তোর নেশায় মত্ত পর্ব-০৭

0
1011

#তোর_নেশায়_মত্ত
#লেখনীতে- আবরার আহমেদ শুভ্র
পর্ব- ০৭ [স্পেশাল পর্ব]
_______________

ম্যাসেজ আসার ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই ব্যক্তিটির ফোন। অবাক হলো মিহিয়া। তবে ভয় পেলো যে, কেউ যেনে যাবে বলে। সে চাই কথাটা যেন কেউ না জানে। তাই ভয় নিয়ে কল রিসিভ করলো। রিসিভ করা মাত্রই ওপার থেকে ব্যক্তিটি বলা শুরু করলো,

-মিহু! কোথায় তুই? বাসায় নাকি?

-আজব ব্যাপার! রাত ১২:৫০ এ আমি বাসায় নাতো কি বাড়ীর বাইরে থাকবো?

-আরে তুই তো দেখি রাগতে পারিস! জানতাম নাতো!

-মাহিনন্যা! তোরে হাতের কাছে পাইলে এখন আলুভর্তা বানাতাম। তোর গুষ্ঠির ষষ্টি কিলাই আমি।

-আর কইতাম না বইন। মাফ কর!

-কেমনে মাফ করুম? বেআক্কেলের মতোন কথা কেনো বলোস?

-আর কমু না। আর যেটার জন্যই ফোন করছি সেটাই বলা হলো না।

-বলবি কেমনে? হুদাই উল্টাপাল্টা প্রশ্ন জিগাস? আচ্ছা যায়হোক, বল কি কারণে এতো জরুরী ফোন দিলি। আর ম্যাসেজ তো দেখলাম। তাতেই তো হবে। ফোন কেন করলি?

-কুল, আস্তে আস্তে প্রশ্ন কর! সবকিছুর উত্তর দিবো তো।

-হুম, বল।

-যে এখন ঐ বাড়ীতে আছে মানে আব্বুর ছদ্দবেশ ধরে সে….. মাহিনের বিশেষ ইনফরমার থেকে পাওয়া সকল অক্ষরে অক্ষরে বলে দিলো। মিহিয়ার ঠোঁটের কোণের হাসিটা আরও চওড়া হলো। সব কথা শোনার পর মিহিয়া বলল,

-তাহলে আমাদের পরিকল্পনা মতোন এগুতে হবে। আচ্ছা এখন রাখি কেউ দেখে ফেলবে।

-হুম…. বলে ফোন রাখতেই আদ্র মিহিয়ার রুমে প্রবেশ করলো। ছোফায় বসতে বসতে মিহিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

-কেউ দেখুক আর না দেখুক আমি কিন্তু সবই দেখেছি আর শোনেও নিয়েছি। বাই দা ওয়ে, মাহিনের সাথে কথা হয় কেমনে?

-ম্ ম্ মানেহ্!…. মিহিয়ার ভয় হতে লাগল আদ্র সব জেনে ফেলল সেটা শোনে। তাহলে কি তার কাজে আদ্র বাধা হয়ে দাঁড়াবে? তার ভাবনার মাঝে আদ্র বলে উঠল,

-মিহি ঘাবড়ে গেছো? ডোন্ট ওরি, আ’উল হেল্প ইউ ইন এভরি মোমেন্ট। আমি জানি তুমি হয়তো আমায় বিশ্বাস করতে পারছো না তবে আমি তোমায় বলছি ট্রাস্ট মি! আমি যেটুকু জানি তুমি হয়তো তাও জানো না। সো, আমরা এক হয়ে কাজ করলেই কেউ আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা। তবে একটা খবর শোনে নাও নিতু আইমিন তোমার কাজিন মানে মামাতো কাজিন নিহারিকা নিতু এখন তোমার বাসায়। যে আমাকে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্বড করে তাই আমাদের যৌথভাবে এক একটা খলনায়ককে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। উইল ইউ অলয়েজ বি বাই মাই সাইড অল দ্যা টাইম? টোগেদার, দ্যা টু উইল ডু এভরিথিং এজ বিফোর! আই প্রমিজ!

মিহিয়া অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র কি বলছে সেটার সম্পূর্ণটাই তার মাথার উপর দিয়ে গেছে। তবে এটা নিশ্চিত হলো যে, আদ্র তাকে পাওয়ার জন্য সবকিছুই করতে পারে। দ্যাট মিনস্ সে মিহিয়ার প্রতিটা কাজেই হেল্প করবে বলে প্রমিজ করেছে। মিহিয়ার অবাক চাহনীতে আদ্রের মনে সন্দেহ জাগলো যে মিহিয়া তাকে হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই সে মিহিয়ার পাশে গিয়ে বসে ওর দু’গালে আলতো করে হাত রাখলে। তারপরে তাকে তার মুখোমুখি করে বসিয়ে চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো,

-মিহি ডু ইউ লাভ মি? টেক দিস সিরিয়াস।

-কি বলছেন আদ্র আপনি এটা? আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি। এন্ড দ্যাটস্ সিরিয়াসলি ট্রু!

-তাহলে আমাকে বিশ্বাস করতে কি সন্দেহ আছে? তবে কথা দিলাম তোমার বিশ্বাসের খেলাফ কখনও করবো না। ট্রাস্ট মি মিহু!

আদ্রের কথায় মিহিয়া স্বস্থির নিশ্বাস নিলো। তারপরে আদ্রের কপালে কপাল ঠেকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

-আই বিলিভ ইন ইউ অল দ্যা টাইম মিস্টার আদ্র।

আদ্র মিহিকে বুকে টেনে নিলো খুব যত্ন করে। তারপরে বলল,

-মিহি তুমি কি জানো আমি তোমার কে হয়?

-হবু বর হোন আরকি!… বলে লজ্জিত হেসে আদ্রের বুকে মুখগোঁজে দিলো।

-তাই!

-হুম।

-তবে আরও একটা যে পরিচয় আছে!

-কি?… বলেই অবাক হয়ে তাকালো আদ্রের দিকে।

-আম্মুর আপন বোন শাহেলা আন্টির মেয়ে তুমি। মানে তিনি আমার খালামনি সাথে হবু শ্বাশুড়ী মা ও। আর তুমিই আমার সেই খালাতো কাজিন যার সাথে আমার ৫টা বছর কেটেছিল। তার চেয়ে বড় কথা হলো তুমি সবসময় আম্মুকে বলতে না তোমার একটা মিষ্টি খালামনি ছিলো! হুম? আম্মুই তোমার সেই খালামনি।

আদ্রের কথায় চোখ চিকচিক করে উঠল মিহিয়ার। সে জানতো না যে শাহানা ইয়াসমিন বেচে আছে। তবে মাহিনও ওকে বললো না সেটা। সে মনে মনে বলতে লাগল,
‘মাহিনন্যা তুই কাল একবার কল কর। তোরে আমি খাইছি।’ এটা ভেবেও খুশি লাগছে যে, তার গঙ্গাফড়িং এখন তার বাড়ীতেই আছে।

-কি ভাবছো মিহুপাখি?

আদ্রের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো।

-ন্ না মানে ভাবছি মাহিন আমাকে সেটা বলল না কেন?

-কারণ, সেটা মানা করেছিলাম আমি তাই। তাকে বলেছিলাম সেটা আমিই তোমাকে বলবো। তাই! আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো রাত অনেক হয়েছে।

-হুম, আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন। গুড নাইট।

-গুড নাইট।

মিহিয়া কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে আদ্র নিজ রুমে চলে এলো।
__________________

-আর যতোই যায়হোক মিহিয়া, তোকে আমি দেখে নিবোই। তোর জন্য আমি আদ্রকে হারাতে পারবো না। ইয়েস, তোকে আমার পথ থেকে সরাতেই হবে। দরকার হলে মার্ডার করবো তোকে আমি তাতেও হাত কাঁপবে না আমার!

মনে মনে কথাগুলো আওড়াচ্ছে আর রুমের মধ্যে পায়চারি করছে নিতু। মিহিয়া যে তার আপন ফুফাতো বোন সেটা সে জানে না। যার সাথে সে ছোটবেলায় রঙিন সময় কাটিয়েছে আজ তাকেই মারতে চাইছে। অবশ্য নিতু মিহিয়ার ২বছরের ছোট। জন্মের পর যখন বুঝতে শুরু করেছিল তখন থেকেই মিহি বলতে পাগল ছিল সে। আর আজ! পরিস্থিতি ভিন্ন! চিনে না সে মিহিয়াকে। কারণ, তার সাথে মিহিয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে আজ ১৬ বছর আগে। মিষ্টিপু বলে ডাকা মেয়েটি আজ তার মিষ্টিপুকেই মারতে চাই! ব্যাপারটা বেশ হাস্যাকর হলেও নিতুর কাছে কিচ্ছুই মনে হচ্ছে না এই মুহুর্তে। সম্পত্তির লোভে পড়ে সে এখন কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো সেটাই যাচাই করতে পারছে না। হঠাৎ নিতুর বাবা মানে হায়দার জামান মেয়ের খবর নিতে ফোন দিলেন নিতুর ফোনে। বিরক্ত নিয়ে সেদিকে গেলেও বাবার ফোব দেখে নিমিষেই সবকিছু ভুলে গেলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলা শুরু করল,

-কেমন আছো মামনি? বাবাটাকে ভুলে গেলে?

-পাপা! খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। তোমাকে কি আমি ভুলতে পারি?

-তাহলে তো একটু খোঁজই নিলে না যে?

-নিতেই যাচ্ছিলাম তার আগেই তোমার ফোন। যায়হোক, কেমন আছো? মাম্মা কেমন আছে?

-সবাই ভালো। তোমার কি খবর?

-আমিও ভালো।

-তাহলেই ঠিক আছে। তা খোঁজ পেলে তোমার মিষ্টিপুর?

-না পাপা। খুব মিস করছি মিষ্টিপুকে। কিন্তু খোঁজে পাই না। তবুও যতোদিন বিডিতে আছি ততোদিন খোঁজবো আমার মিষ্টিপুকে।

-বেশ, আর ওই বাড়ীর সব খবর রাখছো তো?

-হা বাবা। তবে রোকেয়া আন্টি বেশ চালাক। তবে তুমি চিন্তা করো না এই বাজে মানুষের হাত থেকে আমি মিষ্টিফুফির সবকিছুই রক্ষা করবো।

-ওকে বেশ, এখন তাহলে রাখি পরে কথা হবে।

-আচ্ছা।… বলে কেটে দিলো ফোন নিতু।

মিহিই হলো নিতুর মিষ্টিপু। কিন্তু যেদিন মিহিয়া হারিয়ে গিয়েছিলো সেদিন নিতু খুব কেঁদেছিল। পুরো ২বছর মেয়েটা নিশ্চুপ হলেও পড়ে যখন সুইজারল্যান্ড চলে যায় তারপরে বন্ধুদের সাথে মিশে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু আজও সে তার মিষ্টিপুকে মিস করে। তবে, এখনও জানে না সে যে তার মিষ্টিপুই হলো মিহিয়া। নিতু মনে মনে
আউড়াচ্ছে,

-মিষ্টিপু! কোথায় তুমি? কতো মিস করি তোমায় জানো? তোমার দুষ্টুপাখি তোমাকে খুবই মিস করে। আ’ইল ফাইন্ড ইউ এট এনি কস্ট! অ্যান্ড দিস মাই প্রমিজ।

এতোক্ষণ রুড মুডে থাকলেও এখন নিস্তেজ হয়েগেলো সে। কারণ, ডার একমাত্র দুর্বলতা হলো তার মিষ্টিপু। তার কথা মনে হতেই খুব কান্না পায় তার। কারণ, তার পাপার একটা ভুলের কারণে আজ তারা সকলেই একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন। এর প্রায়শ্চিত্ত তাকেই করতে হবে নাহলে তিনটা পরিবার একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।
________________

-মাহবুব প্লানমাফিক কাজ তো সবই হচ্ছে কিন্তু আমাদের কাজে বাধা হয়ে এলো এই নিতু মেয়েটা। কিচ্ছুটি করা যাচ্ছে না এই মেয়ের জন্য।

রোকেয়া বেগম বিরক্তবোধ নিয়ে কথাটা বলেও মাহবুব নামের লোকটি বেশ শান্ত জবাব দিলো তার প্রতোত্তুরে,

-আরে এতো চাপ নিও না তো। ওকে নিয়ে টেনশন না করে নিজের কাজ সামলাও। মিহিয়াকে যতো দ্রুত সম্ভব বাড়ীতে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

-আচ্ছা নিতুর কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু মিহিয়াকে পাবেটা কোথায়?

-আছে কোনো এক জায়গায়। আমার ইনফরমার আমাকে খবর দিয়ে জানালো সে যতটুকু খবর দিলো মিহি বর্তমানে আদ্র নামক একটা ছেলের বাসায় আছে।

আদ্রের কথা বলায় চমকে গেললন রোকেয়া বেগম। চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,

-ওয়াট?আদ্র মানে?

-কি হয়েছে? এমব করে চমকে গেলে কেন? আদ্র মানে যে গায়কটা মিহিয়াকে প্রপোজ কনসার্টে সেই। তার বাসায় এখন মিহিয়া আছে।

আরেকদফা চমকে গেলেন রোকেয়া বেগম। মনে মনে যেটা ভাবছিলেন সেটাই হলো। এখন তাদের পাতানো পরিকল্পনাতেই পানি ঢেলে দিলো সব। মাথায় হাত দিয়ে হতাশ হয়ে বসে রইলেন উনি। কি করবেন তার চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলেন।

#চলবে…..