তোর নামের বৃষ্টি পর্ব-২২

0
969

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২২
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
তিন ঘণ্টা হয়ে গেছে ত্বকি একা রুমের মধ্যে বন্ধি। মেঘার দেখা মিলেনি। মেয়েটা বেড়াতে এসে তাকে ভুলেই গিয়েছে। ত্বকি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল মেঘার কথা। তার বলা কথাগুলোর কি প্রভাব মেঘার উপর পড়ে? নাকি মেয়েটা তাও কিছু বুঝে না?
,,

মিমিমা আপুর রুমে চুপ করে বসে আছি। ত্বকি ভাইয়া বলা প্রত্যেকটা কথার রিয়েকশন শুরু হয়ে গিয়েছে। তার এমন অদ্ভুত কথা, বিশ্বাস করতে পারছি না।যে লোকটা আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারে না। সে কিনা বলছে, ‘আমি তাকে ভালোবাসি না’।

মেঘাকে গভীর চিন্তায় মত্ত দেখে মিমমা তাকে হাল্কা ঝাঁকি দিয়ে বলল,

-কিরে? মেঘু রানী কী ভাবছিস। (মিমমা)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-মেঘু (মিমমা)

মিমমা আপুর দ্বিতীয় ডাকে আমার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল। বিরক্ত নিয়ে বললাম,

-হুম,বলো। (মেঘা)

-মেঘু রে, জিজু না তোকে অনেক ভালোবাসে। (মিমমা)

মিমিমা আপুর কথাই আমি লজ্জা পেলাম। আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,

-না, একটুও তো ভালোবাসে না। (মেঘা)

-কে বলছে তোকে? (মিমমা)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-গাধী, তুই আজীব বোকাই রয়ে গেলি। (মিমমা)

আপুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে আপুর দিকে তাকালাম।

-কিছুই বুঝিস না তুই? (মিমমা)

কোন কথা না বলে চুপ করে আপুর দিকে তাকিয়ে রইলাম,

-তোকে যখন টেনে নিয়ে এলাম তখন কি জিজুর মুখের দিকে তাকিয়েছিস? (মিমমা)

-না তো। (মেঘা)

মিমমা মেঘার কথা শুনে বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,

-তাকালি দেখতি, তোকে নিয়ে আসার সময় জিজুর মুখ দেখার মতো ছিল। একদম অসহায় পথিকের মতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। (মিমমা)

আপুর কথা শুনে নিজের অজান্তেই লজ্জা পেয়ে উঠলাম। লজ্জায় আপুর দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছি না।

মেঘাকে লজ্জা পেতে দেখে মিমমা হেঁসে দিয়ে বলল,

-হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এখন আসল খবর বল? (মিমমা)

-মানে? (মেঘা)

আপুর ‘আসল খবর’ কথাটার মানে বুঝতে পারলাম না। চোখ দুটো ছোট ছোট করে আপুর দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।

মেঘার অদ্ভুত দৃষ্টি দেখে মিমমা দাঁত বের করে হেঁসে উঠলো।

-বুঝিস নি? (মিমমা)

– না তো। (মেঘা)

-আমাকে খালা বানাবি কবে? (মিমমা)

মিমিমার কথাই মেঘা খিলখিল করে হেঁসে বোকার মতো বলে উঠলো,

-তুমি যখন হতে চাও। (মেঘা)

মিমিমা কিছু বলার আগেই মেঘার চাচি রুমের ভিতরে চলে এলেন। মিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-এই তোরা গল্প করা বাদ দে। তাড়াতাড়ি রেডি হ। সীমা, সারা, নিঝুম ওরা কোথায়? (মেঘার চাচি)

-আম্মু, ওরা তো গোসল করতে গিয়েছে? (মিমমা)

-আচ্ছা। মেঘা শোন, তুই গোসল করবি না? (মেঘার চাচি)

মেঘার চাচির কথাই মিমমা বলে উঠলো,

-ইশ, তোমার কী মনে হয় ও গোসল করবে? (মিমমা)

-কেন করবে না? (মেঘার চাচি)

আপুর দিকে বিরক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আপু কি বলে শোনার জন্য।

মেঘার তাকানোর ধরন থেকে মিমমা মিটিমিটি হেঁসে বলল,

-যেই মেঘা, হাল্কা বাতাস বইলে গোসল করে না। তোমার কি মনে হয়? সেই মেয়ে কি এই ঠান্ডার মধ্যে গোসল করবে। তাও বাইরে হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে।(মিমমা)

আপুর কথা শুনে না হেঁসে পারলামন। কথাগুলো হাঁসির মনে হলেও সত্য। আমার অনেক ঠান্ডা লাগে। একটানা বৃষ্টি পরলে তিনদিন ও গোসল করা হয় না। সবসময় একটু বেশিই শীত লাগে। কিন্তু আজে শীত করলেও গোসল করব। বিয়ে বাড়ি এসেছি বলে কথা। তাছাড়া ভাইয়াও আমাকে নোংরা বলবে।

মিমিমাকে মজা করতে দেখে মিমমার মা ধমক দিয়ে বলে উঠলো,

-মেয়েটা এভাবে বলছিস কেন? ও কি আর ইচ্ছে করে গোসল না করে থাকে নাকি। দেখিস না কি ভাঙা শরীর। মেয়েটার পুষ্টির অভাবে শীত করে।বুঝছিস?

-আরে আম্মু আমিও জানি। কিন্তু এই মেয়েটা খাই না কেন? (মিমমা)

-আমার খেতে ভালো লাগে না। (মেঘা)

-কথা বাদ দে। এখন ফ্রেশ হয়ে রেডি হ। একটু পরে দেখবি সবাই চলে এসেছে কিন্তু তোরাই রেডি হতে পারিস নি। (মেঘার চাচি)

অন্যদিকে,

বিরক্ত নিয়ে ক্লাসে বসে আছে তিথি। সামনে দাঁড়িয়ে লেকচার শোনাচ্ছে সাদ। তিথি হাজার চেষ্টা করেও লেকচারে মনোযোগ দিতে পারছে না। কারন তার পাশে দুটো মেয়ে বসে সাদকে নিয়ে আলোচনা করছে। মেয়ে দুইটি একজন আরেকজনকে বলছে,

-নিলা, দেখ না স্যার আমাদের দিকে তাকাচ্ছেন। (তোরি)

-কার দিকে তাকাচ্ছে রে? তোর দিকে নাকি আমার দিকে। (নিলা)

-দেখ, মনে হয় তোর দিকে তাকাচ্ছে। (তোরি)

-সত্যি? আজকে আমি সাদ স্যারের ক্লাস থাকাতে মুখে বেশি করে ল্যাশ মেখে এসেছি। যাতে মুখ চিকচিক করে। আর স্যারেকেই কও সুন্দর লাগছে দেখছি? কি সুন্দর চুলগুলো। একটু পেকে গেছে তো কি হয়েছে কালার করতে কি যে সুন্দর লাগবে। ভেবেই বুকটা কেমন যেন করে। (নিলা)

নিলার কথা শুনে তোরি মন খারাপ করে বলল,

-ওহ তাই। স্যারের মনে হয় অনেক বয়স। যদি বিবাহিত হয়। তাহলে তোর সব সাজ তো পানিতে যাবে। (তোরি)

-তোর কি মনে হয় আমি না জেনে স্যারকে পটাতে চেষ্টা করছি? বাবাকে দিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি স্যার অবিবাহিত। (নিলা)

নিলা আর তোরির ফিসফিস করা কথা শুনে তিথির মাথায় রাগ উঠে গেল। রাগে তার সারা শরীর কাঁপতে লাগল। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে লাগল।

সাদ লেকচার দিচ্ছিল আর কিছুক্ষণ পর পর তিথির দিকে তাকিয়ে দেখছিল। হঠাৎ তিথিকে রাগতে দেখে সাদ চিন্তায় পড়ে গেল। কি এমন হলো যে, মেয়েটা হঠাৎ রেগে গেল কেন?।

এদিকে,
মিমিমা আপু জোর করে আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন। তাও আবার নীল রংয়ের শাড়ি। শাড়িটা অনেক সুন্দর হলেও খুব পাতলা। জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো শাড়ি পড়েছি। কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। মিমমা আপুর মামাতো বোন সারা আপুও আমার মতো নীল রং এর শাড়ি পড়েছে। তাকেও দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।

মিমামা আপুকে সাজিয়ে দিচ্ছে তার মামাতো বোনেরা। আমি কিছু পারি না তাই চুপচাপ দেখে যাচ্ছি। প্রচুর খিদে পেয়েছে। তাই আপুকে না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। তাছাড়া ভাইয়া খবরও নেওয়া হয় নি। নিশ্চই সে আমার উপর রেগে আছে। দূর, ব্যাস্ততার কারনে তার একটু খোঁজ ও নেওয়া হলো না।
,,
ত্বকি ফ্রশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম থেকে উঠেই মেঘাকে দেখতে না পেয়ে প্রচুর রেগে গেল সে। মেয়েটা কি পেয়েছে? একবারও তার সাথে দেখা করতে এলো না। বেশি সাহস হয়ে গিয়েছে বোধহয়। কথাগুলো চিন্তা করতে করতে ত্বকি রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল।
,,
বাড়িতে অল্প আয়োজনের বিয়ে হলেও মানুষের অভাব নেই। শাড়ির কুচি ধরে হাঁটছি উদ্দেশ্য ভাইয়ার কাছে যাব। শাড়িটা অতিরিক্ত পাতলা হওয়া নিজের কাছে লজ্জা লাগছে। মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাঁটছি যাতে কেউ আমার না দেখতে পারে। এমন অবস্থা হঠাৎ পেটের উপর,,
(চলবে)