তোর শহরে প্রেম পর্ব-২১ এবং শেষ পর্ব

0
451

#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-২১ ( অন্তিম প্রহর)

তন্ময়ের মুখে সুইটহার্ট শুনে সবাই আশ্চর্য দৃষ্টিতে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। কেউ কিছু বলবে তার আগেই তন্ময় বলে আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দাও তারপর যার যা বলার আমাকে বলো। তবুও সায়লা বেগম বললেন, এই মেয়েটা এ বাসায় আসার সাহস পায় কোথা-থেকে?

তন্ময় বলে,সুইটহার্ট ওয়েলকাম টু মাই হাউস।

হৃদিতা বললো, তুমি যে আমাকে ক্ষমা করে দেবে আমি ভাবতেই পারিনি তন্ময়। কথা শেষ করে হৃদিতা সায়লা বেগমের কাছে এসে বলে আম্মু প্লিজ আমার উপর রাগ করে থেকো না।

সায়লা বেগম মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়।

হৃদিতা বলে, তন্ময় শুভ কাজে আর দেরি করার দরকার কি?

– ঠিক বলেছো শুভকাজ যত দ্রুত সেরে ফেলা যায় ততই মঙ্গল।

– কাজী সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করুন।

তন্ময় সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে টলমল চোখে অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে এক জোড়া চোখ। হাতের ইশরায় কাছে ডাকলো তন্ময় অনুকে।

অনু নিচে নেমে আসলো। তার এই বিয়ে ভাঙার চেয়ে কষ্ট হচ্ছে তার বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে।

তন্ময়ের মুখোমুখি দাঁড়ালো অনু।
তন্ময় অনুকে উদ্দেশ্য করে বললো, তুমি কি ভাবছো তোমাকে সত্যি আমি…. কথা শেষ করার আগেই হৃদিতা বললো,তন্ময় তুমি এখন এইসব মেয়েকে কৈফিয়ত দেবে নাকি।

অনু বললো কৈফিয়ত দেবে মানে একশ বার কৈফিয়ত দেবে। বিয়েটা কি পুতুল খেলা নাকি। ইচ্ছে হলে করলো ইচ্ছে হলে ভেঙ্গে দিলো। অনু সবার সামনে তন্ময়ের পাঞ্জাবির কলার ধরে বলে, আজ পর্যন্ত যা, যা করেছেন আমি প্রতিবাদ করিনি তার কারণ প্রথম ভুলটা কিছুটা হলেও আমার ছিলো। তারমানে এটা নয় আমি এখন ও আপনাকে ছেড়ে দেব।ভালোয় ভালোয় বলছি, এই মেয়েকে এখান থেকে বিদায় করুন।

হৃদিতা বললো তোমার সাহস তো কম-না তুমি আমার তন্ময়ের কলার ধরো ।

– সাহসের কি দেখেছেন!এখনো তো সাহস দেখালাম না।

হৃদিতা অনুকে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত উঠাতেই তন্ময় হৃদিতার হাত ধরে ফেলে বলে, ডোন্ট ডেয়ার।

আমার বিবাহিতা স্ত্রীর গায়ে হাত তুললে সেই হাত তোমার সাথে থাকবে না।

– তোমার স্ত্রী মানে?আজ তো আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা।

তন্ময় বললো হৃদিতা তুমি কি ভেবেছো তোমাকে আমি বিয়ে করবো। পঁচা শামুকে ভুল করে মানুষ একবার পা কাটে। বারবার না। আর তুমি যে প্লানিং করতে চেয়েছিলে। আমি সেটা ঘুরিয়ে উল্টো করে দিলাম।

– এসব তুমি কি বলছো তন্ময়! আর কিসের প্লানিং?

– সুইটহার্ট তুমি এতে টাও অবুঝ নও।আচ্ছা তাও ক্লিয়ার করছি। জেনি এদিকে আয়-তো।

জেনি, আবির বর্ষা, ইয়ামিন সবাই একসাথে আসলো।

তো ডিয়ার হৃদিতার ওপস সরি এক্স ডিয়ার হৃদিতা।অনু ভার্সিটিতে আসার পর প্রথম দেখেই আমি অনুকে চিনতে পারি। আর ওদের সাবাইকে অনুর কথা বলেও রাখি।
জেনি সেখানে উপস্থিত ছিলো না। আর তুমি জেনিকে কাজে লাগিয়ে সব কিছু ঘেটে দিলো। তাও ঠিক ছিলো এরপর শিহাবকে দিয়ে অনুকে বিয়ে করার বাজি ধরালে।ওহহহ আমি বিয়ে অনুকেই করতাম। আগে আর পরে।

সব কথা অনুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিছুই বুঝতে পারছে না।

হৃদিতা তন্ময়ের কলার ধরতে চাইলে, তন্ময় হৃদিতার হাত ধরে বলে, তোমার কি মনে হয়!যে কেউ চাইলেই তন্ময়ের শার্টের কলারে হাত দিতে পারে? ওটা শুধু একজনি পারবে। দেখলেনা একটু আগে কিভাবে ধরলো।

সো মিস হৃদিতা আপনি সোজা চলে যেতে পারেন আপনার জন্য দরজা উন্মুক্ত। হৃদিতে চলে যাওয়ার সময় বললো,আমি দেখে নেবো তোমাকে তন্ময়।

তন্ময় হেসে বলে, একটা ছবি তুলে নিয়ে যাও দেখতে সুবিধে হবে।

তানিম এসে বলে, তুই অনুকে আগে থেকে চিনতি?

অনুও তন্ময়ে সামনে এসে বলে আমিও জানতে চাই?

– আমি বলতে বাধ্য নই।

অনু বললো তাহলে আমিও এ বাড়িতে থাকতে বাধ্য নই।

– তুমি এ বাড়িতে থাকতে বাধ্য।

সবাই যার যার মতো খেতে বসেছে এখানে দাঁড়িয়ে এদের ঝগড়া দেখার টাইম নেই

তন্ময় একবার সবার দিকে নজর বুলিয়ে, অনুকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা নিজের রুমে এসে অনুকে নামিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।

– এই আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেনো?
– আজকে আমাদের বিয়ে হয়েছে। সেই মতে আজকে আমাদের ফুলসজ্জা।

– জোড় করে বিয়ে করে আবার ফুলসজ্জা শখ কত।

– এই বিয়ে জোড় করে করি আর যা করেই করি বিয়ে তো করেছি। কাছে আসো সুইটহার্ট।

– একদম আমাকে সুইটহার্ট বলবেন না।

– আচ্ছা তবে বৌজান এদিকে আসো।

তন্ময় অনুর কাছে এসে অনুকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।
অনুর নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে, শরীরে কেমন কাঁটা দিচ্ছে। আমতা আমতা করে বললো ছাড়ুন।

– ছাড়ার জন্য থোরি না ধরেছি। সারাজীবন এভাবেই ধরে রাখবো। এখন কাঁপা-কাঁপি কেন করছো? কাঁপা-কাঁপি করার মতো কিছুই তো করলাম না।দু’মিনিট শান্ত হয়ে বসে ভিডিওটা দেখো।

অনু সামনে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলে কারণ ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অনু দৌড়ে আসছে এসেই তন্ময়কে জড়িয়ে ধরলো। অনুর নিশ্বাস মনে হয় আটকে আসছে শক্ত করে তন্ময়ের শার্ট খামচে ধরলো। পুরো ভিডিও শেষ হওয়ার আগেই তন্ময়ের দিকে ঘুরে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরলো।

তন্ময় মৃদু হেসে অনুকে জড়িয়ে নিলো। মৃদু স্বরে অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, এটা কি তোমার নিজস্ব প্রোপার্টি যখন তখন জড়িয়ে ধরবে?

অনু কিছু সময় চুপ থেকে। তন্ময় কে ছেড়ে দিলো। তন্ময়ের থেকে একটু দুরে দাঁড়িয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে। বলে, আপনি আমাকে আগেই চিনে নিয়েছেন?

– হুম তুমি যেদিন প্রথম ভার্সিটিতে এসেছিলে সেদিন তোমাকে প্রথম দেখেই চিনতে পারি। তবে আমি চেয়েছিলাম অন্যভাবে তোমাকে নিজের করে নেবো।কিন্তু সবটা ঘেটে গেলো।

– আমাকে আগে কেন বললেন না!

– আমি তোমার মোবাইলে ভিডিও দিয়েছিলাম। তুমি দেখনি?

– কোথায় কোন ভিডিও।

– #তোর_শহরে_প্রেম এই ফাইলে ছিলো। আচ্ছা এবার কি আমাকে নিজের করে নিতে পারো।

অনু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। তন্ময় পেছন থেকে অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে। তোর শহরে প্রেম ছিলো! অথচ আমি কত শহর ঘুরেছি। অবশেষে তোর শহরে প্রেম খুঁজে নিয়েছি।

______________________________________________
দেখতে দেখতে হাসি আনন্দে কেটে গেলো তিন বছর আজ তিন জোড়া কপোত-কপোতীর বিবাহ বার্ষিকী।

মেঘা তানিম কে বলছে,খুব তো বলেছিলে বিয়ে করবো না। এখন দুই বাচ্চার মা বানিয়ে দিয়েছো।

– তুমিো তো বলেছিলে সংসার করবো সংসার করবো। আমি শুধু তোমার সংসার করার শখে পূর্নতা দিয়েছি।

সারা আর রায়হান তার এক মেয়ে নিয়ে সুখেই সংসার করছে। রায়হান সারাকে জড়িয়ে ধরে বলে, জানো তুমি না চাইলে আমি কোনদিন সাহস করে তোমার দিকে এগোতে পারতাম না।সারা রায়হানের বুকে মাথা রেখে বলে, টাকা আজ না থাকলে পরিশ্রম করলে আগামীতে হবে। কিন্তু টাকার জন্য ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে দিলে তাকে কখনো আর নিজের করে পাওয়া যাবেনা। তোমার ভালোবাসায় আজ আমি পরিপূর্ণ।

______________________________________________
অনু আজ মেরুন রঙের শাড়ী পড়েছে সাথে হালাকা অর্নামেন্টস। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে কপালে টিপ দিচ্ছিল ঠিক তখন তন্ময় অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,আর কতবার তোমার রুপে মুগ্ধ হবো বৌজান।

অনু মুখ ভার করে চুপ রইলো। তন্ময় আদুরে স্বরে বললো, বৌজান কি হলে হঠাৎ করে পূর্নিমার চাঁদে গ্রহণ কেন লাগলো।

– সবার কি সুন্দর কিউট কিউট বেবি আর আমার নেই।

তন্ময় অনুর গাল টেনে বলে, ওরে আমার বৌ নিজে এক বাচ্চা সে আরেক বাচ্চা নেওয়ার জন্য বায়না করছে। অনুর কপালে চুমু দিয়ে বলে,দেখো সারা আর মেঘা ভাবি দুজনেই গ্রাজুয়েশন শেষ করে তবেই সংসারী হয়েছে। আমরাও বেবি নেবো তবে তোমার পড়া লেখা শেষ হোক।

– তারমানে আরো বছরখানেক অপেক্ষা করতে হবে।

তন্ময় অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,অপেক্ষা করলে একসাথে ডাবলও আসতে পারে।

এবার চলো নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।

– আমি যাবো না।
তন্ময় অনুকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, তুমি না গেলে আমি নিয়ে যাবো। বৌজান।

– নামিয়ে দিন আমি যাবো,।

আনহা আর আয়ান এদিকে আসছিলো,তন্ময়ের কোলে অনুকে দেখে বলে, তোমাদের একদম হিরো হিরোইন লাগছে। এক মিনিট হোল্ড করো কয়েকটা পিক তুলে রাখি।

সায়লা বেগম বললেন, ইরা আমাদের সংসারে কখন ভালোবাসার অভাব হবেনা।

ইরা বেগম বললেন, আমরা আমাদের মনের মতো ছেলের বউ পেয়েছি। এখন বাকি জীবনটা এভাবেই হাসি আনন্দে কাটুক।

আনহা বললো,এটেনশন প্লিজ সবাই একসাথে পজিশন মতো দাঁড়িয়ে পরো এখন ফ্যামিলি ফটোশুট হবে।

সবাই দাঁড়ানোর পর মাহি গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলে, আমাকে ছাড়াই ফ্যামেলি ফটো?

আবিদ সাহেব বললেন, তুমি এসে পরেছো এবার আমাদের ফ্যামেলি পূর্ণ।

এভাবেই ভালো থাকুক, তন্ময় আর অনাহিতা।

সমাপ্তি