তোমার হাতটি ধরে পর্ব-১০

0
759

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_১০
#Jechi_Jahan

আমি বিছানায় শোয়া অবস্থায় জোবানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।ভাবছি আসতে না আসতেই কি আমার উপর ঝাপিয়ে পড়বে নাকি।কিন্তু উনি তেমন কিছু না করে আমাকে আবার তুলে দাঁড় করালেন আর বললেন।

জোবান-খুব সাহস বেড়েছে না তোমার?(রেগে)

আমি-কি করেছি আমি?

জোবান-কি করেছো তুমি জানোনা।

আমি-সোজাসুজি বলবেন কি করেছি??(ওনার থেকে সরে গিয়ে)

জোবান-তুমি আজকে আমার ফোন কোন সাহসে কেটেছো।আমার পুরো কথা না শুনে কেন কেটেছো তুমি ফোন??

আমি-আল্লাহ,,,এটার জন্য এমন করছেন।

জোবান-এটার জন্য এমন করছি মানে,,,তুমি জানো এটা আমার জন্য কতটা অপমান জনক।

আমি-আমি ফোন কেটেছি,,,,এটার নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে তাই না।

জোবান-তো সেটাই তো জিজ্ঞেস,,,(দেখলাম শিশির এর হাতে ব্যান্ডেজ করা)এই তোমার হাতে কি হয়েছে,,,ব্যান্ডেজ করা কেনো??

আমি-এইতো,,,পুরো কথা না শুনেই রিয়েক্ট করছিলেন।

জোবান-ওকে বলো।

আমি-আমি ভার্সিটিতে আপনার সাথে কথা বলতে বলতে গেটের সামনে পরে যাই সাথে ফোনটাও পরে যায়।তো আপনি বলুন আমি কি তখন বসা থেকে উঠবো নাকি বসে থেকেই আপনার সাথে কথা বলবো।

জোবান-ও সরি সরি।খুব ব্যাথা পেয়েছিলে??

আমি-ছিলে গেছিলো।

জোবান-আমাকে ফোন দিয়ে একবার বলা যেত না।

আমি-টেনশন করতেন তাই বলিনি।

জোবান-যাই হোক,,,যাও খাবার বাড়ো।

আমি-হুম।

————–

অর্ণা-সরি আশিক,,,

আশিক-আরে আর কতবার সরি বলবি।

অর্ণা-আমি তোকে ভুল বুঝলাম।

লিজা-হয়েছে,,এবার বন্ধ করতো তোর সরি বলা।

অর্ণা-ওকে বন্ধ করলাম।বাট আশিক তুই মেয়েটাকে এমন করে শায়েস্তা করবি এটা ভাবতে পারিনি।

আবির-ঠিক বলেছিস,,,বাট মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়ে ছিলো এটা বলতে পারবো।

আশিক-ও কষ্ট পেলে আমার কি।ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডকে অপমান করেছ শাস্তি তো ফেতেই হতো।

লিজা-তাই বলে সবার সামনে ফেলে দিবি।দোস্ত এটা না করে অন্য কোনো শাস্তি দিতি।তাও এমন করাটা তোর উচিত হয়নি।রাস্তার সব মানুষ ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আশিক-তুই কবে থেকে এদের নিয়ে ভাবা শুরু করলি??

লিজা-আশিক,,,আর যাই হোক।আমাদের রেগিং এ কোনোদিন কোনো স্টুডেন্টকে অপমানিত হতে হয়নি।

আবির-লিজা একদম ঠিক বলেছে।মেয়েটা এমনে তে ইনোসেন্স আর তুই কিনা,,,,

আশিক-তোরা এখন আমাকে দোষ দিচ্ছিস।

অর্ণা-আরে নাহ,,,তুই যা করেছিস ঠিকই করেছিস।

আশিক-তুই একমাত্র আমাকে বুঝলি।যাই হোক তোদের একটা কথা বলতে চাই।

লিজা-কি কথা???

আশিক-আজকের মেয়েটা মানে শিশির,,,ওর মনে হয় কিছু সিক্রেট আছে।

লিজা-তুই কিভাবে বুঝলি???

আশিক-কিভাবে বুঝেছি সেটা ব্যাপার না।সিক্রেট টা কি সেটাই আসল ব্যাপার।

আবির-দোস্ত,,,টেনশন দিস না তো।বল না কিভাবে বুঝলি ওর কোনো সিক্রেট আছে।

আশিক-আজকে ওর নাম জিজ্ঞেস করায় ও বলেছিলো ওর নাম শিশির রহমান।বাট কিছুক্ষণ পর আবার বললো ওর নাম শিশির চৌধুরী।ব্যাপার টা কোথায় দাঁড়ায়।

আবির-ভুলে বলেছে হয়তো।

আশিক-না না এটা ভুল হতে পারে না।কারণ শিশির ওর নাম বলার কিছুক্ষণ পরে ওই লিনা মেয়েটা ওকে বলে।”শিশির রহমান কি??শিশির চৌধুরী” বুঝলি কেনো বলছি সিক্রেট আছে।

অর্ণা-হয়তো লিনা মেয়ে টাই ভুল বলেছে।

আশিক-আমার মনে হচ্ছে না।আমার মনে হচ্ছে মেয়েটার নামই শিশির রহমান কোনো একটা কারণে হয়তো শিশির চৌধুরী বলেছে।

লিজা-বেশি মনে করিস না আমাকে বাড়ী যেতে হবে বাড়ী পৌঁছে দে।

আবির-আমিও বাড়ী যাবো তোকে ও দিয়ে আসব।

লিজা-আমার এখন যেতে হবে।

আবির-ওকে,,,দোস্ত যাচ্ছি তাহলে।

আশিক-হুম।

অর্ণা-আশিক,,,আমরাও আর বসে থেকে কি করব। চল আমরাও যাই।

আশিক-দোস্ত,,,মেয়েটাকে আমি শায়েস্তা করেছি।এখন তোর মনে কোনো রাগ নেই তো???

অর্ণা-না,,,চল।

———

আমি জোবানের সামনে বসে আছি আর জোবান বসে বসে খাচ্ছে।আমি ওনার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি।উনি একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার খাবার খাচ্ছে।

আমি-এটা কি করছেন???(রেগে)

জোবান-কি করলাম???(খাওয়া বন্ধ করে)

আমি-এভাবে কেও খায়।

জোবান-মানে???

আমি-নয় খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিন আর নয় ফোন টিপায় মনোযোগ দিন।

জোবান-ওহ,,,এটা আমার স্টাইল।

আমি-স্টাইল মানে,,,ভাতে আর কোরআনে সমান।আর আপনি ফোন টিপতে টিপতে ভাতে খাচ্ছেন।

জোবান-ওকে,,,সরি।

আমি-তাড়াতাড়ি খান।

জোবান এবার ফোন রেখে খাওয়া শুরু করলো।বেশ কিছুক্ষণ পরে গিয়ে ওনার খাওয়া শেষ হলো।উনি উঠলে আমি সবকিছু গুছিয়ে রুমে চলে যাই।
কিছুক্ষণ পর উনি রুমে এসে কিছু ফাইল নেয়।আর ওগুলা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলে।

জোবান-শিশির তুমি শুয়ে পরো আমার অফিসের কিছু ফাইল আছে ওগুলা শেষ করে আসবো।

আমি- আচ্ছা।

জোবান চলে যাওয়ার পর আমি শুয়ে পরলাম।কিন্তু আমার ঘুম আসছে না।বেশ কয়েকবার এদিক ওদিক ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু আমার ঘুমই আসছে না।অবশেষে আমি উঠে নিচে চলে এলাম।নিচে এসে দেখি জোবান সোফার সামনে বসে কাজ করছে।আমিও গিয়ে ওনার পাশে বসি।

জোবান-এ কি,,তুমি ঘুমাওনি।

আমি-না ঘুম আসছে না।

জোবান-তোমার কাছে থেকে কত আগে আমি এলাম এতক্ষণেও তোমার ঘুম হয়নি।

আমি-আরে ঘুমই আসছিলো না।

জোবান- ওকে তো এখানে বসে থাকো।

আমি- হুম।

আমি বসে বসে জোবানের কাজ দেখছি।উনি এক বার এই ফাইল দেখছে আরেকবার ওই ফাইল দেখছে।আমি শুধু বসে বসে ওনার কাজ দেখছি।
হঠাৎ জোবান আমার দিকে তাকায়।তাকায় বলতে উনি আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়েই থাকে।

আমি- কি হয়েছে???

জোবান-আমাকে ঘায়েল করার জন্য এমন করেছো??

আমি-কি করলাম???

জোবান-গায়ে ওড়না টা জড়াও।

ওনার কথায় আমি গায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার গায়ের ওড়না রা পরে গেছে।তাড়াতাড়ি ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে নিই।ভুলবশত ওড়নাটা পরে গেছে আমি কি ইচ্ছে করে ফেলেছি নাকি।কেমন করে বলছে ওনাকে ঘায়েল করার জন্য ওড়না ফেলেছি।আমি আর ওনার দিকে তাকালাম না অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলাম।

জোবান-শিশির।

আমি-হুম।

জোবান-আমার জন্য একটু কফি বানিয়ে আনবে।

আমি-একটু বসুন আমি আনছি।(উঠতে গিয়ে)

জোবান-ওই,,,

আমি-কি???

জোবান-আমার সামনে ২ টা কাফ পরে আছে।আর তুমি এখনো এটা খেয়ালই করোনি।

আমি-এগুলো কখন আনলেন???

জোবান-এগুলো আমি আগে খেয়েছি।

আমি-দূর,,,এত কথা পেছান কেনো??

জোবান-আমার কাজ শেষ।

আমি-তো চলুন।

জোবান কিছু না বলে আমাকে হুট করে কোলে তুলে নেয়।আমি অবাক হলেও কিছু বলিনা।উনি আমাকে কোলে করে সোজা রুমের ভেতর নিয়ে আসে।উনি আমাকে কোল থেকে নামানোর আগে আমি ঠাস করে কোল থেকে নেমে যাই।

জোবান-এরা কি করলা???

আমি-কই কি করলাম।

জোবান-আমি নামানোর আগে তুমি নেমে গেলে।

আমি-আব,,,কালকে ভার্সিটি আছে আমি ঘুমাই।

জোবান-ওকে যাও।

আমি-(বিছানায় শুয়ে)আচ্ছা আপনি আমায় কোলে কেনো নিয়েছিলেন???

জোবান-মাথার জন্য।(বলে ওয়াশরুমে চলে গেল)

ওনার আসার চিন্তা না করে আমি ঘুমিয়ে গেলাম।হঠাৎ মধ্যরাতে মনে হলো কেও আমার ঠোঁট চেপে ধরে আছে।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।আমি এবার দস্তাদস্তি শুরু করে দিই।জোর করে চোখ খুলে দেখি জোবান।

আমি-জোবান আপনি।আল্লাহ,,,আমি ভাবলাম কে না কে।

জোবান-ওই তুমি এত কে না কে করো কেনো।তোমার মনে ছিল না রুমে শুধু আমি আর তুমি ছিলাম।

আমি-ঘুমালে এসব মনে থাকে,,,আর আপনাকেও বলি হারি।মধ্যরাতে আমার সাথে এমন করা শুরু করে দিলেন।

জোবান-কি!ওই আমি কাছে না আসলে কি তোমার ওই সুমন ভাই আসবে।

আমি-আজব,,,এখানে সুৃমন ভাই কোথা থেকে আসলো।

জোবান-দূর,,,মুডটাই খারাপ করে দিলা।(বলে উল্টো বাইতে ফিরে শুয়ে গেলো)

আমি-হুম!!!এবার বুঝলাম রাতে কেনো কোলে নিলেন।(বলে আমিও শুয়ে পরলাম।)

আমি আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু জোবান এবারও ঘুমাতে দিলো না।উনি এবার আমার দিকে ফিরে আমাকে জরিয়ে ধরেছে।আর ওনার ধরা মানে পুরো দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা।উনি এত শক্ত করে ধরেছে যে আমি রেগে বলে উঠি।

আমি-আমি না মুড খারাপ করি কেনো ধরেছেন আমাকে?(রেগে)

জোবান-(কিছু না বলে আরো শক্ত করে ধরলো।)

আমি-(আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেলাম।)

সকালে আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য গোসল করে রেডি হতে গেলাম।একটা আকাশি রংয়ের কামিজ আর প্লাজু পরে মাথার চুল শুকাতে লাগলাম।আজ ভার্সিটিতে একটু তাড়াতাড়ি যাচ্ছি।ভাবলাম যাওয়ার সময় আজকেও লিনার কাছে যাবো।আমি এবার রেডি হয়ে জোবানের কাছে গিয়ে বসলাম।

আমি-জোবান,,,জোবান।

জোবান-হুম।(ঘুমের মধ্যে)

আমি-আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি আপনি নাস্তা করে অফিস চলে যাইয়েন।

জোবান-তোমার ভার্সিটির তো এখনো সময় হয় নাই।

আমি-এইতো,,,আমি যাচ্ছি আর কি।

জোবান-ওকে আমার জন্য ওয়েট করবো।

আমি-কেনো??

জোবান-আজ আমিও যাবো তোমার সাথে।

আমি-আরে তার কোনো প্রয়োজন নেই।

জোবান-প্রয়োজন আছে কি না আছে আমি জানি।

আমি-ওকে ওয়েট করছি।

জোবান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নেয়।রুমে এসে রেডি হয়ে আমাকে নিয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়।কিন্তু ভার্সিটিতে এসে পরলাম এক মহা মুশকিলে।ভার্সিটির সবাই কেমন করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।বিশেষ করে মেয়েরা ওনার দিকে তাকিয়ে আছে।উনি আমার হাত ধরে হাঁটছে তাই আমার একটু অস্বস্তি হচ্ছে কারণ সবার সামনে।

আমি-হাতটা ছাড়ুন।

জোবান-দরকার নেই।

আমি-সবাই দেখছে।

জোবান-দেখছো,,,আমরা কত ফেমাস।সবাই আমাদের চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।বিশেষ করে আমাকে।

আমি-হুম।(হু বুড়ার আবার ডং)

লিনা এখনো ভার্সিটিতে আসেনি তাই আমরা ক্যান্টিনে গেলাম।ক্যান্টিনে গিয়ে দেখলাম আশিক আর ওর বন্ধু বান্ধবীরা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।ওদেরকে দেখে আমার রাগ উঠে গেলো।বিশেষ করে আশিক আর অর্ণাকে দেখে।জোবানের সামনে রাগটা প্রকাশ করতে না পেরে দমে বসে রইলাম।

-চলবে