#তোর অনুরাগে
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_১৩
_________________
আদ্রিকা চমকের পর চমক খাচ্ছে,সবকিছুই মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। আদ্রিকা ঘোরের মধ্যে থেকে কবুল বলে উঠে। আহসান কেন হুট করেই এই বিয়েটা করলো সেটা কারনটা আদ্রিকার অজানা।
আদ্রিকার ঘরে বসে আছে আহসান। এমন একটা ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি।আদ্রিকা কপাট রাগ নিয়ে বললোঃ এসব কি হলো।
আহসান মৃদু হেসে বললোঃ আমার মায়াবতীকে নিজের করে নিলাম।
আদ্রি আহসানের কথার উপরে কি বলবে বুঝতে পারলো না। আহসান আদ্রিকার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে, ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আদ্রিকা আহসানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহসান আদ্রির কোমর জড়িয়ে ধরে অনেকটা কাছে নিয়ে আসলো। আদ্রিকা কেঁপে উঠলো আহসানের কোমল স্পর্শে। আহসান আদ্রির কোমড় ছেড়ে দিয়ে,গালদুটো কে ধরে কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া দিলো। আদ্রি পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। স্পর্শটা পবিত্র স্পর্শ। ভালোবাসার প্রথম ছোঁয়া।
আহসানঃ হাতটা যখন ধরেছি তখন সারাজীবন ধরে থাকবো ইনশাআল্লাহ্। তোমাকে কখনোই আমি জোড় করবো না আমার হবার জন্য যেদিন তুমি নিজে থেকে আমার কাছে আসবে সেদিন আমি তোমাকে গ্রহন করবো। আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।
আহসান আদ্রিকাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। আহসানের কথা গুলো আদ্রির মনে আলোড়ন সৃষ্টি করলো। দাভাই তার জন্য ভুল মানুষকে ঠিক করেনি।
কেটে যায় একটা সপ্তাহ। আহসান আর আদ্রিকার তেমন কোনো যোগাযোগ হয়নি। আদ্রিকা নিজের মতোই জীবনযাপন করছে তবে আহসানকে মাথা থেকে বের করতে পারেনি।
আদ্রিকা ঘরেই ছিলো,হুট করেই অর্ক ফোন করে আদ্রিকে হসপিটালে আস্তে বললো।আদ্রি অবাক হয়ে যায়, কিন্তু প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ পাই না। অর্কের কথা মতো হসপিটালে এসে চমকে উঠলো,আহসানের বাবা মা,সানা, আহান সহ বাকি বন্ধুরা আছে কিন্তু কোথাও আহসানকে দেখতে পাচ্ছে না। আদ্রির বুকটা কেঁপে উঠলো অজানা ভয়ে।
কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে আহানকে জিজ্ঞেস করলোঃ কি হয়েছে।
আহান ধরা গলায় বললঃ আহসানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।
আদ্রিকা চমকে উঠে এক পা পিছিয়ে গেলো। পেছন থেকে অর্ক এসে আদ্রিকে ধরে নেয়। আদ্রিকা অর্কের বুকে মুখ গুজে কাঁদতে থাকে নিরবে।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে জানায় আহসানের অবস্থা ভালো নয়। রক্ত লাগবে,আহসানের সাথে আহানের রক্ত মিলে যাওয়ায় আহান রক্ত দিতে যায়।
অর্কঃ বোনু কাঁদিস না কিছু হবে না।
আদ্রিঃ দাভাই আল্লাহ আমার প্রিয় জিনিস গুলোকে কেন বার বার আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়,,ওই দাভাই আহসানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে না। ও না থাকলে আমি বাঁচবো না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দাভাই,প্লিজ ওকে ঠিক করে দে না।
অর্ক নিরবে চোখের পানি ফেললো। তার বোনটা ছোট বেলা থেকে কম কষ্ট পাই নি। অনেক ঝড় ঝাপটা দিয়ে আজকে এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আজকে ওর স্বামী মৃত্যু শয্যায় দাঁড়িয়ে।
২ ঘন্টা পরে…
আহসানের জ্ঞান ফিরেছে। সকলেই দেখা করতে গেছে আহসানের সাথে। আদ্রি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রাখছে। আহসানের এই অবস্থা সহ্য করতে পারছে না।
সকলে বেড়িয়ে যেতে আদ্রি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো আহসানের কাছে। সবকিছু ভুলে ছাপিয়ে পড়লো আহসানের বুকে। আহসান ব্যথায় আ করে উঠলো। আদ্রিকার সেইদিকে খেয়াল নেয়। সে কেঁদেই যাচ্ছে।
আহসানঃ আ লাগছে তো মায়াবতী।
আদ্রিকা কাঁদতে কাঁদতেই বললোঃ মেরে ফেলবো তোকে,তুই না বলে ছিলিস কোথাও যাবি না আমাকে ছেড়ে তাহলে কেন এত ভয় দেখাচ্ছিলি।
আহসান হেসে বললোঃ আমি আমার মায়াবতীর হাতে মরতেও রাজি।
আদ্রিকা আহসানের বুকে মারতে লাগলো। আহসান টেনে আদ্রিকাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিকা সরে যেতে গেলে ধমক দিয়ে বললোঃ চুপচাপ থাকো,একটু ঠান্ডা করতে দাও হৃদয়টা।
আদ্রিকা চুপচাপ আহসানের বুকে মাথা দিয়ে থাকলো।আদ্রিকার বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে। আহসানের বুকে থাকতে ওর ভালোই লাগছে।
৩ দিন পর…
আহসানকে আজকে হসপিটাল থেকে ছেড়ে দেবে। আদ্রিকা আহসানের বাবা মায়ের কাছে গিয়ে বললোঃ আঙ্কেল আন্টি আমি চাই যতদিন না ও ভালো হচ্ছে ততদিন আমি ওর দেখাশোনা করবো আপনাদের বাড়িতে থাকবো।
যেহেতু আহসান আর আদ্রিকা স্বামী স্ত্রী তাই কেউ দ্বিমত পোষণ করেনি। আহসান ও মনে মনে খুব খুশি। আদ্রিকা তাকে মেনে নিতে শুরু করেছে,ভালোবাসতে শুরু করেছে এর থেকে খুশির খবর আর কি আছে।
আহসানকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আদ্রিকা সবকিছু ঠিক করতে লাগলো। আহসানের ডান হাতে আর বাম পায়ে চোটটা বেশি লেগেছিল। ডাক্তার সম্পূর্ণ ভাবে আহসানকে বেড রেস্টে রাখতে বলেছে।
রাত্রিবেলা….
আহসানঃ আদ্রি আমার খেতে ভালো লাগছে না।
আদ্রিকাঃ খবর দার না এইসব কথা বললে আমি শুনবো না চুপচাপ খাও।
আদ্রিকা আহসানকে খাইয়ে দিতে লাগলো। আহসান এক দৃস্টিতে তার মায়াবতীকে দেখতে লাগলো। আদ্রিকার ছোট চুলগুলো বার বার মুখে এসে পড়ছে, আহসান মুচকি হেসে আদ্রির মুখ থেকে চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিল। আদ্রির হকচকিয়ে আহসানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আহসান এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,আদ্রিকা আহসানের চোখের দিকে তাকিয়ে ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে,আহসানের চোখের মধ্যে কিছু একটা আছে যা ওকে ঘোরের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়।
আদ্রিকার ফোন বেজে উঠল। আদ্রি তাড়াতাড়ি করে ফোনটা রিসিভ করলো,,তারপরেই ওর মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। আহসান সবটাই খেয়াল করছিলো,আদ্রির হুট করেই গম্ভীর হয়ে যাওয়ার কারনটা বুঝে উঠতে পারলো না কিন্তু আন্দাজ করলো, ওপর পাশের মানুষটার কোনো কথাই আদ্রির গম্ভীরতার কারন।
আহসান আদ্রিকে কিছু প্রশ্ন করবে তার আগেই আদ্রি ওকে কিছু বলতে না দিয়ে বললোঃ চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো। একটাও কথা বললে আমি চলে যাবো কিন্তু।
আহসানঃ ওকে ঘুম যাবো, কিন্তু ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে দেবে কি।
আদ্রিকা আহসানের বাচ্চাদের মতো আবদার করা দেখে হেসে উঠলো। বিছানায় বসে পরতেই আহসান আদ্রিকার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। আদ্রিকা আহসানের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে, হুট করেই আদ্রি বললোঃ আচ্ছা তোমার এক্সিডেন্টটা হলো কিভাবে।
আহসানঃ বাদ দাও না।
আদ্রিঃ প্লিজ।
আহসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললোঃ আমি অফিস থেকে আসার সময় হুট করেই একটা ট্রাক সামনে চলে আসলো আর তারপরেই ..
রাগে আদ্রিকার মুখটা লাল হয়ে গেলো। রগগুলো খাড়া হয়ে গেলো,রাগে আহসানের চুলগুলোকে খামচে ধরলো,আহসান আ শব্দ করে আদ্রিকার দিকে তাকালো। আদ্রি রাগে লাল হয়ে আছে, এই মুহূর্তে আহসানের আদ্রিকাকে অপরূপ লাগছে।
আহসান ঘোর লাগা কন্ঠে বললোঃ আদ্রি এই মুহূর্তে আমার কি মনে চাইছে জানো।
আদ্রি স্বাভাবিক হয়ে বললোঃ কি।
আহসানঃ তোমাকে টুপ করে খেয়ে নিতে।
আদ্রির বিষম লেগে গেলো আহসানের কথা শুনে। আদ্রির কাশির শব্দ পেয়ে আহসান বেড়িয়ে আসলো ঘোর থেকে, কি বলেছে সেটা মনে পড়তেই মাথা চুলকে আদ্রির পেটের মধ্যে মুখ গুঁজে দিল। আদ্রি আহসানের গরম নিঃশ্বাস অনুভব করে কেঁপে উঠলো।
সকালবেলা…
আদ্রি আর আহসান এইভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। আদ্রির ঘুম ভেঙ্গে দেখলো আহসান আদ্রির কোমড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আহসানকে কি কিউট লাগছে আদ্রির ইচ্ছা যাচ্ছে আহসানকে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিতে। আদ্রি নিজের ইচ্ছাটাখে দমিয়ে রেখে,উঠতে যাবে,ঠিক তখনি আহসান আরো জাপটে ধরলো আদ্রিকে… আদ্রির এবার ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে মন চাইছে,পড়েছে এক ফ্যাসাদে একদিকে তো পা টনটন করছে তার উপরে আহসানের গরম নিঃশ্বাস ওর পেটে পড়ছে। নিজেকে শান্ত রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। আদ্রি আর কোনো উপায় না পেয়ে আহসানকে ডাকার জন্য মাথাটা নীচু করতেই আহসানের গালের সাথে ওর ঠোঁটটা লেগে যায়,আদ্রির সারা শরিরে একটা শিহরন বয়ে গেল। আর সহ্য করা যাচ্ছে না। আদ্রিকা আহসানকে কোনো রকমে সরিয়ে বাথরুমে গিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগলো। এই ছেলের কাছে আর কিছুক্ষন থাকলে হার্টএট্যাক হয়ে যেতো।
অন্যদিকে…
আহসান মুচকি হাসলো। আদ্রির ঠোঁট যখন ওর গালে লাগে তখনি ওর ঘুম ভেংগে গিয়েছিলো। আদ্রিকার কান্ডে ও হেসে উঠলো। দুজনের মনেই নতুন অনুভূতি। কি হবে এর পর। দুজন একত্রিত হবে না আবারো আলাদা হয়ে যাবে।
#চলবে…