তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-০৭

0
701

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
সপ্তম খন্ড
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

দিন গড়িয়ে বিকাল হলো,
ছায়া এখন একটু সুস্থ জ্বর পড়েছে।
নির্ঝর ছায়াকে নিয়ে বাইরে আসলো,
ছায়া প্রকৃতি উপভোগ করছে
সাদা বালির পাশে নীল পানি।
নির্ঝর ছায়ার হাত ধরে সমুদ্রের পাড় ঘেসে হাঁটছে।
অসম্ভব সুন্দর এই মুহুর্ত টাকে ছায়া খুব আনন্দের সাথে উপোভগ করছে।
ছায়া শুধু নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নির্ঝর কে দেখে ভালোবাসার এক অন্য অধ্যায় ছায়া শিখলো। মনের মাঝে হাজার শুখ পাখি উড়ে।
–নির্ঝর।
হাঁটতে হাঁটতে নির্ঝর কে ডাক দেয় ছায়া।
ছায়া কন্ঠে এই প্রথম বার নির্ঝর নিজের নাম শুনলো।
নির্ঝর ছায়ার দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসি দিলো,
–হুম।
–এভাবে ভালোবাসবেন ত৷ কখনো ছেড়ে যাবেন না ত
ছায়ার প্রশ্ন শুনে নির্ঝর ছায়ার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
আর ছায়ার কপালে চুমু দিলো,
–মু-হুম কখনো না।
ছায়া চোখ বুজে নির্ঝর এর ভালোবাসা উপোভগ করলো।
ছায়ার মায়াতে নির্ঝর ক্রমশ আঁটকে যাচ্ছে।
ক্রমশ এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে তারা।
★★★
নির্ঝর এর ভালোবাসার পরশে চোখ বন্ধ করে নেবার পর যখন চোখ মেলে তাকালাম তখন মনে হলো সূর্যের তেজ কিছুটা কমে গেল।
কিছু কালো মেঘে সূর্যটা ঢেকে গেল।
আমার হাসি টানা মুখটা কেন জানিনা ধিরে চুপসে গেল।
হটাৎ ই তাকে হারানোর ভয় জেগে উঠলো।
আমি বুঝতে পারছি না কেন এমন হলো।
★★★
নির্ঝর ছায়ার মুখটা দেখে চিন্তিত শুরে বলল,
–কি হয়েছে?
ছায়া কিছু না বলে নির্ঝর কে জড়িয়ে ধরলো।
ঘটনা চক্রে নির্ঝর কিছু বুঝতে না পারলেও ছায়াকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে।
মেয়েটা বড্ড মায়াবী।
ওর ছোয়া গুলো বেশ আনন্দ দেয় নির্ঝর কে।
সত্যি কি ভিশন মিষ্টি এই মেয়েটা।
সমুদ্র পৃষ্ঠে বাতাসের আগমন।
ভিশন বাতাস আর অসাধারণ দৃশ্য।
তার মাঝে দুইটি ভালোবাসার পাখি।
সত্যি এ এক অপূর্ব দৃশ্য।
,
,
,
,
সারাটা বিকাল ছায়াকে নিয়ে সমুদ্রের কিনারায় কাটালো নির্ঝর।
ছায়ার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহুর্ত নির্ঝর কে ভিশন আনন্দ দিচ্ছে।
তাদের ছোট ছোট খুনসুটি ছায়াকে জ্বালাতে নির্ঝর এর বেশ মজা লাগে।
তাদের ছোট ছোট ভালোবাসার পরশ গুলো।
সব মিলিয়ে এক ভালোবাসার দুনিয়া।
যেখানে শুধুই ভালোবাসা আর ভালোবাসায় ভরা খুনসুটি।
এভাবেই কাটিয়ে দি সারাটা জীবন৷
কিন্তু সামনে অনাগত বিপদের কথা নির্ঝর ঠিকি জানে।
কি হবে সামনে সেটা নির্ঝর এর জানা নেই।
কিন্তু কিছু খারাপই হবে।
ছায়ার মাথাটা নির্ঝর এর বুকে।
নির্ঝর এর হাতটা ছায়ার মাথায়।
ছায়ার চোখ দুটো বন্ধ।
ছায়াকে বুকে নিয়ে ছায়ার কথা ভাবছে নির্ঝর।
মেয়েটার চুলে অসম্ভব সুন্দর একটা ঘ্রাণ আছে।
সে ঘ্রাণ যখন নির্ঝর পায় তখন সে পাগলি হয়ে যায়।
–তোমার চুলে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আছে ছায়া।
–ওটা স্যাম্পুর ঘ্রাণ।
–নাহ ওটা তোমার চুলের ঘ্রাণ।
–হা হা আপনি ত পুরাই আমার মামাত বোনের মেয়ের মতো বললেন।
–কেন ও কি বলত।
–ও বলতো সুদু খালামনি তোমার চুলে না ঘ্রাণ আছে।
তখন আমি ওকে এই কথাটা বললে ও সেম উত্তর দিতো।
–ও তেমায় সুদু খালামনি বলত?
–হ্যাঁ নামটা অনকমন না।
–হুম আসলে।
–বাহ আচ্ছা ছায়া একটা কথা বলব।
–হুম
–আমাদের একটা মেয়ে হলে ভালো।হবে তাই না।
ছায়া নির্ঝর এর কথায় লজ্জা পেল। ছায়ার দিকে তাকিয়ে নির্ঝর বলল,
–আরে এখন না তুমি আগে নিজে বড়ো হও তার পরে না বাচ্চা।
–ধুর এগুলা বাদ।
–কেন বাদ আমি তোমার স্বামী না।
–হ্যাঁ ত।
–বলতেই পারি না।
–হুম একটা কথা বলব।
–হুম। –
–আপনাকে নিয়ে কখনো কল্পনা করি নি এমন একটা পরিবেশ।
–কেন বলত।
–আপনি ভিশন রাগি।
–রাগি বলে কল্পনা ছেড়ে দিতে হবে নাকি।
–তা না ভাবতাম যদি কখনো ভালোবাসার কথা বলি একটা থাপ্পড় খাবো সেদিন।
–হা হা এতো ভয় পাও।
–হুম পেতাম এখন পাই না।
–বউ আমার সাহসী হয়ে গেছে।
–এক দম।
–আচ্ছা দেখি সাহস কতোটা বেড়েছে,
কথাটা বলে ছায়াকে টেনে বিছনায় ফেলে নির্ঝর ছায়ার উপরে উঠে,
–ত বলো,
–কি হচ্ছে এগুলা।
–বলো না কই সাহস দেখবো ত।
–আল্লাহ,
কি পাজি খোদা।
,,
,
,
অচেনা লোকটার বাসায় সব কিছু তচনচ হয়ে আছে।
যেন কোন ভুমিকম্পের আবির্ভাব হয়েছিল।
কিন্তু এ ভুমিকম্পের কারন প্রকৃতি নয়।
এর কারন নিজে অচেনা লোকটি।
–স্যার আমারা অনেক চেষ্টা করেছি নির্ঝর হয়ত এ দেশে নেই।
–চুপ থাকো মুর্খের দল।
ও দেশ ছেড়ে বাইরে যায় নি।
ওকে কি বোকা ভেবেছো।
ও জানে দেশ থেকে বাইরে গেলে ওকে ধরা সহজ।
ও দেশেই কোথাও লুকেয়েছে।
২৪ ঘন্টা জাস্ট ২৪ ঘন্টা শেষ সময় তোদের কাছে কোথা থেকে পারিস নির্ঝর কে খুঁজে বের কর।
(চিৎকার করে)
(অচেনা লোকটার এই ভুলটার ফয়দা তুলেছে নির্ঝর।
নির্ঝর জানত তার শত্রুরা এমন টাই ভাববে আর তাদের কে দেশের ভেতর খুঁজবে।
তাই সে দেশের বাইরে চলে এসেছে।
নির্ঝর যেভাবে ভাবছে ঠিক সেভাবেই হচ্ছে এখন বাকিটা দেখা যাবে)
,
,
চৌধুরী বাড়িতে,
তমা সকাল থেকে পায়চারি করে চলেছে ঘরের মধ্যে দিয়ে।
আবির দুই বার প্রশ্ন করেছে তমা কে যে কি হয়েছে তমা’র।
কিন্তু তমা কোন উত্তর দেয় নি।
আবির কে এড়িয়ে চলছে তমা।
আবির কিছুই বুঝতে পারছে না তমার হয়েছে টা কি।
তমার চোখে মুখে চিন্তা আর রাগ দুটোর ছাপ বেশ ভালো করে প্রকাশ পাচ্ছে।
আবির কিছুটা অবাক হয়ে তমার দিকে তাকিয়ে আছে,
–আচ্ছা তমা তুমি কি আমাকে বলবে তোমার কি হয়েছে?
–কিছু না বললাম না।
–কেন কিছু না বলো না কি হয়েছে।
তোমায় দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছে।
–তুমি কি চুপ করে বসবে আবির আমার রাগ হচ্ছে।
–তুমি এমন করছো কেন।
তমা কিছু বলতে যাবে কিন্তু হটাৎ কিছু একটা ভেবে তমার মুখের রূপ পরিবর্তন হয়ে গেল।
তমা হাসি মুখে তাকালো আবিরের দিকে,
আবিরের পাশে বসলো,
–আবির।
–কি
তমার হটাৎ চেঞ্জ দেখে আবির কিছুটা অবাক হলো
–তুমি ত জানো তাই না ভাইয়া ছায়াকে নিয়ে কোথায় গেছে
আবির অন্য ধ্যানে থেকে বলে দেয়।
–হ্যাঁ।
তমার রূপ আবার পরিবর্তন হয়ে যায়।
তমা চোখে মুখে আলোর ঝলকানি দিয়ে বলে,
–বলো না কোথায় আছে।
আবিরের ধ্যান ফিরে ওর মনে পড়ে এ কথা ও কাউকে বলতে পারবে না।
নির্ঝর আবিরের কাছে বলেছিল এ কথা কেউ যেন না জানে।
তাই আবির তড়িঘড়ি করে কথা বদলে দিলো,
–আরে না না আমি জানি না। আমি ত হুট করে বলে দিয়েছি জানি।
আমাকে ভাইয় কিছুই বলে নি।
–তুমি মাত্র বলেছো তুমি জানো (রেগে)
–কি যে বলো না তমা ভাইয়া আমাকে বলবে কেন ভাইয়া বলতে হলে আগে মাকে বলত।
–তাও ঠিক।
–তুমি কি ভাইয়ার যাওয়া নিয়ে চিন্তিত তমা।
–ইয়ে মানে না না কি যে বলো।
আমি চা করে নিয়ে আসছি।
হটাৎ তমার এমন পরিবর্তন জনক কথায় আবির আবাক হলেও তা প্রকাশ করলো না।
তমা চলে গেল কিচেনে।
তমা চলে যেতে আবির বলে উঠলো,
–তবে কি ভাইয়া যা বলেছিল তাই সত্যি!
,
,
,
,
চলবে,