তোর শহরে প্রেম পর্ব-১৫+১৬

0
242

#তোর_শহরে_প্রেম

#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব -১৫

কি বললে আবার বলো!
আব্দুল্লাহ বললো আরে মির চাচা তুমি!
– এই ছেলেটি কে? আর এক্ষুনি কি বলছিলো। হেই কথাটা আবার কইতে কও।

– আরে চাচা ইনি শহরে থাইকা আইছি গ্রাম ঘুরতে
– আমি যে হুনলাম হেয় তোরে শালাবাবু কইলো।

– আরে চাচা মজা কইরা কইছে হেয় কি জানে আমার বইন আছে নাকি নাই?

– তোমার নাম কি বাবা।

– আমার নাম তন্ময় হসান শেখ।

– তুমি এই গ্রামে কেন আইছো।

– গ্রাম নিয়ে রিসার্চ করতে।

– কি সাচ করতে।

আব্দুল্লাহ বললো, ও তুমি বুঝবা না চাচা। আমাগো গ্রাম নিয়া বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবো।

আচ্ছা হেরে লইয়া আমার বাসায় যাইবা। তয় থাকো তোমরা। আমি যাই মেলা কাম আছে।

মির মিয়া চলে যেতেই। আব্দুল্লাহ বললো,এইডা গ্রাম এইখানে এমনে কথা কয়ন যাইবো না। একটু আস্তে ধীরে কইতে ওইবো। এইবার কন দেহি। আপনে কি কইতে চান।

– বলছি, আমি তোমার দুলাভাই। এবার তাড়াতাড়ি তোমাদের বাসায় নিয়ে চলো।

– আপার সাথে কালকেই কথা হইলো কই কিছু তো কইলো না।

আচ্ছা ওয়েট আমি তোমার আপাকে দেখাচ্ছি। নিজের ফোন বের করে কল দিলো।

অনু সবেই বাসায় এসে পৌঁছেছে এরমধ্যেই ফোন বেজে উঠলো। ভিডিও কল দেখে একবার কেটে দেবে ভেবেও রিসিভ করলো। রিসিভ করতেই আব্দুল্লাহর চেহারা দেখা গেলো স্কিনে। অনু উচ্ছাসিত হয়ে বলে,

ভাই তুই!

হ আপা আমি তয় তুমি আমাগোরে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললা। দুলাভাই না আইলে তো জানবার পারতাম না।
অনু কিছু বলবে, তার আগেই তন্ময় মোবাইলটা নিয়ে বলে, সুইটহার্ট এতো টেনশন নিওনা যাস্ট চিল। তোমার হ্যাসবেন্ড তার শ্বশুর মশাইকে রাজি করে তারপরেই আসবে। সো টেক কেয়ার এন্ড লাভ ইউ।কথা শেষ করেই তন্ময় কল কেটে দিয়ে মোবাইল পকেটে রেখে বলে, এবার বিশ্বাস হলো?

-হুম বিশ্বাস হইছে। তয় আব্বাজান তো মেলা রাগ অইবো।

– সে-সব আমি বুঝে নেবো আগে চলো তোমাদের বাসায়।

______________________________________________
অনু বেলকনিতে যেয়ে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, আজ খুব করে মনে পরছে সেদিনের কথা। যদি সেইদিন টাই না আসতো জীবনে! তাহলে হয়তো এই তন্ময় নামটা তার জীবনে আসতো না।
এসব ভাবতে ভাবতে ডুব দিলো অতীতে…….

সবার কাছ থেকে নানা কথা শুনেছে অনু, ভার্সিটিতে এই হয় ওই হয়। তবে তার ভাগ্যটা বোধহয় একটু ভালোছিলো তাই তার সাথে তেমন কিছুই হয়নি। সুন্দর ভাবেই চলছিলো ভার্সিটির দিনগুলো। হঠাৎ একদিন জেনি নামক কালো ছায়ার সাথে ভুল ক্রমে ধাক্কা লাগে অনুর। ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে বাসায় আসার জন্য দ্রুত বের হচ্ছিল ঠিক তখনি ধাক্কা লাগে জেনির সাথে।ধাক্কাটা একটু জোড়েই লেগেছিল যার ফলে জেনি মাটিতে লুটিয়ে পরে। অনু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে সরি আপু আমি বুঝতে পারিনি। জেনি অনুর হাত না ধরে নিজে নিজে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,এই তুই কে-রে তোকে তো আগে দেখনি। ভার্সিটিতে নতুন?

– জ্বি আপু

– তোর সাহস হলো কি করে আমাকে ধাক্কা দেয়ার।

– আমি ইচ্ছে করে দেয়নি ভুলক্রমে লেগে গেছে।

– এমন ভুল হবে কেনো।
– আপু ভুল কেউ ইচ্ছে করে করেনা। ভুলতো ভুলই। এই ভুল হবে কেনো এটা তো অবান্তর কথা।

– তোর সাহস তো কম-না একে তো সিনিয়রের গায়ে হাত তুলেছিস আবার মুখে মুখে তর্ক করছিস।

– সরি আপু আপনি ভুল বলছেন আমি আপনার গায়ে হাত কখন তুললাম। আর তর্ক করিনি শুধু সঠিক কথাটুকু বলেছি।

জেনী অনুর চুল ধরে বলে এবার দেখ আমি কি করি। বর্ষা ব্যাগ থেকে পানি বের করে অনুর মাথায় ঢেলে দেয়।ওয়াটার পটে পানি কম থাকায় অনু খুব অল্প ভিজে। তা দেখে জেনি বার্ষাকে বলে ক্যান্টিন থেকে একজগ পানি নিয়ে আয়।

– এসব কি ধরণের অসভ্যতা। মানছি ভুল হয়েছে সরি বলেছে বাস্ হিসেবে শেষ এসব কি? চুল ছাড়ুন।

-ছাড়বোনা কি করবি তুই

– কি বাচ্চাদের মতো কথা বলছেন! এখন-কি চুলোচুলি করার বয়স আছে আমাদের? ছাড়ুন বলছি অনু চুল ছাড়িয়ে নিয়ে সামনে অগ্রসর হতেই। বার্ষা এসে পুরো একজগ পানি অনুর শরীর ছুড়ে মারে।
তবুও অনু পিছু না ফিরে সামনে অগ্রসর হয় এমন সময় পেছন থেকে জেনি অনুর জামা ধরে টান দিতেই বেশ খানিকটা ছিড়ে যায় জামা। অনু পিছনে ফিরেই জেনির গালে ঠাসসসসসসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ততক্ষনে তন্ময় সহ তাদের গ্রুপের অনেকেই সেখানে উপস্থিত হয়।

জেনির গালে থাপ্পড় দেওয়াতে জেনী আবারও অনুর জামায় হাত দিতে নিলে। তন্ময় বললো, আমি দেখছি তুই থাম এই সব মেয়েকে কিভাবে শাস্তি দিতে হয় আমার জানা আছে। কথা শেষ করার আগেই অনু তন্ময়ের গালে ঠাসসসস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে, তোদের মতো অসভ্যদের কি ভাবে ঠিক করতে হয় তাও অনুর জানা আছে।

ভার্সিটির সবাই তখন মোটামুটি উপস্থিত,আজ পর্যন্ত তন্ময়ের সামনে কেউ উঁচু আওয়াজে কথা বলতে সাহস পায়নি! সেখানে তন্ময়ের গায়ে হাত তোলার মতো দুঃসাহস করেছে অনু।!তন্ময় অনুর হাত পেচিয়ে ধরে বলে, তোর সাহস হলো কি করে আমার গায়ে হাত তোলার।

-ছাড়ুন বলছি নয়তো আমি আপনাদের নামে কমপ্লেইন করবো প্রিন্সিপালের কাছে। তুই যা ইচ্ছে করে নে। বলেই অনুকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে বলে, এর পরিনাম ভালো হবে না বলে দিলাম।

তন্ময় চলে গেলে। অনু উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। আস্তে আস্তে আশেপাশে নজর দিলো। সবাই দাঁড়িযে দাঁড়িয়ে ফ্রীতে সিনেমা দেখল সাহস করে সামনে এসে কেউ প্রতিবাদ করলো না। চোখের পানিটুকু মুছে নিয়ে ওড়না দিয়ে শরীর ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে চলে আসলো বাসায়। এসব ভাবনার মাঝেই মাহি এসে অনুর কাঁধে হাত রেখে বলে, তোর সাথে কারা যেন দেখা করতে এসেছে?

মাহির কথায় অতীত থেকে ফিরে আসে অনু চোখের জলটুকু মুছে বলে, কে আবার আসলো?

– তুই কাঁদছিস কেনো সেটা বল?

– বাদ দে চল দেখি কে এসেছে। অনু রুমে আসতেই আনহা এসে অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,বৌমনি তুমি কি রাগ করেছো আমার সাথে? অনু সামনে তাকিয়ে দেখে আয়ান আর তার সাথে ইরা বেগম, সায়লা বেগম দাঁড়িয়ে আছে। অনু আনহাকে আদুরে গলায় বলল, রাগ করবো কেনো তোমার মতো কিউটের ডিব্বার সাথে কেউ রাগ করতে পারে?

সায়লা বেগম বললেন,সত্যি তুমি রাগ করোনি মা?

– না আন্টি রাগ কেনো করবো। আপনার বসুন।

ইরা বেগম বললেন, কি লক্ষী মেয়ে। আমার তন্ময় বাবার পছন্দ আছে। সায়লা বেগম আড় চোখে ইরা বেগমের দিকে তাকালে, ইরা বেগম কথা ঘুরিয়ে বলে, না মানে আয়ান আর আনহার টিচার হিসেবে তুমি একদম পার্ফেক্ট।

অনু তাদের বসিয়ে রেখে চা বানিয়ে নিয়ে আসলো রংচা সাথে টোস্ট বিস্কুট।

সায়লা বেগম চা মুখে দিয়ে বলে, খুব ভালো হয়েছে।
ইরা বেগম বললেন, তুমি কি সব রান্না করতে পারো?

– জ্বি আন্টি মোটামুটি সব পারি।

মনে মনে ইরা বেগম ক্ষুব্ধ হলেন কারণ মেঘাকে জিজ্ঞেস করেছিলো তুমি কি রান্না করতে পারো?মেঘা বলেছিলো রান্না সে পারেনা। তার ছেলেটা একটা ঢেঁড়স পছন্দ করেছে। তারচেয়ে তন্ময়ের পছন্দই বেস্ট।সায়লা বেগম ইরা বেগমের ভাবনা বুঝতে পেরে কানে মুখে বলে, চিন্তা করিস না ছোট। তোর বউকেও রান্না শিখিয়ে দেবো। চা খাওয়া শেষ করে সায়লা বেগম বললেন, আচ্ছা আজ উঠি তাহলে,আগামীকাল থেকে ওদের পড়াতে যেতে ভুলোনা কেমন।

অনু সম্মতি জানালো।

ওনারা চলে যেতেই মাহি বললো, আরেহহহহ তোর শ্বশুর বাড়ির মানুষতো পুরাই রসগোল্লা।

-তবে স্বামিটা যে নিমপাতা।

– তুই তো চমচম ঠিক করে নিবি।

– কোন ভাবে বিয়েটা না হলে বাঁচি।

– ইশ কি বলছিস ফ্রীতে এতো হ্যান্ডসাম ছেলে পাচ্ছিস তাই মূল্য দিচ্ছিস না।

– তাহলে এক কাজ কর তুই এই মূল্যবান ছেলেকে নিয়ে নিজেকে অমূল্য করে তোল।

– ছিহহহহহ আমার একমাত্র দুলাভাই। আর তুই কি সব বলছিস।

– আমি তো হ্যান্ডসাম চাইনি! আমি চেয়েছিলাম আমার কল্প মানবের মতো অমায়িক একজন মানুষ। তাকে না পেতাম তার মত মেয়েদের সম্মান করে এমন একজন পেলেই খুশী হতাম।

#চলবে

#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা

#পর্ব-১৬

তন্ময় আর সাজু বেপারি মুখোমুখি বসে আছে। হালিমা বেগম পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন না। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার মেয়ে তাদের না জনিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।এটা হতেই পারেনা।

পিন ড্রপ নিরবতা বিরাজ করছে ঘর জুড়ে। শুধু চারজন মানুষের নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। নিরবাতা ভেঙ সাজু বেপারি বললেন,আমি সাজু বেপারি কোন নয় ছয় কথা পছন্দ করিনা। যা কওয়ার সোজা কও। কোন মিথ্যা কইবানা।

তন্ময় বললো,আঙ্কেল আমার নাম তন্ময় হাসান শেখ। আমার বাবার নাম আদিল হাসন শেখ। আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই! জানি এই কথাটা আমার বাবা অথাব আমার ফ্যামেলির কারো এসে বলা উচিৎ ছিলো। কিন্তু দুঃখিত আমি নিজেই বলছি, তার অবশ্য কারণ আছে।

– কারনটা কও

– সারাজীবন আপনার মেয়ের সুখ,দুঃখ ভালো থাকা খারাপ থাকা সব সময় তার পাশে থাকবো আমি। তাই আমার মনে হয় আমি যদি ঠিক প্রতিশ্রুতি দিতে পারি সেটাই সবচেয়ে ভালো।

– তুমি সব যাইনা শুইনা আইছো।

-আঙ্কেল আমি শুধু আপনার মেয়েকে কথা দিয়ে এসেছি, যে আপনার অনুমতি নিয়ে তাকে নিজের করে নেবো।

– আমি এমনে কেমনে নিজের মেয়েকে তোমার হাতে সোপর্দ করবো। তোমারে তো ঠিক করে আমি চিনিও না।

– আপনি যা জানতে চান আমি সব জানিয়ে দিচ্ছি।

– তুমি যে সব সত্যি কথাই কইবা তার কি গ্যারান্টি আছে।)ঢাকার শহরে ঠকবাজের তো আর অভাব নাই।

– আমাকে দেখে আপনার ঠকবাজ মনে হয়!

– দেহো বাবা সুট, বুট পরলেই কেউ ভদ্রলোক হইয়া যায় না। আর চেহারায় তো আর তোমার চরিত্র লেখা নাই। চেহারা দেইখা যদি মানুষ চেনা যাইতো। তাইলে বিশ্বাস করে মাইনষে বারবার ঠকতো না।

– আপনার কথায় যুক্তি আছে। তবে আপনাকে বিশ্বাস করানোর জন্য কি করতে হবে?

– বেশি কিছু করতে অইবো না।তুমি তোমার বাপের লগে আমারে কথা কইবার ব্যবস্থা কইরা দাও।

তন্ময় মোবাইল বের করে তার চাচ্চু আবিদ হাসানকে কল করলো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই তন্ময় সালাম দিয়ে বললো বাবা তোমার সাথে একজন কথা বলতে চাইছে।

আবিদ হাসান আগেই সবটা জানেন। তন্ময় এখানে আসার আগেই তাকে সব জানিয়ে দিয়ে এসেছে।

সাজু বেপারির কাছে মোবাইল দিয়ে বলে,কথা বলুন আঙ্কেল।

মোবাই কানে ধরতেই ওপাশ থেকে সালাম দিলো আবিদ হাসান। সাজু বেপারি সালামের উত্তর নিয়ে বললেন। আপনার ছেলে যা বলছে সেই বিষয় আপনি কি জানেন।

আবিদ হাসন বললো, হ্যাঁ জানি। আমি আপনার মেয়েকে দেখেছি। আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে। এবার বাকিটা আপনার ইচ্ছে।

– আমার মতো সাধারণ মানুষের মেয়েকে কেনো বাড়ির বউ করে নিতে চান?

– সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অসাধারণ হয়। আপনার মেয়ে রুপেগুনে মাশা আল্লাহ। তাই।

– আপনেগো লগে আমাগো তো মিলবো না।

– মেলালেই মিলবে। আপনিও মানুষ আমিও মানুষ।

– মানুষ তো আমরা হগলেই। তয় উঁচু আর নিচু।তয় চাইহোক আমার একটা মাত্র মেয়ে তাই সময় চাই। বিয়ে হলো সারাজীবনের ব্যাপার তাই ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।

– আচ্ছা আপনি আগামীকাল সকালে জানান। আমি অপেক্ষায় থাকবো আপনার উত্তরের।

সাজু বেপারি তন্ময়ের দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, আব্দুল্লাহ-রে সাথে নিয়া ঘাট থাইকা হাত মুখ ধুইয়া আহো।

তন্ময় আব্দুল্লাহকে নিয়ে পুকুর ঘাটে চলে গেলো

সাজু মিয়া হালিমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, খবার রেডি করো। আজকে কি রান্না হইছে।

-পুকুর থেকে আব্দুল্লাহ রুই মাছ উঠিয়েছিল। রুই মাছের ঝোল আর লাউ শাক। আর মোচড়ার ঘন্ট।

এহনতো এসব দিয়া খাইতে অইবো। রাতে আর কিছু ব্যবস্থা করন যাইবো না। সকালে গঞ্জ থাইকা বাজার আইনো ভালো মন্দ রান্না করে খাওয়াবো।

______________________________________________
এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি থেকে ফিরছে সারা। রাত প্রায় এগারোটা ছাড়িয়েছে। মাঝ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলো। মন মেজাজ কোনটাই ভালো নেই সারার। সেদিনের পর দু’টো দিন চলে গেলো না আসলো কল, আর না একটা ক্ষুদে বার্তা। ড্রাইভার গাড়ি চেক করে বললো, আপামনি অন্য কোন ব্যবস্থা করতে হবে।

ঢাকা শহরে রাত এগারোটা তেমন কোন রাত নয়। সারা এদিক সেদিক তাকিয়ে রিক্সা খুঁজছিলো। হঠাৎ করে চোখ গেলে রাস্তার পাশে একটা টুলে বসে মাথা নিচু করে রাখা যুবকের দিকে । এতো দূর থেকেও নিজের মানুষটিকে চিনতে একটুও সময় লাগলো না। সারার।দৌড়ে সেদিকে ছুটে গেলো।

কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকায় রায়হান
সারাকে দেখেই সারা কে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। রায়হানকে কাঁদতে দেখে সারা কলিজা কেঁপে উঠে। নিজেকে সামলে নিয়ে আদূরে গলায় বলে, কি হয়েছে রায়হান ভাই।

সারার কথা রায়হানের কর্ণগোচর হলো নাকি বোধগম্য হলো না। সে একি ভাবে কাঁদতে লাগলো।

সারা পরম যত্নে রায়হানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে
তার চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরছে নোনা জল।

বেশখানিকটা সময় কাঁদার পর রায়হান সারাকে ছেড়ে দিয়ে নিম্ন স্বরে বলে, সরি। বলেই উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে।
সারা রায়হানের হাত ধরে বলে, আজ আমি আপনাকে যেতে দেবো না রায়হান। আপনার এই বিধ্বস্ত অবস্থায় আপনাকে কিছুতেই একা ছাড়বো না।

রায়হান ঘুরে দাঁড়ালো। রায়হানের চোখে জল চিকচিক করছে। সারার আরে একটু কাছে এসে বললো, কতটা সময় আমার পাশে থাকতে পারবেন মিস সায়রা হাসান শেখ?এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা।

– আপনি রাখতে চাইলে সারাজীবন থাকতে রাজি।

– রয়হান বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে,এসব শুধু আপনার আবেগ। পৃথিবীতে কেউ থাকেনা। সবাই থাকবে বলেও একা করে চলে যায়।

সারার হৃদয় চিন চিন ব্যথা অনুভব করছে।তারমানে রায়হান অন্য কাউকে ভালোবাসে?

রায়হান আবার বললো, জানেন আমার মা বলেছিলো বাবা, আমি তোকে কখনো ছেড়ে যাবো না। অথচ আজ একটা দিন পার হয়ে গেলো মাকে ছাড়াই। আচ্ছা বলেন তো, থাকবো বলেও মানুষ চলে কেনো যায়?

সারা রায়হানকে জড়িয়ে ধরলো। কারণ রায়হান এখন কতটা বিধ্বস্ত সেটা বুঝতে বাকি নেই সারার। মৃদৃ স্বরে বললো, কি হয়েছে আন্টির? আর আন্টি কোথায়?

রায়হান এলোমেলো ভাবে উত্তর দেয়, যেখান থেকে কেউ ফিরে আসে না সেখানে। যেখানে মানুষ শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকে।

সারা বুঝতে পারলো রায়হানের মা আর এই পৃথিবীতে নেই।
সারা রায়হানকে বললো আপনি ভেঙ্গে পরছেন কেনো আমি আছি আপনার পাশে।

– না তুমি নেই কোথাও নেই।কেউ নেই আমার আমি একা।

-রায়হান ভাই রাত হয়েছে চলুন বাসায় যাই।

– না যাবো না। আমি আজিমপুর কবরস্থানে যাবো। এখন থেকে সেটাই আমার বাসা। যেখানে মা সেখানেই আমি।

– আপনি নিজেকে সামলে নিন আমি আছি আপনার সাথে।

– এখন আছেন সকাল হওয়ার আগেই আর থাকবেন না।

– আমি আর কোথাও যাবোনা রায়হান। আপনার সাথেই থাকবো। এখন আমার সাথে চলুন।

______________________________________________
শেখ বাড়িতে আনন্দের আমেজ। সায়লা বেগম আর ইরা বেগম খুশ মেজাজে আছেন। তাদের দুই ছেলের বিয়ে একসাথেই করাতে পারবেন। ইরা বেগম বললেন ভাবি আমি আগেই বলে দিচ্ছি অনাহিতা আমার ছেলের বউ, আর এই মেঘা তোমার।

সায়লা বেগম হেসে বলে, ওই বদ ছেলে আমার চাইনা। তুই রেখে দে। আর রইলো মেঘার কথা মেয়েটা লক্ষী আমি ওকে শিখিয়ে পরিয়ে মনের মতো করে নেবো।

ইরা বেগম বললেন, বারোটা ছাড়িয়ে গেলো সারা এখনো আসলো না কেনো।

সায়লা বেগম তানিম কে ডাকলেন। তানিম নিচে আসতেই সায়লা বেগম বললেন, কি-রে সারা এখনো আসছে না কেনো?

– এই কথা বলার জন্য ডেকে আনতে হয়! একটা কল করে জিজ্ঞেস করে নাও।

ইরা বেগম বললো, তুই দে কল।

তানিম সারার নাম্বার ডায়েল করছে। কিন্তু রিং হতে হতে কেটে যাচ্ছে। ওপাশ থেকে রেসপন্স করছে না।
তানিম চিন্তিত হয়ে বলে, রিসিভ কেনো করছে না। বড় আম্মু সারা কি গাড়ি নিয়ে যায়নি?

– হ্যাঁ গাড়ি নিয়েই তো বের হলো। তুই এক কাজ কর, ড্রাইভার জুয়েল কে কল কর।

তানিম ড্রাইভারের নাম্বার ডায়েল করবে তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো,।

#চলবে