তোর নেশায় মত্ত পর্ব-০৬

0
1136

#তোর_নেশায়_মত্ত
#লেখনীতে- আবরার আহমেদ শুভ্র
পর্ব- ০৬
_______________

খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে আছে দুই মানব-মানবি। আকাশের পানে চেয়ে আছে দুজনেই। একে অন্যের উষ্ণতা নিচ্ছে আপন মনে। আজ অনেক কষ্টে মিহিয়াকে ছাদে আনতে সক্ষম হয়েছে আদ্র। সেদিন লাইভে আসার পর থেকেই আদ্রের থেকে বেশ দূরে দূরেই থাকছে সে। আদ্রের উপস্হিতিতে মিহিয়া যেন নিজের মাঝে থাকে না হারিয়ে যায় নতুন দুনিয়ায়। কেন এমন হয় সেটা মিহির ধারণাতীত! তবে তার ভীষণ ভালোলাগা কাজ করে আদ্রের উপস্হিতি। দুজনের ভাবনার মাঝেই আদ্রই প্রথমে শুরু করল,

-অনুভুতির মায়া জালে ভালোবাসার অন্তরে নিহিত থাকে বিচ্ছেদের বেদনা! যাকে বিচ্ছেদ বলা হয়, তাকে একান্ত আপন করে পাওয়া ও বলা যেতে পারে। কেননা এ প্রেমে নিষেধ নেই! প্রিয় নেই! আছে কেবলমাত্র প্রিয়ের জন্য গভীর অনুরাগ! এ প্রেমে প্রণয়ের স্মৃতিটুকুই থেকে যায় আর বাকি সকলই বিলুপ্তির পথে। ভালোবাসা হৃদয়ের কতটা জুড়ে বিস্তৃত হয়ে আছে তার প্রকাশ ঘটে যায় মুহুর্তে মুহুর্তে। ভালোবাসা প্রকাশের নয় ভালোবাসা অনুভবে পূর্ণতা পায়। যার ভালোবাসা যত গভীর তার ভালোবাসা তত নিরব! তত গোপন! ভালোবাসা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ চায় না! ভালোবাসা অনুভূতির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। অনুভূতির মধ্যে দিয়েই মনে প্রেমানুভূতির স্রোতধারা প্রবাহিত করে। আর ভালোবাসা দুটি প্রানের মিলন! মিলন দুটি মনের! সেখানে ভালোলাগা কেবল একটি অনুভূতির লক্ষন মাত্র! যেটা নিতান্তই ক্ষনিকের মোহ! আর ভালোবাসা সেতো, চিরস্থায়ী! চিরন্তনসত্য!’….

আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলো আদ্র। পাশেই অবাক চোখে চেয়ে আছে মিহিয়া আদ্রের দিকে। কি সুন্দর করে ছন্দ মিলিয়ে দিলো সে! মনটা ছোঁয়ে দিলো একদম! এই ক’দিনে আদ্রের প্রতি বেশ দুর্বলতা অনুভব করছে সে। আগে থেকেই একটা দুর্বলতা ছিলো তার প্রতি! কিন্তু এখন সে হারে হারে বুঝতেই পারছে আদ্রকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। যেটা পরিধি গভীর! কোনো খুঁত নেই এই অনুভূতিতে!

মিহিয়াকে তার নিজের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে লেডি কিলার মুচকি হাসি দিলো। যেটাতে তার হার্টবীট মিস হয়ে যাওয়ার জোগাড়! মুহুর্তেই আদ্রের মুচকি হাসি দেখে লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেই মিহি। প্রচণ্ড পরিমাণে লজ্জা লাগছে আজ। আদ্র এবার মলিন কণ্ঠে বলল,

-মিহি তুমি বুঝতে পারছো না কেন? তোমায় ভালোবাসি আমি! প্রচণ্ড পরিমাণে ভালোবাসি! আই লাভ ইউ মিহি! এন্সার মি মিহি! আচ্ছা, কি করলে তুমি আমায় বুঝবে বলো?

চমকে গেলো মিহি! এই প্রথম আদ্র তাকে মিহি বলে সম্মোধন করলো। যে মানুষটা তাকে কতো নামে ডাকতো আজ তার এমন অসহায়ত্বে থমকে গেল সে! কিছুক্ষণ আগের মুহুর্তেও আদ্র তাকে মিহুপাখি, শ্যামাপাখি আরও কতো নামে ডেকেছে। কিন্তু এখন! আদ্রের এই করুণ কণ্ঠ মুহুর্তেই মিহিয়ার হৃদয়টাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে। সে আদ্রের অনুভূতি বুঝতে পেরেছ! আদ্র তাকে ভালোবাসে! নিজের চেয়েও বেশি! এটাও বুঝতে পারছে আদ্র তাকে ছাড়া কতোটা অসহায়! সাথে সাথে মিহিয়া নিজের সকল জড়তা ভুলে আদ্রের দুপায়ের উপর নিজের দু’পা রেখে আদ্রের কপালে কপাল টেকালো। তারপর দু’চোখ বন্ধ করে সরাসরি বলে ফেলল,

-আমিও ভালোবাসি আপনাকে! হা সেই প্রথম থেকেই। লাভ ইউ টু মিস্টার আহান সার্ফারাজ আদ্র!… এক নিঃশ্বাসে বলে দিলো মিহি।

মিহিয়ার কথায় অবাক হলেও মুখে বিজয়ের হাসি। যেন সে বিশ্ব জয় করে নিয়েছে মুহুর্তেই! মুখের হাসিটা চওড়া করে মিহিকে বলে উঠল,

-সত্যি বলছো মিহুপাখি? আর ইউ সিরিয়াস?

এবার বেশ লজ্জা পেল মিহিয়া। এমনিতেই যে কাজ করলো তাতে তার অবস্থা যায় যায়, এখন আদ্রের প্রশ্নের উত্তর দিবে কি? সে তো সিরিয়াসলি আদ্রকে ভালোবাসে। তাহলে সে আবার এই প্রশ্ন করছে কেন? তার নিরবতা দেখে আদ্র মনটা খুশিতে তড়াক করে লাফিয়ে উঠল।

-সত্যি মিহুপাখি, আজ আমি ভীষণরকম খুশি, আমার প্রপোজাল এট লাস্ট তুমি একসেপ্ট করলা। আ’ম হ্যাপি টুডে!…. বলে মুহুর্তে মিহিয়াকে কুলে তুলে নিলো আদ্র।

-কি করছেন কি? পড়ে যাবো.. উম.. উমম.. কথার বলার আগেই মিহিকে চুপ করিয়ে দিলো আদ্র।

-নো মোর ওয়ার্ডস, জাস্ট ইনজয় দিস মোমেন্ট! ইউ ডোন্ট নো ওয়াট! ইট’স আওয়ার ফার্স্ট লাভিং ডে!

আদ্রের কথায় চুপ হয়ে গেলো মিহি। সেও তো উপভোগ করতে চাই তার ভালোবাসার প্রথমদিন। তাই চুপ করে আদ্রের কর্মকাণ্ড দেখছে। কখনও এতোটা কাছে আসে নি কোনে পুরুষের। তাই ফিলিংসটা একটু বেশিই রোম্যান্টিক ওর জন্য। এভাবেই সূচনা হলো নতুন একটি বিশুদ্ধতম ভালোবাসার। তাদের জন্য একরাশ শুভকামনা প্রকাশ করলো আড়ালে লুকিয়ে থাকা শাহানা ইয়াসমিন। হা তিনিও শোনতে চেয়েছিলেন মিহিয়ার মনের কথাটা। তিনি আগেই বুঝেছিলেন মিহিয়া আদ্রকে পছন্দ করে! শুধু পছন্দ নয় মনে মনে ভালোও বাসে। তাই আদ্রকে বুঝিয়ে বলেছিলেন যেন সে আরও একবার তার মনের কথাটা মিহিয়ার সামনে প্রকাশ করে। তাই করলো আদ্র!
________________

দুবছর পর বিডিতে পা রাখলো নিতু। নিহারিকা নিতু! আহান সার্ফারাজ আদ্রের মামাতো কাজিন। তবে তাকে একদমই দেখতে পারে না আদ্রের মা শাহানা ইয়াসমিন। আপন ভাইয়ের মেয়ে হলেও ওর প্রতি একটা ঘৃণ্য মনভাব কাজ করে শাহানা ইয়াসমিনের কাছে। কেন দেখতে পারে না সেটা শাহানা ইয়াসমিনের অজানা! তবে তাকে অপছন্দের বিষয়টি তার কাজে-কর্মে বুঝতে পেরেছিল নিতু। কিন্তু সেটার ধার ধারে না সে। কারণ, আদ্রকে হাত করতে পারলেই তো হলো। আদ্রকে তার হাতের পুতুল বানিয়ে ঔ বজ্জাত মহিলাকে বাড়ী ছাড়া করবে বলে আশা করে সে। তা নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাতে চাই না সে। এছাড়াও তার আরেকটি চমকপ্রদ পরিচয় আছে। সেটা হলো সে মাহবুব আলমের বেস্ট ফ্রেন্ড হায়দার জামানের একমাত্র মেয়ে! যেটা আর কেউ না জানলেও শাহানা ইয়াসমিন আর শাহেলা ইয়াসমিন ঠিকই জানতেন। শাহেলা ইয়াসমিন মিহিয়ার মা! তারা দুবোনেরই ছোট হলো হায়দার জামান। হায়দার জামানের ফ্যামিলি অবশ্য বিদেশেই থাকে মানে সুইজারল্যান্ডে! নিজস্ব ব্যবসা আছে তার সেখানে। তবে এখন শুধু নিতুই এসেছে বিডিতে। মাহবুব আলমের বাসায় থাকবে সে। তাকে নিয়ে যেতে রোকেয়া বেগম আর মাহবুব আলম এসেছেন। অবশ্য সে আদ্রের বাসায় থাকতপ পারতো তবে সেটা তার কাজে বাধা দেয়ার মুল ফটক বলে মাহবুব আলমপর বাসায় থাকা। তাকে দেখে এগিয়ে এলো তারা দুজনেই,

-কেমন আছো নিহা মা?.. খানিকটা হাসোজ্যাল মুখে জিজ্ঞেস করলেন রোকেয়া বেগম।

-বেশ ভালোই! আপনারা?..হাসি মুখে উত্তর দিলো নিতু।

-আমরাও ভালো। আচ্ছা কথা তো বাসাতেও বলা যাবে তাই না? … বেশ ব্যস্ততার সাথে বললেন মাহবুব আলম। যেন সে এই মুহুর্তে বেশ ব্যস্ত। কেন সে এমন করছে সেটা একমাত্র সেই জানে।

-হুম, চলুন যাওয়া যাক।… মুচকি হেসে মাহবুব আলমের কথায় সায় দিলো নিতু।

মাহবুব আলম ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলেন নিতুর আনা জিনিষপত্রগুলো।গাড়ীর বগিতে নেয়ার জন্য। তারপর, তিনজনেই গাড়ীতে উঠে বসল। খুশি মনেই তিনজনে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সবার চেয়ে বেশি খুশি নিতু! বেশ খুশি সে আদ্রকে নিজের করে নিবে ভেবে। মুখে তার নিষ্টুরতার হাসি ফুটে উঠল। যেটা যেকারো জীবনকে ধ্বংস করে দিতেই যথেষ্ট। তবে, সে এখনও জানে না এই তার নিষ্টুরতা তার নিয়তিকে কোন জায়গাতে দাঁড় করিয়ে দেয়।
________________

ফ্রান্সের রাজধানী শহর প্যারিসের কোনো একটি রাজকীয় বাড়ীতে একরঙা একটা ছোফায় বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন একজন মধ্য বয়স্ক ব্যক্তি। বয়স বেশি হলে পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। মাথার চুলগুলোর সবে হালকা পাক ধরেছে। তাতেই বেশ লাগছে তাকে। আর বাড়ীর বাইরেরটা যতই সুন্দর হোক না কেন বাড়ীর ভিতরকার সৌন্দর্যের সাথে বাইরের সৌন্দর্যের কোনো তুলনায় হয় না। তার ধ্যান ভাঙলো একজন নারীকণ্ঠে। ডাক শোনা মাত্রই ধীরেধীরে মাথা তুলে তাকালেন সেদিকে। অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করলেন,

-শাহেলা!

#চলবে?

#তোর_নেশায়_মত্ত
#লেখনীতে- আবরার আহমেদ শুভ্র
#সারপ্রাইজ_পর্ব
_______________

-তোমাকে এই অবস্থায় এখানে কে আসতে বলেছে শাহেলা?

বলে একপ্রকার অস্থির হয়েই ছুটে গেলেন মধ্যবয়স্ক লোকটি। তার এমন অস্থিরতা দেখে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল শাহেলা ইয়াসমিনের। মনের অজান্তেই বলে ফেললেন,

-ঠিক আগের মতোনই তুমি অস্থির হয়ে যাচ্ছো মাহবুব! ঠিক যেমনি আগে করতে!

-তো! অস্থির হবো না তো কি? এই শরীর এখানে কেন আসতে গেলে বলো তো?

-আহা, এতো অস্থির না হয়ে বসতে দাওতো আমাকে।

বলেই শাহেলা ইয়াসিন ছোফায় বসে পড়লেন। তার ঠিক পাশেই বসলেন মাহবুব আলম। হা এরা দুজনেই মিহিয়ার আসল বাবা-মা! বাকি দুজনেই কালপ্রিট! তবে মাহবুব আলম বলে সেজে থাকা বাকিজন তো সেই যে প্রতিটা মানুষকে ধোকা দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে।

-আর কতো দিন এভাবে থাকবে মাহবুব? আমার তো মিহিকে কাছে পেতে মন চাইছে। কতো দিন কাছে পায় না আমার মেয়েটাকে! কখন সামনাসামনি দেখবো আমার মেয়েটাকে?

-আহা, শাহেলা উত্তেজিত না হয়ে ধৈর্য ধরো। নিশ্চয় তোমার জানা মতে, ধৈর্যের ফল কিন্তু মিষ্টিময় হয়!

-কিন্তু আর কতোদিন?

-সময় ঘনিয়ে এসেছে শাহেলা! এবার শুধু সত্যি উন্মোচিত হওয়ার পালা! জাস্ট ওয়েট আ ফিও ডেইজ!

-হুম।

-কিন্তু একটা সমস্যা!

বিস্ময় নিয়ে মাহবুব আলমের দিকে তাকালেন শাহেলা ইয়াসমিন। ফের জিজ্ঞেস করলেন,

-কি সমস্যা মাহবুব?

-সমস্যা হলো তোমার ছেলে মাহিন! সে কি এখন এই সময় আমাদের বিডিতে যেতে দিবে?

-কেন? দিবে না কেন? আর বিডি যাবে মানে?

-উফস, তুমি সাংবাদিকের মতোনই যেরা শুরু করলা দেখি। বিডিতে না গেলে আমাদের মিহিকে আনবো কেমনে? আর ওই অমানুষগুলোকে শাস্তি দিবো কেমনে?

-ওও, এই ব্যাপার! আদ্রকে বলবো ওই এর ব্যবস্থা নিবে।

-কিন্তু এই ব্যাপারে আদ্রকে না জড়ালে ভালো হতো না শাহেলা?

এবার শাহেলা ইয়াসমিন মুচকি হাসি দিলেন মাহবুব আলমের কথায়। মাহবুব আলমের প্রত্যুত্তরে বললেন,

-মেয়ের ব্যাপার যেহেতু মেয়ের জামাইয়ের একটা দায়িত্ব আছে না! আদ্র নাহয় সেটাই করুক। কি বলো?

-ওকে, এজ ইউস উইশ!

-হুম, ফ্রেশ হয়ে এসো। তোমায় ব্রেকফাস্টটা দিই।

-সার্ভেন্ট তো আছেই। তাছাড়া তোমার এই শরীরে এসবকিছুই এলাও করবো না কিন্তু আমি। সো, আমার সাথে চলো রেস্ট নিবা।

-কিন্তু…

-কোনো কিন্তু নয়, চলো।…. মাহবুব আলম শাহেলা ইয়াসমিনকে জোর করে নিয়ে এলেন রুমে। দুজনের প্রতি দুজনের ভালোবাসা ঠিক আগের মতোনই! প্রেমের বিয়ে বলে কথা!

মাহবুব আলম আর শাহেলা ইয়াসমিন প্যারিসে থাকেন তাদের ছেলে মাহিন মুফাচ্ছিরকে নিয়ে। অবশ্য এখানে পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেদের ব্যবসাটা একাহাতে সামলাই মাহিন। মাহিন মিহিয়ার ছোট ভাই। বছর আটেক এর ছোটবড় দুজন। মিহিয়ার আসল নাম মিহিয়া মুবাশ্শারা। মাহিন যখন শাহেলা ইয়াসমিনের গর্ভে ছিল মানে শাহেলা ইয়াসমিনের অন্তঃসত্ত্বার ২মাসের সময় তখনই একটা ঝড় ঠিক কালবৈশাখীর মতোনই তাদের জীবনটা পাল্টে দিয়েছিল! ছিনিয়ে নিলো তাদের থেকে তাদের আদুরে সেই মেয়েটিকে! সেদিন মাহবুব আলমকে স্বার্থপর হতে হয়েছিল নিজের অনাগত সন্তান আর প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্যই! তবুও সেদিন তিনি মিহিকে পুরো মেলায় পাগলের মতোন খুঁজেছিলেন। খুঁজাখুঁজির পরও যখন পান নি তখন ভারাক্রান্ত মনে আপন স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান আদ্রের বাসায় মানে শাহানা ইয়াসমিনের বাসায়। আদ্রের বাবা তখন প্যারিস থাকতেন। অবশ্য তখন আদ্রের বয়স ১২ বছরের বেশী নয়। অবুঝও ছিলো না সে! আর শাহানা ইয়াসমিনই মিহিয়ার সেই খালামণি যার কথা মিহি প্রতিটাদিন শাহানা ইয়াসমিনকে বলে। কিন্তু আদ্রের মা এখনও নিজের পরিচর দেননি মিহিকে। এর কারণও নিশ্চয় নেয় যে তা নয়! অবশ্যই এর যুক্তিগত একটা কারণ আছেই। আদ্রের মা শাহানা ইয়াসমিন, মিহির মা শাহেলা ইয়াসমিন আর নিতুর বাবা হায়দার জামান একই বাবা – মায়ের তিন সন্তান। হায়দার জামানের সাথে শাহানা ইয়াসমিনের যোগাযোগ থাকলেও শাহেলা ইয়াসমিন রাখেন নি তার সাথে কোনো যোগাযোগ। তার সাথে শুধু শাহানা ইয়াসমিনের যোগাযোগ আছে। হায়দার জামানের সাথে তিনি যোগাযোগ ইচ্ছে করেই রাখেন নি তাও নয়! তাদের জীবনটা এমন লণ্ডভণ্ড করার ক্ষেত্রে হায়দার জামানের ভুমিকাই মুখ্য ছিলো সেদিন। তার কারণেই, শাহেলা ইয়াসমিনের সাজানো সংসারটা ভেঙেছিল! এর প্রতিটা প্রতিশোধ শাহেলা ইয়াসমিন নিজেই নিবেন বলে পণ করেছিলেন সেদিন। আর আদ্র – মিহি যে আপন খালাতো কাজিন সেটা তাদের নিজেদেরই অজানা। সবটা জেনেও শাহানা ইয়াসমিন চুপ রইলেন আসল রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায়। তিনি জানতে চান এসবের পিছনে মুলত কে রয়েছে!
______________

সকাল সকাল আদ্রকে নিজের রুমে দেখে চমকে গেলো মিহিয়া। আচমকা এমন সময়ে তার রুমে ঢুকবে সেটা সে ভাবতেই পারে নি। এককভাবেই তাকিয়ে রইল আদ্রের দিকে। দড়জায় হেলান দিয়ে মিহির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

-দেখা শেষ?

আদ্রের কথায় হুশ এলো মিহিয়ার। চোখ ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লো,

-সকাল সকাল আপনি আমার রুমে কি করছেন?

-আমার জানপাখিকে দেখতে এলাম যে! দেখতে এলাম তোমায় ঘুমিয়ে থাকতে কেমন লাগে। বাট লোক, দ্যা ফোরচান ইস বেড!

-মানেহ্!

-এত্তো কিউট করে মানে বলো না তো! এমনিতেই তোমাতে বিভোর হয়ে আছি, এই কিউট কিউট কথায় আবারও প্রেমে মত্ত করে দিবা নাকি বলো তো?

বলেই এগোতে লাগল মিহিয়ার দিকে। আদ্রের এরূপ আচরণে মিহিয়ার গালে স্পষ্টত লজ্জাভাব ফুটে উঠল। গালের দুপাশ লাল হয়ে এলো। কিন্তু পরক্ষণে আদ্রের এহেন কান্ড মিহিয়ার চক্ষু চড়কগাছ। কারণ, আদ্র ঠিক মিহির সামনে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে। মিহিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

-আদ্র কন্ট্রোল ইউর সেল… বলতেই

-হুসস, নো মোর সিঙ্গেল ওয়ার্ডস!

-আদ্র প্লীজ এমন করবেন ন… বলতে না দিয়েই আদ্র সদ্য মিহির ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো। অতঃপর সে হারিয়ে গেলো মিহির মাঝেই।
______________

সকালবেলা জানলার ফাঁকে রোদের আলো প্রবেশ করলো ঘরে। আলোটা সরাসরি পড়লো নিতুর গায়ে। বিরক্ত নিয়ে তাকালো জানলার দিকে। তার সাধের ঘুমটা ভেঙে গেলো এই বিরক্তিকর রোদের আলোতে। আড়মোড়া করে উঠে বসলো। লেয়ারকাট চুলগুলো আরেকটু উপরে করে ঝুটি বেঁধে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই তার চোখ গেলো টেবিলের উপর শ্যামবর্ণের হাসোজ্জ্যল তরুণীর দিকে। সদ্য ঘুম ভাঙা কাঁচা চোখে ঝাপসা লাগাতে এগিয়ে গেলো সেদিকে সে। স্পষ্টতর হওয়ার সাথে সাথেই মাথায় যেন আগুনের ফুলকি বয়ে গেলো তার। তার একমাত্র সম্পত্তির পাওয়ার পথের কাঁটা সে! হে সেটা মিহিয়ার ছবি ছিলো! রুমটাও ছিলো মিহিয়ারই। গতকাল রাতে জার্নি করে আসার কারণে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল নিতু। তাই রুমটা ঘুরে দেখা হলো না তার। এখন সে সবচেয়ে বেশিই অবাক হলো এটা মনে করে মিহিয়ার ছবি এখানে কেন? তাহলে কি এ বাড়ীর সাথে মিহিয়ার কোনো যোগসূত্র আছে? মেলাতে পারে না সে। তাই মাথা চেপে ধরে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা চলে গেলো রোকেয়া বেগমের রুমে তার মনে ঘুরপাক খাওয়া সকল প্রশ্নের জবাব পেতে।

হঠাৎ রোকেয়া বেগম নিজের রুমে নিতুকে দেখে চমকে গেলেও নিজেকে সামলে নিলেন। অবশ্য মাহবুব আলম নামে পরিচিত ব্যক্তিটি অনেক আগেই কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো। তাই সে এই মুহুর্তে তাদের সামনে নেই। নিতু রোকেয়া বেগমের উদ্দেশ্যে বলা শুরু করল,

-আন্টি আমার কিছু প্রশ্ন আছে।

-আমি জানি, তবে সবকিছুর উত্তর পাবে। এখন কিছুই জিজ্ঞেস করলেও সকল প্রশ্নের উত্তর পাবে না। তাই অপেক্ষা করো সব পেয়ে যাবে। কেমন?

-হুম।

-তবে, তোমার একটা প্রশ্নের উত্তর হলো এটা মিহিয়ার বাড়ী। যাকে কিছুদিন আগে আদ্র নামে একজন সিঙ্গার প্রপোজ করেছিল হাজারো মেয়েদের ভীড়ে একটা কনসার্টে! যে কি না বিডি ফেমাস একজন সিঙ্গার।

রোকেয়া বেগমের কথায় নিতু অবাক হলেও ঠিক তার পরিকল্পনার প্রধান শত্রু তার হাতের কাছে ভেবে খুশি হলো। তবে সেটা সে প্রকাশ করলো না। যেন কেউ তার কাজে বাঁধা হয়ে না দাড়ায়। নিজেকে সামলে নিয়ে হালকা হেসে উত্তর দিলো,

-থ্যাংকস, উত্তর দেয়ার জন্য।

– হুম, চলো ব্রেকফাস্ট করে নিই।

-আচ্ছা চলুন।…. দুজনেই চলে গেলো নিচে ব্রেকফাস্টের উদ্দেশ্যে।
_______________

রাত ১২:৪৫ মিনিট। আদ্রের ভাবনায় ব্যস্ত মিহিয়া! ভাবছে কেমন করে সে আদ্রের প্রেমে পড়ে গেলো সে নিজেই জানে না! কেমন করে আদ্র তার প্রতি এতো মত্ত হলো সেটাই তার অজানা! আর তার প্রতি আদ্রের এমন ভালোবাসা মিহিকে এক অন্য জগতে হারিয়ে দেয়! হঠাৎ ম্যাসেজের আওয়াজে ভাবনার ছেদ পড়লো মিহিয়ার। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তার ঠোঁটের কোণের হাসি ফুটে উঠল যেটা হয়তো কারো জীবনকে ধ্বংস করতেই যথেষ্ট!

#চলবে…..