তোমার হাতটি ধরে পর্ব-১১

0
707

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_১১
#Jechi_Jahan

আমি আর জোবান অনেকক্ষণ হলো বসে আছি।উনি এতক্ষণ আমার হাতের উপর হাত রেখেই বসে ছিলেন।হঠাৎ আমার ফোন আসায় আমি হাতটা সরিয়ে ফেলি আর কলটা রিসিভ করি।

আমি-হ্যালো।

লিনা-হ্যাঁ রে,,,তুই কই??

আমি-অবশ্যই ভার্সিটিতে।

লিনা-কি,,,তুই কালকে আমাকে আনতে গিয়েছিলি তাই আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।আর তুই কিনা আজকে একাই চলে এলি।

আমি-আমি একা আসিনি তো,,,আমার সাথে জোবান ও এসেছে।

লিনা-ওহ,,,তো আমাকে ডেকে নিলে কি হতো।

আমি-সরি।

লিনা-সরি বলতে হবেনা,,,আমি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।তুই এক্ষুনি এসে আমাকে নিয়ে যা।

আমি-আমরা ক্যান্টিনে আছি তুই আয়।

লিনা-তুই আমাকে নিতে আয়।

আমি-ওকে,,,তুই ওয়েট কর।(বলে ফোন কেটে দিলাম)

জোবান-লিনা ফোন দিয়েছে???

আমি-হ্যাঁ,,,ও ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আপনি একটু বসুন আমি ওকে নিয়ে আসি।

জোবান-তুমি নিয়ে আসবা কেনো??ওকে আসতে বলো।

আমি-আরে আনি না,,,বসুন।(বলে চলে গেলাম)

আমি ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে যতদূর হাঁটছি সবাই আমার দিকে কেমন তাকিয়ে আছে।আমি ওদের পাত্তা না দিয়ে গেটের সামনে চলে গেলাম।

আমি-ম্যাডাম,,,চলেন।

লিনা-ওই,,,তুই ভাইয়াকে কেনো আনলি??

আমি-আমি আনিনি,,,উনি নিজেই এসেছে।

লিনা-ওহ,,,চল।(এই বলে আমরা ক্যান্টিনে গেলাম)

জোবান-কি লিনা!!!এত অলস হলে চলে।যে আমার বউ গিয়ে তোমাকে আনতে হলো।(হেসে)

লিনা-এটা আপনার বউয়ের শাস্তি।

জোবান-কেনো,,,আমার বউ আবার কি করলো??

লিনা-আপনার বউ আমাকে বাসা থেকে নিবে বলে বাসাতেই আসেনি।

জোবান-কি!!!কিন্তু কেনো???

আমি-আজকে আপনি আমার সাথে ছিলেন তাই আর ওকে ডাকিনি।ভাবলাম কি না কি মনে করেন।

জোবান-কি???আমাকে একবার বললে কি আমি ওকে বাসা থেকে নিতাম না।

লিনা-আরে ভাইয়া রেগে যাচ্ছেন কেনো।শিশির হয় তো আপনার সাথে একটু একা সময় কাটাবে বলেই আমাকে ডাকেনি।আর আমি তো এসে গেছি এটা নিয়ে এখন আর কোনো কথা বলিয়েন না।

জোবান-ওকে।

আমি-আচ্ছা ক্লাস তো কিছুক্ষণ পর শুরু হয়ে যাবে।আমরা নাহয় এবার উঠি।

জোবান-আরে না না!!লিনা সহ এসেছে কিছু খেয়ে যাও।

আমি-আমি কিছু খাবো না।

লিনা-আমিও কিছু খাবো না।তাছাড়া ক্লাস ও শুরু হবে।আমরা গিয়ে নাহয় ক্লাসে বসি।

জোবান-ওকে,,,তো ভার্সিটি ছুটির পর তোমরা কোথাও যেওনা।

আমি-মানে,,,বাড়ী যাবো না।

জোবান-যাবে,,,বাট একটু অপেক্ষা করো আমি আসবো।

আমি-কেনো আসবেন??

জোবান-বেশি প্রশ্ন করো তুমি।(বলে উঠে দাঁড়ালো)

লিনা-ভাইয়া আপনি একদম চিন্তা করবেন না।ও অপেক্ষা না করলে ওকে আমি ধরে বেঁধে বসিয়ে রাখবো যতক্ষণ না আপনি আসেন।

জোবান-“শালী হো তো এসি” ওকে আসি তাহলে।(বলে চলে গেলো)

লিনা-চল ক্লাসে যাই।

আমি-চল।

আমি আর লিনা ক্লাস রুমে চলে গেলাম।আমাদের এখনো কোনো বন্ধু বান্ধবী হয়ে ওঠেনি।আমরা একা একাই গল্প করি।আজকে শুধু দুটো ক্লাস ছিল যার জন্য আমরা এখন ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।রোজ তিনটা ক্লাস বা চারটা ক্লাস হয় কিন্তু আজ দুটো হওয়ায় ক্লাসের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।

——————

লিজা-ওই,,,আজকে শিশিরের সাথে একটা ছেলেকে দেখেছিস???

আবির-দেখেছি,,,তো??

লিজা-ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম।আমি ক্রাশিত,,,

আবির-তুই সত্যি ছেলেটার উপর ক্রাশ খেয়েছিস???

লিজা-কেনো,,,আমি কি কারোর উপর ক্রাশ খেতে পারিনা?

আবির-পারিস!!!কিন্তু কথা হচ্ছে ছেলেটা শিশিরের কি হয়??(আশিকের দিকে তাকিয়ে)

আশিক-তুই আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো???

আবির-কেনো,,তাকাতে কি পারিনা।

লিজা-জানিস আবির,,,আমার না একটা জিনিস দেখে খুব কষ্ট লেগেছিলো।

আবির-কোন জিনিস???

লিজা-ছেলেটা যতক্ষণ বসে ছিলো ততক্ষণই শিশিরের হাতের উপর হাত রেখে বসে ছিলো এই জিনিসটা।(আশিকের দিকে তাকিয়ে বললো)

আবির-তাহলে বল কি হতে পারে???

লিজা-ছেলেটা কি শিশিরের বয়ফ্রেন্ড?(বলে আশিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও হাত মুঠ করে রেখেছে।মানে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে)

অর্ণা-দোস্ত বন্ধ করতো এসব।

লিজা-কেনো বন্ধ করবো???ও আমার ক্রাশ।

আশিক-স্টপ ইট,,,(রেগে)

আবির-তোর আবার কি হলো???(মুচকি হেসে)

আশিক-অর্ণা,,,তুই একটু শিশিরকে ডেকে আন।

অর্ণা-কেনো???

আশিক-আনতে পারবি নাকি পারবি না।

অর্ণা-ওকে যাচ্ছি।

————–

অর্ণা-হ্যালো!!!(শিশিরকে উদ্দেশ্য করে)

আমি-(ওনার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে ফিরে গেলাম।কারণ আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো অন্য কাওকে ডাকছে।)

অর্ণা-ওই শিশির না পিশির এদিকে আসো।

আমি-আমাকে বলছেন।

অর্ণা-তুমিই তো শিশির।

আমি-বলুন।(আমি আর লিনা ওনার কাছে গিয়ে।)

অর্ণা-আমার সাথে নীচে চলো।

আমি-কেনো???

অর্ণা-গেলেই দেখতে পাবে।

আমি-আমাদের কিছু দেখার দরকার নেই।আপনি যেতে পারেন।

অর্ণা-কালকের মতো ভুল করো না।

আমি-কালকে আমার কোনো ভুল ছিলোনা।

অর্ণা-যাই হোক,,,এখন আমার সাথে নীচে চলো।

লিনা-এই আপনি আচ্ছা মেয়েতো,,,ও এতক্ষণ ধরে বলছে যাবেনা যাবেনা তবুও এত জোর করছেন কেনো???

অর্ণা-আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমাদেরকে জোর করে নীচে নিয়ে যাওয়ার।বাধ্য হয়ে এসেছি সো এখন আমার সাথে চলো।

আমি-আপনি প্লিজ এখান থেকে যান।আমরা আপনার সাথে যাবোনা।

অর্ণা-আমার সাথে না গেলে তোমাদের প্রস্তাতে হবে।কারণ আমাকে আশিক পাঠিয়েছে এখানে।

লিনা-প্রস্তালে প্রস্তাবো তবুও আপনার সাথে যাবো না শিশির চল।(বলে আমায় নিয়ে নীচে চলে এলো)

অর্ণা রেগে ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আশিককে ফোন করলো।আশিক ফোন রিসিভ করলে বলে।

আশিক-হ্যালো।

অর্ণা-আশিক,,,শিশির আমার সাথে আসছে না।

আশিক-কেনো???

অর্ণা-ও ভাবছে আমরা আবার ওকে অপমান করবো।

আশিক-আমার কথা বলিসনি??

অর্ণা-তোর কথা বলায় তো চলেই গেলো।

আশিক-কি??(রেগে)

অর্ণা-হুম,,,এখন মনে হয় নীচেই আছে।

আশিক-আমার কথা শুনেও আসলো না।এর শাস্তি তো পেতেই হবে।

অর্ণা-আচ্ছা ও নীচে গেছে দেখ।

আশিক-হুম আসছে,,,আচ্ছা তুই ও আয়।

———–

আমি-আচ্ছা,,,উনি এত জোর করছিলো কেন??

লিনা-কেন আবার কালকের মত তোকে অপমানিত করতে।

আমি-হুম!!!আচ্ছা জোবানকে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বলবো।

লিনা-আচ্ছা বল।

আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে জোবানের নাম্বার টা বের করি।আর যেই মুহূর্তে জোবানকে কল করব ঠিক ওই মুহূর্তে কেও আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।আমি সামনে তাকিয়ে দেখি আশিক।

আমি-এটা কি ধরনের অসভ্যতা??(রেগে)

আশিক-এখানে অসভ্যতার কি হলো।

আমি-কি ধরনের অসভ্যতা মানে,,,একটা মেয়ের হাত থেকে এভাবে ফোন কেড়ে নেওয়া টাকি কোনো অসভ্যতা নয়।

আশিক-আমি এমন করতাম না।যদি না তুমি অর্ণার সাথে এখানে আসতে।

আমি-যাই হোক,,,এখন আমার ফোন দিন।

আশিক-আর যদি না দিই।

আমি-আমি প্রিন্সিপালকে বলে দিবো।

আশিক-ওয়াও,,,নাইস জোক।

আমি-আপনি ফাইজলামি করছেন আমার সাথে।

আশিক-না তো।

আমি-তাহলে আমাদের যেতে দিচ্ছেন না কেনো?

আশিক-কারণ তোমাদের শাস্তি আছে।

আমি-আমার তো মনে হয়না আমি এবার কোনো ভুল করেছি বলে।

আশিক-না,,,ভুল তুমি করেছো আর সেটা এখন তুমি সংশোধন করবে।

আমি-মানে???

আশিক-মনে আছে,,,ভার্সিটির প্রথম দিন তুমি আমার গাছ থেকে ফুল ছিড়ে নিয়েছিলে তাও না বলে।তাই আজ তোমাকে ওই ভুলটার শাস্তি পেতে হবে।আর শাস্তি টা হলো,,,

আমি-১ মিনিট,,,আপনি না আমাকে ওটার জন্য ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।

আশিক-কালকের ঘটনার পর তোমার এখনো মনে হয়,,,যে আমি ক্ষমা করলে ওটা ক্ষমা হয়েছে।

আমি-কি শাস্তি???(মাথা নিচু করে।)

আশিক-বাগানে গেলে দেখবে ওখানে কিছু ফুল গাছের চারা আছে।ওই চারা গুলো তোমাকে এখন রোপন করতে হবে।আর এখন মানে এখনই,,,সো যাও তোমরা তাড়াতাড়ি কাজে লেগে পরো।

আমি-শুনুন,,,

আশিক-কি??

আমি-ভুল টাতো আমার তাই এখানে লিনাকে শাস্তি দেওয়ার কোনো মানে হয় না।আমি একাই চারা গুলো রোপন করে ফেলবো।

আশিক-As your wish….

লিনা-না,,,আমিও তোর সাথে চারা,,,,

আমি-দরকার নেই,,,আমি পারবো।

আমি এবার বাগানে গিয়ে দেখি ওখানে প্রায় চৌদ্দ পনেরো টার চারাগাছ আছে।পেছনে আশিকরা দাঁড়িয়ে আছে সাথে লিনাও।আমি আর দেরি না করে চুলগুলো খোপা করে কাজে লেগে পরলাম।যখন চার পাঁচটা চারা লাগিয়ে ফেলি তখন আমার ফোনটা বেজে ওঠে যা আমি রিংটোনে বুঝি।আমি পেছনে ফিরে দেখি আশিক ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি চারা গুলো লাগিয়ে ফেললাম।তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে গায়ে আমার কাদাও লেগে গেলো।কাজ শেষে হাত পা ধুয়ে আশিকদের সামনে গেলাম।

আমি-কাজ শেষ,,,এবার ফোন দিন।

আশিক-এই জোবান কে,,,যে এতবার ফোন করে তোমাকে।ভাগ্যিস ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম নাহলে আমার কান আজকে শেষ হয়ে যেতো।

আমি-যাই হোক,,,আমার ফোনটা দিন।

আশিক-কে ছিলো বললে না তো,,,(ফোনটা দিয়ে)

আমি-আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।
(ফোনটা নিয়ে)

অর্ণা-আজকে ক্যান্টিনে শিশিরের সাথে একটা ছেলে এসেছিল দেখলাম।ছেলেটাকে শিশির জোবান বলে ডাকছিলো নিশ্চয়ই সে।তাই না???

আমি-(কিছু বলবো তার আগে আবার ফোনে কল এলো।জোবানের কল দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করে কানে দিলাম।)হ্যা হ্যালো,,,

জোবান-কই ছিলা তুমি??

আমি-ভার্সিটিতে,,,আর কোথায়।

জোবান-জানো শিশির,,,কেও আমার কল রিসিভ না করলে আমার খুব রাগ উঠে।

আমি-সরি,,,

জোবান-সরি মাই ফুট,,,জানো আমার কত টেনশন হচ্ছিল।আমি অফিস থেকে বের হওয়ার আগে তোমাকে ফোন দিয়েছিলাম।একবার কল লিষ্ট চেক করে দেখো তো কয়বার ফোন দিয়েছি।

আমি-ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই ধরতে পারিনি।

জোবান-এটার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।যাই হোক আমি ভার্সিটির সামনে আছি।

আমি-ভার্সিটির সামনে,,,তো ভেতরে আসুন।

জোবান-আমি আসতে পারবোনা।কিন্তু তুমি আর লিনা এখন আমার সামনে ২ মিনিটে আসবা।

আমি-২ মিনিট,,,কিন্তু আমিতো ভার্সিটির পেছনের দিকে।২ মিনিটে কিভাবে আসবো??

জোবান-জানিনা কিভাবে আসবে,,,বাট ২ মিনিটেই আমার কাছে আসবে।(বলে কল কেটে দিলো)

আমি কি করবো কিছু বুঝতে না পেরে জোরে দৌঁড়াতে লাগলাম।পেছনে যে আমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী আছে সেটাও ভুলে গেলাম।আমার দৌঁড়ানো দেখে লিনাও আমার পেছন পেছন দৌঁড়াতে লাগল।
অবশেষে আমরা জোবানের কাছে পৌঁছালাম।

লিনা-বাবাহ এত জোরে আর কোনোদিন দৌঁড়াইনি।

জোবান-২ মিনিটেই আসলা,,,বাহ।

আমি-না আসলে তো ভুমিকম্প হতো।

জোবান-রাইট,,,গাড়ীতে উঠো।

আমি পেছনে জোবানের সাথে বসলাম।লিনাকে আমার সাথে বসতে বললে ও সামনে গিয়ে বসে।জোবান আমাদের একটা পার্কে নিয়ে গেলো।পার্কে গেলে একজনের সামনে নিয়ে আমাকে দাঁড় করায়।কিন্তু হঠাৎ করে সামনের ব্যক্তিটাকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই আর নিচের দিকে তাকিয়ে যাই।

-চলবে