তোর অনুরাগে পর্ব-০৫

0
304

#তোর অনুরাগে
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৫

_____________

আহসানের টিম স্টেজে এন্ট্রি নিলো। দর্শক মহল থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে। সবাই চিৎকার করছে আহসান,আহান, মাহির রোশান সাদ্দাম বলে।একটা দূর্দান্ত পারফরম্যান্স করে স্টেজ থেকে নেমে আসলো আহসান রা।

আহসান স্টেজ থেকে নেমে আদ্রিকার সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ এবার তোমাদের পালা।

আদ্রিকাঃ ইয়েস।

সাদ্দামঃ সবাই কিভাবে উৎসাহ দিচ্ছিলো দেখেছো।

মাহিয়াঃ আমাদের পারফরম্যান্স এখনো বাকি আছে।

রোশানঃ আবার দ্যাখো স্টেজে গিয়ে পুরোটা কমপ্লিট করতে পারো কিনা‌।

নীলিঃ আমরা কি পারি আর কি পারিনা সেটা সময় বলবে।

কিছুক্ষন পর…

আদ্রিকারা স্টেজে উঠবে।দর্শক মহল চুপচাপ,কি হবে কেউ বুঝতে পারছে না।৫টা মেয়ে স্টেজে এন্ট্রি নিলো, সামনের দিকে তাকাতেই সবাই চেঁচিয়ে উঠলো। পাঁচজন কেউ অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগছে। ( বিঃ দ্রঃ_ গান সম্পর্কে আমার নেয়। তাই কোনো গান লিখলাম না।) পুরো পারফরমেন্সটাই সবাই একদম চুপ করে ছিলো কোনো আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়নি। অনুষ্ঠান শেষে সবাই চেঁচিয়ে উঠলো। আদ্রিকাদের ডান্স দেখে আহসান রাও চমকে উঠলো।

আদ্রিকা স্টেজ থেকে নেমে ওর বন্ধুদের জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

কিছুক্ষন পর…

প্রতিযোগীতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হচ্ছে। গ্রুপ ডান্সে বিজয়ী হয়েছে আদ্রিকারা। ওদের স্টেজে আসার জন্য বলা হলো। পুরস্কার টি হাতে তুলে দিলেন প্রিন্সিপ্যাল স্যার।পুরস্কার নিয়ে নামতেই সকলে অভিনন্দন জানাচ্ছে। আহসান কোন এক কারনে আদ্রিকার উপরে রাগ করতে পারলো না। ওদের নাচ দেখে ওহ মুগ্ধ হয়ে গেছে।

নিরবঃ আদ্রিকা‌ কনগ্রাচুলেশন।

আদ্রিকাঃ থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।

এরই মাঝে কেটে যায় একটা মাস। আদ্রিকা আর আহসানের ঝগড়া হয়েই চলেছে। দুজনে যখন তখন লেগে যায়। আর অন্য দিকে আদ্রিকার সাথে নিরবের একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আদ্রিকারা বসে আড্ডা মারছে এমন সময় একজন এসে বললোঃ আদ্রিকাকে নিরব স্যার ওনার কেবিনে ডাকছেন।

ছেলেটা চলে যেতেই আদ্রিকার বন্ধুরা হাসতে লাগলো।

নীলিঃ আমি সিওর স্যার এর মনে তোর জন্য কিছু একটা চলছে

আদ্রিকাঃ হচ্ছিলো তোর জন্য।

মারিয়াঃ আমার ওহ তাই মনে হয়।

আদ্রিকাঃ ধ্যাত।

আদ্রিকা চলে যেতেই ওর বন্ধুরা হাসতে লাগলো। আদ্রিকা স্যারের কেবিনে গিয়ে না করতেই স্যার ওকে ভেতরে আসতে বললো।

আদ্রিকাঃ ডেকেছিলেন স্যার।

নিরবঃ আমার তোমাকে কিছু বলার ছিলো।

আদ্রিকাঃ কি

নিরবঃ আমরা কি বন্ধু হতে পারি।

আদ্রিকা চমকে উঠলো। নিরব স্যার ওকে ফ্রেন্ড হবার রিকুয়েস্ট দিচ্ছে এটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

নিরবঃ আদ্রিকা হবে কি ফ্রেন্ড।

আদ্রিকাঃ‌ হঠাৎ করে আমাকে বন্ধু করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন কেন।

নিরবঃ ভালো লাগলো তাই।

আদ্রিকা ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিরবের দিকে। নিরবের কথা বার্তা অন্যরকম লাগছে। আদ্রিকা অনেক ভেবে চিন্তে নিরবের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো। আদ্রিকা বাইরে আসতেই ওর বন্ধুরা ওকে চেপে ধরলো‌ আদ্রি সবটা সবাইকে বলাতে ওরা হাসতে লাগলো।

আহানঃ কি নিয়ে এতটা হাসাহাসি হচ্ছে শুনি।

আহানের গাল শুনে‌ সকলে সামনে তাকিয়ে দেখলো আহসান,আহান, মাহির রোশান সাদ্দাম দাঁড়িয়ে আছে।

নীলিঃ নিরব স্যার আদ্রিকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে।

আহসান সহ ওর বাকি বন্ধুরা নীলির কথা শুনে অবাক হলো। আহসান আদ্রির দিকে তাকালো। আদ্রি মাথাটা নীচু করে আছে। বিষয়টা নিয়ে সবাই আদ্রিকে নিয়ে মজা করলেও বিষয়টা আহসানের ঠিক ভালো লাগলো না। বিষয়টা বিরক্ত লাগছিলো তাই ওখান থেকে চলে গেলো। আহান সহ বাকিরা বিষয়টা খেয়াল করলেও কিছু না বলে আড্ডা দিতে থাকে।

১সপ্তাহ পর…

নিরব আর আদ্রির ফ্রেন্ডশিপ ভালোই চলছে। দুজনে দুজনের অনেকটাই ক্লোজ হয়ে উঠেছে। বিষয়টা সবাই ভালো ভাবে নিলেও আহসানের এসব একদম ভালো লাগছে না।

আদ্রিরা বসে আড্ডা দিচ্ছে।‌ওদের দলে যোগ দিলো আহানরা। এখন প্রায় সময়ই আদ্রি আর আহানদের একসাথে দেখা যায়। আহান আদ্রিকাকে ছোটবোনের মতো কেয়ার করে। আর বাকিদেরও।

আদ্রিঃ এই যে মিষ্টাররা আপনারা কবে বিয়ে করবেন।

আহানঃ এখন না তোরা সবাই আগে বিদায় হ তারপরে আমরা বিয়ে করবো।

আদ্রিঃ কতদিন একটাও বিয়ে বাড়ি যায়নি।

সাদ্দামঃ নিজে করে নাও না।

আদ্রিঃ পাত্র কোথায় পাবো।

রোশানঃ কেন আমাদের নিরব স্যার আছে তো।

রোশানের কথায় সকলে হাসতে লাগলো।

আদ্রিঃ ধ্যাত তোমরা একেবারে যা তা আমি আর নিরব তো শুধুই ফ্রেন্ড।

সাদ্দাম কথাটা একটু টেনে বললোঃ নিরব… বাবা স্যার থেকে নিরবে চলে গেলো এতদূর

আদ্রিঃ আহান দা তোমার বন্ধুগুলো কে বারন করো এমন করতে ভালো‌ হবে না কিন্তু।

আহানঃ এই তোরা কেন আমার বোনটার পেছনে লাগছিস বলতো।

রোশানঃ আচ্ছা তাহলে অন্য গুলোর পেছনে একটু লাগি।

কথাটা বলেই রোশান নীলির মাথায় একটা চাঁটি মারলো।‌নীলি সহ সকলেই হতভম্ব রোশানের কাজে।

নীলি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললোঃ এটা কি হলো।

রোশান দাঁত বের করে বললোঃ আদ্রিকে আহান জ্বালাতে বারন করলো কারন আদ্রি আহানের বোন
তাই। কিন্তু তোমাকে তো আর জ্বালাতে বারন করেনি তাই না।

নীলিঃ তাই বলে আমাকে চাঁটি মারবেন আপনি।

রোশানঃ এই আপনি বলা বন্ধ করো তো। আমি তোমার থেকে অনেক বড়ো নয় যে আপনি বলবে।

নীলিঃ তো কি করবো।

রোশানঃ একটু প্রেম করো আমার সাথে।

নীলিঃ ছিঃ আপনার সাথে প্রেম করা আর কচু গাছে গলায় ফাঁস দেওয়া একই ব্যাপার।

রোশানঃ কেন কেন।

নীলিঃ আচ্ছা বলূন তো আপনার ক”টা লাগে, আজ একে কাল ওকে।

নীলির কথা শুনে রোশানের মুখটা চুপসে গেলো।

নীলি একটু থেমে বললোঃ দেখুন অন্য কারোর সাথে‌ এভাবে ফ্ল্যাটিং করবেন আমার সাথে না। একটা মেয়ের মন পেতে গেলে তাকে ভালোবাসতে হয় এভাবে ফ্ল্যাটিং নয়।

রোশান ওখান থেকে উঠে চলে যায়।রোশানের সাথে সাদ্দাম মাহির ও চলে যায়। আহান যাবার আগে নীলির দিকে তাকিয়ে বললোঃ রোশান সবার সাথে ফ্ল্যাটিং করলেও কখনোই কারোর সাথে প্রেমের নাটক করেনি। তাই তূমি যতটা খারাপ ওকে ভাবছো ওহ ততটাও খারাপ নয়।

আহান চলে যেতেই নুপূর বললোঃ নীলি তুই হঠাৎ এভাবে রিয়াক্ট কেন করলি আর রোশান দা তো একটু মজাই করছিলো তুই এভাবে হাইপার হয়ে উঠলি কেন।

নীলি চুপ করে আছে। নুপূর,মাহিয়া মারিয়া ওকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু নীলি একটাও কথা বলছে না। নীলির দিকে তাকিয়ে আদ্রিকা বললোঃ নীলি তুই তো কখনোই আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে রাখিস না তাহলে কেন আজকে চুপ করে আছিস। আমরা কি তোর বন্ধু হয়ে উঠতে পারিনি। আমরা কি তোর মনে আমাদের জন্য বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারিনি। বল।

নীলিঃ এভাবে বলিস না তোরা।

আদ্রিকাঃ তাহলে কি হয়েছে সত্যি টা বল।

নীলি একটু চুপ থেকে বললোঃ আমি বলেছিলাম না তোদের বাপি আমার জন্য ওনার বন্ধুর ছেলেকে ঠিক করে রেখেছেন।

আদ্রিকাঃ হুম তো কি হয়েছে।

নীলিঃ সেই ছেলেটা আর কেউ নয় সেটা রোশান।

আদ্রিকা সহ সকলেই চমকে উঠলো।

মাহিয়াঃ কি বলছিস এসব।

নীলিঃ হুম ঠিক বলছি।

মারিয়াঃ তাহলে রোশান কি তোকে চিনতে পেরেছে।

নীলিঃ না। রোশান আমাকে আগে দেখেনি তাই চিনতে পারেনি কিন্তু আমি ওর ছবি দেখেছিলাম তাই প্রথম দিনেই ওকে বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু শিওর ছিলাম না। পরে ওর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম ওই সেই ।

আদ্রিকাঃ সব বুঝলাম কিন্তু তখন তুই এভাবে…

নীলিঃ রোশানের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে আমি ওর বদ অভ্যাস গুলোর কথা জানতে পারি। আর ওহ যে মেয়েদের সাথে ফ্ল্যাটিং করে এটা আমার ভালো লাগেনি তাই এরকম ব্যবহার করেছি। যাতে এরকম কাজ না করে।

মাহিয়াঃ তোর কি মনে হয় রোশান দা আর এরকম করবে না।

নীলিঃ জানি না।

আদ্রিকাঃ আর ফ্ল্যাটিং করবে না।

নুপূর ভ্রু কুঁচকে বললোঃ তুই এতটা শিওর কিভাবে।

আদ্রিকাঃ দ্যাখ আমরা এতজন থাকতে রোশান কিন্তু নীলির মাথায় চাঁটি মারলো তাই আমার মনে হয় নীলির কথাগুলো রোশানদার মনে দাগ কাটবে।

নীলি কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আদ্রিকার ফোনে একটা মেসেজ আসলো,সেটা দেখে আদ্রিকা অনেকটা অবাক হয়ে গেলো।

#চলবে….