তোর অনুরাগে পর্ব-০৮

0
290

#তোর অনুরাগে
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৮

_________

অতীত….

রোশান অপেক্ষা করছে তার হবু বউ এর জন্য। টাইম হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আসেনি,রোশানের কপালে বিরক্তের ভাবটা ফুটে উঠেছে। হুট করেই কেউ একজন আচমকা ওর পাশের টেবিলে বসলো। রোশান চমকে তাকিয়ে দেখলো নীলি বসে আছে। অনেকটাই অবাক হয়ে বললোঃ এই তুমি এখানে কেন।

নীলি দাঁত বের করে বললোঃ প্রেম করতে।

রোশান বিরক্ত হয়ে বললোঃ এই দ্যাখো আমার একদম ভালো লাগছে না। যাও এখান থেকে আমার ভালো লাগছে না এমনিতেই টেনশানে আছি।

নীলি একটু সিরিয়াস হয়ে বললোঃকিসের টেনশান।

রোশানঃ জেনে কি করবে।

নীলিঃ যদি সমস্যাটা সমাধান করা যায় দেখবো।

রোশানঃ বিরক্ত না করে যাও তো।

নীলিঃ চলে যাবো কথা বলবেন না।

রোশানঃ না বিদায় হও।

নীলিঃ ওকে।

নীলি উঠে চলে যায়। রোশানের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে,,মনে মনে মেয়েটার উদ্ধার করে দিচ্ছে।
হুট করে একটা মেয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।রোশান ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে,বোঝার চেষ্টা করছে এটাই সেই মেয়ে কিনা।মেয়েটা নিজে থেকেই কথা বলতে শুরু করলো।

– সরি একটু লেট হয়ে গেলো। আপনি কি অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে আছেন।

রোশান একটু রাগ নিয়ে বললোঃ আপনার এতক্ষনে আসার সময় হলো। আমি কতক্ষন অপেক্ষা করছি জানেন আপনি।

– আসলে কি হয়েছে রাস্তায় জ্যাম ছিলো খুব।

রোশানঃ ওকে বললাম আপনি বসুন।

মেয়েটা বসলো। রোশান আর মেয়েটা টুকটাক কথা বলছে।

– আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে।

রোশানঃ দেখুন পছন্দ না থাকলেও কিছুই করার নেই বাপি যখন কথা দিয়েছেন তার কথা রাখা আমার কর্তব্য আমার পরিবারের অসম্মান আমি হতে দিতে পারিনা।

– তবুও পছন্দ অপছন্দের একটা বিষয় আছে।

রোশান কিছু বলতে যাবে তখনি একটা ছেলে এসে মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ আরে সীমা তুমি এখানে বসে আছো আমি তোমাকে সারা হোটেল খুঁজে বেরাচ্ছি।

সীমাঃ আপনি কে?

– আরে আমাকে বুঝতে পারছো না। আমি রাহুল তোমার হবু বর।

সীমা একবার রোশানের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার রাহুলের দিকে। সবটাই ওর গন্ডগোল লাগছে।

রোশানঃ আপনি কি বলছেন ওনার সাথে তো আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

রাহুলঃ আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে আপনি কি পাত্রীর ছবি দেখেননি।

রোশান মাথা নাড়ল। যার অর্থ না।রাহুল এবার সীমাকে জিজ্ঞাসা করলো।সীমা ও মাথা নাড়লো।

রাহুলঃ আপনার কাছে ফোন নম্বর আছে।

রোশান মাথা নাড়ল। রাহুল নিজের কপাল চাপড়ে বললোঃ আপনি বরং আপনার মাকে ফোন করে মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করুন।

রোশান রাহুলের কথা মতো ওর মা কে কল করলো।

রোশানঃ হ্যালো।

মাঃ বল‌ কি হয়েছে। নীলির সাথে তোর কি কথা হয়েছে।

রোশান অবাক হয়ে গেলো মায়ের মুখে নীলি নামটা শুনে।

রোশানঃ মা বাড়িতে গিয়ে আমি তোমাকে সব বলছি।

রোশান ফোনটা রেখে দিয়ে চারিদিকে দেখতে লাগলো ওর চোখ পড়লো কোনার দিকে একটা টেবিলে নীলি বসে হাসছে।রোশান রেগে টেবিলের কাছে গেলো ওর পেছন পেছন সীমা আর রাহুল ওহ্ গেলো।

রোশানঃ নীলি এটা কি ধরনের মজা।

নীলি কিছু বলতে যাবে তখনি সীমা বললোঃ আমাকে তো এই দিদিটাই বললো আমি যার জন্য অপেক্ষা করছি উনিই তিনি।

রোশান রাগী চোখে তাকালো নীলির দিকে। নীলি শুকনো ঢোক গিলে বললোঃ আসলে..

রোশান নীলিকে কিছু বলতে না দিয়ে বললোঃ সরি,ওর মজার কারনে আপনাদের অসুবিধায় পড়তে হলো।

রাহুলঃ না ঠিকাছে।

সীমা কাঁচুমাচু হয়ে বললোঃ একটা কথা বলবো।

রোশানঃ‌ হুম বলুন।

সীমাঃ আপনি কি ওই দিদিকে বিয়ে করবেন।

রোশানঃ কেন।

সীমা আমতা আমতা করে বললোঃ আসলে আমার না আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তাই বলছিলাম কি।

রোশান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নীলি রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে সীমার দিকে। নীলি কিছু বলে উঠার আগেই রাহুল সীমার হাত ধরে বললোঃ চলো আমার সাথে আজকেই তোমার সাথে বিয়ের কথা পাকা করবো।

সীমা কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে রোশানের দিকে তাকিয়ে আছে। নীলি রোশানের হাত ধরে দাঁত বের করে বললোঃ রোশান শুধু আমার।‌তোমরা বিয়ে করে সুখী হও।

নীলি রোশানের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো আর রাহুল সীমার।

নীলি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে আর রোশান কথা শোনাচ্ছে ওকে।

রোশানঃ একটাও কথা তোমার কানে যাচ্ছেনা।

নীলিঃ নো।

রোশানঃ তোমাকে তো মনে হচ্ছে।

নীলিঃ কি শুনি থ্যাঙ্কস বলতে।

রোশানঃ হুঁ তোমাকে তো আমি।

নীলিঃ এই দেখুন বেশি ভাব নেবেন না।‌আমি গিয়েছিলাম আপনার টেবিলে কিন্তু আপনি আমাকে চলে যেতে বললেন।

রোশানঃতুমি তো বলতে পারতে।

নীলিঃবলার সুযোগ দেননি আপনি।

রোশানঃ আগে থেকে জানতে তুমি এই ব্যাপারে।

নীলিঃ হুম।

রোশানঃ আমি যে সেই এটাও জানতে।

নীলিঃ হুম।

রোশানঃ সবাই সবকিছু জানতে আমি বাদে।

নীলিঃ আপনাকে কে ছবি দেখতে বারন করেছিলো শুনি।

রোশানঃ আচ্ছা বাদ দাও এসব। বিয়েতে রাজি তুমি।

নীলিঃ হুম।

রোশানঃ পারবে তো এই খারাপ ছেলেটাকে নিয়ে সারাজীবন থাকতে।

নীলিঃ ইনশাআল্লাহ।

রোশান খুশি হয়ে যায়। নীলির সম্মতি পেয়ে।

বর্তমান…

রোশান নীলির বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। আর কিছুক্ষন পরে ওদের এনগেজমেন্ট হবে।

আহানঃ এই আদ্রি কোথায় গেলো।

নীলিঃ এদিকেই তো ছিলো কোথায় গেলো কে জানে।

আদ্রিকা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। সবার আনন্দের মাঝেও খুশি হতে পারছে না। হঠাৎ কেউ একজন ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। কারোর উপস্থিত টের পেয়ে পেছন ঘুরে দেখলো আহসান দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিকা অবাক হলো। আহসান রেলিং এর সাথে গা এলিয়ে দিয়ে বললোঃ মন খারাপ।

আদ্রিকা মাথা নাড়লো।‌যার অর্থ না।

আহসানঃ আমি জানি তোমার মন খারাপ। তা মিস চশমিশ মন খারাপ কেন।

আদ্রিকাঃ কিছু না এমনি।

আহসানঃ এমনি বললেই হবে,নাহলে আমি চশমিশ বললাম আর তুমি রাগ করলে না এটা কিভাবে সম্ভব।

আদ্রিকা কিছু না বলে চুপ করে আছে।

আহসানঃ আদ্রি …

আদ্রিকাঃ হুঁ।

আহসানঃ আমার বন্ধু হবে।

আদ্রিকার বুকটা উঠলো।‌ নিরব ওহ ঠিক এভাবে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো কিন্তু বন্ধুত্বের মান রাখতে পারেনি।

আহসানঃ প্লিজ।

আদ্রিকা আহসানের রিকুয়েস্ট ফেলতে পারলো না।হ্যা বললো।আহসানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

আহসানঃ নীচে চলো। ওদের এনগেজমেন্ট শুরু হবে।

আদ্রিকাঃ হুম।

আহসান আর আদ্রিকা একসাথে নীচে নামলো। নীলির আর রোশানের এনগেজমেন্ট হয়ে যায়। সকলেই খুব খুশি।সবাই ওদের শুভেচ্ছা জানালো।
বিয়ের ডেট পরের সপ্তাহের শেষের দিকে ঠিক করা হয়েছে। রোশান আর নীলির পরিবার তাড়াতাড়ির মধ্যেই বিয়েটা শেষ করতে চাই।

পরেরদিন বিকালে….

নীলির সামনের টেবিলে বসে আছে আহসান। নীলি কিছুই বুজতে পারছে না, আহসান কেন ওকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছে কারনটা এখনো অজানা।

নীলিঃ আহসানদা কিছু কি হয়েছে।

আহসানঃ না আমার কিছু কথা জানার ছিলো তোমার থেকে।

নীলিঃ আমার থেকে কি বিষয়ে।

আহসানঃ আদ্রিকার বিষয়ে।

নীলি অবাক হলো।

আহসানঃ দ্যাখো নীলি তোমার কাছে আমি জানতে চাইছি কারন তুমি রোশানের হবু স্ত্রী সম্পর্কে আমার ভাবি হবে। তোমার কাছে আমি যতটা ফ্রি হবো ততটা অন্যকারোর কাছে পারবো না। তাই তোমাকে ডাকা।

নীলিঃ সব ঠিক আছে কি আদ্রিকার বিষয়ে কেন কিছু জানতে চাইছেন আর ঠিক কি জানতে চাইছেন বলবেন।

আহসানঃ প্লিজ আদ্রির বিষয়ে কোনো কিছু না লুকিয়ে আমাকে সবটা বলো।

নীলিঃ আদ্রির জীবন সম্পর্কে কোনো কিছুই বলার অধিকার আমার নেয়। আদ্রির জীবনের কথা আপনাকে আদ্রির মুখ থেকেই শুনতে হবে। আমি এই বিষয়ে কোনো প্রকার হেল্প করতে পারবো না দুঃখিত।

আহসানঃ প্লিজ।

নীলিঃ সরি।‌ তবে এটাই বলবো আদ্রি নিজেকে বাইরে থেকে যতটা শক্ত দেখায় ভেতরে ঠিক ততটাই নরম প্রকৃতির। ওর মনের মাঝে অনেকগুলো ক্ষত আছে,যার জন্য নিজেকে এতটা কঠোর দেখায়।

আহসানঃ এখনকার আদ্রি কেন মনমরা হয়ে থাকে সবসময়।

নীলিঃ নিরব স্যার এর কারনে।

আহসান চমকে উঠলো।

আহসানঃ মানে?

নীলিঃ নিরব স্যারকে আদ্রি ভালোবাসতো কিন্তু উনি আদ্রির ভালোবাসার মান রাখেনি ঠকিয়েছে আদ্রিকে।

আহসান শকের উপরে শক খাচ্ছে।

আহসানঃ নিরব স্যার কি করেছে।

নীলিঃ যতটা বলার ততটাই বললাম এর থেকে বেশী কিছু আমার কাছ থেকে আশা করবেন না। তবে একটা কথা বলবো আদ্রির জীবনে নতুন করে আর কোনো আঘাত দেবেন না। যদি পারেন ক্ষতগুলো সারিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন।আসছি।

নীলি উঠে চলে যায়। আহসান নীলির বলা কথাগুলো‌ ভাবতে থাকে।

#চলবে…