তোর অনুরাগে পর্ব-০১

0
541

#তোর অনুরাগে
#পর্ব_১
#তানজিলা_খাতুন_তানু

– আমার নাম চশমিশ রায়হান।

– কি?চশমিশ আবার কারোর নাম হয় নাকি।

– হ্যা হয় তো,একটু আগেই তো আপনি আমাকে ওই নামে ডাকলেন,নিশ্চয় আমার নামটা জেনেই ডেকেছেন তাই না।

মেয়েটার এমন কথা শুনে সকলেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছুক্ষন আগের ঘটনা…

আজকে ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন। পার্কিং এর কাছে আড্ডা দিচ্ছে একদল ছেলে। পাঁচজনের একটা ফ্রেন্ড গ্রুপ( আহসান, আহান, মাহির, রোশান, সাদ্দাম)

সাদ্দামঃ আজকে নিউ ইয়ারের ফাস্ট ডে আজকে তো একটু র্যাগিং করতেই হবে।

আহসানঃ তোরা কি একটুও শোধরাবি না।

রোশানঃ দ্যাখ ভাই আজকে তো শুধু করবো।

আহসানঃ যা ইচ্ছা কর আমি কিছু জানি না।

আহানঃ আমিও না।

মাহিরঃ ভাই একবার গেটের দিকে দ্যাখ।

সকলে মেঘের কথা শুনে গেটের দিকে তাকিয়ে শক খেয়ে গেলো, গেট দিয়ে পাঁচটা মেয়ে আসছে আর পাঁচ জনেই সাদা রঙের ড্রেস পড়ে আছে।

সাদ্দামঃ ভাই এরা তো পুরো সাদা পরি রে।

রোশানঃ আমরা পাঁচজন আর ওরাও পাঁচ জন নে আজকে এদের র্যাগিং করবো।

মেয়েগুলো ওদের পাশ দিয়ে যাবার সময় সাদ্দাম ওদেরকে দাঁড়াতে বললো। কিন্তু কি কথা বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। ওদের দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে। শুধু ওরা না সকলেই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে কারনটা ওদের পোশাক। এই ভাবে একসাথে এক ড্রেস পড়ে আহসানের গ্রুপকেও কেউ কখনো দেখেনি।

রোশান সাদ্দাম কে খোঁচা দিয়ে বললোঃ ভাই বলবি তো।

সাদ্দাম ওই মেয়েদের মধ্যে থেকে একজনকে জিজ্ঞেস করলোঃ ওই তোমার নাম কি??

মাহিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে বললোঃ আমাকে বলছেন??

সাদ্দামঃ হ্যা।

মাহিয়া মাথা নাড়িয়ে বললোঃ মাহিয়া হাসান।

সাদ্দামঃ কোন ইয়ার।

মাহিয়াঃ আজকে কোন ইয়ারের এই ইউনিভার্সিটিতে আসার কথা।

সাদ্দামঃ ফাস্ট ইয়ারের।

মাহিয়াঃ এর আগে কি আমাদের দেখেছেন???

সাদ্দামঃ না।

মাহিয়াঃ তাহলে আপনাদের এইটুকু কমনসেন্স নেয় আমরা ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট।

সাদ্দামঃ আমরা কে জানো।

দলের মাঝে থেকে একজন বলে উঠলোঃ হ্যা খুব ভালো করে জানি বড়োলোক বাপের কয়েকজন বিগড়ে যাওয়া ছেলে। যারা ইউনিভার্সিটিতে এসে জুনিয়রদের র্যাগিং করে।

কথাটা শুনে আহসান রেগে যায় আর কিছুটা রেগেই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলোঃ এই চশমিশ একদম বেশি উল্টোপাল্টা কথা বলবে না।

আহসান নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে বললোঃ তোমার নাম কি??

– আমার নাম চশমিশ রায়হান

আহসানঃ কি?চশমিশ আবার কারোর নাম হয় নাকি।

– হ্যা হয় তো,একটু আগেই তো আপনি আমাকে ওই নামে ডাকলেন,নিশ্চয় আমার নামটা জেনেই ডেকেছেন তাই না।

মেয়েটার এমন কথা শুনে সকলেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।

আহসানঃ সিনিয়ারদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় জানো না।

– আপনারা জানেন না জুনিয়ার দের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। একজন নিউ ইয়ার স্টুডেন্ট মনে কত আশা,স্বপ্ন নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পা দেয় কিন্তু আপনাদের মতো কয়েকজন বড়োলোকের বাবার অহংকারী ছেলের র্যাগিং এর কারনে তাদের সব আশা আকাঙ্খা ভেঙ্গে যায়। প্রথমদিন কতটা অমর্যাদার মধ্যে পড়তে হয় আপনি সেটা জানেন, সবাই তাদের নিয়ে হাসাহাসি করে তাদের লাইফটা নস্ট হয়ে যায় শুধু মাত্র র্যাগিং এর কারনে। আপনাদের একটা মজা একজন স্টুডেন্টের জীবনকে শেষ করে দিতে পারে সেটা আপনারা একবারও ভেবেছেন।

রাগে চিৎকার করে উঠলো আদ্রিকা।সাদ্দামরা মাথা নীচু করে আছে, আহসানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কিছু না করেও এতগুলো কথা শুনতে হচ্ছে। বাকিরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিকার দিকে এভাবে কেউ কোনোদিনও প্রতিবাদ করেনি।

নীলিঃ আদ্রি শান্ত হ।

আদ্রিকা নিজেকে সামলে নিয়ে বললোঃ এতদিন কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি বলে ভাববেন না আজকেও কেউ করবে না। এই ইউনিভার্সিটিতে আর কখনো না র্যাগিং হতে দেখি। চল সবাই।

ওরা পাঁচজন চলে গেলো। আহসান রেগে চিৎকার করে বললোঃ আপনারা দাঁড়িয়ে মজা দেখছেন যান এখান থেকে।

আহসানের ধমক শুনে সকলে চলে যায়। আহসান রাগে ফুঁসছে আর ওর বন্ধুরা ভয়ে ঢোক গিলছে আজকে একজন বিনা কারনে আহসানকে এতগুলো কথা বললো সেটা আহসান কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

মাহিরঃ আহসান।

ওই ডাক ছিলো আহসানের রাগের বর্হিপ্রকাশের জন্য যথেস্ট।

আহসানঃ আজকে শুধু মাত্র তোদের কারনে আমাকে এতগুলো কথা শুনতে হলো। আজকের পর আমার সাথে তোদের কোনো যোগাযোগ নেয়।

আহসান রেগে চলে গেলো।আহসানের পেছন পেছন আহানও গেলো।

রোশানঃ হয়ে গেলো।

ওদিকে…

নীলিঃ আদ্রি এতটা রিয়াক্ট করা তোর উচিত হয়নি।

আদ্রিকাঃ কি করবো বল আমি যে অন্যায় দেখে চুপ করে থাকতে পারিনা। আর আজকে আমাদের সাথে অন্যায় হবে সেটা আমি কিভাবে মেনে নেবো।

মারিয়াঃ সব বুঝলাম কিন্তু যদি কেউ আমাদের উপর সন্দেহ করে তাহলে তো সব প্ল্যান শেষ।

মারিয়ার কথা শুনে আদ্রির কপালে ভাঁজ পড়লো।‌সত্যি রাগের মাথায় একটা ভুল কাজ করে ফেলেছে। এখন কি হবে??

আদ্রিকা,মারিয়া, মাহিয়া,নীলি, নুপুর ওরা পাঁচজন একে অপরের প্রান ভোমড়া,একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছো ওদের পাঁচজনকে আলাদা করা যায়না। ওদের সাজ পোশাক চালচলন সবকিছুই প্রায় একই। সবাই ওদের বন্ধুত্ব দেখে মুগ্ধ।

নুপুরঃ এবার ক্লাসে চল।

ওরা পাঁচজন ক্লাসে যায় ক্লাসের সকলে ওদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,কারনটা ওরা খুব ভালো করেই জানে। ১. ওদের ড্রেস আপ আর ২. আদ্রিকার তখনের ব্যবহার।

একজন সুদর্শন পুরুষ ক্লাসে আসলো। ক্লাসের মেয়েরা তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। স্যার হালকা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ good morning students

সবাই বললোঃ good morning

স্যারঃ তোমরা নতুন স্টুডেন্ট আগে তোমাদের সাথে পরিচয় হয়ে নিই। আমি নিরব আহমেদ তোমাদের ইংলিশ টিচার। তোমরা এবার সকলে নিজেদের পরিচয় দাও।

সবাই একে একে পরিচয় পর্ব দিলো এবার পালা আসলো আদ্রিকার।

আদ্রিকাঃ আমি আদ্রিকা রায়হান।

নিরব আদ্রিকার দিকে তাকিয়ে ধমকে গেলো, আদ্রিকা পুরো সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে আছে, চুলগুলো হাত খোঁপা করা, চোখে বড়ো ফের্মের চশমা। নিরব একটু অবাক হলো ইউনিভার্সিটিতে আসে মানেই প্রচুর পরিমাণে স্টাইল, মেকাপ নিয়ে আসে, কিন্তু আদ্রিকা একদম সিম্পেল সাজে‌ আছে।।

ক্লাস শেষে…..

আদ্রিকাদের এখন আর কোনো ক্লাস নেয়, তাই ওরা বাইরে বসে আছে তখন‌ একটা মেয়ে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ এক্সকিউজ মি। তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।

আদ্রিকা একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালো,মেয়েটাকে দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না।

নীলিঃ কি কথা।

মেয়েটাঃ আমি শিয়া এই ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট। তোমরা কিছুক্ষন আগে যাদের সাথে সিনক্রিয়েট করেছো তাদের ক্লাসমেট আমি।

মেয়েটা তারপরে যা বললো তাতে ওরা চমকে উঠলো…..

#চলবে…