তোমার হাতটি ধরে পর্ব-০৫

0
846

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_৫
#Jechi_Jahan

আমি কোনো রকম দৌড়ে বাড়ীতে আসি আর সোজা রুমে চলে যাই।রুমে এসে দেখি জোবান খাটে বসে আছে।আমি ওনার তোয়াক্কা না করে ওয়াশরুমে চলে যাই।ওয়াশরুমে এসে আমি আমার হাত মুখ ভালো করে ধুতে থাকি।কিছুক্ষণ পর জোবান দরজায় কড়া নাড়ে।আমিও আর দেরি না করে দরজা খুলে দিই।

জোবান-কোথায় গিয়েছিলে???

আমি-বাইরে।(খাটের উপর বসে)

জোবান-আমাকে একা রেখে।(আমার পাশে বসে)

আমি-আপনি ঘুমাচ্ছিলেন।

জোবান-তো,,,জাগাতে পারলে না।

আমি-আমার ইচ্ছে হয়নি।

জোবান-তো এই কথা।(বলে ফোন বের করলো)

আমি-শুনুন না।

জোবান-হুম।

আমি-আমরা আজকে এখান থেকে চলে যাই।

জোবান-কি???

আমি-হুম,,,, চলুন না।

জোবান-পাগল হয়ে গেছো,,,কালকে এসেছি মাত্র।

আমি-তো,,,

জোবান-তোমার বাবা মা কষ্ট পাবেনা।

আমি-বাবা মাকে আমি বুঝিয়ে বলবো।

জোবান-এখানে থাকলে সমস্যাটা কোথায়???

আমি-আমার ইচ্ছে করছে না থাকতে।

জোবান-শুনো শিশির।(আমার গালে ওনার হাত রেখে)
আর একটা দিন একটু কষ্ট করে থাকো।আমরা কাল কেই চলে যাবো ওকে।

আমি-আপনি আমার কথা বুঝছেন না জোবান।

জোবান-কি কথা।

আমি-কিছু না।(বলে চলে আসতে লাগলাম)

জোবান-বলো।(আমার হাত ধরে)

আমি-কি বলবো।

জোবান-এই যে আমি তোমার কোন কথাটা বুঝছি না।

আমি-এই যে আমি আর এখানে থাকবো না।

জোবান-কেনো,,ওখানে সবকিছু না বলতেও চলে আসে আর এখানে বলতে বলতে ও আসেনা তাই।(মজা করে)

আমি-(ওনার কথাটা শুনে খুব কষ্ট লাগলো।আচ্ছা উনি কি এতই ফেলনা মনে করে আমাকে।আমি কিছুক্ষণ পর ওনার থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে চলে আসি।)

জোবান-আজব,,,কিছু না বলেই চলে গেলো।আমি তো এটা মজা করে বলেছি।

আমি জোবানের কাছে থেকে এসে শিরিন আর শান্তর কাছে যাই।শিরিন শান্তকে কি জানি লিখতে বলছে।আমি রুমে যাওয়ায় ওরা লেখা বন্ধ করে দিলো।

শিরিন-আরে আপু আসো।

আমি-কি করছিস তোরা??(রুমে এসে)

শান্ত-আপুর কি কি জানি লাগবে তাই আমাকে লিষ্ট করে নিতে বলেছে।

আমি-ওহ,,,(নিচের দিকে তাকিয়ে)

শিরিন-আপু তুমি কি কোথাও পরে গেছিলে???

আমি-কই নাতো।কেন???

শিরিন-তোমার গলায় কেমন একটা দাগ মনে হচ্ছে কেও নখ দিয়ে করেছে।

আমি-জানিনা রে।(না জানার ভান করে)

শান্ত-তোমার গালেও তো কিসের দাগ।

আমি-(হয়তো ওই থাপ্পড়টার দাগ।এতক্ষণ জোবানের কাছ থেকে এগুলো লাুকাতে পারলেও এদের কাছ থেকে লুকাতে পারলাম না।)

শিরিন-আপু,,(আমার পাশে বসে)তুমি কি আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছো।

আমি-দূর,,,কি লুকাবো।

শান্ত-আপু তুমি কিছু তো একটা লুকাচ্ছো।প্লিজ বলো আমাদেরকে।

আমি জানতাম এরা এমন করবে তাই লুকাচ্ছিলাম।কিন্তু এখন যেহেতু জেনে গেছে আমাকে বলতেই হবে।
আমি ওদেরকে বলতে শুরু করলাম।

ফ্লাসব্যাকঃ-

সুমন-কালকে তো আমার থেকে পালিয়ে গিয়েছিলে আজকে কে বাঁচাবে তোমাকে।

আমি-আজব তো আমি আপনার থেকে কেনো পালাবো
আপনি কি বাঘ না ভাল্লুক।(সাহস করে)

সুমন-সেটাই,,,,(আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে বসলো)

আমি-সুৃমন ভাই।(কান্না করে)

সুমন-এই,,আমি তোর কোন জন্মের ভাইরে যে আমাকে
ভাই ডাকিস।(আমার গাল চেপে)

আমি-(ব্যাথায় আমি আরো জোরে কান্না করে দিই)

সুমন-এই শিশির,,কি কমতি ছিলো রে আমার মধ্যে যে তুই আমার সাথে এমন করলি।

আমি-কি করেছি আমি আপনার সাথে???

সুমন-আমার ভালোবাসা টাকে ঠুকনো মনে করেছিস তুই।তাই তো আমার কথা না ভেবে বিয়ে করে নিলি।

আমি-বেশ করেছি বিয়ে করেছি।আর তাছাড়া আমি আপনাকে ভালোও বাসতাম না যে আপনাকে বিয়ে করবো।

সুমন-তাই বলে আমার ভালোবাসাটাকে এভাবে পায়ে ঠেলে বিয়ে করে নিবি।

আমি-সুমন ভাই,,,তোমার এই পাগলামোকে ভালোবাসা বলে প্লিজ সত্যিকারের ভালোবাসাকে অসম্মান করোনা।

সুমন-মানে???

আমি-মানে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা ছিলোনা পাগলামো ছিলো।

সুমন-আমার ভালোবাসাকে তুই পাগলামো বলছিস কোন হিসাবে?

আমি-পাগলামি বলবো না কেনো???তোমার জন্য আমার কলেজ লাইফটা পুরো শেষ হয়ে গেছে।কলেজে কেও আমার সাথে মিশতো না শুধু মাত্র তোমার ভয়ে।জানো কতটা একা লাগতো আমার।তোমার জন্য আমি কোথাও যেতে পারতাম না।তুমি আমার পেছনে লেগেই থাকতে।একটা কথা জানো,,তুমি এই এলাকায় আসার আগে আমি খুব ভালো ছিলাম।নিজের একটা স্বাধীনতা ছিলো।কিন্তু তুমি আসার পরে আমার সেই স্বাধীনতা ও রইলো না।এবার বলো তো দেখি এটা তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা নাকি পাগলামি।

সুমন-আমার ভালোবাসাকে আর একবার পাগলামি বললে আমি তোকে খুন করে ফেলবো শিশির।(দুই হাত দিয়ে আমার গলা চেপে ধরে)

আমি-ভাইয়া ছাড়ো।(গলা ছাড়ানোর চেষ্টা করে)

কিছুক্ষণ পরে সুমন ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দেয়।আমায় ছেড়ে সুমন ভাইয়া অন্যদিকে ফিরে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।যার মানে উনি নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।উনি অন্যদিকে ফিরলে আমি আর এক মুহুর্ত ও দাঁড়াই না।দৌড়ে ওখান থেকে চলে আসি।

বর্তমানঃ-

শিরিন-বা বা আপু আমার তো শুনেই ভয় করছে।

আমি-তাহলে বুঝ আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম।

শান্ত-কত বড় খেচ্ছর এই সুমন।

শিরিন-আপু তুমি বরং কিছুদিন বাড়ী বের হইয়ো না।

আমি-বাড়ীতে থাকলে তো বের হবো।

শান্ত-মানে?

আমি-আমরা মনে হয় কালকে চলে যাবো।

শিরিন-কি,,,

আমি-হুম।

শান্ত-আপু তুই না বলেছিস কিছুদিন থাকবি।

আমি-হুম কিন্ত।

শিরিন-কিন্তু???

আমি-আসলে সুমনের কাছ থেকে আসার পরে আমার মনে ভয় চেপে বসেছিল।ভেবেছি এখানে থাকলে সুমন আমার পিছু করতেই থাকবে।তাই তোদের ভাইয়াকে বলে কালকে চলে যাওয়ার প্ল্যান করেছি।

শিরিন-আরে সুমন তো তোমায় বাড়ীর বাইরে বিরক্ত করত বাড়ীর ভেতরে না।তুমি বাড়িতে বসে থাকলেই হতো।

আমি-আরে ওর বিশ্বাস নেই ও চলেও আসতে পারে।

শিরিন-ও তো তোমার বিয়ের আগে আসতো এখানে।কিন্তু এখন আর আসতো না।

আমি-ও আসতো আমি জানি।

শান্ত-কিন্তু তুমি এটা ঠিক করোনি আপু।

আমি-সরি রে,,,পরে আবার আসবো।

শিরিন-আপু তুনি কি বাবা মায়ের সঙ্গে আর কথা বলবে না???

আমি-বলবো ভাবছি।

শিরিন-আপু তাহলে আজকেই কথা বলো।বাবা মা খুব কষ্ট পাচ্ছে তোমার এই অবহেলায়।

আমি-আচ্ছা পরে বলবো নে,,,এখন রুমে যাই।

শিরিন-হুম যাও।

আমি আবার রুমে আসি কিন্তু এবার আর জোবানকে দেখি না।উনাকে না দেখে আমি সোজা গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরি।এই এক শোয়ায় আমি ঘুমিয়েও পরি।যখন চোখ খুলি তখন আমি অবাক হয়ে যাই।আমি আমার রুমে নেই অন্য একটা রুমে।রুমের চার পাশ দেখে বুঝি এটা আমার রুম না।আমি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।ওমা বের হয়ে দেখি এটা আমার শ্বশুর বাড়ি।কিন্তু আমি এখানে কিভাবে???

বাবা-আরে বউমা তুমি উঠে গেছো???

আমি-হুম বাবা।

বাবা-যাও তুমি নিজের রুমে যাও।

আমি-জ্বি,,,আচ্ছা বাবা এটা কার রুম?(যেটাতে আমি ছিলাম)

বাবা-ওটা তো গেস্ট রুম।

আমি-ওহ।(এই জন্যই চিনতে পারিনি।বাড়িটা ভালো করে দেখিই নি যে চিনবো)

রাতেঃ-

আমি রুমে একা একা বসে আছি।যখন ঘুম ভেঙেছে তখন থেকে আমি জোবানকে দেখিনি।সবাই ডিনারও করে ফেললাম।কিন্তু তবুও ওনার আসার নাম নেই।বেশ কিছুক্ষণ পর কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম।মনে হয় উনি এসেছে তাই আমি খাটে শুয়ে গেলাম।

জোবান-(রুমে এসে দেখি শিশির ঘুমাচ্ছে)এ কি অলস কে বিয়ে করলাম আমি।সারাক্ষণ শুধু ঘুমাতেই থাকে।

আমি-কি আমি অলস।(উঠে বসে)

জোবান-তুমি ঘুমাচ্ছিলে না।

আমি-না শুধু ঘুমানোর নাটক করছিলাম।

জোবান-যাই হোক আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি তুমি আমার জন্য খাবার রেডি করো।

আমি- খাবার রেডি করা আছে।

জোবান-তুমি সার্ভ করবে যাও।(বলে চলে গেলো)

আমি-এসেই শুরু করে দিয়েছে।

আমি খাবার টেবিলে ওনার জন্য খাবার বেড়ে বসে রয়েছি।কিছুক্ষণ পর উনি এসে খেতে বসলেন।উনি মনে হয় এখন গোসল করে এসেছেন চুল বেজা দেখছি।

আমি-সারাদিন কই ছিলেন???

জোবান-অধিকার ফলাচ্ছো???

আমি-কি???

জোবান-আমার ব্যাপারে হঠাৎ জিজ্ঞেস করছো তাই।

আমি-আমি কি আপনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে পারিনা???

জোবান-পারো তো।

আমি-তো???

জোবান-তুমি বুঝবেনা।

আমি-হুম বলুন।

জোবান-কি বলবো???

আমি-সারাদিন কই ছিলেন।।

জোবান-তোমাকে আনার পর অফিস থেকে ফোন এসে ছিলো।কি একটা জুরুরি কাজ আছে নাকি।তাই আমি অফিসে চলে আর কিছুক্ষণ আগেই ছুটি পেয়েছি।

আমি-যতটুকু আমি জানি আপনিই নাকি অফিসের এমডি তাহলে আপনার আবার কিসের ছুটি।

জোবান-আরে মানে কাজ শেষ করে এসেছি আর কি।

আমি-আচ্ছা আমাকে কখন আনলেন???

জোবান-আমার খাওয়া শেষ সব গুছিয়ে রাখো।(বলে হাত ধুয়ে চলে গেলো)

আমি-আরেহ।

আমি সবকিছু গুছিয়ে রুমে এসে দেখি উনি এখনো নেই।আমার এবার রাগ উঠে গেলো সারাক্ষণ থাকে কই।হঠাৎ ফোনে একটা মেচেজ এলো।মেচেজটা ওপেন করে দেখি জোবান মেচেজ পাঠিয়েছে।”ছাদে আসো” লেখা আছে।আমিও আর দেরি না করে ছাদে চলে গেলাম।ছাদে আসার সাথে সাথে উনি আমাকে রেলিং এর সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। উনি আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে কিছু কথা বললেন।যা শুনে আমি অবাক হয়ে মনে মনে বলি উনি এগুলো কি করে জানে।

-চলবে