তোর অনুরাগে পর্ব-০২

0
396

#তোর অনুরাগে
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_২
_____________

শিয়াঃ তোমার কিন্তু কাজটা ঠিক করোনি।

মারিয়াঃ কেন?

শিয়াঃ আহসান ইউনিয়ন করে ওর সাথে ঝামেলা করা তোমাদের ঠিক হয়নি। আর সত্যি বলতে আহসান কখনোই কাউকেই র্যাগিং করে না। উল্টে সবসময় অন্য দলের হাত থেকে রক্ষা করে।

নূপুরঃ কিন্তু আমাদের তো করলো।

শিয়া আলতো করে হেসে বললোঃ ওর বন্ধুগুলো একটু দুষ্টুমি করে। তবে ওরা কখনোই তোমাদের অসম্মান করতো না। ওদের বন্ধুরা সবাই খুব ভালো বিপদে আপদে সবসময় সবার পাশে দাঁড়ায়। আর বিশেষ করে আহসান।

আদ্রিকা বুঝতে পারলো শিয়া আহসানের প্রতি দূর্বল। তাই আহসানের নামে গুনগান করতে এসেছে। তার কি তাতে অন্যায় করলে সে প্রতিবাদ করবেই।

___________

আদ্রিকা রায়হান_ গল্পের নায়িকা। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। বড়ো দাদার আদরের ছোট বোন। দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরী। চঞ্চল, ছটফটে স্বভাবের। মনটা খুব ভালো। খারাপ দিক হচ্ছে অন্যায় দেখলে নিজেকে সামলাতে পারেনা প্রচুর পরিমাণে রেগে যায় আর রিয়াক্ট করে ফেলে। আর একটা হচ্ছে প্রচন্ড পরিমানে জেদি যেটা বলে করবে তো করেই ছাড়বে।

নূপুর _ নূপূরের বড়ো দিদি আছে। পাঁচ বান্ধবীই দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরী। নূপুর একটু শান্ত স্বভাবের। আদ্রিকাকে সহ অন্যান্য বন্ধুদের খুব ভালোবাসে। কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে সবটাই সামলে নেয় নূপুর।

নীলি_ নীলির ছোট একটা ভাই আছে। নীলি স্বভাবে একটু রগচটা টাইপ। একটুতেই রেগে যায়। আর ঝগড়া লাগিয়ে দেই সবার সাথে। নীলির জন্য অনেক জায়গায় ওদের ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। তবে কখনোই বন্ধুত্বের হাত ছাড়েনি একে অপরের।

মাহিয়া ও মারিয়া_ মাহিয়া আর মারিয়া দুই জমজ বোন। তবে ওদের দেখলে সহজে কেউ বলতে পারবে না ওরা জমজ বোন। দুজনের চেহারায় মিল থাকলেও দুজনে একই রকম না। দেখতে + স্বভাবেও দুজন দুজনের থেকে আলাদা প্রকৃতির।মাহিয়া একটু ছটফটে স্বভাবের আর মারিয়া একটু ভীতু।

ওরা সকলেই এম.এ ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। ওদের বন্ধুত্ব একটা অপরূপ সৌন্দর্যের বন্ধন। পাঁচজন একে অপরের প্রান ভোমরা।
________________

অন্যদিকে…

আহসান প্রচন্ড পরিমানে রেগে গেছে আজ পর্যন্ত কেউ ওকে এভাবে বলেনি আর আজকে একটা পুঁচকে মেয়ে এভাবে এতগুলো কথা শুনিয়ে চলে গেলো ভাবতেই রাগে মাথাটা ফেটে যাচ্ছে। আহসানের মনে হচ্ছে সবকিছু শেষ করে দিতে।

আহানঃ আরে ভাই এত রেগে আছিস কেন?

আহসানঃ একদম বেশি কথা বলবি না আজকে তোদের জন্য আমাকে এত গুলো কথা শুনতে হলো।

আহানঃ আরে আমি তো কিছু করিনি তাহলে আমার উপরে রাগ দেখাস কেন?

আহসানঃ তুই একদম কথা বলবি না আমার রাগ হচ্ছে খুব।

আহানঃ আচ্ছা শান্ত হ এবার।

_____________

আহসান হোসেন_বাবা মায়ের বড়ো সন্তান। আহসানের একটা ছোট বোন আছে সানা। আহসানের খুব আদরের সানা।আহসান দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দর। একটু রাগী,জেদি কিন্তু মনটা অনেকটাই ভালো। কখনোই কারোর ক্ষতি করে না। সবসময় চেষ্টা করে মানুষকে সাহায্য করার। গুরুজনদের সবসময় শ্রদ্ধা করে চলে। আর ওর বন্ধুরা ওর প্রান। তবে কেউ মিথ্যা দোষারোপ করলে সেটা মেনে নিতে পারে না। আর রেগে গেলে থামানোটা একটু কষ্টকর।

আহান_ আহানের একটা বড়ো দিদি আছে। মা আর দিদিকে নিয়ে ছোট পরিবার। বাবা অনেক আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। মা একজন টিচার। আহান খুবই শান্ত প্রকৃতির। সবকিছুকে সামলে নেওয়ার ক্ষমতা ওর আছে। নিজের শান্ত প্রকৃতির জন্য সবার কাছে ওর নাম ওহ আছে।

রোশান_ রোশান বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। রোশান একটু স্বভাবে একটু উল্টো ধরনের। ফ্ল্যাটিং এর নম্বর ওয়ান। বড়োলোক বাবার একমাত্র সন্তান হলে যা হয় আরকি।

সাদ্দাম_ সাদ্দাম উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবার নিজস্ব কোম্পানি আছে‌,কাজের জন্য প্রায় সময়ই দেশের বাইরে থাকেন। সাদ্দাম স্বভাবে একটু রগচটা টাইপের। একটুতেই রেগে যায়। সাদ্দামের একটা ছোট বোন আছে।

মাহির_ মাহির মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বড়ো দিদি, ছোট ভাই, মা, বাবাকে নিয়ে পরিবার। বাবা একজন চাকুরীজীবি। একটা বেসরকারি কোম্পনিতে করেন। আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবেই সংসার চলে যায়। ওর অন্য বন্ধুরা বড়োলোক বাবার সন্তান হলেও কখনোই ওকে দূরে ঠেলে দেয়নি সবসময় আগলে রেখেছে ওরা। ওদের বন্ধুত্ব এভাবেই অটুট থাকুক চিরকাল।

__________________

পরেরদিন…

আদ্রিকারা ইউনিভার্সিটিতে এসেছে। পাঁচজন কেই দারুন লাগছে। আহসানরা নিজেদের জায়গায় আড্ডা মারছিলো,ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো পাঁচজন মেয়ে।

আহসান আজকে ঠিক করেই রেখেছে ওদের টাইট দেবে বিশেষ করে আদ্রিকাকে।

ওরা পাশ কাটিয়ে চলে যাবার সময় আহান বললোঃ এক্সকিউজ মি।

আদ্রিকা পেছন ফিরে বললোঃ কিছু বলবেন।

আহানঃ সরি।

আদ্রিকা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আহসানের বন্ধুরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আহানের দিকে।

নীলিঃ সরি কিসের জন্য?

আহানঃ আসলে আমার বন্ধুরা তোমাদের র্যাগিং করতে এসেছিলো তার জন্য।

মারিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ জুতো মেরে গোরু দান করতে এসেছেন।

আহানঃ গোরু দান কিনা জানি না তবে ভুল করলে অনুতপ্ত হতে হয় এটা জানি। আর তোমাদের ভালোর জন্যই বলছি বেকার বেকার সিনিয়ার দের সাথে ঝামেলা করো না তাহলে অসুবিধাই পড়বে।

আদ্রিকা এতক্ষন ধরে সব কথা শুনলেও শেষ কথাটার উত্তরে বললোঃ কে ঝামেলাই পড়বে সেটা তো সময় বলবে।চল সবাই।

ওরা পাঁচজন চলে যায়। আহসান রেগে কটমট করে আহানের দিকে তাকিয়ে বললোঃ কি দরকার ছিলো যেছে গিয়ে চড় খাওয়ার।

আহানঃ তুই বুঝবি না।

মাহিরঃ তুই কি চাইছিস বলতো।

আহানঃ আমি চাইনা রাদিমের জালে ওরা ফেঁসে যাক। তাই ওদের কথাগুলো বললাম।

রাদিমের কথা বলাতে আহসানের কপালে ভাঁজ পড়লো। যদি আহানের ভাবনাটা সত্যি হয় তাহলে আহসান নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। তবে ওই মেয়েকেও ছেড়ে দেবে না।

ওদিকে…

প্রথম ক্লাসটা নিরব আহমেদের। নিরব ক্লাসের সকলের ক্রাশ। নিরব ক্লাসের আসতেই সকলেই হা করে তাকিয়ে থাকতে লাগলো ওর দিকে। নিরব একটা মুচকি হাসি দিয়ে ক্লাসে মন দিলো।

নিরব আহমেদ দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দর। সমস্ত মেয়েদের ক্রাশ। নিরব বলতে সকলেই পাগল। নিরবের বাবাও একজন প্রফেসর। নিরব বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।

ক্লাস শেষে…

আদ্রিকারা ক্লাস রুম থেকে বের হতে যাবে তখনি পিওন এসে বললোঃ এখানে আদ্রিকা রায়হান কে?

আদ্রিকা ঘাড় নাড়িয়ে বললোঃ আমি।

পিওনঃ তোমাকে প্রিন্সিপাল স্যার একবার ডেকেছেন।

আদ্রিকা মাথা নাড়িয়ে বললো আসছে। ক্লাসের সকলেই ওদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে‌।আদ্রিকা কোনো কিছু পাত্তা না দিয়ে বললোঃ চল আমার সাথে।

ওর বন্ধুরা সকলে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে এসে দেখলো আহসানের বন্ধুরাও দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিকা ওদের পাত্তা না দিয়ে ভেতরে যেতে যাবে তখনি পিওন বললোঃ স্যার শুধু আদ্রিকাকে যেতে বলেছে।

আদ্রিকা ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ তোর থাক আমি আসছি।

আদ্রিকা ভেতরে চলে গেলো। সাদ্দাম মাহিরকে খোঁচা দিয়ে বললোঃ ভাই কেসটা কি প্রিন্সিপাল স্যার ওই মেয়ে আর আহসানকে ডেকে পাঠালো কেন?

মাহিরঃ আমি কিভাবে জানবো। চুপচাপ থাক।

সাদ্দাম ঠিক করে দাঁড়াল। আদ্রিকা প্রিন্সিপালের রুমের ভেতরে গিয়ে শান্ত কন্ঠে বললোঃ স্যার আমাকে ডেকেছিলেন।

প্রিন্সিপালঃ আরে মা…

আদ্রিকা ওনাকে বলতে না দিয়ে বললোঃ আমার এসব ভালো লাগে না। যেটা বলার বলুন প্লিজ।

প্রিন্সিপাল স্যার একটু ইতস্তত করে বললোঃ আহসান আর আদ্রিকা আমি তোমাদের হাতে কিছু দায়িত্ব দিতে চাই।

আহসানঃ‌কি স্যার।

#চলবে…..