিহু কি দেখছিস।
– দেখছি ওই বজ্জাতটা দিভাই এর সাথে কিভাবে আঠার মতো লেগে আছে।
– কেন তোর জ্বলে নাকি।

মিহা একটা রাগী লুক নিয়ে মেধার দিকে তাকিয়ে বলল…
– আমার জ্বলবে কেন, কিন্তু দিভাই কেন ওকে এতটা পাত্তা দেয় বুঝি না আমি।
– দ্যাখ মনে হয় ভালোবাসে।

মেধা মুচকি হেসে ওখান থেকে চলে যায়। মিহা মেধার বলা কথাটা নিজের মনেই বিরবির করে, ভালোবাসে। মিহার মনে প্রশ্ন‌ জাগে সত্যি কি দিভাই ওই বজ্জাতটাকে ভালোবাসে।

সারাদিন শপিং করে খাওয়া দাওয়া করে সকলেই বাড়ি ফিরে যায়। সবাই খুব টার্য়াড থাকাই ঘুমিয়ে পড়ে।।

রাত্রিবেলা…

– তুহা,মিহা মামনি আমাদের দেখাবি না কি কিনলি।

মিহা সরাসরি বলে দিলো…
-না এখন দেখাবো না যেদিন পড়বো সেদিন দেখে নেবে।

তুহা কিছু না বলে ড্রেসগুলো‌ আনতে গেলো। প্যাকেটগুলো খুলতে গিয়ে হতবাক হয়ে গেলো। ওর পছন্দ করা একটাও ড্রেস নেয় তার বদলে অন্য ড্রেস আছে। তুহার রাগ হচ্ছে খুব, এতটা চেঞ্জ হয়ে গেলো‌ কিভাবে, একটা কাগজের দিকে নজর গেলো তুহার কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে দেখলো কম্পিউটার টাইপিং করা একটা চিঠি।

প্রিয় তাহুপাখি,

রাগ করো না সোনা আমার। আমিই তোমার জামা গুলো চেঞ্জ করে দিয়েছি। তুমি যেইগুলো পছন্দ করেছিলে সেগুলোর থেকে এইগুলোতে তোমাকে আরো‌ কিউট লাগবে আমার পাখিকে তাই চেঞ্জ তো করতেই হতো। মন খারাপ না করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জামাগুলো নিজের গায়ে ফেলে দ্যাখো তো ভালো‌ লাগে কিনা। আর যখন ওইগুলো‌ পড়বে তখন না হয় অনুভব করে নিও আমি তোমার পাশে‌ আছি।

ইতি…
তোমার প্রেমিক পুরুষ।

তুহা কেন জানো আর রাগ করতে পারলো না। চুপটি করে একটা ড্রেস তুলে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে ধরলো। সত্যি অসাধারণ লাগছে।‌ তুহা নিজের চোখটা বন্ধ করে তার প্রেমিক পুরুষ কে অনুভব করতে লাগলো। হঠাৎ করেই ঘাড়ে কারোর গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলো। আচমকা এইরকম হওয়াতে তুহা তাড়াতাড়ি চোখটা খুলে দেখলো ঘরের আলো‌ বন্ধ করা।তুহাকে সামনে থাকা মানুষটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো, তুহা ভয়েতে একটা ঢোক গিললো।তখনি কানের কাছে সেই একি কন্ঠস্বর শুনতে পেল।

-তাহু পাখি তোমাকে কাছে পাবার লোভটা যে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই তাহুপাখি কবে আমাকে ভালোবেসে নিজের কাছে টেনে নেবে বলো না। আমি যে আর পারছি না, তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়টা আমার আরো তীব্রতর হচ্ছে। এই তাহুপাখি একবার বলো না ভালোবাসি।

প্রেমিক পুরুষের করুন কন্ঠটা তুহার বুকে ঝড় তুলে দিচ্ছে। তুহা অনুভব করলো ওর ঘাড়ে পানি পড়ছে। বুঝতে পারলো মানুষটার চোখ দিয়েই অশ্রুকণা ঝড়ে পড়েছে। তুহাও চোখ বন্ধ করে নেয়,ওর চোখ দিয়েও পানি পড়ছে। মানুষটা ওকে ছেড়ে চলে যায়। আর ঘরের লাইট অন হয়ে যায়। তুহার কানে করুন কন্ঠে করা আকুতি মিনতি টাই বাজছে। তুহার মনের কোনো প্রশ্ন জাগে..
– আমি কাউকে তো একজনকেই ভালোবাসি। কিন্তু কাকে।

#চলবে…