#তোর অনুরাগে
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৭
__________
– এসব কি বলছিস,তোকে তো আমি।
– আমাকে কিছুই করতে পারবে না। তোমাদের খেলা শেষ,ধরা পড়ে গেছো তোমরা।আর আমি এটাও জানি তুমিই লিডার নয় তবুও একটা কথা আছে না কান টানলে মাথা আসে।তোকে দিয়েই আমার কাজটা হাসিল করবো।
সামনের মানুষটা কাঁপতে লাগলো। কি হবে এবার। অন্যের জন্য পাতা ফাঁদে নিজেই যে জড়িয়ে পড়লো।এই বিপদ থেকে বাঁচবে কিভাবে।
– সাগর কখনোই কাঁচা কাজ করে না এটা তোদের বোঝা উচিত ছিলো।
সাগরের হাতের বাঁধন গুলো খুলে দিলো লোকগুলো আর সামনের লোকটাকে ধরে নিয়ে চলে গেলো।
সাগর বাঁকা হেসে কাউকে একজনকে ফোন করে বললোঃ কাজ হয়েছে। প্ল্যান সাকসেসফুল।
অপর প্রান্তের মানুষটাই একটা বাঁকা হাসি দিলো। নিজেদের গন্তব্যের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ওরা। আর একটু অপেক্ষা তার পরেই সবকিছু সত্যি সকলের সামনে চলে আসবে। অন্যায়কারী শাস্তি পাবে।
২দিন পর….
সাগর মিরাজ অর্থাৎ সেদিনের লোকটাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে।
সাগরঃ আমাদের যা যা বলেছিস সবকিছু সঠিক তো।
মিরাজঃ হ্যা সব সঠিক।
সাগরঃ গুড।
সাগর ফোনে সবকিছু কোনো একজনকে জানালো।
ওদিকে….
আদ্রিকা হেঁটে যাচ্ছে একা একা হুট করে কিছুজন লোক ওকে তুলে নিয়ে গেলো। আদ্রিকা অনেক চেষ্টা করছিলো কিন্তু পেরে উঠলো না।
আদ্রিকা কে খুঁজে না পেয়ে ওর বন্ধুরা চিন্তিত হয়ে পড়লো। একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না।
আহানঃ কি হয়েছে তোমাদের এরকম লাগছে কেন?
নূপূরঃ আদ্রিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কথাটা শুনে সকলেই চমকে উঠলো। আহসানের মনে হলো কেউ যেন ওর কাছ থেকে কিছু একটা কেড়ে নিচ্ছে,দম বন্ধ লাগছে ওর।
রোশানঃ আদ্রি কে পাওয়া যাচ্ছে না মানে।
মাহিয়াঃ হ্যা ফোনটাও তুলছে না। আর না কোথাও গেছে আমার মনে হচ্ছে কেউ ওকে কিডন্যাপ করেছে।
আদ্রিকে পাওয়া যাচ্ছে না কথাটা গোটা ভার্সিটিতে ছড়িয়ে পড়লো। সবাই নিজেদের মতো মত প্রকাশ করছে। আহসান খবরটা পেয়ে অধৈর্য হয়ে উঠলো।
সন্ধ্যাবেলা…
আদ্রি আরো অনেকগুলো মেয়ের সাথে একটা রুমে বন্ধি আছে। আদ্রি কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না করে চুপচাপ বসে আছে আর সবকিছু নজরে রাখছে।একটা লোক ঘরে এসে সব মেয়ে গুলোকে গুনে গেলো। হঠাৎ একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেলো। খুব চেনা কষ্ঠস্বর।
– এই মেয়েটাকে কে এখানে আনলো।
– জানি না বস।
– এই মেয়েটাকে এখুনি ছাড়ার ব্যবস্থা করো।
– কিন্তু বস আমাদের ২৫ টা মেয়ের অর্ডার আছে। আর ওই মেয়েটাকে না নিলে ২৫ টা হবে না।কি করবো।
কথাটা শুনে লোকটা চিন্তিত হয়ে গেলো।
আদ্রিকাঃ আমাকে কেন বিক্রি করতে চাইছেন না মিষ্টার নিরব আহমেদ।
নিরব সহ সকলেই চমকে উঠলো আদ্রিকার কন্ঠস্বর শুনে। নিরব ভয়ে চুপ করে গেছে।
আদ্রিকাঃ ছিঃ আপনি এতটা নীচ এতটা খারাপ সেটা ভাবতেই আমার ঘৃনা হচ্ছে।
নিরবঃ এই চুপ করো তুমি।
আদ্রিকাঃ আপনি মেয়ে পাচারকারী চক্রের সাথে যুক্ত আমার ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে।
নিরব কিছু বলতে যাবে তখনি পাশের লোকটা বললোঃ বস সময় হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি বলুন কী করবো।
নিরবঃ আদ্রিকেও নিয়ে যাও।
– ওকে বস।
আদ্রিকা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ এই আপনার ভালোবাসা, ছিঃ।
নিরবঃ তোমাকে আমি ভালোবাসি এই কথাটা যেমন সত্য তার সাথে এটাও সত্যি আমিই মেয়ে পাচারকারী। নিজেকে সবার থেকে আড়ালে রাখার জন্য তোমাকে আমাকে সরাতে হবে। মাফ করে দিও।
আদ্রিকাঃ পাপ কখনোই পাপকে ছাড়ে না। আর আপনি যেটা করেছেন সেটার জন্য আপনি শাস্তি পাবেন কঠিন থেকে কঠিনতম।
নিরবঃ বাবা তুমি তো পুলিশের মতো কথা বলছো।
আদ্রিকা বাঁকা হেসে বললঃ অপেক্ষা করুন আপনার জন্য অ…..নেকটা বড়ো সারপ্রাইজ আছে।
নিরবঃ চুপ একদম চুপ এই এটাকে নিয়ে যা।
মায়ের ডাকে অতীত থেকে বেড়িয়ে আসলো আদ্রি। মাঝে কেটে গেছে ৩ টে বছর। তবুও মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। পড়াশোনা শেষ করে সকলেই নিজেদের জীবনে গোছাতে ব্যস্ত।
আনিকাঃ কি ভাবছিলি
আদ্রিকাঃ কিছু না মম।
আনিকাঃ মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবি কথাগুলো।নিরবের কথা ভাবছিলি তাই তো।
আদ্রিকা উত্তর দিলো না। আর কি দেবে কথাটা তো সত্যি। আদ্রি সত্যিই নিরবের কথা ভাবছিলো।
আনিকাঃ মাঝ খানে কেটে গেছে তিনটে বছর তবুও সেই নিরব থেকে বের হতে পারলি না।
আদ্রিকাঃ মা অনূভূতি গুলো বড্ড খারাপ কি করবো বলো। আমি তো চাইনি একটা মেয়ে পাচারকারী কে ভালোবাসতে কিন্তু দ্যাখো তবুও তাকেই ভালোবাসলাম।
আনিকাঃ অপেক্ষা কর। তোর জন্য ভালো কেউ আসবে।
আদ্রিকা কিছু বললো না। নিরব কে নিজের সম্মতির কথা জানাবে ভেবেছিলো কিন্তু কিছুই আর হলো না। সবটাই এলোমেলো হয়ে গেলো।
আনিকাঃ এই দ্যাখ কথার মাঝে আসল কথাটা বলতেই ভুলে গেছি।নীলি আর নীলির মা বাবা এসেছে তোকে খুঁজছে একবার আয় না।
আদ্রিকা ওর মায়ের সাথে নীচে গেলো। নীলি ওকে দেখে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। নীলির মা বাবা কে সালাম দিলো।
নীলির মাঃ দিদি যে কারনে আসা। আগামী ৫ তারিখ নীলির এনগেজমেন্ট আপনাদের সকলকে কিন্তু আস্তে হবে।
আদ্রি নীলিকে জড়িয়ে ধরলো। নীলিরা আরো কিছুক্ষন থেকে চলে গেলো।
আদ্রিকা নিজের রুমে গিয়ে আবারো অতীতের পাতায় ডুব দিলো।
আদ্রি সহ বাকি মেয়েদের ট্রাকে তোলার সময়ে পুলিশ চলে আসে। কিভাবে পুলিশ আসলো সেটা নিরব ও ওর দলের অজানা। নিরব কে পুলিশ গ্রেপ্তার করার সময়ে পালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রা*ন হারায় নিরব। যদিও নিরবের দে”হ পাওয়া যায়নি।
আদ্রিকা সহ বাকি মেয়েদের সেফ ভাবে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারপরেই আদ্রিকা অনেকটা চুপচাপ স্বভাবে পরিণত হয়। আহসানরা মাস্টার্স শেষ করে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। একবছর পরে আদ্রিকাও রা পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের ক্যারিয়ার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আদ্রিকার মাঝে প্রানবন্ত মেয়েটা হারিয়ে যায় নিরবের কারনে। আদ্রিকার মনে নিরবের জন্য কিছু অনুভূতির জন্ম চলেছিলো যেইগুলোই ওকে মনমরা করে দিয়েছিলো।
নীলির এনগেজমেন্টের দিন…
অনেক দিন পরে আবারো সব বন্ধু একসাথে হলো। পড়াশোনা শেষ করার পর সবাই নিজেদের লাইফ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সকলেই খুব খুশি।
মাহিয়াঃ আজকে নীলির এনগেজমেন্টের জন্য আমরা সবাই একসাথে হতে পারলাম, নাহলে তো সময় বের করবো করবো করে আর করায় হয়না।
নূপুরঃ হ্যা একদম ঠিক বলেছিস। তবে একটা কথা জানা হলো না, নীলির এনগেজমেন্টটা কার সাথে হচ্ছে রোশানের সাথে নাকি।
নীলিঃ হুম।
আহসান রাও পাঁচ বন্ধু অনেকদিন পর সবাই একসাথে হয়েছে। সবাই খুব খুশি তবে রোশান আর নীলির এনগেজমেন্টের ব্যাপারটা সকলের কাছেই সারপ্রাইজ। রোশান জানিয়েছে ওর এনগেজমেন্ট কিন্তু কার সাথে বলেনি।
আহসানঃ কিরে ভাই এখনো বললি না মেয়েটা কে।
রোশানঃ আচ্ছা বাবা ওইদিকে তাকা।
রোশানের কথা শুনে সকলেই ওইদিকে তাকিয়ে শক খেয়ে গেলো।
রোশান আলতো করে হেসে বললোঃ আমিও তোদের মতো শক খেয়েছিলাম সেদিন যেদিন ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
সাদ্দামঃ কিন্তু ভাই কোনটা ওখানে তো পাঁচটা মেয়ে আছে
রোশান মাথা চুলকে বললোঃ নীলি।
সাদ্দাম রোশান কে খোঁচা দিয়ে বললঃ কাহিনীটা কি বল তো।
রোশান অতীতে ডুব দিলো। নীলির সাথে মিট করার কথা মনে পড়লেই ওর হাসি পাই সেদিন কি ঝামেলাটাই না করেছিলো।
#চলবে….