এক টুকরো মেঘ পর্ব-০১

0
1306

#এক_টুকরো_মেঘ ☁️
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::০১

মাঝরাতে কান ধরে উঠবস করছি রাস্তার মাঝখানে।। আর আমার সামনে ল্যাম্প পোস্টের সাথে হেলান দিয়ে,, একহাতে মোটা লাঠি ,,, অন্যহাতে ফোন নিয়ে ভিডিও করছে অরিশ ভাইয়া ।। তার চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।।উঠবস করা যে,, এখানে থামিয়ে দিবো ,, তার কোনো উপায় নেই।। একবার থেমে গেলেই ঐ মোটা লাঠিটা আমার পিঠে ভাঙবে।। তাই বাধ্য হয়ে উঠবস করছি।।।

— এবার দয়া করে বলবেন,,, এতোরাত অবধি কোথায় ছিলেন।। ( ভ্রু কুঁচকে অরিশ)

— আমি না মানে আআআসসসলেএ….!!(উঠবস করা থামিয়ে আমি)

— এই তুই থামলি কেন ?? তোকে আমি থামতে বলেছি ?? ( লাঠি দিয়ে ল্যাম্প পোস্টে জোরে আঘাত করে)

ভয়ে আমি আবার উঠবস করতে লাগলাম।। জীবনেও আমাকে শান্তি দিলো না।। সারাজীবন জ্বালিয়ে যায়।। ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ভাইয়ার কথা শুনতে হয় ।। পাপা নিজে আমার দায়িত্ব অরিশ ভাইয়াকে দিয়েছে।। আজকে ভাইয়াকে অফিসের একটা ইনপ্রটেন্ট কাজে রাঙামাটি যেতে হয়েছিলো।। এক সপ্তাহ পর আমার এইচএসসি এক্সাম ।। তারপর আবার ভাইয়াদের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে।। তখন তো একদমই সময় পাবো না।। তাই আজকে এই সুযোগে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম।। থিয়েটারে সিনেমা দেখার খুব শখ আমার।। অনেকবার বলেছিলাম ,,আমাকে সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেতে কিন্তু নিয়ে গেল না ।। সবসময় একটা কথা বলে ,, সেখানে ছোটরা যায় না।।
তাই আজকে সকালে ভাইয়া যাওয়ার পর প্লান করে সবাই একসাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম ।। সন্ধ্যা ৬-৯ শো ছিলো ।। এখন ১২.৩৫ বাজে ।। থিয়েটার থেকে বের হতে হতে ,, তারপর জ্যামে আটকে থাকা ।। প্রায় সবমিলিয়ে ফিরতে ১২ টা বেজে গেছে ।। সেই কথাটা যদি এখন ভাইয়াকে বলি ,, তাহলে আর রক্ষে নেই।।

— আসলে হয়েছে কি ভাইয়া ।। সামনে তো আমার ফাইনাল এক্সাম ।। তাই আর কি,,, নোটস নিতে গিয়েছিলাম।। কি করবো বলো ,, শুনেছিলাম তুমি নাকি ২ দিনের জন্য যাচ্ছো ।। তখন আমি কি পড়বো তাই ।। ( উঠবস করতে করতে আমি)

— সেটা নাহয় বুঝলাম,, কিন্তু তুই ফোন করে বাড়িতে কেন জানাসনি!!(কৌতূহল নিয়ে অরিশ)

— আসলে ফোনে চার্জ ছিলো না।। তুমি তো নিজেও ফোন দিয়ে বন্ধ পেয়েছো !!( ফোনটা এগিয়ে দিয়ে আমি) বিশ্বাস না হলে এই দেখো ,,ফোনটা অফ ।। ( তোমাকে তো আর বলা যাবে না ,, ফোনটা আমি ইচ্ছে করে অফ করে দিয়েছি ,, হি হি হি)

— আর ওদের ফোনেও কি চার্জ ছিলো না !!( ঠোঁট বাঁকিয়ে অরিশ)

— কি যে বলো না তুমি।। ওদের ফোনে চার্জ থাকবে না।। বাড়ির ফোন নম্বর তো আমার ফোনে ছিল ,, আর ফোন তো অফ ছিল !!( ছলছল চোখে আমি)

— ওখানে ফোনটা চার্জ দিয়ে অন করে তো ফোন দিতে পারতিস।।( অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে অরিশ)

— তুমি এতো পুলিশের মতো জেরা করছো কেন ।।( ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে তার চেহারা দেখে চুপশে গেলাম ,, তাই নিচের দিকে তাকিয়ে উঠবস করতে করতে বললাম) আমি তো আর জানতাম না এতো রাত হয়ে যাবে ,, তাহলে আর যেতাম না।।

— কোন বিষয়ে নোটস এনেছিস শুনি !!! আর নোটসগুলো দেখি !!!

— এই নাও দেখো !!( কাধ থেকে ব্যাগটা ব্যাগ নামিয়ে ভাইয়ার হাতে দিয়ে)

প্রাইরেট পড়তে গিয়ে সেখান থেকে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম তাই আর সমস্যা হলো না ।। কিন্তু ব্যাগের ভেতরে যে কোনো নোটস নেই ।। সেটা দেখলে কি হবে ভাবছি ।। তাই চোখ বন্ধ করে শ্রেষ্ঠাকে ডাকছি ।। কিন্তু না ভাইয়া ব্যাগটা খুললেন না ।। না খুলেই বললো..

— কেন জানি তোর কথা একদম বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না ,, তবুও করলাম ।। এবারের মতো ছেড়ে দিলাম ,, নেক্সাস টাইম যদি এমন কিছু দেখি তখন এই ভিডিওটা ইন্টারনেটে আপ দিয়ে দিবো ।। এবার উঠ !!

— ঠিক আছে ভাইয়া।। এবার আমি আসি ।

বলে ভাইয়ার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকবো তখনই পেছন থেকে ভাইয়া আমার হাত টেনে ধরলো ।। আমি পেছনে তাকিয়ে এইবার ভাইয়াকে পর্যবেক্ষণ করলাম।। ভাইয়া ঠিক যেই ছাইরঙা শার্টটা পরে গিয়েছিলো ,,পড়নে ঠিক সেটাই আছে ।। ঘামে শার্টটা গায়ের সাথে লেপ্টে কালো আকার ধারণ করেছে ।। চুলগুলো উস্কো খুস্কো।। একদিনেই যেন শরীরে একটা ভাজ পড়েছে ।। আমি ভাইয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম!!!

— আমি কি তোকে একবারও যেতে বলেছি ।। নাকি বলেছি শাস্তি মাপ করে দিয়েছি ।। ( ঠোঁট কামড়ে অরিশ)

— না মানে তুমি তো উঠতে বললে ।। তাই ভাবলাম যেতে বলেছো ।। আর মাপ করেছো ।।

— উঠতে বলেছি ,, যেতে বলিনি ।। আর মাপ করিনি ।।চল আমার সাথে ।। তোকে একটা অন্য শান্তি দিবো ।।

বলেই টানতে টানতে আমাকে ভাইয়াদের বাড়িতে নিয়ে এলো।।।

( আমি তরিন ।। তবে সকলে আমাকে ঋনি বলে ডাকে।। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিবো।। আর অরিশ হচ্ছে আমার বাবার বন্ধুর ছেলে।। আমার পাশাপাশি বাড়িতে থাকি ।। আমাদের বাড়ির থেকে অরিশ ভাইয়াদের বাড়িতে যেতে ২ মিনিট সময়ও লাগে না।। তিনি এখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে।। পাশাপাশি বাবা কাজে সাহায্য করে থাকে ।।আমার সমস্ত দায়িত্ব পাপা অরিশ ভাইয়াকে দিয়েছে।। )

আমাকে একা রেখে অরিশ ভাইয়া খাবার আনতে গেছে কিচেনে ।। কিছুক্ষণ পর একহাতে খাবারের প্লেট আরেকহাতে পানির গ্লাস নিয়ে ফিরলো ।। খাবারের প্লেটটা এনে আমার সামনে রেখে খেতে বললো ।। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি তো একটু আগে পেট পুড়ে খেয়ে এসেছি ।। এখন যদি এগুলো খাই তাহলে বাঁচা যাবে না।।

— ভাইয়া জানো ,, আন্টি না খুব ভালো ,,আমাকে জোর করে ডিনার করিয়ে দিয়েছে।। এখন যদি এগুলো খাই তাহলে আর বাচা যাবে না।। প্লিজ আমাকে খেতে বলো না।।( করুন সুরে আমি)

— ভালো হয়েছে খেয়ে এসেছিস।। বাড়িতে আর একটা দানাও নেই যে খাবো।। আমি যে আজকে ফিরে আসবো সেটা তো আর বাড়িতে জানাই নি।। এটুকু ছিলো সেই ভাগ্য ।। আমি বরং খেয়ে নেই।। ( একটু থেমে আবার অরিশ) আচ্ছা তুই তো বললি ,, তুই তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি তাই বাড়িতে জানাসনি ,, তাহলে তুই ঐ বাড়িতে ডিনার কেন করলি!!!

— এইরে কেলো করেছে।।এবার কি বলি !!( বিরবির করে আমি ) আমি প্রথমে খেতেই চাইনি আন্টি বললো খেয়ে নিতে ,, তখনও খেতে চাইনি ।। তারপর মেঘলা জোর করে খাবার মুখে পুড়ে দিলো ।। নাহলে তো আমি খেতামই না।। সত্যি বলছি ।।

ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে খাবার শেষ করলে ফেললেন।। তারপর প্লেটটা কিচেনে রেখে এসে একটা ট্রাউজার আর টি শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।।। প্রায় ২৫ মিনিট পর বেরুলো।। গায়ে বিন্দু বিন্দু ,, চুলগুলো ভিজে লেপ্টে আছে শরীরে ।। দেখেই বোঝা যাচ্ছে‌ শাওয়ার নিয়েছে।। মাথাটা কোনো রকম মুছে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।।

— তোর চিন্তায় মাথাটা ব্যাথা করছিলো ।। এখনও করছে ।। মাথাটা একটু টিপে দে ।। এটাই তোর শাস্তি।। ( চোখ বন্ধ করে অরিশ)

— ভাইয়া অন্যকোনো শাস্তি দিলে হয়না । আমার হাতে ব্যাথা করবে তো।।

— তাহলে রাস্তায় চল ।। সেখানে আবার কানে হাত দিয়ে উঠবস কবরি !!( কোল থেকে মাথা তুলে অরিশ)

— না ,, না,, ঠিক আছে ।। তুমি শোয়ে পড়ো ।। আমি মাথায় তেল দিয়ে টিপে দিচ্ছে ।।

— তুই কি একটুও আমাকে বুঝতে শিখবি ।। জানিস যখন শুনতে পেয়েছিলাম ।। তোকে পাওয়া যাচ্ছে না তখন কতোটা ভয় পেয়েছিলাম।। অফিসের সব কাজ ফেলে তোর কাছে ছুটে এসেছিলাম।। মনে হচ্ছিলো যেন জীবনটা এখানেই থমকে গেছে।। কেন তোকে রেখে এসেছিলাম ।। এটা বলে নিজেকে দোষারোপ করছিলাম।। ( আমার গালে হাত রেখে অরিশ)

সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছে। তখন যদি না যেতাম তাহলেই ভালো হলো ।। আমার জন্য ভাইয়াকে কষ্ট করতে হতো না ।।
— সরি ভাইয়া আমি আর কখনো এমন কাজ করবো না ।। এখন থেকে কোথাও গেলে তোমাকে জানিয়ে যাবো। তুমি মেতে দিলে যাবো ।। নাহলে নয় ।। প্রমিজ!!

— কথাটা মনে রাখিস ।। তাহলেই হবে ।।

বলেই আবার আমার কোলের উপর শুয়ে পড়ল।।
আমি বেডে রাখা টাওয়াল টা নিয়ে মাথাটা ভালোভাবে মুছে দিয়ে তেল এনে ,, তেল দিয়ে আস্তে আস্তে মাথা টিপে দিতে লাগলাম।। ভাইয়ার ঘুমন্ত চেহারাটা আমার খুব ভালো লাগে ।। একদম ভাইয়ার বিপরীত একজন শান্তশিষ্ট মানুষ।। চেহারা যেন মাথায় ভরিয়ে দেয়।। ইচ্ছে করছে তার কপালে আমার ঠোঁট দুটি ছুয়িয়ে দেই ।। কিন্তু ভাইয়া যদি দেখে ফেলে তখন কি ভাববে।। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম ,, ভাইয়া ঘুমিয়ে পড়েছে ,, তাই নিজের ইচ্ছেটাকে আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না।। ঠোঁট দুটি ছুয়িয়ে দিলাম।। আমারও খুব ঘুম পেয়েছে তাই মাথাটা বেডের সাথে হেলান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।।

চলবে…💞💞

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,, ধন্যবাদ)