#তোর অনুরাগে
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৯
__________
আহসান চিন্তামগ্ন হয়ে বাড়ি ফিরলো। রাতেও ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারছে না,ছটফট করছে মনটা আদ্রি নিরবকে ভালোবাসে এটা কিছূতেই মেনে নিতে পারছে না।
নীলি আর রোশানের বিয়ের কেনাকাটা করা শুরু হয়ে গেছে। আদ্রি সবকিছুতেই আছে,নীলির মা বাবা আদ্রি সহ ওর সকল বন্ধুকে খুবই ভালোবাসে। তাই বিয়ের সমস্ত কিছুতেই ওদের উপস্থিত থাকতে হবে এরকম আদেশ দিয়েছে।
আদ্রির মন আগের তুলনায় একটু ভালো। সকলের সাথে অনেকদিন পর আছে খুব হইচই হচ্ছে।
নীলিরা শপিং করতে বেরিয়েছে পরিবারের কয়েকজন সাথে বন্ধুরা। নীলির বিয়ের শাড়ি পছন্দ করা হচ্ছে কিন্তু কিছুতেই নীলির পছন্দ হচ্ছে না।
আদ্রি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নীলির কান্ড দেখছে আর বাকিরা নিজেদের কেনাকাটায় ব্যস্ত আছে।আদ্রি বিরক্ত সূচক শব্দ করে নীলির কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা শাড়ি তুলে নীলির গায়ে ধরলো। নীলি আর ওর মা শাড়িটা দেখতে খুবই খুশি হলো। নীলির মা শাড়িটা প্যাক করে দিতে বললেন। আদ্রি নিজের জন্য একটা শাড়ি তুলে নিজের গায়ে ফেলে আয়নায় দেখতে লাগলো কেমন লাগছে। হুট করেই কোথা থেকে আহসান এসে বললোঃ এই শাড়ীটা নয়,সামনে রাখা নীল শাড়িটা তোমাকে খুব মানাবে।
আদ্রি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে আহসানের দিকে। হুট করেই আহসানের আগমন বোধগম্য হচ্ছে না। আদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওদের গোটা ফ্রেন্ড গ্রুপ চলে আসে।আহসান সবার সাথে কথায় মগ্ন হয়ে যায়। আদ্রি পারে পরে থাকা নীল শাড়িটা তুলে নিয়ে আয়নার সামনে নিজের গায়ে ফেললো,,আহসান সবার সাথে কথা বলার মাঝেও আদ্রির কাজের উপর খেয়াল রাখছিলো আদ্রির করা কাজটা দেখে নিরবে হাসলো। সবটা কেউ খেয়াল না করলেও নীলি করেছে। নীলি ও কিছু একটা ভেবে তৃপ্তির হাসি হাসলো।
বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে আসতে আসতে। আদ্রিকে যাবার জন্য বারবার জোড় করছে নীলি।নীলির মাও আদ্রির মায়ের সাথে কথা বলছেন। আদ্রি সোফায় বসে বসে ফোন টিপছে। ওর মা ওর কাছে এসে বললোঃ আদ্রি মামনি নীলির মা তোকে কালকে যেতে বলছেন।
আদ্রিঃ কিন্তু
আনিকাঃ অনেকবার বলছেন সবাই আসবে যা ঘুরে আয়।
আদ্রি ওকে বলে উঠে চলে গেল। আনিকা নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার মনে একটাই কামনা মেয়েটা আগের মতো হয়ে উঠুক আবারো। আদ্রি নীলিদের বাড়ি যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে। জামাকাপড় প্যাকিং এর সময়ে আহসানের পছন্দকরা শাড়িটাও নিয়ে নেয় কি মনে করে।
আদ্রি কে নীলির পরিবার দেখে খুব খুশি হয়ে যায়। নুপূর, মাহিয়া মারিয়া ওরাও সব আসবে একটু পরে।
সন্ধ্যাবেলা…
আদ্রি সহ ওর সকল বন্ধুরা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে ছাদে বসে।
নূপূরঃ এই আদ্রি তুই এতটা মনমরা হয়ে গেছিস সেটা আমাদের কারোরই ভালো লাগে না। প্লিজ আগের মতো হয়ে যা না।
মারিয়াঃ হ্যা আদ্রি।
আদ্রি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ আমি তো ঠিকই আছি।
মাহিয়াঃ তুই শুধু আমাদের ফ্রেন্ড নয় আমাদের শরীরের একটা অঙ্গ। মানুষের একটা অঙ্গ যেমন খারাপ থাকলে আমরা বুঝতে পারি ঠিক সেইভাবেই তুই খারাপ থাকলে আমরা বুঝতে পারি। আমাদের ভালো লাগে না। খারাপ লাগে নিজেদের শূন্য শূন্য লাগে।
আদ্রি ছলছল চোখে মাহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর বন্ধুরা ওকে এতটা ভালোবাসে সেটা জানলেও কখনোই এসব বিষয় কেউ প্রকাশ করেনি। আদ্রিকা নিজেকে সামলাতে পারলো না। জড়িয়ে ধরলো মাহিয়াকে। মাহিয়ার চোখেও পানি ছলছল করছে।
নীলি ন্যাকা স্বরে বললোঃ আমরা বুঝি কেউ নয়।
আদ্রিকা ফিক করে হেসে ওদের ওহ ডাকলো। আদ্রির ডাকতে দেরি ওদের আসতে দেরি না। সকলে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো। পাঁচজন একসাথে জড়িয়ে ধরে আছে। দূর থেকে এই দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্দি করে নিলো কেউ একজন। তার মুখেও তৃপ্তির হাসি।
কালকে মেহেন্দি ও সঙ্গীতের অনুষ্ঠান। সবার মাঝেই টান টান উত্তেজনা। পাঁচ বান্ধবীর একটির বিয়ে বন্ধুরা তো জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
পরেরদিন……
পাঁচ বান্ধবীর গায়েই মেহেন্দি রং এর জামা। নীলির পরনে একটা মেহেন্দি রঙের লেহেঙ্গা,,,চুলগুলো খোলা আছে তাতে বেলী ফুলের মালা। খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে চার বান্ধবী।
আদ্রি নীলির হাতে মেহেন্দি করছে। আর বাকিরা অনান্যদের হাতে।
আদ্রি হাসতে হাসতে বললোঃ জানিস কথায় বলে বিয়ের হাতের মেহেন্দি রং গাঢ়ো হলে বর খুব ভালোবাসবে।
নীলি লজ্জা পাচ্ছে। নীলি কে আরো লজ্জা পাওয়ানোর জন্য মাহিয়া বললোঃ আর এমনিতেই আমাদের জিজু কিন্তু নীলি কে খুব ভালোবাসে। এই রোশান দা তোকে একবার ও আই লাভ ইউ বলেছে।
নীলি চুপ করে আছে। মারিয়া পাশ থেকে খোঁচা দিয়ে বললোঃ আরে বল না আমরাই তো।
নীলি মাথা নাড়িয়ে,লজ্জায় লাল নীল হতে লাগলো। নীলিকে নিয়ে ওরা সবাই মজা নিচ্ছে।
নীলি নাক ফুলিয়ে বললোঃ আমার ওহ সময় আসবে বাছাধন তখন তোমাদের মজা দেখাবো।
আদ্রিঃ একদম।
নীলিঃ তোকেও ছাড়বো নাকি আমি
আদ্রি হাসতে হাসতে বললোঃ আমার বর আমাকে তোদের কাছে ছাড়বেই না দেখিস।
আদ্রির কথা শুনে সকলেই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আদ্রি সবার তাকানো দেখে বললোঃ অবাক হবার কিছু নেই। আমি মেয়ে হয়ে যখন জন্ম নিয়েছি তখন তো পরের ঘরে যেতেই হবে তাই না। আর তাছাড়া এতগুলো বছর পার হয়ে গেলো আর কতদিন একটা ক্রিমিনালের মায়াজালে আটকে থাকবো। বিয়ের কথা আসছে কিন্তু আমার মানসিক পরিস্থিতি দেখে মম, দাভাই বিয়ের কথা বলছে না। আমি সবকিছু ভেবে দেখলাম আমি কেন নিজের জীবনটা থামিয়ে রেখেছি একটা ক্রিমিনালের জন্য,যে কিনা হাজারো মেয়ের জীবন বরবাদ করেছে। এখন কেন জানি মনে হচ্ছে আমি একটা মিথ্যা মায়াজ্বালে আটকে ছিলাম এতদিন,আমি সত্যি সত্যি নিরবের অনুরাগে বাঁধা পরিনি। মায়া,আবেগে আটকে ছিলাম। কখনো চেষ্টা করিনি তাই হয়তো বেড়িয়ে আসতে পারিনি। কিন্তু এখন বেড়িয়ে এসেছি। আমি আর নিজের জীবনটা থামিয়ে রাখবো না।
আদ্রির কথা শুনে ওর বন্ধুদের চোখে আনন্দাশ্রু ধরা দিলো। এটাই তো ওদের আদ্রি,,শক্ত প্রকৃতির একটা মানুষ। যার কাছে অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেয়,ভুল করলে শাস্তি আছে। জীবন যুদ্ধের একজন যোদ্ধা।
মাহিয়া চেঁচিয়ে উঠলো ঃ এই না হলে আমাদের লিডার।
নূপুরঃ সবকিছুই বুঝলাম আদ্রি কিন্তু তোকে এই জিনিসগুলো উপলব্ধি করালো কে??
আদ্রি কিছু না বলে মুচকি হাসলো। সবাই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রির দিকে। আদ্রির জীবনে কি নতুন কারোর আর্বিভাব হলো,,তাই যদি হয় তাহলে সে কে??
আজকে নীলির হলুদের অনুষ্ঠান। রোশানের বাড়ি থেকে লোকজন আসবে হলুদের তত্ত নিয়ে। আজকে মেয়েরা হলুদ রঙের জামাকাপড় পড়েছে। আর ছেলেরা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি।
পাঁচ জন ছেলে হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরে গেট দিয়ে ডুকলো। সব মেয়েরা তো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে ছেলেগুলোকে। ওদের দেখাশোনার দায়িত্ব পড়েছে নীলির বন্ধু ও কাজিনদের উপরে। কারনটা অন্যকিছু না ওরা একে অপরের পরিচিত তাই ওরাই ভালো দেখাশোনা করতে পারবে ওদের সাথেই ফ্রি থাকবে তাই এই সিদ্ধান্ত।
মেয়েরা আসতেই ছেলেগুলোর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।একেকজনকে পুরো পরি লাগছে।ছেলেরা শুকনো একটা ঢোক গিললো।
আহসান তো তার চশমিশের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্রির চোখে চশমা নেয়,, হলুদ শাড়িতে অপরূপ লাগছে,আহসানের মনে হচ্ছে চুলটা খোলা থাকলে আরো সুন্দর লাগবে কিন্তু আদ্রি চুলটা কেন খোলেনি এটা ভেবেই ওর রাগ লাগছে আদ্রির উপরে।
সাদ্দাম তো তার ধানিলঙ্কার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। হলুদ শাড়িতে মাহিয়াকে খুব সুন্দর লাগছে।
মাহিরের না চাইতেও বারবার মারিয়ার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। মারিয়ার শান্ত স্বভাবের জন্য মাহির না চাইতেও ওকে পছন্দ করে,হয়তো মনের কোনো মারিয়ার প্রতি কোনো একটা অনুভুতি আছে। কিন্তু উপলব্ধি করতে উঠতে পারে না।
আহান তার বন্ধুদের কান্ড দেখছে,আর চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছে। এই ছেলেগুলো এখন থেকে হা করে তাকিয়ে আছে লোকে কি ভাববে। আহান আহসানের পেটে একটা খোঁচা দিলো। আহসান তার কল্পনা থেকে বের হয়ে আসলো।
নুপূর আহসানের জন্য নাস্তা সাজাচ্ছে হুট করেই একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেল….
হালকা রাগ মিশ্রিত গলায় কেউ একজন বললোঃ
– শাড়ি পড়েছে ভালো কথা কিন্তু পিঠ-পেট বের করে রাখার মানেটা কি?
নুপূর সামনে ঘুরে মানুষটাকে দেখে চমকে উঠলো।
#চলবে….