তোমার হাতটি ধরে পর্ব-০৮

0
770

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব-৮
#Jechi_Jahan

আমি অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি।ছেলেটা আর কেও নয় সকালের ওই ছেলেটা।ছেলেটার সাথে ওর বাকি বন্ধু-বান্ধবী রাও এসেছে।

ছেলে-How dare you???(রেগে)

আমি-কি হয়েছে???(ভয়ে)

ছেলেটা-তুমি আমাদের পারমিশন ছাড়া আমাদের গাছ থেকে ফুল নিয়ে নিলে।(রেগে)

আমি-এ এগুলো আপনাদের গাছ???

ছেলেটা-হুম,,,এগুলা আমরা লাগিয়েছি।আর তুমি আমাদের পারমিশন ছাড়াই ফুল নিয়ে নিলে।

আমি-সরি ভাইয়া।

ছেলেটা-শুধু সরি বললে হবেনা শাস্তি পেতে হবে।

লিনা-এই ছোট একটা ভুলের কারণে শাস্তি??

ছেলেটা-ওই মেয়ে,,,তুমি আমার মুখের উপর কথা বলছো??এই আশিক রহমসনের মুখের উপর।

লিনা-সরি ভাইয়া,,,(মাথা নিচু করে)

আশিক-যাই হোক,,,ভুল যখন করেছো শাস্তি তো পাবেই।

আমি-শুনুন,,,আমি ভুল করে ফেলেছি প্লিজ এবারের মত আমাকে ক্ষমা করে দিন।

আশিক-ক্ষমা করলে তোমরা আশকারা পেয়ে যাবে।বার বার একই ভুল করবে,,,সো সেটা হচ্ছে না।

লিনা-আমরা তো ক্ষমা চাচ্ছি প্লিজ ক্ষমা করে দিন।

আশিক-এই মেয়ে,,,তুমি বেশি কথা বলো।আর কিসের ক্ষমা হ্যাঁ,,,আমি মাত্র কি বললাম শুনোনি।আমি ভুলকে প্রশ্রয় দিই না।

আমি-শুনুন,,,আমি তো না বুঝে ভুলটা করে ফেলেছি।প্লিজ ক্ষমা করে দিন না।(বারবার ক্ষমা চাচ্ছি কারণ এদেরকে দেখেই ভয় করছে।শাস্তি দেখলে তো না জানি আরো কি হবে)

আশিক-(মেয়েটার এমন করে বলাতে জানিনা কেনো খুব মায়া হলো।)ওকে এটাই লাস্ট,,,আরেক বার এমন করলে তখন কিন্তু মাফ হবে না।এই চল।(বলে বাকিদের নিয়ে চলে গেলো)

লিনা-বাব্বাহ,,,কিছুক্ষণের জন্য তো আমি ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।

আমি-এরা কারা যে আমরা এদের এত ভয় পাচ্ছি।
(আনমনে)

লিনা-আরে ক্লাসে আমি এদের ব্যাপারে একটা মেয়ে কে জিজ্ঞেস করছিলাম।মেয়েটা বলেছিলো এরা নাকি ভার্সিটির সিনিয়র।

আমি-ওহহ।

লিনা-জানিস,,,এরা নাকি শুধু রেগিং করে।

আমি-ছাড়তো এসব,,,চল বাড়ী চল।(বলে লিনাকে নিয়ে ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়ালাম)

লিনা-কিরে,,,এখানে দাঁড়িয়ে গেলি যে??

আমি-গাড়ী আসবে।

লিনা-ভাইয়া তোকে নিতে আসবে?

আমি-নাহ,,,বলেছিলো গাড়ী পাঠাবে।

লিনা-ওহ,,,তো ফোন করে দেখ।

আমি-লাগবেনা।

লিনা-আর জিজ্ঞেস করে দেখ না,,গাড়ী পাঠিয়েছে কি না???.

আমি-আচ্ছা।(বলে ওনাকে ফোন দিলাম)

জোবান-হ্যালো কে??(ফোন রিসিভ করে)

আমি-(আজব তো,,,উনি আমাকে চিনতে পারেনি) আমি শিশির,,,

জোবান-আরে শিশির,,,এটা তোমার নাম্বার?/

আমি-হুম।

জোবান-ও সরি,,,আসলে তোমার নাম্বার আমার কাছে ছিলো না তাই চিনতে পারিনি।

আমি-ওহ,,,

জোবান-তা ফোন কেনো দিলে??

আমি-আসলে ভার্সিটি তো ছুটি হয়ে গেছে তো বাড়ী কিভাবে যাবো।

জোবান-এত তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেলো??

আমি-হুম,,,আসলে ভার্সিটি ও তো এবার খোলা হয়েছে তাই তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে)

জোবান-ওহ,,,তো আমি গাড়ী পাঠাচ্ছি একটু ওয়েট করিও।এখন একটু বিজি আছি বাড়ী গিয়ে কথা বলবো।বাই,,

আমি-বাই,,,(বলে কল কেটে দিলাম)

লিনা-কিরে কি বলেছে।

আমি-বলেছে গাড়ি পাঠাচ্ছে।

আমরা দুজন বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।হঠাৎ পেছন থেকে বাইকের হর্ণের শব্দ এলো।আমরা পেছনে ফিরে দেখি আশিকরা বাইকে বসে আছে।

আশিক-ওই ইস্টুপিট রা,,,গেটের মাঝখানে কেনো দাঁড়িয়ে আছো।সরো সামনে থেকে,,,,

আমি-(এর কথাগুলো এমন কেনো,,,একটু ভালো ভাবে বললে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো।)

লিনা-সরি ভাইয়া।(বলে আমায় নিয়ে সরে গেলো)

আশিক-নেক্সট টাইম এমন করলে আমি আর বাইক থামাবো না,,,সোজা চালিয়ে দিবো।(আমাদের সামনে বাইক থামিয়ে কথাটা বলে চলে গেল,, ওরা যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের গাড়িটাও এল।আমরাও আর দেরি না করে গাড়ীতে উঠে গেলাম।)

——-

বাড়ীতে এসে দেখি শিরিন আর শান্ত সোফায় বসে বাবা সাথে কথা বলছে।ওদেরকে এই অসময়ে দেখে আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম।আমি ওদের সামনে যাওয়ার সাথে সাথে শিরিন উঠে আমাকে জরিয়ে ধরে।ওর সাথে সাথে শান্তও আসে।

শিরিন-কেমন দিলাম সারপ্রাইজ???

আমি-মানে???

শান্ত-মানে আমাদের এভাবে হুট করে দেখে তুমি খুশি হওনি।

আমি-হয়েছি তো।

শিরিন-তো??(বলে আমায় নিয়ে সোফায় বসলো)

আমি-তোরা কখন এলি??

শান্ত-এই ১ ঘন্টা হলো।

আমি-বাবা মা এসেছে???

শান্ত-না না আমরা একাই এসেছি।

আমি-ওহ,,,তো তোরা একটু বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণের জন্য খাটে গা টা এলিয়ে দিলাম।ক্লান্ত থাকায় খাটে গা এলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে গেলাম।কতক্ষণ ঘুমালাম জানিনা কিন্তু যখন ঘুম ভেঙেছে তখন বিকেল ছিলো।আমি উঠে হাত মুখ ধুয়ে বাড়ীর বাইরে চলে এলাম।বাইরে এসে দেখি শান্ত কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে।আমি যাওয়ার সাথে সাথে ও ফোনটা কেটে দেয়।

আমি-কিরে,,,ফোন কেটে দিলি যে???

শান্ত-এমনে,,,

আমি- কার সাথে কথা বলছিলি??

শান্ত-বাদ দাও না।

আমি-তুই বলবি???

শান্ত-বাবার সাথে কথা বলছিলাম।

আমি-ওহ,,,তো এটা আমার থেকে লুকাচ্ছিস কেনো?

শান্ত-তুমি কষ্ট পাবে ভেবে।

আমি-আমি কোনো কষ্ট পেতাম না,,,আমি এখন স্বাভাবিক আছি।তুই নিরদ্বিধায় বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে পারবি।

শান্ত-সত্যিই তুমি স্বাভাবিক আছো???

আমি-সত্যিই স্বাভাবিক আছি।

আমরা দুজন বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ গল্প করছিলাম।হঠাৎ গেট দিয়ে জোবানের গাড়ী আসাতে আমি একটু অবাক হয় গেলাম।তাড়াতাড়ি করে গাড়ীর সামনে চলে গেলাম।জোবান গাড়ী থেকে নেমেই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।

জোবান-এভাবে গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

আমি-না এমনে।

জোবান-যাই হোক,,,শান্ত তুমি কখন এলে???(শান্তকে উদ্দেশ্য করে)

শান্ত-এইতো ভাইয়া দুপুরের দিকে।

জোবান-ওহ,,,তা শিশির ওদের খাওয়া দাওয়া করিয়েছো???

শান্ত-হা হা হা,,,যে নিজেই কিছু খায়নি সে আবার আমাদের খাওয়াবে।

জোবান-কেনো তোমরা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করোনি।

শান্ত-আমরা তো খাওয়া দাওয়া করেছি।কিন্তু আপনার বউ করেনি,,,ভার্সিটি থেকে এসেই ঘুমিয়ে গেলো।

জোবান-তোমার বোন যা ঘুম ঘুমায় দুনিয়া দারি উল্টে গেলেও ওর খবর থাকে না।ওইদিন দেখলে না তোমাদের বাড়ী থেকে আনার পরেও ওনার কোনো খবর নেই।ঘুমে বিভোর,,,,

শান্ত-হা হা হা,,,

আমি-আমার সুনাম হয়ে থাকলে এবার বাড়ীর ভেতরে যাওয়া যাক।

জোবান-হুম চলো।

শান্তকে সোফায় বসিয়ে আমি আর জোবান রুমে চলে এলাম।রুমে আসলে জোবান ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যায়।আর আমি খাটে মনমরা হয়ে বসে থাকি।

জোবান-ওই,,,(ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে)

আমি-ক কি???

জোবান-কি হয়েছে??(আমার পাশে বসে)

আমি-কি হবে।

জোবান-ভার্সিটিতে প্রথম দিন কেমন কাটলো??

আমি-মোটামুটি ভালো।

জোবান-ভালো আবার মোটামুটি,,,কেমনে কি???

আমি-না এমনি বললাম,,,আচ্ছা আমি আপনার জন্য খাবার বাড়বো।

জোবান-না আমি খেয়ে এসেছি।তুমি বরং আমার আর শান্তর জন্য কফি বানিয়ে আনো।আমি শান্তর কাছে যাচ্ছি।(বলে শান্তর কাছে গলো)

আমিও আর দেরি না করে দুজনের জন্য কফি বানাতে গেলাম।কফি বানাতে গিয়ে দেখি ওখানে জেরিন আপু আর শিরিন ও আছে।ওদেরকে দেখে মনে হয়ে মাত্র কোথায় থেকে এসেছে।তাই আমি ওদের জন্যও কফি বানাতে শুরু করি।

——

আশিক-আজকের মেয়ে দুইটা বেশ ভীতু ছিলো।

লিজা(ওর বান্ধবী)-হুম,,বিশেষ করে লম্বা মেয়েটা।(শিশিরকে উদ্দেশ্য করে)

আশিক-ঠিক বলেছিস,,আর মেয়েটা এত কিউট। যখন আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছিলো তখন ওর ঠোঁট টা পুরো ডলের ঠোঁটের মতো হয়ে গেছিলো।

আবির-হ্যাঁ রে আশিক,,,তুই যে মেয়েদের এমন খুতে খুতে নোটিশ করতি এটা তো আগে জানতাম না।

আশিক-আরে,,,মেয়েটা আমার চোখের সামনে ছিল।ওকে নোটিশ করাটা কি স্বাভাবিক নয়।

অর্নি(ওর বেস্টফ্রেন্ড)-নোটিশ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু তুই যেভাবে করেছিস এমন করে নয়।আচ্ছা তুই কি মেয়েটার প্রেমে পরেছিস নাকি???

তুহিন(বন্ধু)-ওয়াও,,,প্রথম দেখায় প্রেম।

আশিক-প্রথম দেখায় প্রেমে পরবো,,,তাও আমি।No way….

অর্ণি-তাহলে কি???

আশিক-ওকে,,,আমি যদি কোনোদিন ভুলবশত মেয়েটার প্রেমে পরিও তাহলে ওকে কারোর হতে দিবো।এটা মাথায় রাখিস,,,,

আবির-মাত্র না বললি প্রেমে পরিসনি।

আশিক-আরে বলেছি যখন প্রেমে পরবো।

অর্ণি-সাবধান,,,হয়তো এখনি প্রেমে পরে গেছিস।

আশিক-দোস্ত,,,তুই ও।(তোদের যতই মিথ্যা বলি,,, মেয়েটাকে কিন্তু সত্যিই পছন্দ করে ফেলেছি।)

(আসুন আশিকের পরিচয় দিয়ে দিই।আশিক এর পুরো নাম আশিক রহমান।বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে।এখন যে ভার্সিটিতে পড়ে সেটা ওর চাচার ভার্সিটি।এই ভার্সিটিতেই ও সহ ওর আরো চারটা ফ্রেন্ড পড়ে আবির,তুহিন,লিজা আর অর্ণি।এরা সবাই মিলে ভার্সিটিতে শুধু রেগিংই করে।আরো কিছু আছে যা গল্পে জানতে পারবেন।)

রাতেঃ-

সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করে যে যার রুমে চলে যায়।শুধু আমি,শিরিন আর শান্ত সোফায় বসে কিছুক্ষণ গল্প করছি।গল্প করা শেষ হলে ওদেরকে শুতে পাঠিয়ে আমি রুমে চলে আসি।রুমে ডোকার সাথে সাথে আমি অবাক হয়ে জোবানের কান্ড কারখানা দেখতে থাকি।

-চলবে