তোর অনুরাগে পর্ব-০৪

0
366

#তোর অনুরাগে
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৪

__________

সাদ্দামঃ এই মাহি এই ফুলটা ওখানে ঠিক করে লাগাও তো।

মাহিয়া রাগে কটমট করে তাকিয়ে,সাদ্দামের হাতে ফুলের ঝুড়িটা দিয়ে বললোঃ পছন্দ না হলে নিজে করে নিন।

মাহিয়া গটগট করে চলে গেলো। সাদ্দাম হা করে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললোঃ মেয়ের তেজ আছে।

ওইদিকে..

নীলি হাতে করে কিসব নিয়ে আসছিলো হঠাৎ কেউ ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। নীলি তো রেগে বোম। সামনে না তাকিয়েই বলতে শুরু করলোঃ আরে চোখে কি অন্ধ নাকি এভাবে কানার মতো হাঁটেন কেন।নাকি চোখটাকে গালফ্রেন্ডের কাছে রেখে এসেছেন।

নীলির কথা শুনে মাহির তো রেগে বোম। মাহির নীলি কে একটা ধমক দিয়ে বললোঃ নিজে নিচের দিকে তাকিয়ে চলছিলে। আর আমাকে এতগুলো কথা শোনাচ্ছো কোন সাহসে শুনি।

নীলি মেকি হাসি দিয়ে বললঃ আমাকে ডাকছে আমি গেলাম।

নীলি ওখান থেকে চলে যায়। মাহির বিরক্ত স্বরে বিরবির করে বললোঃ‌ অসহ্য সব।

আর অন্যদিকে…

নূপুরঃ আদ্রি সামলে কর নাহলে পড়ে যাবি।

আদ্রিকা ফুল লাগানোর জন্য মই এর উপর উঠেছে।

মারিয়াঃ আমার কিন্তু খুব ভয় লাগছে। আদ্রি না পড়ে যায়।

মারিয়ার কথার উত্তরে আদ্রিকা কিছু বলবে বলে যেই পেছন ফিরেছে ব্যাস, মারিয়ার মুখটা হা হয়ে গেছে। নূপুর আদ্রিকা বলে চিৎকার করে উঠলো।দুটো হাঁস আর কচ্ছপের গল্পের মতো আদ্রিকার অবস্থা। আদ্রিকা ভয়েতে চোখকে খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। এমন সময় ওর মনে হলো ওহ নীচে পরেনি হাওয়ায় ভাসছে। তাড়াতাড়ি চোখ মেলে দেখলো ওহ আহসানের কোলে।

আদ্রিকা আহসানের দিকে একবার তাকিয়ে সবার দিকে একপলক দেখে নিলো। সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।যদিও এই দিকটাই ওরা ছাড়া কেউ নেই।

আহসান আদ্রিকাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললোঃ কি ভারী রে বাবা।

আদ্রিকাঃ আমি কি আপনাকে বলেছিলাম আমাকে কোলে নিতে। বলিনি তো তাহলে বেশি কথা বলবেন না।

আহসান সহ সকলেই আদ্রিকার দিকে তাকিয়ে আছে।

রোশানঃ আহসান তোমাকে ঠিক সময়ে না ধরলে তুমি এতক্ষনে উপরে আর না হলে হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে।

আদ্রিকাঃ উনি নিজের ইচ্ছায় আমাকে ধরেছেন। আর এক মিনিট আপনি আগে আমাকে সরি বলুন তো।

আহসানঃ সরি কেন?

আদ্রিকাঃ বারে আপনি আমাকে না বলে আমার পারমিশন না নিয়ে আমাকে টাচ করলেন তার জন্য সরি বলুন।

আহসান রাগ নিয়ে বললোঃ পাগলের মতো কথা বলো না। মৃ*ত মানুষকে বলবো আপনাকে কি স্পর্শ করবো।

আদ্রিকাঃ আমি কি মৃ*ত নাকি।

আহসানঃ কপাল, আচ্ছা বলো একজন মানুষ ম*রতে বসেছে তাকে কি জিজ্ঞেস করবো আমি কি আপনাকে বাঁ*চাবো।

আদ্রিকাঃ আমি ম*রতে বসেনি।

আহানঃ আদ্রি তোকে ঠিক সময়ে আহসান না ধরলে একটা বড়ো অ্যা*ক্সিডেন্ট হয়ে যেতো। ঝগড়া না করে বাকি কাজ গুলো শেষ কর।

আদ্রিকা আহসানকে একটা ভেংচি কেটে নিজের কাজে চলে গেলো। আহসান বির বির করে বললোঃ আস্ত একটা শয়তান।

সন্ধ্যাবেলা…

আহসান সোফায় বসে মোবাইল টিপছে। ওর ছোট বোন সানা এসে বললোঃ দাভাই আমাকে কালকে নিয়ে যাবি।

আহসান ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কোথায়।

সানাঃ কালকে তো তোদের ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান আমাকে নিয়ে চল না।

আহসান বোনের দিকে তাকিয়ে বললোঃ আচ্ছা সময় মতো রেডি হয়ে থাকিস নাহলে কিন্তু রেখেই চলে যাবো। তুই যা লেট করিস রেডি হতে।

সানাঃ দাভাই ভালো‌ হচ্ছে না কিন্তু।

আহসান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললোঃ কথাটা মনে রাখিস পেত্মী।

পরেরদিন….

সকালে যথারীতি সবাই রেডি হয়ে ভার্সিটিতে পৌঁছে যায়। আদ্রিকা স্টেজের ওদিকে দেখছিলো হুট করেই ওর কাঁধে কেউ একজন হাত রেখে ডাকতে থাকে।

আদ্রিকা চমকে উঠে সামনে তাকিয়ে আরেকদফা অবাক হয়ে গেলো। আদ্রিকাকে ডাকা ব্যক্তিটি নিরব।

আদ্রিকা অবাক চোখে বললোঃ স্যার আপনি।

নিরবঃ হ্যাঁ আমি কেন অন্য কাউকে আশা করে ছিলে নাকি

আদ্রিকাঃ সেটা নয় তবে আপনাকে আশা করিনি।

নিরব মুচকি হাসি দিয়ে আদ্রিকার দিকে একপলক তাকিয়ে বললোঃ একটা কথা বলার ছিলো।

আদ্রিকা ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কি

নিরবঃ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে তবে

আদ্রিকার মুখটা হাঁ হয়ে গেছে স্যার ওর প্রশংসা করছে সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

নিরবঃ তবে কপালে একটা নীল টিপ আর মাথায় বেলী ফুলের মালা দিলে আরো সুন্দর লাগতো।

আদ্রিকা আকাশ থেকে পড়ছে। নিরব আরো কিছু বলতে যাবে তখনি ওকে কেউ একজন ডাকলো নিরব আদ্রিকাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। আদ্রিকা তখনো শকের মধ্যে আছে,নিরবের ব্যবহার ওর বোধগম্য হলো না। এরই মধ্যে ওখানে উপস্থিত হলো আদ্রিকার ফ্রেন্ডগ্রুপ। নূপুর আদ্রিকাকে ধাক্কা দিয়ে বললোঃ কি হলো।

আদ্রিকা নূপুর এর কথায় বাস্তবে ফিরে এসে মাথা নাড়লো। নীলি আদ্রিকার দিকে তাকিয়ে বললোঃ কি ব্যাপার রে। আর নিরব স্যার তোকে কি বলেছিলেন।

আদ্রিকাকে সবাইকে সবটা বললো। নিরবের করা কর্ম কান্ডে আদ্রিকার বন্ধুরাও খুব অবাক হলো।

মারিয়াঃ স্যার তোকে এভাবে বলল।

আদ্রিকাঃ হুম

মাহিয়াঃ তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে নিরব স্যার কোনো ছাত্রীকে নয় বরং তার প্রেমিকাকে এই কথাগুলো বলছেন।

নূপুরঃ আবার স্যার তোকে পছন্দ করে না তো।

নূপূরের কথায় আদ্রিকা সহ বাকিরা চমকে উঠলো। আদ্রিকার মনের মধ্যে একটা অন্য রকম কিছু একটা ফিল হলো। আদ্রিকা সবটা মাথা থেকে বের করে বাকিদের উদ্দেশ্য বললোঃ এসব বাদ দে। আমাদের আমাদের লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে।

আদ্রিকার কথা শুনে‌ সকলে মাথা নাড়লো।

অন্যদিকে…

আহসানের সাথে সানাকে দেখে চমকে উঠলো আহান। সানার পড়নে একটা সাদা রঙের গাউন। চুলগুলো খোলা আছে। সুন্দর লাগছে। আহান একপলক তাকিয়ে চোখটা নামিয়ে নিলো। এভাবে তাকানো তার সাথে না। সানা আহানকে বললোঃ কেমন আছেন?

আহানঃ ভালো তুমি।

সানাঃ ভালো।

আহসান সানাকে বললোঃ এদিক ওদিক কোথাও যাবি না সাবধানে থাকবি বুঝেছিস।

সানা মাথা নাড়লো।সানা আহসানের বন্ধুদের সাথে টুকটাক কথা বলছে সবাই সানাকে খুব ভালোবাসে বোনের মতো। কিন্তু আহান সেটা পারেনি, সানার প্রতি নিজের অনুভূতি গুলো অন্যরকম সেটা বুঝতে‌ পেরে যতটা সম্ভব সানাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।

আদ্রিকা কোথা থেকে হুট করে এসে আহানের সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ তোমার সাথে আমার কথা আছে।

আহানঃ কি কথা।

আদ্রিকাঃ ওদিকে চলো্

আহান কিছু বলার আগেই আহসান বললোঃ আহান কোথাও যাবে না যা বলার সবার সামনেই বলো।

আদ্রিকা রাগে কটমট করে তাকালো আহসানের দিকে। যেন এক্ষুনি ওকে গিলে খাবে।

আদ্রিকাঃ আহানদা তুমি চলো।

আহসানঃ আহান যাবি না।

আদ্রিকা দাঁতে দাঁত চেপে বললোঃ তুমি যাবে হ্যা কি না।

আহসানঃ যাবে না ওহ।

আদ্রিকাঃ যাবে

আহসানঃ যাবে না।

দুজনে দুজনের মধ্যে তর্ক করতে থাকে। আহসানের ও আদ্রিকার বন্ধুরা ওদের দিকে বিরক্তের চোখে তাকিয়ে আছে। আর সানা হা করে তাকিয়ে আছে। তার দাভাই কারোর সাথে ঝগড়া করছে সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

নূপুর বিরক্ত হয়ে বললোঃ আহ আদ্রি এবার চুপ কর তো।

আদ্রিকা চুপ করে গেলো।

আহানঃ এই তোরা সবসময় এত ঝগড়া করিস কেন?

আদ্রিকা্ঃ উনি তো।

নূপুরঃ চুপ কর।আর আহান দা প্লিজ এদিকে আসুন কিছু কথা আছে।

আহানঃ ওকে।

আহান ওদের সাথে চলে গেলো। স্টেজে একটার পর একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। এবার শুরু হবে গ্রুপ ডান্স কম্পিটিশন। ৫ টা (৩টে মেয়ে গ্রুপ,আর ২টো ছেলে গ্রুপ) গ্রুপ ডান্স করবে,যেই গ্রুপের ডান্স সবথেকে ভালো হবে তারাই হবে আজকের বিজয়ী।

এবার পালা আহসানদের গ্রুপ। স্টেজে ওদের যাবার জন্য ঘোষনা করা হলো, দর্শক মহল থেকে আহসান,আহান নাম শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। কি হবে কে জিতবে প্রতিযোগীতায়।

#চলবে…