তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব-০২

0
3178

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২
.
গাড়ি বিরাট এক ম্যানসনের সামনে থামতে গাড়ি থেকে নেমে বেলা কে টেনে হিচড়ে নিজের কোলে তুলে ভিতরে দিকে ঢুকে ওই অজানা। বেলার পরনে লাল বেনারসী শাড়ি। গায়ে ভারী ভারী গয়না। নাকে নাক ফুল। যেটা জোর করে চেপে চুপে পরানো হয়েছে বেলা কে মাথার ওড়না টা অর্ধেক গাড়ির মধ্যে আর অর্ধেক গাড়ির বাইরে ঝুলছে। কিন্তু এই লোকের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সেতো নিজের মত ছুটে চলেছে বেলা কে নিয়ে। বেলা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিল ঘুষি মারতে থাকে অজানার গায়ে কিন্তু এতে ও অসফল হয়। বেলার ওই দুবলি পাতলি শরীরের সাথে জিম করা পেটাই বডি কোনো ভাবে কি যায়। এতে করে বেলার নিজেরই শরীরে শক্তির অপচয় ঘটছে কিন্তু ওই মানুষটার যে এতে আরাম হচ্ছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে। চেহারা শক্ত কঠিন করে রেখেছে কোনো ভাব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। না কষ্ট না আনন্দ না অন্য কোনো এক্সপ্রেশন।
.
–“আমাকে নামিয়ে দিন। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে। আমি কোথাও যাবো না আপনার সাথে বুঝতে পেরেছেন। এই যে শুনছেন পাথর মানুষ একটা। আপনি কি কালা নাকি। বেলা বিরক্তি হয়ে কোলের মধ্যে ছটফট করতে করতে নিজেকে ছোটানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করতে থাকে।
.
.বেলা কে কোলে নিয়ে রুমে এসে বেডের ওপর ছুড়ে ফেলে দেয়। বেলা হঠাৎ এমন আক্রমণে হতভম্ব হয়ে যায়। এভাবে ওকে ফেলতে ওর যে হাল্কা ফুলকা ব্যথা লেগেছে সেটা ও ভুলে গিয়ে অবাক চোখে সামনে তাকিয়ে দেখছে।
.
. রুমের মধ্যে পায়চারি করছে দ্রুত থেকে দ্রুততার সাথে যেনো কোনো চাবি দেয়া কলের পুতুল এর মত দম দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। চোখ মুখের অবস্থা কঠিন থেকে কঠিনতম। গভীর নীল চোখ দুটো প্রচণ্ড রাগের কারণে লাল হয়ে আছে নাক কান পুরো লাল হয়ে হাত মুঠো করে আছে।
.
. বেলা নিজেকে সামলিয়ে সোজা হয়ে বসে রাগী কন্ঠে বলে ওঠে সামনের মানুষটার উদ্দেশ্যে।
.
–” এই যে আপনি। আমাকে এই ভাবে তুলে নিয়ে এসেছেন কেনো আপনি। আমি না এখানে থাকবো আর না আপনার সাথে থাকবো। হুট হাট করে আমাকে তুলে নিয়ে চলে এলেন। এইসব কি আপনার কাছে কোনো খেলা মনে হচ্ছে আপনার.. .
.
. বেলার কথা শেষ হয় না তার আগেই ঝড়ের বেগে বেডের কাছে গিয়ে বেলা কে টেনে এনে পাশে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। বেলা ব্যথায় চোখ বন্ধ করে চিপে আছে আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তার হাতের ছুড়ি গুলোর সাথে শক্ত করে তার হাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছে। আর একহাত তার পেটে আচড়ের ওপর চেপে খামছে ধরে রেখেছে।
.
–“তুমি এখন থেকে বেলা সাঁঝ রওশন। নাকি বেলা খান। এই সাঁঝ রওশন এর ওয়াইফ। লিগ্যাল ওয়াইফ । হুংকার ভরা অথচ শান্ত সেই ঝংকারময় তীক্ষ্ণ পুরুষালি গলা । এই গলা শুনলে মেয়েরা তো এমনি প্রেমে হাবুডুবু খেতে বাধ্য।
.
–” তোমার যেটা ইচ্ছা তুমি সেটা করতে পারো। তোমার সেই অধিকার আছে তবে সেটা এই বাড়ির মধ্যে থেকে। ভুলেও কখনও এই বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা মাথায় আনবে না। তাহলে জানে মেরে দেবো। এবার কিছুটা চিৎকার করে বলে ওঠে সাঁঝ।
.
. বেলা এখনও চোখ বন্ধ করে আছে আর চোখ গড়িয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু পানি। সাঁঝ এর এমন হুংকার ভরা রাগী গলা শুনে ভয়ে কেঁপে ওঠে। আসতে আসতে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকাতে দেখতে পায় এক আগুন চোখ ওর দিকে চোখে আগুন নিয়ে তাকিয়ে আছে।
.
–“তোমার সাহস কি করে হয় হ্যাঁ। এখানে স্পর্শ করেছিল তাই না। বলেই সাঁঝ পেটে আরো জোরে খামছে ধরে।
.
–” তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার শুধু আমার এই সাঁঝ রওশন এর। শুধু মাত্র আমি ছাড়া আর কেউ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। এতদিন আমি থেমে ছিলাম তোমার বয়সের জন্য কিন্তু এখন তোমার আঠারো ও হয়ে গেছে। তাই কাছে নিয়ে আসলাম। আমি ভালোভাবে তোমাকে নিয়ে আসতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু তুমি সেটা হতে দিলে না বলে বেলার ধরে থাকা হাত ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে সজরে নিজের হাত দিয়ে আঘাত করে সাঁঝ।
.
–“তোমাকে আমি সম্পূর্ণ অধিকার দিলাম তুমি সব কিছু করতে পারো কিন্তু নিজের লিমিটে থেকে। লিমিট ক্রস করলে আজকের থেকে ও আরও কঠিন থেক কঠিন শাস্তি পাবে। কোনো ছেলের সংস্পর্শে যাওয়া চলবে না। আর আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ তোমাকে ছোয়ার চেষ্টা করলে সেদিন তার শেষ দিন হবে। সাঁঝ আগুন চোখে বলে ওঠে।
.
–“আর হ্যাঁ আজকে থেকে তোমাকে আমার সাথে এই বাড়িতে এই রুমে আর এই বেডেই থাকতে হবে সুইটহার্ট। আমার কাছে থেকে ছাড়া পাওয়ার চিন্তা মাথায় ভুল করে ও আনবে না। কারণ তুমি সেটা করতে পারবে না। তোমার ওপরে আমার নজর চব্বিশ ঘণ্টা থাকে। আগেও ছিল আর এখন আরো বেশি।
.
–” আর হ্যাঁ এটা কোনো খেলা নয় আমার কাছে এটা সত্যি। এবং একমাত্র সত্যি। তুমি আমার স্ত্রী। এখন থেকে তুমি মিসেস বেলা সাঁঝ রওশন। এই সাঁঝের বেলা। তোমার সাথে আমার এই জন্মের মত সম্পর্ক তুমি আমার সাথে সারাজীবন এর মত জুড়ে গেছো। বলেই সাঁঝ বেলা কে ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই বেলা রাগী গলায় চিৎকার করে ঘৃণা ভরা চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–” আমি এই বিয়ে মানি না। আর না আপনাকে আমার হাজবেন্ড। আর না আমি এখানে থাকবো। এটা আমার কাছে কোনো মাইনে রাখে না বুঝেছেন আপনি। আর হ্যাঁ ওরা আমার বন্ধু হয় ওরা আমাকে ছোট থেকে সামলে আসছে তাই আমি আপনার কোনো কথা শুনতে বাধ্য নয়। আমি এখান থেকে পালিয়ে যাব। থাকবো না এখানে। আমি আপনাকে স্বামী হিসাবে মানি…
.
.বেলা কে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে ঝড়ের বেগে এসে বেলা কে দেয়ালে চেপে ধরে বেলার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আর এক হাত দিয়ে কোমরে খামছে ধরে। এটা বেলার সাথে প্রথম কিস হলেও এর মধ্যে কোনো ফিল নেই। আছে শুধু রাগ আর হিংস্রতায় ভরা। সাঁঝ তার এতক্ষণে জমে থাকা সমস্ত রাগ বেলার ওপর ঝাড়ছে। কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে বেলার ঠোঁট। বেলা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ও পারে না এর ফল আরো শক্ত করে ধরে তাকে সাঁঝ।
.
. মিনিট দশেক পরে সাঁঝ বেলার ওপর তার সব রাগ দেখিয়ে বেলা কে ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। বেলা চোখ বন্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থেকে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আর ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে।। গায়ে থেকে শাড়ি সরে গিয়ে বেলার শরীরে অনেকাংশ দেখা যাচ্ছে। সাঁঝ বেলা কে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে। হাত বাড়িয়ে বেলার ঠোঁটে থেকে রক্ত মুছে নিয়ে আঙুল টা নিজের মুখে পুরে দেয়।বেলা চোখ খুলে এই দৃশ্য দেখে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকাতে থাকে।
.
–“তোমার মুখে এই কথা যেনো আর না শুনি। তুমি মানো আর না মানো এটাই সত্যি যে আমি তোমার স্বামী আর তুমি আমার স্ত্রী।
.
–” আর যেহেতু আমি তোমার স্বামী তাই এই টুকু অধিকার তো আমার আছে তাই না বেব। বলে বাঁকা হেসে ওঠে বেরিয়ে যেতে থাকে সাঁঝ।
.
–“আমি আপনাকে ঘৃণা করি। বুঝতে পেরেছেন আমি আপনাকে ঘৃণা করি। মানি না আপনাকে। বেলা চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
–” একদিন মানবে আর সেদিন তুমি আমাকে ঘৃণা করি নয় ভালোবাসি বলবে সুইটহার্ট । বলেই বেরিয়ে যায় সাঁঝ।
.
–“আমি কখনও আপনাকে ভালোবাসব না কখনও না। আপনার প্রতি আমার যেটুকু ভালোবাসা বেঁচে ছিল সেটা ও আজকে ঘৃণা পরিনত হয়েছে। আমি আপনাকে ঘৃণা করি। অতিরিক্ত ঘৃণা করি। বেলা কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে। বেলা দেয়ালে সাথে চেপে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে আসতে আসতে দেয়াল ঘেঁষে নিচে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আর ভাবতে থাকে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার সাথে।

—————–

. বেলা মুখের ওপর পানির ছিটে পড়তেই পিট পিট করে চোখ খোলে। চোখ খুলে সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আবারও মুখে ফুটে ওঠে ভয়ের ছাপ। তার সামনে স্বয়ং তার জিন্দেগি না না মিস্টার সাঁঝ রওশন তার দিকে তাকিয়ে আছে আগুন চোখ নিয়ে। যেনো মনে হচ্ছে এই আগুন চোখের দ্বারা তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে। দু হাত দিয়ে তার কোমরে পেচিয়ে রেখেছে নিজের সাথে। বেলা কিছুক্ষণ নিজের স্থান বোঝার চেষ্টা করে নিজেকে গাড়ির মধ্যে পেয়ে আর তার সাথে কিছুক্ষণ আগের ঘটনার কথা মনে করে নিজেকে ছাড়তে চেষ্টা করে।
.
–“আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। আমাকে ছাড়ুন প্লিজ। আমি বাড়ি যাব। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। বেলা চিৎকার করতে থাকে।
.
. বেলার কথার কোনো রকম গুরুত্ব না দিয়ে বেলা কে সাঁঝ আরো নিজের সাথে চিপকে বসিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর গাড়ি বেলাদের বাড়ির সামনে এসে থামতে বেলা অবাক হয়ে গিয়ে সাথে সাথে নামতে যায়। কিন্তু সেখানে ও বাধা। সাঁঝ গাড়ি থেকে নেমে এসে বেলা কে টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেলা কে টানতে টানতে বাড়ির ভিতরে যেতে থাকে।
.
. বেলা অবাক হয়ে তার বাড়ির ভিতরে দেখতে থাকে যেখানে কত লোক ভর্তি বাড়ির ড্রয়িং রুমে সোফায় একদিকে কাজী ও অন্য দিকে উকিল বসে আছে। আর তাদের পাশে তার বাবাই বসে আছে। আর তার সাথে তার জল্লাদ মা। আর এখানে আরো অনেক জন আছে কয়েক জন বডিগার্ড ও কয়েক জন মেয়ে আছে। আর তার সাথে একজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক ওর বাবাই এর পাশে। আর কিছুটা দূরে ওর দিয়া আর তার সাথে দুই বোন দাঁড়িয়ে আছে। বেলা সব কিছু অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
.
–“বেলা মা আমার আজ এত দেরি করে কেউ আসে দেখ সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে কখন থেকে। যা তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে আয়। আমরা সবাই তোর বিয়ের জন্য অপেক্ষা করছি।
.
. বেলা তার এই মায়ের কথা শুনে অবাক এর সপ্তম পর্যায় চলে গেছে। তাকে মা বলে ডাকছে এটা বেলা বিশ্বাস করতে পারছে না। তার পরে বিয়ে কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়ে।
.
–“বিয়ে! কার বিয়ে। আমি বিয়ে করব। বেলা চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ চোখের ইশারায় ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের কে বেলা কে রেডি করতে নিয়ে যেতে বলে। ওরা বেলা কে টেনে নিয়ে চলে যায়। বেলার কোনো কথা না শুনে। আর বাড়ির লোক চুপ চাপ দেখতে থাকে বেলার দিয়া কিছু বলতে নিলেই ওর মা তাকে চুপ করিয়ে দেয়।
.
. বেলা কে রেডি করে আনতে জোর করে বিয়ে পড়ানো শুরু করে কিন্তু কবুল বলার সময়ে কিছুতে কবুল বলাতে পারে না শেষে ওর বাবাই এর মাথায় গান ধরে ভয় দেখাতে শেষ মেস বেলা কবুল বলে দেয়। আর রেজিস্ট্রি পেপারে সই করে দেয়। এতে না ছিল বেলার কোনো অনুভূতি। ছিল একরাশ ঘৃণা। আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল নোনা পানি। বাড়ির সবাই খুশি মনে তাকিয়ে আছে। শুধু বেলার বাবাই আর বেলার দিয়া চোখে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
–“বেলা মা এতেই তোর ভালো হবে। জানি তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস আমার ওপর তোর অভিমান হয়েছে। কিন্তু আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি এতেই তুই সুখী হবি। আজ থেকে তুই এই নরকে থেকে মুক্তি পেলি। বেলার বাবাই আবিদ মজুমদার বেলার মাথায় হাত দিয়ে চোখে পানি নিয়ে বলে ওঠে।
.
–” বেলা বাবা একদম ঠিক কথা বলছে। তুই সত্যি অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিস। তুই এখন সত্যি এই নরক থেকে মুক্ত হয়েছিস। তুই খুব ভালো থাকবি ওখানে দেখিস ।বেলার দিয়া আলিয়া বলে ওঠে বেলা কে জড়িয়ে ধরে।
.
. বেলা কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে। তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অঝরে পানি। তার মধ্যে এখন কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। সাঁঝ বেলা কে টেনে গাড়িতে এনে বসিয়ে দেয়। বেলা শেষ বারের মতো পানি ভরা চোখে দেখতে থাকে বাড়ির সবাই কে।

————–

বেলা কাঁদতে কাঁদতে দেয়ালের সাথে বসেই ঘুমিয়ে গেছে। চোখে মুখে এখনও পানি ছিটে লেগে আছে। মুখে এখনও স্পষ্ট পানির দাগ। হাঁটুর ওপরে মাথা দিয়ে আগের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে ওই ভাবে বসে থেকে।
.
.সাঁঝ গভীর রাতে রুমে ঢুকে দেখে বেলা মাটিতে দেয়ালের সাথে লেগে ঘুমিয়ে গেছে। গুটি গুটি পায়ে সাঁঝ এগিয়ে এসে হাঁটু মুড়ে বেলার সামনে বসে যায়। বেলার ওই কান্নারত ফোলা ফোলা মুখ দেখে মায়া জড়িয়ে যায়। আজ পাঁচ বছর পরে এত কাছে থেকে তার সুইটহার্ট কে দেখছে। যে একদম বাচ্চাদের মত করে ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। এটা দেখে সাঁঝ এর ঠোঁটের কোলে হাসি ফুটে ওঠে।
.
. সাঁঝ উঠে বেলা কে কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দেয়। বেলাকে বিছানায় শুয়ে দিতে শাড়ির আঁচল সরে গিয়ে বেলার ফর্সা দুধ সাদা পেট দেখা যাচ্ছে যেখানে অনেক টা জুড়ে আচড় কেটে আছে। তাতে বিন্দু বিন্দু রক্ত জমে আছে। আর এতক্ষণ শাড়ির ঘষা লেগে জায়গা টা আরো বিশ্রী হয়ে গেছে। এটা দেখেই সাঁঝ এর বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে। রাগের মাথায় যে তার পিচ্চিপরী কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। বেলার হাতের দিকে তাকাতে বুক কেঁপে ওঠে সাঁঝ এর চুড়ি ভেঙে হাত কেটে গেছে। সাঁঝ উঠে গিয়ে ফার্স্ট এড বক্স এনে মেডিসিন লাগাতে থাকে। কাটা জায়গায় মেডিসিন লাগাতে বেলা কেঁপে কেঁপে ওঠে। সাঁঝ আসতে আসতে রক্ত পরিষ্কার করে পেটে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দেয়। হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। গায়ের থেকে সব গয়না খুলে দেয়।
.
.সাঁঝ বেলা কে টেনে নিজের বুকে ফেলে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে শক্ত করে। সাঁঝ এর চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আর নিজে বিড় বিড় করে ওঠে।
.
–“আজ আমি যদি ঠিক টাইম মত জানতে না পারতাম। ঠিক টাইম মত পৌঁছাতে না পারতাম তাহলে যে কি হতো আমি ভাবতে পারছিনা। আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম সোনা। আর এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।
.
–” আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও সোনা আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছে আমি তোমাকে হার্ট করে ফেলেছি। আমি এটা করতে চাই নি। আমি তোমাকে এই ভাবে নিজের কাছে আনতে চাই নি। আমি তোমাকে তোমার ভালোবাসা নিয়ে নিজের কাছে আনতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে নিজের কাছে আনতে বাধ্য হয়েছি। না হলে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম।
.
–“আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও সোনা। আমি জানি তুমি এখন আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছো কিন্তু আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার মনে আবার ও আমার জন্য ভালোবাসা তৈরী করে নেবো। তোমার সব ভুল ভেঙে দেবো। আর তারপর আমি তোমাকে নিজের করে নেবো সম্পূর্ণ আমার এই সাঁঝ এর করে নেবো। সাঁঝ এর বেলা।
সাঁঝ বেলার মাথায় গভীর চুমু খেয়ে বেলার গলায় মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে।

—————–

সকাল বেলা চোখে মুখে থাই ভেদ করে মুখে সূর্যের আলো পড়তে বেলা পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় । নিজেকে সম্পূর্ণ অন্য জায়গা পেয়ে হকচকিয়ে উঠে বসে বেলা। তারপর মনে পড়ে সে কোথায় আছে।
.
–“কিন্তু আমার যতদূর মনে পড়ে আমিতো নিচে ছিলাম বিছানায় আসলাম কি করে আর আমার হাতে ব্যান্ডেজ আমার গয়না সব খুলে রাখলো কে। বেলা আনমনে ভাবতে থাকে। কিছু মনে পড়তে আবারো মুখ কঠিন করে নেয়। নিশ্চয়ই ওই হুঁনো টা করেছে। বিড়বিড় করে বলে ওঠে বেলা।
.
. বেলা বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে যেতে গিয়ে ও ফিরে আসে। তার তো এখানে কোনো ড্রেস নেই তাহলে ও পড়বে কি। এখনও সেই বেনারসী পরে আছে। ভাবতে ভাবতে বেলা কাবার্ড খুলতে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এত গুলো শাড়ি দেখে। বেলা নিজের মনে ভাবতে ভাবতে ওখান থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
.
. কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে কালকের আর আজকের তফাত ভাবতে থাকে হটাৎ কিছু মনে পড়তে ভ্রু কুঁচকে যায়।
.
–“দিয়া আর বাবাই কোন বিপদ থেকে বাঁচার কথা বলছিল কালকে। কিসের বিপদ ছিল। যেটা ওরা জানে আমি জানি। বাবাই বারবার করে বিপদের কথা কেনো বলছিল। বেলা মাথায় হাত রুমে ঘুরতে ঘুরতে বলতে থাকে।
.
–” আর জিন্দেগি ও হঠাৎ করে একদম আমার সামনে এসে আমাকে বিয়ে করে নিলো।কিন্তু কেন। এই হুনো টা হঠাৎ করে এমন করলো কেনো তাহলে দিশা কোথায়। কিছু তো ঘাপলা আছে এর মধ্যে। বেলা মাথায় হাত দিয়ে রুমের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে বলতে বলতে হঠাৎ সামনে দিকে তাকাতে থমকে যায়। চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায় পুরো রসগোল্লার মত এখুনি বেরিয়ে আসবে মনে হচ্ছে মাথায় থাকে হাত নীচে পড়ে যায়। সামনের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে বেলা।
.
.
.
. 💝💝💝
.
. চলবে……