তোর নামের রোদ্দুর ২ পর্ব-১৮+১৯

0
666

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ১৮

গাড়ি ধীরগতিতে চলেছে গ্রামের সরু রাস্তায়।দু পাশে সোনালী ধানক্ষেত।পাকা ধান।কোনো কোনো অংশে কাটা শেষ,স্তুপ করে রাখা খড়ের আটি।তার উপর দুপুরের সোনালী রোদ্দুর।মামার কথামতোই বিকেলের আগেই বেরিয়েছি আমরা সবাই।দুর আকাশ গিয়ে এই বিস্তীর্ন সোনালী মাঠের শেষ সীমানায় নেমেছে।জানালা দিয়ে কখনো ধুপ করে গরম বাতাস,কখনো বা গাছতলায় আসতেই শীতল বাতাস চোখেমুখে লাগছে।আমি আরেকটু মাথা বাইরের দিকে বারিয়ে দিলাম।সামনে ড্রাইভিং সিট থেকে শুদ্ধ বলে উঠলেন,

-মাথা ভিতরে ঢুকা ইডিয়ট!লেগে যাবে!

রাগ উঠলো।গাড়ির ভেতরে তাকালাম আমি।যীনাত আপু,তাপসী আপু,সীমা ভাবি গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।সামনে সিফাত ভাইয়া শব্দ করেই হেসে দিয়েছে।ইচ্ছে করলো সোজা সামনে বসা লোকটার মাথার চুলগুলো ছিড়ে দেই।ছাইরঙা শার্টটার কাধের অংশ দেখেই দমে গেলাম।চুপচাপই রইলাম আমি।সামনে থেকে সিফাত ভাইয়া বললো,

-ও এরকমই শুদ্ধ।এই ইনসু?বরাবরের মতো আজও হয়ে যাক কম্পিটিশন?কে কয়টা অক্ষত পাতা ছিড়তে পারে?

খুশিতে চোখ চকচক করে উঠলো আমার।শুদ্ধ হেসে বললেন,

-ভুলে যাও সিফাত ভাইয়া।আজ ওসব হচ্ছে না।ব্যথা পাবে।

তাপসী আপু বললো,

-কে ব্যথা পাবে শুদ্ধ?

-কে আবার?এই সিফাত ভাইয়াকে নিয়ে একফোটা মাথাব্যথা নেই আমার।সেটা সীমা ভাবি বুঝে নেবে।চিন্তার কারনটাই আমার বউ।সিয়া খেলবে না ওসব!

একেতো বউ বলে সবার সামনে এভাবে ডাকছে,আবার খেলতেও মানা করছে!শুনবো না!খেলবোই আমি!শক্ত গলায় বললাম,

-আমি খেলবো সিফাত ভাইয়া।স্টার্ট দ্যা গেইম!

শুদ্ধ ব্রেক কষে গাড়ি থামালেন।পিছনে অন্য গাড়ি থেকে রিফাত ভাইয়া হাক ছাড়লো,

-কি ব্যাপার?গাড়ি থামলো কেনো?

শুদ্ধ মুখ বের করে বললেন,

-সংসদের অধিবেশন বসবে।দেরি হবে।চুপচাপ গাড়িতে বসে বসে বাকি সবাইকে ম্যানেজ কর।

তারপর পিছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-হ্যাঁ,জনাবা কিছু বলছিলেন।বলুন?

-আ্ আমি খেলবো সিফাত ভাইয়ার সাথে।

-অনুমতি দিচ্ছি না।

বাকিসবের দিকে তাকালাম।সবাই যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে বসে কোনো সিরিজ দেখছে যেনো।কেউ কিছুই বলবে না এনাকে।নিজেকে সামলে বললাম,

-অনুমতি চাই নি আপনার!

-বলছিস?

-হ্ হ্যাঁ।

উনি মুচকি হেসে সোজা হয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললেন,

-ইউ মে কন্টিনিউ সিফাত ভাইয়া।

কি হলো?কিছু বললো না?রাগ করলো নাকি?এরপর আবার…!একটা শুকনো ঢোক গিললাম।পাশে তাকাতেই তাপসী আপু আঙুল গলায় টেনে বুঝালো ফেসেছো জানেমন।ভয়টা বাড়লো।জোরে শ্বাস নিলাম কয়েকবার।ভয় পাস না ইনসু।কিছুই হবে না। সিফাত ভাইয়া চেচিয়ে বললো,

-লেটস্ স্টার্ট ইনসু!

চলন্ত গাড়ি থেকে অক্ষত পাতা ছেড়ার লড়াই।বাইরে বেরোলেই এটা আমরা ভাইবোনেরা সবাই কমবেশি খেলি।একবার তো ইমরোজ ভাইয়ার হাত ডালে বারিও লেগেছিলো ভালোনতোন।আমি সাবধানে নিজের মতো করে পাতা ছেড়ার ধান্দায় ছিলাম।গাড়ি থামলো সিফাত ভাইয়ার নানুবাড়ির সামনে।গাড়ি থেকে নেমে পাতা গুনে দেখা গেলো আমার আটটা পাতা অক্ষত,আর সিফাত ভাইয়ার ছয়টা।পাতাছেড়ায় বিজয়ী হয়ে বিশ্বজয়ের হাসিটা দিতে ভুললাম না।যীনাত আপু বললো,

-শুদ্ধর বউ!শী শুড বি দ্যা বেস্ট!ইনসু?তো জন্য একলাইন বলতে চাই।উহুম উহুম!দিল চিজ কেয়া হ্যায়,আপ মেরি জান লিজিয়ে…

শুদ্ধর বউ বলে?ক্রেডিটটা তো শুদ্ধর কাছেই গেলো।কিন্তু ওকে শোনাবো অন্যভাবে।বললাম,

-এই তারিফ?ওয়াক!গা ঘিনঘিন করছে আমার যীনাত আপু!এতো বাজে চয়েজ তোমার জানতাম না তো!

ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।সিফাত ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-নতুন নতুন বিয়ে করেছি।আর কপাল করে পরিবার পেয়েছি।পরিবারের সবাই মিলে নতুন বউটার সামনে এতোটুকো মান সম্মান অবশিষ্ট রাখলো না!

শুদ্ধ সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে এগোতে এগোতে বললেন,

-আমি কিন্তু কপাল করেই বউটা পেয়েছি।বাদরামোতে এক নম্বর।তোমাকেও হার মানিয়ে দিলো!

সবাই হাসতে লাগলো।একটু রাগ হলো বাদরামো বললো বলে,কিন্তু উনি খেলা নিয়ে রাগ করেননি দেখে সেটা ভুলে গেলাম।সবাই মিলে ঢুকলাম নানুবাসায়।নানুমনি,নানুভাই সহ সবাই এগিয়ে আসলো আমাদের দেখে।সালাম কুশল বিনিময় করে সীমা ভাবিকে নিয়ে পরলো সবাই।সবগুলোই টিনের ঘর এই বাড়িতে।মাঝখানে বিশাল উঠোন।সবাই সীমা ভাবির সাথে কথা বলছিলো।নানুমনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,

-ইনসিয়া?তোর বরটা কই?

এতোক্ষন হাসিমুখ থাকলেও এবার হাসি গায়েব আমার।সবাই সবটাই জানে।সিফাত ভাইয়ার মামী সেদিন সীমা ভাবির বাসায় ঘটা সবটাই বলেছেন হয়তো।চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলাম।

-এইতো আমি!

শুদ্ধর গলা।পিছনে তাকিয়ে দেখি সে প্যান্টের পকেটে দুহাত গুজে হেলতে দুলতে আসছে।নানুভাই বললেন,

-ও!তুমিই সে?তোমার সাথেই ইনসিয়াকে বেধে দিয়ে গেছেন বেয়াই সাহেব?মাশাল্লাহ্!ভালোই করেছেন।বেশ মানাবে তোমাদের দুজনকে।

সবাই মিলে আরো অনেক কথাই বললো।আমি মাথা নিচু করেই রইলাম।বলার,দেখার,শোনার সহ্যশক্তি লোপ পেয়েছে আমার।ওখানে কিছুক্ষন থেকে হালকা নাস্তা করে সবাই যার যার মতো বেরিয়ে গেলো।সিফাত ভাইয়ার সমবয়সী দুটো মামাতো বোন।যুথি আর যুই।একজন ফোরে,আরেকজন সেভেনে পড়ে।আমার আর আপুদের সাথে আগে থেকেই বেশ ভাব যুইয়ের।

সন্ধ্যার পর সবাই উঠোনে শীতলপাটি বিছিয়ে কথা বলছিলাম।উঠোনের এককোনে লাল লাইট জ্বলছে।আর মাঝখানে কুপি জ্বালানো।মামীরা সীমা ভাবিকে নিয়েই পরেছে।ইশান ভাইয়া বললো,

-শুনলাম আজ নাকি ইমরোজের ঘরে তল্লাশী হয়েছিলো?

ইমরোজ ভাইয়ার হেচকি উঠে গেলো।অবাক চোখ তাকালো সবার দিকে।বড়মা ওর ফেরার আগেই ঘর গুছিয়ে দিয়েছিলো বলে বেচারা টের পায়নি হয়তো।কোনোমতে হেচকি থামিয়ে বললো,

-আ্ আমার ঘরে?ক্ কে কে ঢুকেছিলো?

তাপসী আপু চোখ রাঙিয়ে বললো,

-আমরা সবাই!এইটা বল?কোন মেয়েকে ফাসিয়েছিস তুই ইমরোজ?

ভাইয়া শুকনো ঢোক গিললো।আমতা আমতা করে বললো,

-ইয়ে,এসব কি বলছিস তুই আপু?আমি মেয়ে ফাসাবো?তোর ভাইকে এই চিনলি?

-সেটাই তো!আমিও বললাম তাপসী আপুকে,ইমরোজ ওমন ছেলে না।চিরকুটে তো লেখা ছিলো মেয়েটাই ভালোবাসে ইমরোজকে!

যীনাত আপুর বলা শেষে তামিম ভাইয়া বললো,

-এই ইমরোজ তো আমার চেয়েও ফাস্ট বেরোলো!তাপসী আপু?আমি কিন্তু ওর বড়!যতই গফ বেরোক,আব্বু আম্মুকে কিন্তু আমার আগে বিয়ে দিতে বলবি!

ইমরোজ ভাইয়া কপালে হাত দিয়ে বসে রইলো।আমি পাশে পরে থাকা পাটকাঠি উচিয়ে ওর দিকে তাক করে বললাম,

-এবার বলো?কে সে?

-কেউ নাই বইন।সত্যি কেউ নাই!

-ইহ্!বললেই হলো?

-বিশ্বাস করো তোমরা,কেউ নাই।কেউ নাই সত্যি!

ইশান ভাইয়া বললো,

-তাহলে এতো সুন্দর লেটার লেখার আইডিয়া কোথথেকে টপকালো?

-একজনেরটা দেখে কপি করছি।পরে দেখে এমন হাসি পাইছে যে জানালা দিয়ে ফেলে দিছি।নইলে ওটা জানালার বাইরে যাবে কেনো?

রিফাত ভাইয়া চিন্তার ভাব ধরে বললো,

-ঠিকই তো।ওটা বাইরে কেনো যাবে?

সিফাত ভাইয়া বললো,

-কারটা কপি করছিলি?

-শুদ্ধ!

ইমরোজ ভাইয়ার কাছে শুদ্ধর নাম শুনেই বরাবরের মতো গুটিয়ে গেলাম।লোকটা আশেপাশে নেই।গেছে কোথায়?ওরা সবাই ওওও বলে আমার দিকে তাকালো।আড়চোখে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি উঠোনের এককোনে একটা ঘরের বারান্দায় লাল লাইটটার কাছে সেই মুখ।বাশের খুটিতে হেলান দিয়ে বুকে দুহাত গুজে এদিকেই তাকিয়ে।চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।সাথেসাথে ওই লাল লাইটটা বন্ধ হয়ে গেলো।যদিও চাদনী রাত আর উঠোনে কুপির আবছা আলো আর ঘরগুলোর ভেতরের আলোটা আছে।তবুও সবাই আড্ডা ছেড়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।শুদ্ধ ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে বলে উঠলেন,

-আমি দেখছি!

মামীদের সাথে সবাই আবার সীমা ভাবিকে নিয়ে মেতেছে।শুদ্ধ বোর্ডের দিকে এগোলেন।তারদিকেই তাকিয়ে রয়েছি আমি।উনি সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে ওতে হাত লাগাতেই আ শব্দ করে কাপতে লাগলেন।আর্তনাত শুনেই একছুটে গিয়ে হাত জরিয়ে ধরলাম তার।তাকে ধরে টানাটানি করছি বোর্ড থেকে ছাড়ানোর জন্য,উনি ওভাবেই কাপছেন।চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেছে আমার মুহুর্তেই।চেচিয়ে উঠলাম,

-শুদ্ধ?কি হয়েছে?কি হলো?কষ্ট হচ্ছে আপনার?কি হলো আপনার?এটা…

উনি বোর্ড ছেড়ে স্বাভাবিক হয়ে দাড়ালেন।কপাল কুচকে তাকিয়ে আমি তারদিক।পিছনে সবাই শব্দ করে হেসে দিলো।শুদ্ধ এক আঙুল দিয়ে আমার গালে লেগে থাকা পানি মুছে দিয়ে পিছিয়ে দাড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলেন।যুথি বলে উঠলো,

-মানবদেহ তড়িৎ প্রবাহী।আমাদের বইয়ে তো এটাই দেওয়া।শুদ্ধ ভাইয়ার শক লাগলো,তোমার কিছু হলো না কেনো?

পাথর হয়ে গেলাম আমি।সবাই আরো জোরে হাসছে।শুদ্ধ শব্দহীন হেসে আমারদিক তাকিয়েই বললেন,

-ওর মাথায় গোবরপোড়া তাই!

প্রচন্ড রাগ উঠলো।তারপরপরই নিজের বোকামোর কথা ভেবে চোখ বন্ধ করে জিভ কাটলাম।কি করে এই কাজটা করলাম আমি?শুদ্ধ ফিসফিসিয়ে বললেন,

-জানতাম গাড়ি থেকে পাতা ছেড়ার অভ্যেস আছে তোর।সমস্যা হতো না তোর কোনো।কিন্তু কি বলতো?যাকে ভালোবাসি,তাকে নিয়ে একবিন্দু রিস্ক নিতে পারবো না।তাই তখন মানা করেছিলাম তোকে।আমার এই রিস্কি কাজে হাত লাগানো,সর্বপরি আমি তোর কাছে ঠিক কি,এ কথাটা তোকে বোঝানোর দরকার ছিলো।তাই এই এক্টিংটা আরকি…তোর বোকামো তোকে বলে দিয়েছে,আমার কিছু হলে তোর সবটা উলোটপালোট হয়ে যায়।আর তোর ওই চোখের জল আমাকে বলে দিয়েছে,ইউ আর মাইন!

উনি চলে গেলেন।যীনাত আপু হাসতে হাসতে এসে আমার কাধে হাত রাখলো।বিস্ময়ে তার চলে যাওয়ার দিক তাকিয়ে অজান্তেই বলে উঠলাম,

-এই লোকটা পাগল।

যীনাত আপু আরো শক্ত করে আমার কাধ ধরে বললো,

-সেটা তোর জন্য!তোর ভালোবাসার জন্য!আর তোরও সেই ভালোবাসার পাগলামিতে গা ভাসানো উচিত ইনসু!

একপলক তাকালাম ওরদিক।এরমধ্যে নানুমনি সবাইকে ডাক লাগালো রাতের খাবারের জন্য।কেউ কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খাওয়ার ঘরে চললাম।

রাতের খাবার শেষে বিছানায় হাটু জরিয়ে বসে ছিলাম।রুমে তাপসী আপু তায়্যিবকে খাওয়াচ্ছে,যুই পাশেই বসে।আজ প্রথমবার নিভৃতে পদ্মাপাড়ে শুদ্ধর সাথের সেই সন্ধ্যার কথা,সেই মুহুর্তগুলোর কথা মনে পরছে আমার।হঠাৎই যুই‌ আমার কানে কানে বলে উঠলো,

-ইনসিয়া আপু?ন্যাড়া পুড়িয়ে মটরশুটি খেতে যাবে?

আমি ওর দিকে তাকালাম।ও ইশারায় উত্তর চাইলো।খুশি হয়ে লাফিয়ে উঠলাম।গুটিগুটি পায়ে মামীদের ঘরে এসে সবার সাথে বসে থাকা যীনাত আপুকে বললাম কথাটা।ও ভ্রুকুচকে তাকালো।তারপর পাশে যুইকে দেখে বুঝলো ওই বলেছে।ওউ মাথা নাড়ালো।এখন কথা হলো কে কে যাবে?কিভাবে যাবে?ধানের ন্যাড়া পোড়াতে মাঠে যেতে হবে,আর মজা করার জন্য মটরশুটিটা অন্যের ক্ষেত থেকে চুরি করা হবে।সীমা ভাবিকে নেওয়া যাবে না।ও হলো মধ্যমনি।আর তাপসী আপু তায়্যিবকে নিয়ে আছে।তাই লুকিয়ে চুরিয়ে এটা ওটা বলে অজুহাত দিয়ে আমি,যুই,আর যীনাত আপুই উঠে আসলাম।

এর আগেও এসে এ কাজ করেছি আমরা।ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে মাঠের মাঝখানে সমানে ধানের ন্যাড়া গোছাচ্ছি।পুর্নচাঁদের আলোটাও আছে।জরো করা শেষে তিনজন গেলাম মটরশুটি ক্ষেতে।ওগুলো তুলে এনে পুড়িয়ে ওই আগুনের পাশে বসেই খেতে খেতে মজা করছি।হঠাৎই কারো ছায়া চোখে পরলো আমার!হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে ইশারায় দেখালাম যীনাত আপুকে।চোখ বড়বড় করে এ ওর মুখের দিকে তাকালাম।মানে এখন দৌড় লাগাতে হবে।হবে?ওরা দুজনে উঠে দৌড় লাগিয়েছে।আমি পরে থাকা কিছু মটরশুটি মুঠো করে দৌড় লাগাতে যাবো,কেউ একজন হাত ধরে আটকে দিলো আমাকে।

#চলবে…

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ১৯

হলদেটে দাতগুলো বের করে পিছন থেকে এক লোক হাতটা ধরে রেখেছে।কপাল কুচকে এলো আমার।এই চাঁদের আলোটা না থাকলে উড়ন্ত হলুদ দাত দেখে নির্ঘাত জ্ঞান হারাতাম আমি আজ।একপলক সামনে তাকিয়ে দেখি যীনাত আপু আর যুই প্রায় বাড়ি পৌছে গেছে।লোকটা ওভাবে দাত কেলিয়েই বললো,

-কিগো?এতো রাইতে আমাগো ক্ষ্যাতে কি করো?

-ইয়ে,ঘুরতে এসেছিলাম।

-আহা!রাইত বিরাতে ক্ষ্যাতে ঘুরবা ক্যান?তারচেয়ে চলো,আমার ঘরটা দেইখা আইসো!চলো চলো!

লোকটা হাত টানতে লাগলো আমার।চেচালে নানুবাড়ির লোকজন জড়ো হতে দুমিনিটও লাগবে না।অতোটাও দুরে আসি নি।কিন্তু বিষয়টা বাজে দেখাবে।মোবাইলের টর্চ জ্বালানো।দেখলাম আরেকহাতে একটা কাচের বোতল।যা বোঝা যাচ্ছে,নেশা করতে করতে বাড়ি ফিরছে।একটা জোরে শ্বাস নিলাম।আল্লাহ মাফ করো বলে সাতপাঁচ না ভেবে নাক বরাবর ঘুষি লাগিয়ে দিলাম লোকটার।ও বেচারা মুখ থুবরে মাটিতে পরলো একদম।

আমি সোজা দৌড় লাগালাম।চারপাও এগোই নি।আবারো কেউ হাত ধরে ফেললো আমার।আরেকটা ঘুষির জন্য তৈরী হয়ে পিছন ফিরতেই চোখ কপালে আমার।শুদ্ধ!হ্যাঁ,এটা শুদ্ধই!উনি একটানে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিলেন।কোমড়টা দুহাতে সর্বশক্তিতে চেপে ধরেছেন যেনো।ব্যথায় আহ্!শব্দ করে উঠলাম।শুদ্ধ দাতে দাত চেপে বললেন,

-তোকে ফ্রিডম দিয়েছি এই কারনে?মামাকে বলে ছোটকাকুকে রাজি করিয়ে এখানে এনেছি এই কারনে?সবরকম বাচ্চামো মেনে নিচ্ছি এই কারনে?আমি কাছে থাকলে,তোর সবার সাথে কথা বলতে আনইজি লাগে বলে,দুরে দুরে থেকে নিজেকে জ্বালাচ্ছি এই কারনে?আমি আরো দেরিতে আসলে কি হতো?এই একটা ঘুষি দিয়েই নিজেকে বাচাতে পারতি?বল!বল সিয়া!উত্তর দে!

রাগ উঠলো।ফিল্মের হিরোদের মতো ঠিক সময়ে এন্ট্রিটা নিতে না পারলেও ডায়লগগুলো ঠিকই ঝেড়ে যাচ্ছে।শুদ্ধ আমার কোমড় ছেড়ে দুগাল ধরে ব্যস্তভাবে বললেন,

-সবসময় আমাকে চিন্তায় ফেলতে ভালোলাগে তোর?

আমাকে ছেড়ে দিলেন উনি।পিছন ফিরে মাটিতে পরে থাকা ওই লোকটার হাত মোচড় দিয়ে ধরে চেচিয়ে বললেন,

-শালা!তোর মাতলামো আজ বার করে দেবো আমি!

আমি ভরকে গেলাম।তাড়াতাড়ি লোকটাকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।ও লোকটা এমনিতেও টলছে।

-ছেড়ে দিন!ছেড়ে দিন ওনাকে শুদ্ধ!এর হুশ নেই এখন!আমিও লাগিয়েছি একটা!আর কিছু করবেন না প্লিজ!ছেড়ে দিন!

শুদ্ধ রঙবেরঙের শার্টটার কলার ধরে কয়েকটা চড় লাগালেন লোকটাকে।সে লোক টাল সামলাতে না পেরে পিছিয়ে গেছে অনেকটা।তবে ছাড়া পেয়ে যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।গাল ধরে আমাদের দিক তাকিয়েই লুঙ্গিটা একটু উচিয়ে দৌড় লাগালো।এতোক্ষনে স্বস্তির নিশ্বাস বেরোলো ভেতর থেকে।শুদ্ধর দিক তাকাতেই তার চাওনি দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললাম।পিছন না ফিরে রোবটের মতো পা চালিয়ে বাড়িতে এসে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরলাম।পাশে চাদর উচিয়ে যীনাত আপু বললো,

-এতো দেরি করলি কেনো তুই?

-আমাকে ওমন বিপদে ফেলে দৌড় লাগানোর সময় একবারও এই মাছুম চেহারাটা মনে পরলো না তোমাদের আপু?

-কি করবো বল?শুদ্ধ বলেছিলো পিছন ফিরে না তাকালে নাকি বিরিয়ানি ট্রিট দেবে।তাই…

লাফিয়ে উঠে বসে বললাম,

-মানে?

-মানে শুদ্ধ ফোন করেছিলো।বললো তোমাদের খাওয়া শেষে গিয়ে সিয়ার সাথে প্রেম করবো।যুইকে নিয়ে একপলক পিছন না ফিরে দৌড় লাগিও।

মাথার উপর চাদর টেনে শুয়ে পরলাম।এইতো!পাগল হওয়ার পুর্বলক্ষনগুলো আমার পরিবারের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে।নইলে অতো রাতে ওইভাবে সত্যি সত্যিই ফেলে আসলো একপলক পিছন না ফিরে?শুদ্ধ বলেছেন বলে?

.
ঘুম ভেঙেছে দেরিতে।বেলা অনেকটাই গরিয়েছে।সকালের খাবার খেতেই দুপুরপ্রায়।দীদুন হলে নির্ঘাত পুরো বাসার ফ্লোর মোছাতো আজ।নানুবাড়ির সামনের মাঠটায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ঘুড়ি উড়াচ্ছে।কিছুক্ষন দাড়িয়ে দেখলাম।হুট করে আমারো ইচ্ছা হলো ওড়ানোর।যেমন ভাবা তেমন কাজ।এগিয়ে গিয়ে একটা বাচ্চাকে বললাম,

-তোমার নাম কি?

-ফটিক!

সোজাসাপ্টা জবাব।আমি মুখে আরেকটু মধু মিশিয়ে বললাম,

-বাহ্ কি সুন্দর নাম!ফো-টিক!

…..

-কোন ক্লাসে তুমি?

-ম্যাডাম তো কইছে ক্লাস টু তে তুইলা দিবো এইবার।

-বাহ্!বড় হয়ে গেছো।ক্লাস টু!

ও নিজের মতো ব্যস্ত।তাকায়ই নি আমার দিক।একটু শ্বাস নিয়ে বললাম,

-ইয়ে,ফটিক?আমাকে তোমার ঘুড়ির সুতো ছাড়তে দেবে?তুমি ওড়াও,আমি শুধু সুতো ছাড়বো।

ও এতোক্ষনে তাকালো আমার দিকে।আপাদমস্তক দেখলো আমাকে।কি জানি কি পরখ করে কপাল কুচকে বললো,

-তুমি পাইরবা?

-হ্যাঁ।ঠিক পারবো।কেনো পারবো না।দাও না!

-হু,তোমারে দেই,এরপর আমার নাটাইডা কাইটা যাক তাইনা?দিমু না।হরো এইহান থাইকা!

এভাবে বললো?মনটা খারাপ হয়ে গেলো।একটু ভেবে আদুরে গলায় বললাম,

-আমাকে সুতো ছাড়তে দিলে তোমাকে চকলেট দেবো!

ও তাকালো আমার দিক।আবারো মনোযোগ ঘুড়ি ওড়ানোতে দিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো,

-যদি বরফি মালাই খাওয়াও তাইলে দিবার পারি!

লাফিয়ে উঠে সুতোর গোছাটা একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে বললাম,

-আরেহ্!মালাই,কালাই সব খাওয়াবো।এটা আগে দাও তো!

আমি সুতো ছাড়ছি,ও ঘুড়ি উড়াচ্ছে।হাতেগোনা দশ সেকেন্ড পরেই ঘুড়িটা পরে গেলো।আমি দম মেরে সুতোটার দিকে তাকিয়ে।পাশে ছেলেটা কোমড়ে হাত দিয়ে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো খেয়ে নেবে আমাকে।কাচুমাচু করে তাকালাম ওর দিক।ও চেচিয়ে বললো,

-এহন কি হইবো?

-দ্ দেখো ফটিক,আমি তোমাকে…

-ওই ফটিক?তর নাটাই আমার নাটাই দিয়া কাটছি।এই ভাইজানে কাইটা দিছে!

দুজনেই পাশে তাকালাম।আরেকটা বাচ্চা ঘুড়ি নিয়ে এসেছে।আর ভাইজান সম্বোধনে যাকে ডাকছে সে আর কেউ নয়,শুদ্ধ।উনি কখন এসেছেন?আর এসেই বেছে বেছে আমার ধরা ঘুড়িটাই কেটে দিলেন?গটগট করে এগিয়ে গিয়ে বললাম,

-আপনি আমার ঘুড়িটা কেটে দিলেন?

উনি সুতো টানতে টানতে বললেন,

-তোর ঘুড়ি?অন্যের জিনিসকে নিজের জিনিস বলতে লজ্জা করে না?

-ওটার সুতো আমি ছাড়ছিলাম!

-সো হোয়াট?আর তাছাড়াও,দেখে শুনে ইচ্ছে করে তো আর কাটিনি!

-ইচ্ছে করেই কেটেছেন!

উনি ভাবলেশহীন।রাগ উঠলো প্রচন্ড।এগিয়ে গিয়ে তার সামনে থেকে সুতো টেনে এনে দাত দিয়ে কেটে দিলাম ওটা।শুদ্ধ আটকে গেছেন যেনো।স্লো মোশনে যেইনা আমার দিকে তাকালেন,হুশ আসলো আমার।এর হাতের মধ্যে থেকেই এর হাতে থাকা সুতো কেটে দিলাম?ভাগ ইনসু!ভাগ!পিছন ফিরে দৌড় লাগাতেই ধপাস!সরু আলপথটার পাশে জমে থাকা পানিতে হওয়া কাদায় গিয়ে পরেছি একদম।সারা গায়ে কাদায় জরাজরি।বাচ্চাগুলোসহ শুদ্ধ হো হো করে হাসতে লাগলেন।ফটিক বলেই উঠলো,

-আল্লায় বিচার করছে।দুইজনের নাটাই কাইটা দিছো না?ঠিক হইছে এবার!

শুদ্ধ পেট ধরে জোরে জোরে হাসছেন।এই লোকটা কি?আমার এই অবস্থায় হাসি পাচ্ছে তার?রাগ সপ্তম আসমানে চড়তেই হাতের মুঠোতে থাকা সবটুকো কাদা ছুড়ে মারলাম তারদিক।থমকে গেলো চারপাশ।শুদ্ধ নির্বাক।বাকা হয়ে দাড়িয়ে নিজের বুকের দিকটায় লেগে থাকা কাদার দিকে তাকিয়ে উনি।আমি নিজেও হতভম্ব হয়ে গেছি এ ঘটনায়।উনি কাদোকাদো গলায় বললেন,

-এটা কি হলো?

গলার আওয়াজ শুনে বুঝলাম সে ইমোশনালি শকে আছে।এখন আমাকে কিছু বলবে না।চুপচাপ উঠে দাড়ালাম।এবার এক দৌড় লাগাবোই আর বাড়ি যাবোই।কিন্তু তার আগেই উনি হাত ধরে ফেললেন আমার।বললেন,

-এই শার্ট এক্খন ধুয়ে দিবি তুই!

-কিহ্?

-এক্খনি এই শার্ট তুই ধুয়ে দিবি!

-আমি কেনো?

-কাদা কে ছুড়েছে?

-এ্ এখনই কেনো?

-কাদা কখন ছুড়েছিস?

-কোথায় ধুবো?এ্যাঁআআআআ!

-চুপ!পুকুরে ধুবি।চল!

-পারবো না!ক্ষমা করে দিন!

-পারবি না মানে…

এটুক বলেই শার্ট খুলতে যাচ্ছিলেন উনি।আমার চোখ কপালে!একটু দুরেই কয়েকটা অল্পবয়সের মেয়ে ধানের কাজ করছে আর আড়চোখে তাকাচ্ছিলো আমাদের দিকে।আমি দেখেছি।তাড়াতাড়ি ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,

-খুলবেন না প্লিজ!

-কেনো?আমাকে সমেত ধুয়ে দিবি?

-দ্ দেখুন,শার্ট এখন খুললে আমি কিন্তু ধুয়ে দেবো না।চলুন পুকুরঘাটে,দিচ্ছি ধুয়ে!

শুদ্ধ একপলক আমার দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকালেন।তারপর ঠোট টিপে হেসে বললেন,

-চল!খুললাম না এখানে শার্ট!জলদি চল এবার!

ফুসতে ফুসতে পুকুরপাড়ে আসলাম।নাহ্!এদিকটায় কেউ নেই।শুদ্ধ তার শার্ট খুলে মুখে ছুড়ে মারলেন একদম আমার।পাশের খুটোয় বাধা দড়িতে রাখা গামছা চোখে পরলো।ওটা নিয়ে নিচদিক তাকিয়েই আমি এবার ছুড়ে মারলাম তার গায়ে।সিড়িবাধানো ঘাটে নেমে ধুয়ে দিলাম শার্টটা।তাকাইনি তারদিক।শার্ট দড়িতে মেলে দিয়ে আড়চোখে তাকালাম একবার।উনি ভদ্র ছেলের মতো গামছাটা গায়ে জরিয়ে।তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।কাদামাখা গা দেখে বলা সবার এতোএতো কথা কিভাবে ইগ্নোর করেছি তা আমিই জানি।

.
বিকেলের দিকে যুই,যুথির সাথে বাড়ির নিচদিকটায় গাছে বাধা দোলনায় এসে বসলাম।সবাই নাড়ু খেতে খেতে উঠোনেই কথা বলছিলো।
কাল সকালেই চলে যাবো সবাই।এ ভেবে আরেকটু সময় প্রকৃতির সাথেই কাটানোটাই ভালো মনে হলো।সন্ধ্যে নামেনি এখনো।তবে পাখির দল নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে।দেখলাম ভাইয়া,মামা,কাকু সবাই কোথাও বেরোচ্ছেন।শুদ্ধও যাচ্ছেন ওদের সাথে।খয়েরী রঙের একটা টিশার্ট পরেছেন শুদ্ধ।চোখে সানগ্লাস।হাতের ঘড়িটা দুর থেকেই জ্বলজ্বল করছে তার।ফর্সা হাতটা ওই‌ খয়েরি রঙের মাঝে ফুটে উঠেছে।উনি মোবাইলে ব্যস্ত।বড়মামা চেচিয়ে বললেন,

-গন্জের হাটে চললাম সবাইকে নিয়ে।সন্ধ্যে নামলেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে যেও ইনসিয়া!

গন্জের হাট?এই রাস্তা দিয়ে গেলে হাজারটা মেয়ে পরবে রাস্তায়।চোখ দিয়ে গিলে খাবে লোকটাকে।সকালের মতোই।যদি কথা বলতে এগোয়,শুদ্ধ তো মানা করবেনই না।একথা সেকথায় যদি…না!যেতে হবে না কোনো গন্জটন্জের হাটে!এই লোকটাকে সবার নজর থেকে বাচাতেই তোর চুলগুলো পেকে যাবে ইনসু!দেখিস!রাগ নিয়ে দোলনা ঠেকিয়ে পা ধরে চেচিয়ে উঠলাম,

-আহ্!আমার পা!

শুদ্ধসহ বাকি সবাই ছুটেই এলো একপ্রকার।যুই ব্যস্তভাবে বললো,

-কি হয়েছে পায়ে?

…..

তামিম ভাইয়া বললো,

-কি হলো তোর ইনসু?

-ওই,দোলনায় দোল খেতে গিয়ে হোচট লেগেছে।

-দু দন্ডও যদি চুপচাপ থাকতে পারিস তুই!যুই?একটু ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো তো!

এটুক বলেই শুদ্ধ মাটিতে হাটু গেরে বসে আমার পায়ের দিকে হাত বাড়াচ্ছিলেন।হুরমুড়িয়ে পা গুটিয়ে নিলাম আমি।বললাম,

-আপনাকে ভাবতে হবে না।আপনার তো গন্জের হাটে যাওয়া বেশি জরুরি!চলে যান!

উনি ভ্রুকুচকে তাকালেন।আবারো পায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-না,আমার তুই বেশি জরুরি।দেখি কোথায় লেগেছে?

লজ্জা করছিলো সবার সামনে এভাবে বলায়।চোখ নামিয়ে রেখে বা পা ধরে রেখে বললাম,

-এখানে একটু লেগেছে।ঠিক হয়ে যাবে।

শুদ্ধ একপলক আমার দিকে,একপলক পায়ের দিকে উকি দিলেন।তারপর উঠে দাড়িয়ে আবারো সানগ্লাস চোখে দিয়ে বললেন,

-চলুন মামা,আপনাদের সাথেই যাবো আমি।

বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলাম।এই বললো আমিই জরুরি,এখন চলে যাবে?ইশান ভাইয়া ঠোট টিপে হেসে বললো,

-না শালাবাবু,তুমি থাকো।তোমার গিয়ে কাজ নেই।ইনসিয়ার পায়ে লেগেছে।

-তোমরা এগোও।পায়ের ব্যথা ঠিক করেই আসছি আমি!

সবাই এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মুচকি হাসতে হাসতে চলে গেলো।হতভম্ব হয়ে বসে আমি।হচ্ছে টা কি?হবেই বা কি?ওরা একটু দুর যেতেই শুদ্ধ বললেন,

-ইচ্ছা করে না আমাকে চোখের আড়াল করতে?

-ম্ মানে?

-নাকি ইচ্ছা করে না আমাকে বাকি মেয়েদের চোখের সামনে ফেলতে?

-দ্ দেখুন,ত্ তেমন…

-আহ্ শব্দটা করলি ডান পা ধরে,এখানে আসতেই ব্যথাটা বা পায়ে ট্রান্সফার হয়ে গেলো কি করে?

আমি আটকে গেলাম।পলকহীন চোখে শুদ্ধর দিকে তাকালাম।উনি বাকা হাসি দিতেই আবারো চোখ নামিয়ে জিভ কাটলাম।ধরা পরে গেছি!ইয়া আল্লাহ!মই ফেলো!উঠে আসি আমি!শুদ্ধ আবারো হাটু গেরে বসে কানে গোজা চুল একবার ছেড়ে দিলেন।আবারো তা কানে গুজে দিলেন।কেপে উঠলাম আমি।উনি ফিসফিসিয়ে বললেন,

-আমাকে নিয়ে ইন্সিকিওর হতে হবে না ম্যাডাম।আমি আপনারই।

এটুক বলে উনি উঠে দাড়ালেন।চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি পকেট থেকে মাস্ক বের করলেন শুদ্ধ।বাকা হেসে মাস্কটা পরে চলে গেলেন উনি।তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি।সে আমারই,এ দুটো শব্দই‌ যথেষ্ট ছিলো।হাসি ফুটলো ঠোটের কোনে।

#চলবে…