#তোর অনুরাগে
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_১০
__________
নুপূর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললোঃ আপনি?
ছেলেটা বাঁকা হেসে বললঃ কেন আমাকে দেখে চমকে উঠলে বুঝি।
নুপূর কিছু বলতে যাবে তখনি কেউ এসে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরলো। নুপূর ভালো করে দেখে বুঝলো মেয়েটা আর কেউ নয় আদ্রি। নুপূর চমকে উঠলো, আদ্রিকার বন্ধুরা ও আহসানরা চমকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। আহসান রাগে ফুঁসছে। স্বাভাবিক শুধু আহান।
আদ্রি ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে বললোঃ তুমি আসবে আমাকে বলোনি কেন?
ছেলেটা হেসে বললোঃ বললে কি সারপ্রাইজ টা থাকতো।
আদ্রিঃ তোমার সারপ্রাইজ এর কি আর বলেছি, আমার টেনশানে তো মাথা ঘুরছিলো ফোন কেন বন্ধ ছিলো। তোমার সাথে কথা নেয় যাও।
ছেলেটাঃ আরে মজা করছিলাম তো রাগ করিস না।
আদ্রি চুপ করে আছে। ছেলেটা আদ্রিকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ পাগলি আমার।
আদ্রি নিজের ধ্যান ফিরে তাটিয়ে দেখলো ছয়টা মুখ অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কেন এভাবে তাকিয়ে আছে।
আদ্রি নিজেকে সামলে নিয়ে বললোঃ এটা হয় অর্ক। আমার ….
অর্ক আদ্রিকে থামিয়ে দিয়ে বললোঃ আমি বলবো।
আদ্রিঃ ওকে।
অর্ক হেসে আদ্রির কাঁধ ধরে বললোঃ আমি আদ্রির,,
অর্ক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান বললো।
আহানঃ আদ্রি আর অর্ক দুই ভাই বোন।
উপস্থিত সকলে চমকে উঠলো। আহসানরা জানতো না অর্ক আদ্রির দাদা।আর নুপুররা জানতো না আদ্রি অর্কের বোন।
অর্কঃ তুই বলে দিলি কেন?
আহানঃ তোদের বলতে বলতে একজনের হার্টফেল হয়ে যেতো।
অর্ক বাঁকা হেসে নুপূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নুপূর কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আহসানঃ অর্কের বোন আদ্রি এই কথাটা আহান তুই আমাদের জানাসনি কেন?
আহানঃ আদ্রি বারন করেছিলো তাই।
আহসানের মনে একটা প্রশ্ন দোলা দিলো। অর্কের পদবী রায়জাদা কিন্তু আদ্রির পদবী রায়হান কেন?
প্রচুর আনন্দের সাথে রোশান আর নীলির হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়।
পরেরদিন..
আজকে নীলির বিয়ে। নীলি কে লাল বেনারসি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। নুপূর পড়েছে গোলাপী রঙের শাড়ি। মাহিয়া সবুজ রঙের আর মারিয়া গোলাপী রঙের একটা শাড়ি। আর আদ্রি পরে আছে নীল রঙের শাড়ি। চুলগুলো খোঁপা করে বেলী ফুলের মালা দেওয়া। হাতে নীল রঙের চুড়ি ,,সবাইকেই খুব সুন্দর লাগছে।
বরযাত্রী চলে এসেছে। গেটের কাছে বরকে আটকে দেওয়া হয়েছে,কনে পক্ষের দাবি মেটাতে না পারলে বরকে ঢুকতে দেওয়া হবে না এরকমই দাবি করা হয়েছে।
সাদ্দামঃ এই একটু কম করো না।
মাহিয়াঃ এই আপনারা এত কিপটে কেন।মাত্র ২০ হাজার টাকা দিতে পারছেন না।
আহানঃ আমার বোনরা রাস্তা ছেড়ে দাও। আমি টাকা দিয়ে দেবো।
সানাঃ একদম না আগে টাকা।
আহান সহ ওর বন্ধুরা চমকে উঠলো। সানা এই দল থেকে ওই দলে চলে গেছে।
আহসানঃ সানা তুই ওইদিকে কেন?
সানাঃ আমার ইচ্ছা টাকা দাও।
মাহিরঃ শেষমেশ তুমিও।
আদ্রি বলে উঠলোঃ আমাদের এরকম কিপটে জিজু লাগবে না আপনারা আসতে পারেন বাই বাই।
আদ্রি এতক্ষন এখানে ছিলো না। আদ্রির গলার আওয়াজ শুনে আহসান সামনে তাকিয়ে থমকে গেলো।
আদ্রিঃ এই টাকা দিন তাহলে ভাগুন।
অর্কঃ বোন এরকম করিস না আমাদের ভেতরে যেতে দে।
আদ্রিঃ এই দাভাই টাকা না দিলে তোর বিয়ের সময় এর তিন ডবল হবে।
অর্ক একটা ঢোক গিললো। অর্ক খুব ভালো করেই ওর গুন্ডী বোনটাকে চেনে,,যা বলে তাই করে ছাড়ে।
অর্কঃ ওই টাকা দিয়ে দে।
আহান ও তাই বললো। ওরা ওদের কথামতো কুড়ি হাজার দিয়ে দেয়। টাকা হাতে নিয়ে আদ্রি বললোঃ আমাদের সময় নষ্ট করার শাস্তি পাবেন আপনারা। এই তো শুরু এখনো অনেককিছুই বাকি।
আদ্রিরা চলে যায়,আহসানরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। রোশান কে বসানো হয়েছে।
মাহিয়া হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে হুট করেই কেউ একজন ওকে টেনে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। মাহিয়া সামনে তাকিয়ে দেখলো সাদ্দাম। মাহিয়া খানিকটা রাগী কন্ঠে বললোঃ এই আপনি আমাকে এভাবে নিয়ে এসেছেন কেন?
সাদ্দামঃ তখন বলছিলে না আমি কিপটে। আমি যে কিপটে নয় তার প্রমান দিতে।
মাহিয়াঃ মানে?
সাদ্দাম বাঁকা হাসলো। মাহিয়া কিছু বলে উঠার আগেই চার জোড়া ঠোঁট একসাথে করে দিলো। মাহিয়া কিছুই বুঝে উঠার আগেই সাদ্দাম কাজটা করে,মাহিয়াও সাদ্দামের সাথে মেতে উঠলো।সাদ্দাম মাহিয়া কে ছেড়ে দিলো,মাহিয়া মাথা নীচু করে আছে,,সাদ্দাম মাহিয়ার মুখটা হাত দিয়ে তুলে বললোঃ তোমার মাঝে কি এমন আছে যা আমাকে এতটা টানে?
মাহিয়া চুপ করে আছে, চোখদুটো শক্ত করে বন্ধ করে আছে। সাদ্দাম মাহিয়ার ঠোঁটের উপরে সাইড করতে লাগলো। মাহিয়া কেঁপে উঠছে। সাদ্দাম মাহিয়ার ঠোঁটের উপরে আলতো করে কিস করে বললোঃ খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাকে নিজের করে নেবো। একটু অপেক্ষা করো।
সাদ্দাম চলে যায়।মাহিয়া সবকিছু ভেবে মুচকি হাসলো।
ওইদিকে….
নুপূর যাচ্ছে একটা কথা শুনে থমকে গেলো।
অর্কঃ খুব তাড়াতাড়িই আমি তোমাকে নিজের করবো।।আমার অত্যাচার সহ্য করার জন্য রেডি হও।
নুপুর পেছন ফিরে দেখলো,,অর্কের কানে ফোন ওর বুঝতে বাকি রইলো না অর্ক ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে,, নুপূরের মনটা মূহুর্তের মধ্যেই বিষন্ন হয়ে গেলো। নুপূর নিজের কান্না আটকে রাখতে পারলো না। দৌড়ে ওখান থেকে চলে যায়।
অর্কঃ আমি জানি তুমি ভেবেছো আমি ফোনে কারোর সাথে কথা বলছি। তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিজের জীবনে ভাবতেও পারি না আমি। তোমাকে আমি একটু কষ্ট দেবো কিন্তু এই কষ্টটা আমার কষ্টের কাছে কিছুইনা। আমাকে এতগুলো বছর দূরে রাখার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে নুরপাখী।
রোশান আর নীলির বিয়ের অনুষ্ঠান খুব ভালো ভাবেই মিটে যায়। নীলি রোশানের বাড়িতে চলে যায়।
রাত ১২টা…
নীলির ভয় লাগছে। রোশানের সাথে আগে থেকেও মেলামেশা থাকলেও এখন রোশান ওর স্বামী।
ওইদিকে…
রোশান ঘরে আসবে বলে আসছে,তখনি ওর পাঁচ বন্ধু ওকে ঘিরে ধরলো। রোশান ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কি হয়েছে তোদের এভাবে পথ আটকে দাঁড়ালি কেন?
আহসান দাঁত বের করে বললোঃ ভাই তুই শ্যালিকাদের কুড়ি হাজার টাকা দিতে পারলি আমাদের দশহাজার দিতে পারবি না।
রোশান ওর বন্ধুদের কথায় আকাশ থেকে পড়লো।
রোশানঃ ভাই এসব কি বলছিস তোরা তো আমার বন্ধু বল। এরকম কেন করছিস।
আহান রোশানের পিঠ চাপড়ে বললোঃ হ্যা তাই তো আমরা তো ওর বন্ধু ওর শ্যালিকারা যদি কুড়ি পাই তাহলে আমাদের পঞ্চাশ পাবার কথা তো কি ঠিক বললাম তো বন্ধুরা।
সকলেই হ্যা বললো। রোশানের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি,, রোশানের মুখ দেখে সকলের পেট ফেটে হাসি আসছে, কিন্তু হাসি আটকে রেখে অর্ক বললোঃ ভাই দ্যাখ যত তাড়াতাড়ি দিবি তুই তত তাড়াতাড়ি ঘরে যেতে পারবি আর না হলে আজকে আমাদের সাথেই এখানে থাকতে হবে।
রোশান কাঁদো ফেস করে বললোঃ একটু কম করা যায় না।
আহসানঃ তুই বন্ধু তাই বেশি না পঁচিশ হলেই হবে।
রোশানঃ আমার কাছে এত টাকা নেয়।
সাদ্দামঃ আচ্ছা তুই দশই দে।
রোশানঃ আচ্ছা।
রোশান দশ হাজার টাকা দিলো ওদের হাতে।
রোশানঃ আমার ওহ দিন আসবে দেখে নেবো তোদের।
রোশান রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল। আহসানরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। রোশানের মনে হচ্ছে সবগুলোর গ”লা টিপে দিতে।
মাহির হাসতে হাসতে বললোঃ এই তোদের মাথায় এরকম মেয়েলি বুদ্ধি আসলো কিভাবে।
মাহিরের কথা শুনে অর্কের কিছু একটা মনে পড়ে যায়। অর্ক তাড়াতাড়ি ওর ফোনটা হাতে নেয়। পাশ থেকে আহান খোঁচা দিয়ে বললোঃ লাউডস্পিকারে দে।
অর্ক লাউডস্পিকারে দিতেই ওপাশ থেকে কারোর হাসির শব্দ সারা ঘরে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।
অর্কঃ এত হাসছিস কেন।
আদ্রিঃ তোমাদের কথা শুনে হি হি হি হি হি হি হি হি হি হি হি হি হি হি।
আহানঃ এতক্ষন তুই লাইনে ছিলিস।
আদ্রিঃ হুম।
আহান অর্কের দিকে রাগী লুকে তাকালো।
আদ্রিঃ আচ্ছা আমি রাখছি আমার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করছে।
আদ্রি ফোনটা কেটে দিলো। আহান অর্ককে ঝাড়তে লাগলো। ওদের কারোরই বুঝতে বাকি নেয় প্ল্যানটা কার।
মাহিরঃ এই প্ল্যানটা আদ্রিকার।
অর্কঃ হুম।
আহসান বিরবির করে বললোঃ এরকম কূটবুদ্ধি মিস চশমিশ ছাড়া কার হবে।
রোশান ঘরে এসে নীলিকে চেঞ্জ করে দিতে বললো। নীলি চেঞ্জ করে এসে বসতেই রোশান বললোঃ আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই নীলি।
নীলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোশানের দিকে। রোশানের বলা কথাগুলো শুনে। নীলি চমকে উঠলো।
#চলবে….