তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-০৬

0
415

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৬)

অয়নের বাড়ি থেকে লোকজন আস্তে শুরু করেছে। সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আপ্যায়ন করতে। তুহার মামার বাড়ির সকলেই চলে এসেছেন, সবই উপস্থিত থাকলেও তুহার বাবা আসেনি। যদিও বিষয়টা নিয়ে মেধার বাবা একটু রাগারাগি করলেও পরে চুপ করে যান তিনি ভালো করেই জানেন তুহার বাবা বড্ড বেশি জেদি যেটা নিজে ভাববেন সেটাই ঠিক মনে করবেন। তাই আর কিছু বলেন নি।

সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। মেধা তুহাকে খোঁচা দিয়ে বললো..
-ভাবুক রানি দ্যাখ জিজুর ফ্রেন্ডগুলো কি কিউট কিউট। আর দ্যাখ ওই ছেলেটা।

তুহা বিরক্ত হয়ে সামনে তাকিয়ে আর বিরক্ত হতে পারলো না। সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের চার্মিং বয় ফারাবি। ব্ল্যাক পাঞ্জাবিতে একেবারে কিউট সুইট লাগছে‌। তুহা তো হা করে তাকিয়ে আছে। আর অন্যদিকে মেধা বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু তার কিছুই তুহার কানে পৌঁছাচ্ছে বলে মনে হয় না। মেধার ধাক্কাতে তুহার ধ্যান ফিরলো।
– এই ওটা মেহতাব দা না।
– কোথায়।

তুহা সামনে তাকিয়ে দেখলো হ্যা সত্যি মেহতাব। কিন্তু এখানে কেন? মেহতাব তুহাকে দেখতে পেয়েই একটা কিউট স্মাইল দিয়ে তুহার কাছে এগিয়ে এসে বলল…
– কেমন আছিস
– ভালো কিন্তু তুমি এখানে।
– আমি অয়নের ফ্রেন্ড। তাই এখানে উপস্থিত আছি কেন খুশি হসনি আমাকে দেখে
– আরে না সেরকম কিছুই না।

তুহা আর মেহতাব কথা বলছে। এর মাঝেই মেহতাব বললো..
– তুহা রানি তোকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে।
– থ্যাঙ্ক ইউ আর তোমাকেই খুব সুন্দর লাগছে।
– থ্যাঙ্কু তুহা রানি (তুহার নাকটা ধরে)

তুহা মেহতাবের এমন কাজে হেসে দিলো কিন্তু কেউ একজন দূর থেকে এসব দেখে রাগে ফেটে পড়লো। রাগে গজগজ করতে করতে বিরবির করে বললো…
-আমার জিনিসে হাত দেবার সাহস আমি কাউকে দিইনি। ওই ছেলের আগে তাহুপাখি শাস্তি পাবে তৈরি হও তাহু পাখি শাস্তির জন্য।

ওইদিকে ফারাবি খুব ব্যস্ত,, দম ফেলার সময় পাচ্ছে, সকলকে আপ্যায়ন করতে করতে ওর অবস্থা দফারফা। ভীড় একটু হালকা হতেই ফারাবি আর কাব্য চেয়ার টেনে বসে পড়লো। কাব্য মুখ কুঁচকে বললো…
– দাদাই আমার মনে হয় এই আপ্যায়ন করার থেকে বিজনেস সামলানো অনেক সহজ।
– অতিথি আপ্যায়ন করাও একটা আর্ট জানিস। মানুষের চরিত্র প্রকাশ পাই তার ব্যবহারে,সুন্দর ব্যবহার একটা মানুষের সৌন্দর্য কে কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। মানুষ তোকে শ্রদ্ধা করবে,সম্মান করবে সবকিছুই তোর ব্যবহার দেখে। আর অতিথি কে কিছু খেতে দিতে নাই পারিস দুটো ভালো কথা বলিস দেখবি তোর প্রতি তাদের সম্মান কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আর আজকে তো আমাদের বোনের এনগেজমেন্ট। আর আজকে যদি আমরা অতিথিদছর আপ্যায়ন না করি ঠিক করে তাহলে বদনাম হবে আমাদের তিশাকে কথা শুনতে হতে পারে পরে। লোকজন একবারই আসবে কিন্তু কথাটা চিরকাল থাকবে। তাই ব্যবহার সবসময় ঠিক রাখা উচিত।

কাব্য মুগ্ধ হয়ে শুনলো ফারাবির কথা। সত্যি ফারাবি একজন আর্দশ মানুষ। সবদিক থেকে উপযুক্ত মানুষ।
-দাদাই সত্যি তোর তুলনা হয় না এইজন্যই তুই সকলের চোখের মনি। তোর শিক্ষা অসাধারণ। আমি গর্বিত তোর মতো ভাই পেয়ে।
-আমি ও গর্বিত তোদের মতো পরিবার পেয়ে।

পুরো কথপকথন সবটাই শুনেছে ফারাবির বাবা। আনন্দে তার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। তার সন্তান সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পেরেছে এর থেকে খুশির আর কি হতে পারে।

সকলের অনুমতি নিয়েই এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে করা হলো। তিশা আর অয়ন তাদের নতুন জীবনের এক ধাপ এগিয়ে গেলো। সকলেই খুব আনন্দিত সবকিছু নিয়ে।

বিয়ের ডেট খুব তাড়াতাড়িই ঠিক হয়ে যায়। শুভ কাজ বেশিদিন ফেলে রাখতে কেউ চাইছে না। মাসের ১৫ তারিখে বিয়ের দিন ঠিক হয় এবং যায়। সকলের মাথায় চিন্তা +আনন্দ ধরা দেয়। অনুষ্ঠান শেষে নিজেদের লোকগুলো আর কেউ বাড়ি ফিরে যায়নি। তুহা কথার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করছে। আর ধৈর্য ধরে থাকতে পারলো না। কথাকে টেনে নিয়ে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। তুহার এমন কাজে সকলে অবাক হলেও কিছু বললো না।

কথা তুহার গালে হাত দিয়ে বললো…
– এইরকম করে টেনে আনলি কেন?
– সত্যি করে বলো তো কি হয়েছে তোমার,তোমাকে কিরকম একটা বি/ভ/ৎ/স লাগছে, এলোমেলো লাগছে কি হয়েছে বলো।

তুহার কথাতে কথা আমতা আমতা করে বলল…
-আরে কি হবে দ্যাখ আমি একদম ঠিক আছি।
– জিজুর সাথে তোমার সবকিছু ঠিক আছে তো।

কথা চুপ করে গিয়ে কিছুক্ষন পরে বললো…
-জানিস তুহা রানি আমাদের জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতি আসে না সঠিক সিদ্ধান্ত কোনটা সেটা নিতেই ভুলে যায়।
-কি হয়েছে আমাকে সবটা বলো
– পারবো না মাফ কর আমাকে। তবে এটা মনে রাখ তোর দিদিভাই ভালো নেয়।

কথা আর কিছু না বলে চলে যায়। তুহা বিছানায় বসে পড়ে। সবকিছুই এলোমেলো লাগছে। মনটা বড্ড অস্থির অস্থির লাগছে। কথার কষ্টটা কি সেটা যে ওকে জানতেই হবে।

কয়েকদিন পর..

বিয়ের জোগাড় করতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।হাতে কয়েকটা দিন আছে মাত্র, সমস্ত কিছুর আয়োজন করতে হবে। তুহা আর ফারাবির হাতে সমস্ত আয়োজন তুলে দিয়েছে।

তুহা কলেজে গিয়ে আড্ডা মারছে। হঠাৎ করেই পিওন এসে বললো..
-তোমাকে যেতে বলেছে ফারাবি স্যার।

পিওন চলে‌ যাবার পর তুহাও ফারাবির কেবিনে যায়। তুহাকে দেখে ফারাবি বললো…
– এই যে ম্যাডাম আপনি তো আমার ফোন,মেসেজ কিছুই দেখেন না।তা আপনার মনে‌ আছে তো আঙ্কেল আপনার হাতে অর্ধেক দায়িত্ব দিয়েছে তা সবকিছু কি করবেন না খালি আড্ডা মারবেন।

ফারাবির ঠান্ডা কথায় বলা অপমান শুনে তুহা চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।
– কি হলো।
– কিছু না বলুন কিভাবে আয়োজন করবেন বলুন।
– কেন তুই তো এনগেজমেন্টে এত সুন্দর আয়োজন করেছিলি এইবারেও প্ল্যান কর‌ সবকিছু।

ফারাবির‌ কথাতে তুহা ঢোক গিললো। কিছুই তো ওহ করেনি এখন কি করবে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বললো…
-যেহেতু আঙ্কেল আমাদের দুজনকে দায়িত্ব দিয়েছে তাই আমরা দুজনেই সবকিছু করবো।
-ওকে। তাহলে দয়া করে নম্বরটা সেভ করে নাও কল করে বলবো সবকিছু।
-ওকে।

তুহা ফারাবির নম্বর নিয়ে দাদাই বলে সেভ করলো। তুহা ওখান থেকে চলে যেতে যাবে তখনি ফারাবি বললো..
– ওই ফোনটা দে একবার।
– কেন?
– দিতে বলেছি তো।

ফারাবি একপ্রকার ফোনটা কেড়ে নিয়ে ফোনটাতে কিছু একটা দেখে কপাল কুঁচকে বললো…
-আমি তোমার দাদাই হয়।
-তবে নয় তো কি।
– ওকে।

ফারাবি কিছু একটা করে ফোনটা ফেরত দিয়ে দিলো। তারপরে বললো..
-বোন ফোনটা রিসিভ করবেন দয়া করে। এবার আসতে পারেন।

তুহা নাক ফুলিয়ে চলে যায়।‌ফারাবি হেসে দিলো তুহার কান্ড দেখে।

রাতে …

তুহা পড়ার টেবিলে বসে বসে ঝুঁকছে। ফোনের রিং হবার শব্দে সোজা হয়ে বসলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ফারাবি লেখা আছে। তুহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।দাদাই থেকে ফারাবি কে করলো। তুহার ভাবনার মাঝেই কলটা কেটে গেলো। পুনরায় কলের রিং হতেই তুহা কানে ফোনটা ধরলো।
-কিরে এত দেরি হলো কেন?
-পড়ছিলাম।
-ওহ পড়া শেষ।
-কি পড়ছি কে জানে।
-কেন
-কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
-আমি পড়াবো তোকে এবার …

কথাটা পুরো করার আগেই ফারাবি চুপ করে গেলো। তুহাও একটা মেকি হাসি দিলো। তুহার বাবা কখনোই এটা হতে দেবেন না।‌ সেটা ওদের দুইজনের জানা। ফারাবি ওদের কলেজ টিচার সেটা তুহার বাবার অজানা তাই হয়তো কলেজে আছে তাহলে কবেই অন্য কলেজে ওর জায়গা হতো। কোনো এক কারনে তুহাকে ফারাবির থেকে সবসময় আলাদা করে রাখেন তুহার বাবা। সবটাই কেমন প্যাচালে, রহস্যজনক সবকিছুই।

#চলবে….