দম বন্ধ ভালোবাসা পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
4507

#দম_বন্ধ_ভালোবাসা
#পার্ট_সাত
#Mst_Liza

হৃদ আমাকে জানালো মা রাজি হয়েছে আমাদের বিয়ের জন্য।কথাটা যেন আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।হৃদ বললো মাকে বোঝাতে হয়েছে অনেক।প্রথমে রাজি না হলেও সায়ানের ব্যাবহারের কথা শুনে নিজের মত পাল্টেছে।হৃদের বাবা বলেছে মাকে সায়ান কিভাবে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।কোনো কারণ ছাড়াই আমার সাথে রেগে কথা বলতো সায়ান।এসব শুনে মা নিজেই বলেছে সায়ানের সাথে আমার বিয়ে দিবে না।যেখানে আমার সুখ সেখানেই আমার বিয়ে হবে।আর হৃদের চেয়ে বেশি কেউ আমাকে সুখে রাখতে পারবে না।তাই বিয়ে হৃদের সাথেই হবে।কথাগুলো এতোক্ষণ হৃদ ফোনে বলছিলো আমাকে।হৃদের সাথে কথা হবার পর মায়ের ফোন আসলো।রিসিভ করতেই বলে উঠলো মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে হৃদের সাথে।আমি রাজি কিনা? যদিও অবশ্য মা হৃদের বাবার কাছে জেনেছে আমিই উনাকে হৃদকে বলে পাঠিয়েছি।তবুও আমার আপত্তি আছে কিনা জিজ্ঞাসা করেছে।আমি লজ্জায় কি বলবো বুঝতে পারছি না।শুধু বলেছি তোমার যাকে পছন্দ তাকে না বলার প্রশ্নই আসে না।

রাত একটা বাজে।বিছানায় শুয়ে হৃদের সাথে কথা বলতে বলতে ফোনটা কানে ধরে রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছি।হৃদ কিছুক্ষণ ডেকে বুঝতে পারলো আমি ঘুমিয়েছি।তাই আর ডাকলো না।সকাল হলে কানের কাছে হৃদের কন্ঠ শুনতে পেলাম।এদিকে ওদিকে তাকিয়ে ফোনটা মুখের সামনে এনে দেখলাম হৃদ লাইনে আছে।উঠে বসে কানের কাছে ফোনটা নিয়ে বললাম,

—“তুমি রাতে ঘুমাও নি?”

—“নাহ।যদি তুমি জেগে যাও আর আমার কথা মনে পরে তাই অপেক্ষা করছিলাম।এখন তো তোমার ওঠার সময় তাই ডাকলাম।”

—“এতোটা ভালোবাসো আমাকে তুমি?”

—“আরও ভালোবাসবো।প্রত্যেকটা দিন প্রত্যেকটা মুহূর্ত আগের মুহূর্তের থেকেও বেশি ভালোবাসবো।”

—“ঘুমাবে কখন?”

—“আজ আর না।বিয়ের পর তোমাকে বুকে জড়িয়ে আরামে আয়েশ করে ঘুমাবো।”

—“বিয়েটা কবে হবে?”

—“দু’দিন পর।”

—“এতো জলদি?”

—“আমার কাছে তো অনেক দিন মনে হচ্ছে।তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত থাকতেও ভালো লাগছে না।”

—“আচ্ছা আমি রেডি হয়ে বের হবো আট টায় ক্লাস।”

—“হ্যাঁ আমি নিচে দাড়িয়ে আছি।”

—“তুমি এখানেও চলে এসেছো?”

—“কি করব? মনে পরছিলো তোমাকে খুব।”

আমি কল কেটে রেডি হয়ে খুব দ্রুত বের হতে নিলে প্রিয়া, মিনি, নিশি আমাকে টেনে ধরলো।বলল,

—“এতো দ্রুত কেন ছুটছি?”

আমি বললাম একটু কাজ আছে বাইরে। আমার কথা শুনে প্রিয়া আর মিনি হেসে বলে উঠলো,

—“আমরা কি আসবো সঙ্গ দিতে?”

আমি ওদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালে ওরা বলল,

—“আরে মজা করছিলাম যা তুই।”

আমি হোস্টেল থেকে নেমে রাস্তায় এসে হৃদের গাড়িটা দেখতে পেলাম। হৃদ আমাকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালে আমি ছুটে গিয়ে হৃদের সামনে এসে দাড়ালাম।আমার গালটা দু’হাতে চেপে ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাড়ালো হৃদ।একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো।যেন দেহে প্রাণ খুঁজে পেয়েছে।

হোস্টেলের সব মেয়েরা এমন সময় বের হচ্ছিলো।আমাদের দু’জনকে দেখে সকলে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।কেউ বুঝে উঠতে পারছে না হৃদ আর আমার মধ্যে সম্পর্কটা কখন তৈরী হলো। যেন অনেক মেয়ের মন ভেঙেছে এমন অবস্থা।

আমি আসপাশটা দেখে লজ্জায় আস্তে করে বললাম,

—“চলো এখান থেকে।সকলে দেখছে কি ভাববে?”

হৃদ কিছু বলতে যাবে ওকে ঘুরিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বসিয়ে দিলাম। ঘুরে এসে অপর পাশটাতে আমি বসলে হৃদ গাড়ি স্ট্রার্ট দিলো।কিছুদূর আসতেই হৃদের হাতটা ধরে বললাম আমি গাড়ি থামাতে।কারণ আজ কলেজ যেতে ইচ্ছা করছে না আমার।গেলে সকলে মিলে হৃদকে নিয়ে প্রশ্ন করবে আমি কি বলবো জানি না।হৃদ আমাকে বলল,

—“তাহলে বিয়ের শপিং করতে যাবে?”

আমি মাথা নাড়িয়ে না অর্থ বোঝালাম। হৃদ প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালে বললাম,

—“ভালো লাগে না আমার।শপিং মানেই ছুটাছুটি।এখানেই বসে থাকো।”

কথাটা বলে হৃদের কাঁধে মাথা রেখে বসে রইলাম অনেকক্ষণ। হৃদ নিশ্চুপ হয়ে আছে। কয়েক ঘন্টা পর নিশির ফোন আসলো।রিসিভ করলে জানতে পেলাম আমার বিয়ের কার্ড নিশির হাতে।শুধু নিশি না হসপিটালের সকলের হাতে।আজ হসপিটালে উপস্থিত সকলকে ইনভাইট করা হয়েছে। নিশির হাত থেকে প্রিয়া ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,

—“কিরে দু’দিন পর তোর বিয়ে আর আমরা আজ জানছি? এই তোর বন্ধুত্ব।কোথায় তুই? যতোদ্রুত সম্ভব কলেজ চলে আই নইতো তোর খবর আছে।”

—“তোরা ভুল বুঝছিস প্রিয়া।সবকিছু এতো দ্রুত হয়ে গেলো।”

—“আমরা কিচ্ছু শুনতে চাই না।তুই যেভাবে হোক আমাদের সামনে এসে দাড়া।”

—“প্রিয়া আমার পাশে হৃদ আছে।তোকে আমি কিভাবে বোঝায়?”

—“আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না।এক্ষুনি আসতে বলেছি।মানে এক্ষুনি আসবি।”

—“আচ্ছা রাখ।দেখছি হৃদের সাথে কথা বলে।

হৃদ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কার সাথে কথা বলছিলাম। আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম ফ্রেন্ডের সাথে। এখন আমাদের হসপিটালে যেতে হবে।সবাই বিয়ের কার্ড পেয়ে খুব রেগে আছে।কথাটা শুনে হৃদ গাড়ি ঘুড়ালো হসপিটালের রাস্তার দিকে।

হসপিটালের সামনে আসলে গাড়ি থেকে নেমে হৃদের সাথে ভেতরে ঢুকলাম আমি।পুরো পরিবেশটাই অন্যরকম লাগছে।প্রিয়া ফোন করে বলল হৃদ স্যারকে নিয়ে উপরে অডিটোরিয়াম রুমে আই।আমি প্রিয়ার কথা মতো অডিটোরিয়াম রুমে আসতেই সকলে মিলে চিৎকার করে হৃদকে বার্থ ডে ইউস করলো।হৃদকে এগিয়ে নিয়ে এসে সামনের টেবিলে রাখা কেক কাটালো।আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি।আজ হৃদের বার্থ ডে এটা আমার জানা ছিলো না।অথচ আমি বাদে গোটা হসপিটালের সবার হৃদকে উইস করা হয়ে গেছে। হৃদ কেক এনে আমার মুখের সামনে ধরলে খুব রাগ হচ্ছিল। পরে অবশ্য পাশে টেনে এনে আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমাকে বলে নি কেন? হৃদ বললো ওর নিজেরই মনে ছিলো না।আরও বেশি রাগ হচ্ছে ওর এই কথাটা শুনে।ওকে গিফট কি দিবো? রাগ দেখিয়ে দিনটা পার করবো।তবে আমি রাগলে হৃদের মুখের দিকে তাকাতে ভালো লাগে।কিভাবে আমার রাগ ভাঙাবে সেটাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।তখন যেন কথা বললেও বোকা মনে হয় ওকে।

দু’দিন পর খুব ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে হলো।এখন আমি হৃদের বাড়িতেই থাকি।সকাল থেকে শুরু করে রাতে ঘুম হওয়ার আগ পর্যন্ত সব সময় কি কি করতে হবে তার রুটিং হৃদ আমায় করে দিয়েছে।তবে এটা ওর অত্যাচার নয় ভালোবাসা। #দম_বন্ধ_ভালোবাসা।এতে যেমন সুখ আছে তেমন কেয়ারিংও আছে। হৃদ যেমন আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত চলতে পারে না।সারাক্ষণ আমার চিন্তা করে।আমিও তেমন হৃদকে ছাড়া কিচ্ছু করতে পারি না।নিজেকে কথা দিয়েছিলাম হৃদকে আর কস্ট দিবো না।তবুও দু’একবার দিয়ে ফেলি।হৃদের এতো ধৈর্য যে কোনো পরিস্থিতিতে সবটা নিজে সামলে নেই।আমি খুব রেগে থাকলে হৃদ এসে আমাকে ছরি বলে।নিজের দোষ না থাকলেও ভুলটা শিকার করে নেই।লেখাপড়া নিয়েও কখনো চাপ দেয় না।হৃদ বলে যা ইচ্ছা করও।শুধু আমার সাথে থাকো।সুখে থাকো।আমাকে একটু হাসি মুখে ভালোবাসতে দিও।সত্যি হৃদের মতো একজন জীবন সঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।সায়ানকে বিয়ে করলে হয়তো এতো সুখ পেতাম না।

।।।।সমাপ্ত।।।।