তোর অনুরাগে পর্ব-১২

0
263

#তোর অনুরাগে
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_১২

______________________

আদ্রিকা আর আহসানের বন্ধুরা সকলে মিলে ঠিক করলো আজকে সারারাত আড্ডা দেবে। সানাও এই দলে যুক্ত হয়েছে।

ছাদে গোল করে বসে আছে সকলে, আদ্রিকা আর আহসান সামনাসামনি বসে আছে,, আহসান মুগ্ধ হয়ে তার মায়াবতীকে দেখছে,আদ্রিকার সেইদিকে খেয়াল নেয় ওহ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত।আদ্রিকা সবার সাথে কথা বলতে বলতে আহসানের দিকে চোখ যায়, আহসান ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আদ্রিকা তাড়াতাড়ি চোখটা নামিয়ে নিলো,আহসানের চোখের দিকে তাকাতে পারে না ওহ,আহসানের চোখে কিছু একটা আছে যেটা আদ্রিকাকে মুগ্ধ করে বার বার। আদ্রিকা কারোর মায়ায় পড়তে ভয় করে যদি আবারো ঠকে রায় তাহলে হয়তো কোনোদিনই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

আহানঃ তাহলে কবে বিয়ে করছিস অর্ক।

অর্কঃ খুব তাড়াতাড়িই হবে বিয়েটা,তবে আমার নয় আদ্রির।

আদ্রিঃ একদম ঠিক নয় এটা, আমি কি শর্ত দিয়েছি মনে নেয় তোমার।

অর্কঃ সবটাই মনে আছে আমি চাইছি তোদের বিয়েটা আগে হয়ে যাক তারপরে আমরা করবো।

আদ্রি মুখটা গম্ভীর করে নিলো। অর্ক আদ্রির সামনে এসে বললোঃ বোনু তুই কেন এইরকম বাচ্চামো করছিস।

আদ্রি কিছুই না বলে উঠে চলে গেলো। অর্ক সবাইকে আড্ডা দিতে বললো।

সাদ্দাম সমস্ত পরিস্থিতিটা ঠিক করার জন্য বললোঃ শালা আমাদের কপাল খারাপ, তিন বন্ধু বিয়ে করে নিলো আর আমরা এখনো সিঙ্গেল।

সাদ্দামের কথা শুনে সকলে হেসে উঠলো। রোশান সাদ্দামের পিঠে কিল মেরে বললোঃ একটা বিয়ে করে নে না আমরা কি বারন করেছি নাকি।

সাদ্দাম মাহিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললোঃ একজন একটু সুযোগ দিলেই তো লাইন ক্লিয়ার হয়ে যায়।

আহানঃ তারমানে তুমি তলে তলে অনেক দূল চলে গেছো, কি শয়তান রে আমাদের একবার ও বললো না।

সাদ্দাম কপাট রাগ নিয়ে বললোঃ হ্যা তোমার তো সবকিছু আমাকে বলে করো,, প্রথমে রোশান,তারপরে অর্ক আর আহসান আর এখন তুই আর মাহির। কখনো কেউ কি আমাকে মনের কথা বলেছিস।

আহান আর মাহির আকাশ থেকে পড়লো।

মাহিরঃ ভাই আমি কি করেছি,আর কি তোকে বলিনি।

সাদ্দামঃ ওই দ্যাখ আমি সবটাই বুঝি, আমি তোদের অনেক দিন ধরে চিনি আমি জানি তোদের আচার আচরণে পরিবর্তন এসেছে আর এইসব প্রেমে পড়লেই আসে।

রোশান চোখ বড়ো বড়ো করে বললোঃ তারমানে মাহির আর আহান প্রেমে পড়েছে।

কথাটা রোশান মজার ছলে বললেও,, কারোর কাছে বেদনাদায়ক হয়ে উঠলো। চোখের কোনো অজান্তেই পানি জমতে শুরু করল।

আহসানঃ এই সাদ্দাম একটু পরিস্কার করে বল।

সাদ্দাম কিছু বলতে যাবে তখন অর্ক বললো্ ওই তোরা এখন এসব বাদ দিয়ে ঘুমাতে যা।

যে যার মতো চলে গেলো। আহান ভাবছে আজকে সাদ্দাম এসব কি বলে গেলো। আনমনা হয়ে হাঁটার সময় কেউ একজন ওকে টেনে নিয়ে অন্ধকার ঘরে গেলো। কোমল স্পর্শ পেয়ে বুঝলো এটা মেয়ের হাত।

আহানঃ কে তুমি?

আহান ওর কানের কাছে একটা নিঃশ্বাস অনুভব করলো।মেয়েটা ওর পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছে, আহান চাইলেও কিছু করতে পারছে না,অনুভব করতে ভালো লাগছে সবটাই। ফিসফিস শব্দে মেয়েটা বললোঃ আপনি শুধু মাত্র আমার। অন্য কারোর হবার চেষ্টা করবেন না।আমি আপানার অনুরাগে পড়েছি,তাই আপনাকে আমার অনুরাগেই পড়তে হবে। মনে থাকে যেন।

কথাটা বলেই মেয়েটা চলে গেলো। আহান চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো ,, শুধু ওই নিঃশ্বাসটা অনুভব করছিলো,,মেয়েটার কোনো কথায় কানে যায়নি।

২দিন পর…

আদ্রিঃ দাভাই আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না।

অর্ক চমকে উঠলো, আদ্রিকার কথা শুনে‌।

অর্কঃ কি বলছিস এসব।

আদ্রিঃ ঠিকি বলছি।

অর্কঃ বোনু কি হয়েছে তোর। এইরকম পাগলামি করছিস কেন। সবকিছু ঠিহয়ে গেছে আর এখন তুই।

আদ্রি নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে অর্কের সামনে ধরলো,অর্ক মেসেজটা পড়ে চমকে উঠলো।

অর্কঃ এসব কি?

আদ্রিঃ আমার কিছূ করার নেয় দাভাই,আমাকে এইসব কিছু থেকে চলে যেতে হবে, নাহলে তোরা কেউ ভালো থাকবি না।

অর্কঃ পাগলামি করিস না। আবেগের বশে কোনো প্রকার ভুল করে বসিস না।ভেবে চিন্তে সবকিছু ঠিক কর। পালিয়ে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া আর আমার আদ্রি কখনোই হারতে পারে না।

আদ্রি অর্ককে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

আদ্রি কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ আমার জন্য চিন্তা নয় চিন্তা তো তোদের জন্য ও আমাকে কিছুই করবে না কিন্তু আমার কাছের মানুষগুলোকে আঘাত করে আমাকে কষ্ট দেবে। আমি চাইনা আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক।

অর্কঃ কিছু হবে না একটু শান্ত হ। আচ্ছা এই ছিচকাদুনিকে কে যে ক্রাইম ডির্পামেন্ট সিক্রেট অফিসার করেছে কে জানে।

আদ্রি নাক ফুলিয়ে বললোঃ ওই আমার কাজকে নিয়ে কিছু বলবি না। এমনি এমনি আমি সিক্রেট অফিসার হয়নি নিজের কাজের গুনেই হয়েছি।

অর্কঃ আমি জানি তো সেটা। আর আমি চাই তুই ঠিক এইভাবেই সাহসের সাথে এই দেশ থেকে আগাছা গুলোকে পরিষ্কার করে দে।

আদ্রিঃ সবকিছুই ঠিক আছে কিন্তু দাভাই এই বারের লড়াই টা যে অন্যরকম ,,প্রতিবার আড়ালে থাকলেও এইবার সামনে চলে এসেছি তাই আঘাতটা আমাকে নয় আমার পেছনে আমার কাছের মানুষকে করা হবে। সেটাই আমার ভয়।

অর্কঃ তোর বন্ধুরা কেউই দূর্বল নয়,,তাই ওদের নিয়ে চিন্তা করিস না।

আদ্রিঃ চিন্তা তো অন্য কাউকে নিয়ে।

অর্কঃ কে আহসান।

আদ্রিঃ হুম আমি চাইনা আমার জন্য ওর কোনো ক্ষতি হোক।

অর্কঃ আহসানকে কিছুই করতে পারবে না চিন্তা বাদ দে।

আদ্রি মনে মনে বললোঃ তবুও যে আরেকজনের জন্য চিন্তা থেকেই যায় দাভাই।

অর্ক হেসে বললোঃ আদ্রি আমি জানি তুই কার কথা ভাবছিস। যাকে নিজের বাবা মানতে পারিস নি তাকে নিয়ে এত চিন্তার কি আছে।

আদ্রি কিছুই না বলে নিঃশব্দে চলে গেলো। অর্ক মনে মনে বললোঃ আমার বোনটা উপরে যতই শক্ত দেখাক না কেন,ভেতরে ভেতরে খুবই নরম। আর আমি জানি একদিন তুই ঠিকই আহসান আর বাবাই কে মন থেকে মেনে নিবি।

আদ্রি ঘরে বসে আছে,ফোন বাজার আওয়াজ শুনতে পেয়ে নম্বর না দেখেই কানে ধরলো। ওপাশ থেকে মৃদু স্বরে বললোঃ আদ্রিরানিকে হাসি মুখেই মানায় মন খারাপ টা ঠিক ভালো লাগে না।

আদ্রি ঠিক বুঝতে পারলো না,কথাটা ফোনে শুনলো না সামনাসামনি,,দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো আহসান দাঁড়িয়ে আছে দরজায় হেলান দিয়ে। আদ্রির মুখে অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠল।ফোনটা রেখে দিয়ে বললোঃ আপনি এখানে।

আহসান আদ্রির বিছানায় বসে বললোঃ বারে আমি আমার হবু শশুর বাড়ি আসতে পারি না নিজের হবু বউ এর সাথে দেখা করতে।

হবু বউ কথাটা শুনে আদ্রির কান গরম হয়ে গেল।আহসান ঠোঁটের কোনো একটা হাসি ঝুলিয়ে আছে, এখন আহসানকে কি কিউট লাগছে।

আহসানঃ কি ম্যাম মন খারাপ কেন।

আদ্রিকা মাথা নাড়লো,যার অর্থ না মন খারাপ না।
আহসান ঠোঁটের কোনের হাসিটা আরেকটু চওড়া করে বললোঃ আমাকে মিথ্যা বলে লাভ নেয়, আমি জানি আমার আদ্রির মন খারাপ কি হয়েছে বলো।

আদ্রিকা আহসানের দিকে তাকালো, আমার আদ্রি কথাটা বার বার কানের কাছে বাজতে লাগলো। আদ্রির অস্বস্তি লজ্জা সবটাই লাগছে। তাই বাইরে বের হবার জন্য উদ্ধৃত হতেই আহসান আদ্রিকার হাত টেনে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে আসলো। আহসানের নিঃশ্বাস আদ্রির মুখের উপরে পড়ছে।

আহসান মৃদু স্বরে বললোঃ আহসান নিজের জিনিসের উপর কারোর অধিকার পছন্দ করে না। তুমি আমার ছিলে আর সারাজীবন থাকবো,উপর ওয়ালা ছাড়া কেউ তোমার থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না।‌ওই প্যাকেটটাই কিছু জিনিসপত্র আছে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে এসো।

আহসান চলে গেলো, আদ্রির মাথার উপর দিয়ে গেলো ,আদ্রি প্যাকেটটা খুলে দেখলো ভেতরে একটা কালো বেনারসী, কালো চুড়ি,ঝুমকো..

আদ্রি ওইগুলো কে ধরে বসে আছে, কিছুই বুঝতে পারছে না।‌কিছুক্ষন পর সানা এসে আদ্রিকে নিচে নিয়ে গেলো।

আদ্রিকা নিচে গিয়ে দেখলো আহসানের বাবা মা,আদ্রিকার মা, অর্ক, সানা আর সাথে আহান,
ও আরেকটা কাজি সাহেবের মতো লোক।

আদ্রিকা কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে।

সানা আদ্রিকে আহসানের পাশে বসাতেই আহসান কিছু একটা ইশারা করলো। আর বিয়ে পড়াতে চালু হয়ে গেলো,, আহসান কবুল বলার পর,আদ্রিকাকে বলতে বলো,আদ্রি এখনো ঘোরের মাঝে আছে,কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।

#চলবে….