তোমার হাতটি ধরে পর্ব-০৭

0
781

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_৭
#Jechi_Jahan

সকালে সবাই নাস্তা করার পর আমি আর জেরিন আপু সোফায় বসে আমাদের বিয়ের চবি দেখতে লাগলাম।আসলে জেরিন আপুই আমাকে ডেকেছে চবি গুলো দেখতে।চবি গুলো দেখার সময় ভাবি এই বুঝি বিয়েটা মানবোনা বলেছিলাম।কিন্তু দেখো এখন ঠিকই বিয়েটা মানার চেষ্টা করছি।কিছুক্ষণ পর জোবান আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,

জোবান-তুমি এখনো রেডি হওনি???

আমি-কেনো রেডি হবো???

জোবান-কেনো রেডি হবে তুমি জানোনা?

আমি-জানিনা তো।

জোবান-ওকে,,,,তো রেডি হয়ে আসো।

আমি-কেনো রেডি হবো???

জোবান-যেটা বলেছি সেটা শুনো।(রেগে)

জেরিন-যাওনা রেডি হয়ে আসো,,,হয়তো কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে।

আমি-হুম।(বলে রেডি হতে গেলাম)

জোবান-কেমন একরোখা টাইফ এই মেয়েটা।(শিশিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে)

জেরিন-হুম তোমারি বউ।

জোবান-সত্যি বলতে আমি তোর কথায় ওর সাথে এত নরমাল বিহেভ করছি নাহলে,,,,

জেরিন-নাহলে,,,

জোবান-ওর সাথে এত কথাও বলতাম না।

জেরিন-আচ্ছা তুমি কি গাঁধা।

জোবান-কেনো??

জেরিন-তোমাকে কতবার বলবো সব মেয়ে এক রকম হয় না।আর তাছাড়া বলতে গেলে শিশিরকে তুমি নিজে পছন্দ করেছো ভাইয়া।

জোবান-সেটাই তো আমার দ্বিতীয় বার করা বড় ভুল।কিভাবে যে আবার কাওকে বিশ্বাস করতে গেলাম।

জেরিন-এটা তোমার ভুল নয় ভাইয়া,,, এটা তোমার সঠিক সিদ্ধান্ত।

জোবান-হুম বুঝলাম।

জেরিন-আচ্ছা কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবা???

জোবান-তোকে কে বললো যে ঘুরতে নিয়ে যাবো??

জেরিন-তাহলে রেডি হতে কেনো বললা??

জোবান-একটা কাজে।

জেরিন-কি কাজ???

জোবান-আমার মাথা।(বলে চলে গেলো)

আমি রুমে এসে একটা টিয়া রংয়ের কামিজ আর প্লাজো পরে বসে রইলাম।ভাবছিলাম আমাকে কোথায় নিবে উনি।ভর্তি করাতে নিবে বলে তো মনে হয়না।কালকে ওনার ওমন ট্যারা কথায় তো বুঝা গেছে।হঠাৎ উনি রুমে এসে আমার সামনে আসল।

জোবান-গাঁদা,,,এখনো রেডি হওনি???

আমি-কোথায় নিবেন??

জোবান-রেডি হয়ে নাও আগে।

আমি-আমি রেডি।

জোবান-তুমি বাইরে যাওয়ার সময় ওড়না নাওনা?

আমি-ওটা নিতে কতক্ষণ,,,প্লিজ বলুন না।

জোবান-তোমাকে ভর্তি করাতে।

আমি-কি???

জোবান-তোমাকে ভার্সিটি তে ভর্তি করাতে।

আমি-সত্যি???(ওনার হাত ধরে)

জোবান-না,,মিথ্যা।(আমার হাত ছাড়িয়ে)

আমি-চলুন।(ওড়না টা পরে)

জোবান-হুম।(বলে আমাকে নিয়ে বের হলো)

আমি,লিনা আর জোবান ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছি।বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় আমি লিনাকেও বলেছিলাম যে ভর্তি হতে আসছি।এটা শুনে লিনাও ওর বাবাকে নিয়ে ভর্তি হতে এসেছিল।এখন আমরা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে বই নিয়ে ক্যান্টিনে বসে আছি।

লিনা-দুলাভাই অবশেষে শিশিরকে ভর্তি করিয়েই দিলেন।

জোবান-হুম।

লিনা-তা শিশির,,,,ভার্সিটি তে ভর্তি হয়ে কিন্তু বেশি স্বাধীন ভাবে চলতে যাস না।এটলেষ্ট এটা ভুলে যে তুমি বিবাহিত।

জোবান-শিশির কে আমি ভর্তি করিয়েছি ঠিক আছে,, কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।

আমি-শর্ত???

জোবান-হুম,,,

লিনা-কি শর্ত দুলাভাই??

জোবান-শিশির যে বিবাহিত এটা তুমি আর শিশির ছাড়া আর কেও যেনো না জানে।

আমি-কি???(অবাক হয়ে)

জোবান-হুম।

লিনা-এটা কেমন কথা দুলাভাই,,,শিশির বিবাহিত হয়ে কেনো সবাইকে বলবে ও অবিবাহিত।মানে আপনার কথা বলবেনা???

জোবান-আরে,,,আমার কথা বলবে না কেনো।আমার কথা বলবে জাষ্ট ফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড বলে।শুধু বিবাহিত সেটা বলবে না।

আমি-কিন্তু কেনো???

জোবান-তার যথেষ্ট কারণ আছে।

আমি-কি এমন কারণ যে আমি বিবাহিত সেটা বলতে পারবো না।

জোবান-আমি চাই তুমি ভার্সিটিতে আর ৫ টা মেয়ের মতো চলো শুধু বিবাহিত সেটা না বলে।(সরি মিথ্যা বললাম,,,আমি চাইনা ভার্সিটিতে এত তাড়াতাড়ি কেও তোমায় আমার স্ত্রী হিসাবে চিনুক।)

আমি-আপনি মন থেকে চান যে আমি ভার্সিটি তে আর বাকি ৫ টা মেয়ের মত চলি???

জোবান-অবশ্যই।

লিনা-বাহ বাহ,,,,তাহলে আজ থেকে জোবান ভাইয়া তোর বয়ফ্রেন্ড।[শিশিরকে উদ্দেশ্য করে]

আমি-(লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম)

জোবান-আচ্ছা,,,কালকে তো তোমাদের ভার্সিটিতে প্রথম দিন।তো চলো,,,কিছু শপিং করে আসি।

আমি-লাগবেনা।

জোবান-লাগবে নাকি না লাগবে সেটা আমি জানি।

আমরা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে একটা শপিংমলে গেলাম।ওখান থেকে জোবান আমাকে কয়েকটা জামা কিনে দিল সাথে লিনাকেও দুইটা কিনে দিল।কেনাকাটা আর লান্চ করে আমরা চলে এলাম।

রাতেঃ-

খাওয়া দাওয়া করার পর জোবানের কিনে দেওয়া জামা গুলো আমি আলমারিতে গুছিয়ে রাখছিলাম।হঠাৎ জোবান এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে গলায় মুখ গুজে দেয়।প্রথমে খানিকটা ভয় পেলেও পরে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকি।উনি আমার ঘাড়ে একটা কিস করে বসে।এতে আমি একটু কেঁপে উঠি।উনি এবার আমাকে ওনার দিকে ফিরিয়ে আলমারির সাথে চেপে ধরে।

আমি-কি কি হয়েছে???

জোবান- I need you…(আমার কানে ফিসফিস করে)

আমি-(ভয়ে কিছু বলতে পারছিনা)

জোবান আমাকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিলো।উনি আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না।উনি ওনার মতো আমাকে ইউস করলেন তবে ওদিন এর মতো না।বেশ কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে ছেড়ে শুয়ে গেলেন।আর আমি শুয়ে শুয়ে ওনার কথা ভাবছি।মানুষটা আমাকে ভালোবাসে না তবুও আমার সাথে এমন করে কেনো।এসব ভাবতে ভাবতে আমি একসময় ঘুমিয়ে পরি।সকালে উনি আমাকে ডেকে তুলে দেন নামাজ পড়ার জন্য।আমি উঠে নামাজ পরে আবার ঘুমিয়ে পরি।

————–

আমি আর লিনা একসাথে ভার্সিটিতে যাচ্ছি।আসলে জোবানই আমাকে ভার্সিটিতে আনছিলো। কিন্তু আসার সময় লিনাকে দেখে আমি গাড়ি থেকে নেমে যাই।এরপর আমি লিনা একসাথেই আসি।মাঝখানে জোবান আমাদের গাড়ি করেই যেতে বলেছিলো।কিন্তু আমরা যাইনি বিদায় উনি সোজা অফিসে চলে যায় আর আমরা ভার্সিটিতে।

আমি-হ্যাঁ রে আমরা খুব ভয় করছে।

লিনা-কিসের ভয়???

আমি-জানিনা,,,বাট ভয় করছে।

লিনা-আরে কোনো ভয় পাবিনা,,,আমি তো আছি।

আমি-তুই আছিস বলেই তো ভয়।

লিনা-কি???

আমি-দুশ্টামি করছিলাম।

লিনা-ভার্সিটির সামনে এসে গেছি।

আমি-ওহ,,,খেয়াল ছিলো না।

আমি আর লিনা ভার্সিটির ভেতরে ডুকলাম।ভেতরে এসে আমার আরো ভয় হয়ে লাগলো।শুনেছিলাম ভার্সিটির সিরিয়ররা নাকি জুনিয়র দের রেগিং করে।এখন এখানেও যদি করে তাহলে কি হবে???

লিনা-কিরে শিশির এভাবে হাঁটছিস কেন??

আমি-কই???

লিনা-কেমন থেমে থেমে।

আমি-ওসব ছাড়,,,আচ্ছা এই ভার্সিটির সিনিয়ররা কি রেগিং করে??

লিনা-আমি কি করে জানবো???

আমি-তুই কি করে জানবি মানে???তুই তো এই ভার্সিটির কথা আমাকে বললি।তুই জানিস না??

লিনা-আরে বলেছি বলে কি এসব ও জানবো নাকি।

আমি-দূর বোকা,,,,একটু জেনে নিবি না।

লিনা-আচ্ছা বাবা সরি,,,কিন্তু একটা কথা বলতো রেগিং নিয়ে তোর কি সমস্যা??

আমি-সমস্যা নেই শুধু ভয় করছে।

আমরা এতোক্ষণ কথাগুলো একটা বসার জায়গার সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলাম।হঠাৎ পেছন থেকে কেও যেনো আমাদের উদ্দেশ্য করে বলে।

–রেগিং এ ভয় পাও গার্লস???

আমি-(পেছনে ফিরে দেখলাম সাতটা ছেলে-মেয়ে।এখানে ৫টা ছেলে আর ২টা মেয়ে।আমি ওদের দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি)

–বললে না যে,,,রেগিং এ ভয় পাও??

লিনা-হুম,,,একটু একটু।

(একটা মেয়ে)-ভার্সিটিতে নতুন??

লিনা-জ্বী কালকেই ভর্তি হয়েছি।

(একটা ছেলে)-এই মেয়ে(আমাকে)তুমি কিছু বলছো না কেনো,,,বোবা হয়ে গেলে নাকি।

আমি-কি কি বলবো????

(ছেলেটা)কি ইনোসেন্স এরা,,এদের কিভাবে রেগিং করবে???

(মেয়েটা)ওকে তো কালকে ক্লাস নিস এদের।আজ নতুন এসেছে ভার্সিটিটা একটু দেখে নিক।ভার্সিটির ব্যাপারে জানুক,,,আমাদের ব্যাপারে জানুক,,তারপর না হয় এদের ক্লাস নিবো।

ছেলেটা-ঠিক বলেছিস,,এই তোমরা যাও।

ওদের কথায় আমরা ওখান থেকে চলে আসি।ক্লাসে বসে ওই গুলোর কথা ভাবছিলাম।প্রথম দিন বেশি ক্লাস হয়নি।তাই আমরা ভার্সিটি টা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।ভার্সিটির পেছনে আসার পর আমি ওখানে একটা গাঁদা ফুল গাছ দেখি।আমি আর দেরি না করে দৌড়ে গিয়ে একটা বড় ফুল নিয়ে নিই।হঠাৎ আমার হাত থেকে কেও ফুলটা ছো মেরে নিয়ে নিল।আমি এমন হওয়ায় অবাক হয়ে যাই।

-(চলবে)