দিওয়ানা পর্ব-০১

0
4454

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#সূচনা_পর্ব

-“হু আর ইউ? নাথিং মোর দ্যান এ ফাদারস্পয়েল্ড চাইল্ড অফ আ ট্রিমেনডাস রিচ ফেলো । উইথআউট ইউর ফাদার ইউ আর অনলি দ্য লিডার অফ আ ব্যান্ড অফ আনকালচারড,হরিবল ডেন্জারাস ভ্যাগাব্যান্ড । এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় সোহা।
. পিছনে এর দিকে একবার ঘুরে তাকালে হয়তো দেখতে পেতো কত গুলো জ্বলন্ত আগুনের মতো চোখ তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। পুরো ইউনিভার্সিটির সবার সামনে মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে এই কথা গুলো সোহা বলেছে। এতক্ষণ সবাই অবাক চোখে সোহা কে দেখে যাচ্ছিলো। যে মেয়েটা এই একমাস ধরে শান্ত সৃষ্ট আর চুপ চাপ শান্ত প্রকৃতির ছিল তার আজ হঠাৎ করে আগ্নেয়াস্ত্র এর মত জ্বলে ওটা টা সবাই মন ভোরে দেখ ছিল। গোটা একমাস এদের যন্ত্রণা সহ্য করছিলো সোহা। এই ইউনিভার্সিটি আসার প্রথমে দিন থেকেই তাকে বিভিন্ন রকম ভাবে এদের এই পাঁচ জনের কাছে হেনস্থা হতে হচ্ছে। বিভিন্ন রকম ভাবে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়। ইউনিভার্সিটি রাস্তায় যেখানে মোট কথা দেখতে পেতো সেখানেই তাকে টর্চার করতে চলে আসতো এই গুন্ডা ছেলে মেয়ে গুলো। সব গুলোই বড় লোক বাপের বকে যাওয়া ছেলে মেয়ে। আহ্লাদী অকালকুষ্মান্ড। আল্ট্রামর্ডান পোষাক জড়ানো চোস্ত ইংরেজি কপচানো দেমাকিগুলো ধরাকে সরা জ্ঞান করে না। এদের কে দেখলে মনে হয় যে ইংরেজ এর চলে গেছে আর তাদের নাতি পুতি গুলো কে এখানে রেখে গেছে। পুরোই ইংরেজ এর দোকান সব গুলো।
. সোহা বেরিয়ে যেতেই তার সাথে আরো দুজন ছুটে বেরিয়ে এলো এই অবস্থায় সোহা কে একা ছেড়ে দিলে দেখা যাবে আবারো রাস্তার মাঝে তাকে হয়তো আটকে নিয়েছে এই গুন্ডারদল গুলো।
-“এটা তুই কি করলি সোহা। জেনে বুঝে তুই কেনো ওদের কে এত গুলো কথা বলতে গেলি। এবার তো ওরা তোকে ছিড়ে খাবে। ছেলেটা যে তোকে কোন দিকে থেকে মারবে টের ও পাবি না। শয়তান ও ওদের লিডার আমন চৌধুরী রোদ কে ভয় পায়। এই ইউনিভার্সিটি টা আমন চৌধুরীর দাদুর বাবার নামে আর এখন এই ইউনিভার্সিটির প্রধান খুঁটি হল আমন এর দাদু। আর তুই সেই পরিবারের ছেলে কে সবার সামনে এত গুলো কথা শোনালি। বুক কাপলো না। তোকে এখানে টিকতে দেবে ভেবেছিস। অ্যাস বলে ওঠে।
-“আরে আগের দিন আমি নিজে দেখেছি আমন এর গুন্ডামী। রেস এর মাঠে অপজিট দলের তাহির এর সাথে কেমন ঝগড়াটা করলো। ওকে নাকি পরের দিন গাড়ির বনাটের সাথে বেঁধে নিয়ে কার রেস করেছিলে রোডে । তাহির অজ্ঞান হলে নিজে ডক্টর দেখিয়ে ছিল। কি যে জাদু জানে। তাহির এখন ওদেরই গ্যাংয়ে। কিন্তু তুই ভাব দৃশ্য টা কত ভয়ঙ্কর যদি কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হতো। । নীর বলে ওঠে।
-“আর তাছাড়া আমন হল এই ইউনিভার্সিটি টপ ইয়ং ড্যাশিং হ্যান্ডসাম হাঙ্ক বয় সবার ক্রাশ। এই শহরের মোস্ট এই শহরে মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর হিসাবে পরিচিত সাথে বাইরে ও। প্রতিটা মেয়েই শুধু তাকিয়ে থাকে তার দিকে তাকে এক ঝলক দেখার জন্য। অফিসের স্টাফ থেকে শুরু করে তার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মডেল এমনকি তার সমস্ত ক্লায়েন্ট ও ইউনিভার্সিটি ও সব মেয়েরাই তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। শুধু ওর উপস্থিতি যথেষ্ঠ মেয়েদের মনে ঝড় তোলার জন্য। এক কথায় হার্টথ্রব। যেমন পড়াশোনার দিকে ও দক্ষ তেমনই এই অল্প বয়সে ও পড়াশোনা আর বিজনেস এক সাথে সামলাতে পারে। তাই তোর এই কথা গুলো জন্য ইউনিভার্সিটি সব মেয়ে গুলো তোর দিকে কেমন আগুন চোখে তাকিয়ে ছিল দেখিস নি। নীর বলে ওঠে।
-” তো কি করব আর কতদিন এদের এই অন্যায় অত্যাচার গুন্ডামী জ্বালাতন মুখ বুঝে সহ্য করব তুই বলতে পারিস। পয়সা আছে বলে কি যা খুশি করবে না কি? পুরো দুনিয়া টা কি ওরা কিনে নিয়েছে? এই একটা মাস আমাকে এক মিনিট ও স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে দেয়নি। তবুও মুখ বন্ধ রেখে কোনো প্রতিবাদ করা ছাড়াই ওরা আমাকে জ্বালিয়ে খেয়েছে আর এবার তো প্রতিবাদ করেছি এবার তো মনে হচ্ছে আমাকে একে বারে ওপরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে কিন্তু কোনো ব্যাপার না এবার লড়াই টা হবে সমানে সমানে। আমি ও দেখি ওই আমন চৌধুরী রোদ আর কি কি করতে পারে।। সোহা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
-“ঠিক আছে এখন চল পরে দেখা যাবে যা হবে। নীর অ্যাস দুজনেই সোহা কে দুই দিকে থেকে ধরে রাস্তা থেকে হেঁটে যেতে থাকে।

————-
সোহা বাড়িতে ঢুকতে দেখতে পায় তার বাপি আর তার সো কল্ড মা সোনিয়া সোফায় বসে আছে। সোহা বাড়িতে ঢুকে ওদের পাস কেটে ওপরে যেতে নিলেই সোহার পথ আটকে দাঁড়ায় সোনিয়া। সোহা মুখ তুলে তাকাতে সাথে সাথে মুখের ওপর একটা জোরে থাপ্পড় পরে। থাপ্পড় টা এত জোরে ছিল যে সোহা ছিটকে কিছুটা দূরে টেবিলের ওপর পড়ে। সোনিয়া আবারো সোহার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে চুলের মুঠো ধরে টেনে তোলে।
-“বাড়ির কাজ গুলো কে করবে। বাড়িতে যে এত কাজ পড়ে আছে আর তুই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিস।
তোর মরা মা কি এসে কাজ গুলো করে দিয়ে যাবে নাকি? সোনিয়া সোহা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বলে ওঠে।
. সোহা মাটিতে পড়ে মাথা উঁচু করে তার বাপির দিকে তাকায় ব্যাথাতুর চোখে। যে এখনও সোফায় পায়ের ওপরে পা তুলে বসে আছে আর তার দিকে তাকিয়ে আছে রুক্ষ ভাবে। সোহার তাকানো দেখে সোনিয়া মুখ ভঙ্গি পাল্টে সোহার বাপির কাছে গিয়ে আহ্লাদী ভাবে নরম আওয়াজে বলে ওঠে।
-“হাবি আজ সকালে আমি ব্রেকফাস্ট পাইনি। আমাকে হাত পুড়িয়ে নিজে বানিয়ে নিতে হয়েছে দেখো। আমার হাত কতটা পুড়ে গেছে।
.সোহার বাপি সোনিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে নিয়ে নিচে মাটিতে পড়ে থাকা সোহার দিকে এগিয়ে যায়। সোহা জানে এখন তার সাথে কি হতে চলেছে। সোহার বাপি এগিয়ে এসে সোহার সরাসরি দাঁড়িয়ে সোহার কোমর বরাবর লাথি মারে। চুলের মুঠো ধরে মাটিতে থেকে টেনে তুলে দাঁড় করিয়ে সোহা কে মারতে থাকে। জেনে বুঝে ও সোহা কে এমন জায়গায় মারতে থাকে যেখানে মারা উচিত নয়। কোনো বাপ তার মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে সেটা সোহা আগে না জানলেও এখন জানে। সে জানে সে কিছু করলেও তাকে মার খেতে হবে আর কিছু না করলেও মার খেতে হবে এটাই তার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হয় খাবারের থেকে সোহা মারটাই বেশি খায়। সোহা জানে তার বাপির এই বউ আর তার সোকল্ড মা সব সময়ে তার বাপির মাথায় তাকে নিয়ে কান ভর্তি করতে থাকে। সোহার পাঁচ বছর বয়স থেকে তাকে এই দিন দেখে যেতে হচ্ছে। তাকে প্রত্যেকটা মুহূর্তে এইরকম ভাবে বেঁচে মরতে হচ্ছে।
-“তোমার সাহস কি করে হলো তোমার মায়ের জন্য খাবার না বানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। কিছুই তো করোনা কাজ। এটুকু ও করতে পারো না তুমি। তোমাকে তো সব কিছু দেয়া হয়েছে। নাম টাকা পরিচয় তার ওপর তুমি কথা শোনো না। সোহার বাপি সোহা কে মারতে মারতে বলে ওঠে।
. সোহা কোনো কথা না বলে মার খেতে থাকে। তার কোনো কথাই যে এ বাড়িতে চলে না। সোহার মুখে কোনো রকম এক্সপ্রেশন নেই না কষ্টের না রাগের।
-“তুমি কি আমাকে একটু শান্তি দেবে না সব সময়ে তোমাকে নিয়ে শুনতে হবে কেনো। বাড়ি ফিরে তোমার কথা শুনতে হয়। তুমি কি একটু ভালো করে তোমার মায়ের সাথে থাকতে পারো না। সোহার বাপি বলে ওঠে।
-” আপনি আমাকে মারা ছাড়া আর কি করতে পারেন। আপনি ওই মহিলার কথা ছাড়া আর কি কারোর কথা শোনেন। কখনো কি শুনেছেন আমার কথা বুঝতে চেয়েছেন আমাকে কখনো। আমি কিছু করলেও কি আর না করলেও কি সেই আমাকে প্রতিদিন ডায়েট চ্যাট এর মত করে আমাকে মার খেয়ে যেতে হয়। মাটিতে পড়ে অনেক কষ্টে বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে বলে ওঠে সোহা।
-“তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার মুখে মুখে কথা বলো। আমার মান সম্মান ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিতে চাইছ। আমি তোমাকে বুঝিনি। তোমাকে এই বাড়িতে থাকতে দিচ্ছি খেতে দিচ্ছি আমার নাম পরিচয় নিয়ে বেঁচে আছো আর কি চাই তোমার হ্যাঁ। বলেই খুব জোরে পাশে থাকা পিলার এর সাথে সোহার মাথা ঠুকে দেয় সোহার বাপি।
. সোহার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে চাপা আর্তনাদ। মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। কিন্তু ততক্ষণে বাড়ির লিভিং রুম ফাঁকা হয়ে গেছে তার বাপি আর সোনিয়া চলে গেছে তাদের রুমে। সোহা চোখে ফুটে ওঠে ব্যাথা অসহায়ত্ব। বাড়ির কাজের লোক ছুটে এসে সোহা কে মাটিতে উঠিয়ে তুলে বসায়।তারা ও এই সবে অভস্ত্য হয়ে গেছে। সোহা দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে আসতে আসতে নিজের শরীরে সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে নিজের এই ভাঙাচোরা শরীর কে এগিয়ে নিয়ে।
-“এইরকম জল্লাদ বাপ যেনো কোনো সন্তান এর না হয়। ওপরআলা যেনো এমন শয়তান লোকের ঘরে যেনো কখনো কোনো বাচ্চা না দেয়। কোনো বাপ তার সন্তান কে এই ভাবে মারতে পারে ছিঃ। আর ওই শয়তান মহিলার জন্য এই ফুলের মত মেয়েটার জীবন পুরো নরকে পরিনত হয়ে গেলো। আহারে বাচ্চা মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে ও কি মায়া লাগে না নিজের রক্ত কে কি ভাবে এই রকম হিংস্র জানোয়ার এর মত মারতে পারে। মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে এখানে পড়ে থাকতে হচ্ছে আর নৃশংস দৃশ্য দেখতে হচ্ছে প্রতিদিন। বৌমনির কথা রাখতে এখানে থেকে তো গেলাম কিন্তু বৌমনি তোমার লাডো কে এই শয়তানদের হাত থেকে বাঁচাতে পারলাম না। বাড়ির বহু পুরোনো কাজের লোক সোহার ফুল কাকু বলে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যান।

—————
অন্ধকার রাস্তার মাঝে ছুটে চলেছে গাড়ি। একের পর এক ট্রাফিক রুলস ভেঙে যাচ্ছে। তার কাছে এইসব কিছু এসে যায়না। এখন যেনো মাথায় খুন সবার হয়েছে। চোখ গুলো লাল রক্তিম আকারে পরিনত হয়েছে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে।গাড়ি নিয়ে বাড়ি ঢোকে। বাড়ি বললে ভুল হবে কোনো বাড়ি নয় চৌধুরী প্যালেস পুরোই রাজবাড়ি। চারিদিকে তেমনই সাজানো। গাড়ি জোর ব্রেক কষে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। এমন ভাবে হেঁটে যাচ্ছে মনে হচ্ছে যেনো সামনে থেকে কোনও তুফান এর গতিতে যাচ্ছে।রুমে ঢুকে নিজের শার্ট খুলে ফ্লোরে ফেলে উদাম শরীরে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। নিজের শরীর ভিজিয়ে দেয় বাথটাবের স্নিগ্ধ ফুলে ভরা পানিতে। পানির মাঝে নিজের শরীর ডুবিয়ে দিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করতে ব্যস্ত। এতক্ষণে যেনো তার রাগ একটু একটু করে কমে যেতে থাকে। টানা এক ঘন্টা যাবৎ চোখ বন্ধ করে পানিতে ডুবে বসে থাকার পর চোখ খুলে তাকায়। কোমরে টাওয়েল জড়িয়ে বাথটাব এর পানি থেকে বেরিয়ে আসে। উদাম শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। মাথার থেকে পানি চুইয়ে পড়ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরের দিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। নিখুঁত হাতে তৈরী এক গ্রীক ভাস্কর্য যেনো । অথচ পরিত্যক্ত এক দেবগৃহ। মায়াবিনীর কৃপা পায়নি। কেনো এমন হল তার সাথে। কি কমতি আছে তার মাঝে। আয়নায় নিজকে দেখতে দেখতে ভাবতে থাকে।
-“আজকে আমাকে সবার সামনে এই ভাবে অপমান করার সাহস দেখিয়ে তুমি খুব ভুল করেছো জানেমান। এই আমন কে অপমান করা এবার তুমি বুঝবে। আমি কতটা ভয়ানক হতে পারি। এবার তুমি দেখতে থাকো বেবস আর কি কি হতে থাকে তোমার সাথে। আমন চোখ মুখ শক্ত করে মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে ওঠে আমন।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে….
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন ।