দিওয়ানা পর্ব-০২

0
3637

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২

-“বাবাহ ভিখারিনী এখন আবার নিজে ভিক্ষুকদের খাবার খাওয়ায় এত উন্নতি ।

সোহা সবে সবে ইউনিভার্সিটি ঢুকে ছিল আর তখনই কানে আসে কথাটা। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় সব গুলো দাঁড়িয়ে আছে। সোহার আজকে মুড টা এমনিতেই খারাপ ছিল তার ওপরে আবারো এই শয়তান গুলো তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তাকে জ্বালিয়ে খাওয়ার জন্য। আজ তার মায়ের জন্মদিন অথচ সকাল থেকে তার জন্মদিন টা ঠিক ভাবে পালন করতে পারিনি।

সোহা পাশ কেটে যেতে নিলে আচমকা পাস থেকে হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে গায়ের জোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

-ঠাসসসসস

চারিদিকে সবাই সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায় এই থাপ্পড় এর আওয়াজে। সবাই অবাক চোখে দেখতে থাকে সোহা আর সামনে থাকা মণিকা কে।

-“তোর সাহস কি করে হয় কালকে সবার সামনে আমন কে ওই ভাবে অপমান করার। মণিকা রাগে চিৎকার করে বলে ওঠে। আসলে মণিকা সব সময়ে নিজেকে আমন এর ফিঁয়াসে বলে দাবি করে।

সোহা অবাক চোখে দেখছে মণিকা কে। কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে সোহার। বুঝেছে তার গালে পাঁচ আঙুল এর ছাপ বসে গেছে। তার পুরো শরীর কাঁপছে। ওখানে থাকা বাকি সবাই ও এখন অবাক হয়ে দেখছে ওদের দুজন কে।কেউ বুঝতে পারিনি হঠাৎ করেই মণিকা সোহা কে মেরে বসবে। দূর থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে আগুন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমন। মাথার রগ গুলো ফুলে উঠেছে চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে। হাত মুঠো করে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।

-“তোর এই গন্ধ মুখ দিয়ে যদি আর কোনো কথা তুই আমন কে বলিস তাহলে তোকে কুকুর দিয়ে খাওয়াতে বলব ছোটো লোকের বাচ্চা। মণিকা বলে ওঠে।

-” ঠাসসসসস ।

মণিকার কথা শেষ হতে না হতে সোহা মণিকার গালে জোরদার একটা থাপ্পড় মেরে বসে সোহা। এবার যেনো সবার মাথার ওপর যেনো আকাশ ভেঙে পড়েছে। এর আগে যখন মণিকা সোহা কে মেরে ছিল যতোটা না অবাক হয়েছিলো এখন সবাই তার চার গুণ বেশি অবাক হয়ে গেছে সোহা ঘুরিয়ে মণিকা কে থাপ্পড় মারতে।

-“এত দিন আমি সব কিছু মুখ বুঝে সব কিছু মেনে নিয়েছি মানে এই না তুমি যা খুশি তাই বলতে পারো। আমি চাইলে তোমাকে এক ঝটকাতে সাইজ করতে পারি। কিন্তু আমি তোমার মত অমানুষ নই। আর হ্যাঁ একটা কথা যার জন্য এত গুলো কথা আমাকে বললে যদি তার সামনে বলতে তাহলে কাজের হতো যদি কৃপা করে একটু তোমার দিকে দেখত। কিন্তু তোমার সব মেহনত বেকার গেলো তাই না। বলে ওঠে সোহা।

-“বাবাহ আজকে শাড়ি পরে কি ব্যাপার হ্যাঁ? কোথায় থেকে আসা হচ্ছে শুনি? সোহার সামনে এসে দাঁড়ায় আমন পকেটে হাত গুঁজে ফুল অন অ্যাটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে।

-” আরে ভাই আজকে এই ঢ্যাড়সমার্কা বাঁদরি তো হেব্বি দান ধ্যান করছিলো মাইরি। রাস্তার পথ শিশু আর ভিখারিদের খাওয়াচ্ছিল। নিজে ভিখারি হয়ে ভিখারিদের খাওয়ানো কি ইউনিক ব্যাপার না। পাশে দাঁড়ানো রাজ বলে ওঠে বিশ্রী হেসে।

-” মানে কি বলছিস? আমন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“হ্যাঁ রে ঠিক বলছি। এই দেখ আমি ভিডিও বানিয়ে এনেছি ইউনিভার্সিটি আসার সময়ে রাস্তায় দেখে ভিডিও করে নিয়েছি। রাজ হাসতে হাসতে বলে হাতে থাকা মোবাইল ফোনে ভিডিও অন করে দেয়।

আজকে সকালে সোহা পথ শিশুদের আর ভিক্ষুকদের খাইয়ে ছিল। প্রতি বছর এই দিনটা সোহা অসহায় মানুষদের খাওয়ায়। তাদের সাহায্য করে। আজ তার মায়ের মৃত্যু দিবস। তাই এই দিনে সোহা তার মায়ের জন্য এগুলো করে। আর তারই ভিডিও দেখাচ্ছে।

-“বাহ একটা ভালো কাজ করেছ দেখছি। তা শুধু কি ওদের খাওয়ার দিলে হবে আমাদের জন্য ও কিছু হবে না কি। আমন তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ কেনো হবে না। নিশ্চয়ই হবে। সোহা বলে ওঠে। সোহার মুখে এখন কোনো ভাব নেই না রাগ না দুঃখ কষ্ট। সবাই কে দেয়ার পর ও তার কাছে কিছু এক্সট্রা প্যাক বেঁচে ছিল। সোহা ব্যাগ থেকে পায়েস এর প্যাক গুলো তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়।

-” এতে আবার বিষ টিস মিশিয়ে আনোনি তো। আমন সোহার হাত থেকে নিয়ে মুখে দিয়ে বলে ওঠে।

আমন এর কথাই সোহার চোখ ছল ছল করে ওঠে। কোনো কথা বলতে পারে না। চুপচাপ তাকিয়ে থাকে আমন এর মুখের দিকে। আমন সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে সোহার ছলছল চোখে একরাশ দুঃখ কষ্ট অভিমান লুকিয়ে আছে। সোহা কোনো কথা না বলে পাশ কেটে যেতে নিলেই। পিছন থেকে চেনা জানা ডাক শুনে থেমে যায়। আর সাথে ওখানে থাকা বাকিরা ও থেমে যায় সামনে দেখতে সবাই অবাক চোখে দেখতে থাকে।

-“সোনাই ।

সোহা পিছনে ফিরে দেখতে তার মুখে হালকা হাসির রেখা ফুটে ওঠে

-” সিম সিম তুমি এখানে? বলেই সোহা গিয়ে জড়িয়ে নেয় তার সামনে থাকা ব্যাক্তি কে।

-“ড্যাড । বিড়বিড় করে বলে ওঠে আমন। আর অবাক চোখে দেখতে থাকে ওর সামনের দৃশ্য।

সোহা কে জড়িয়ে আছে স্বয়ং সম্রাট চৌধুরী আমন এর বাবা। আর বাকিরা এটা দেখেই চোখ বড় বড় করে ফেলেছে।

-“তুমি এখানে কি করছো সিম সিম? সোহা হাসি মুখে বলে ওঠে।

-“আজকে দিনে কি আমি আমার সোনাই মায়ের কাছে না এসেছি এমন কোনো দিন হয়েছে? হাসি মুখে সোহার দুই গাল ধরে বলে ওঠে। সোহা হাসি মুখে মাথা নাড়ে।

-“শুভ জন্মদিন সোনাই মা। আর এটা তোর জন্য ।বলেই সোহার দিকে এগিয়ে দেয় একটা ডার্ক চকলেট বক্স।

জন্মদিন কথাটা শুনতেই সোহার মুখে থাকা এতক্ষণ এর হাসিটা মুছে যায় চোখ মুখ কালো হয়ে পড়ে চোখের কোণে পানি ছলছল করে ওঠে। কোনো কথা বলে না সোহা। সম্রাট চৌধুরী কারণ বুঝতে পেরে সোহার মুখ তুলে ধরে বলে ওঠে।

-“আচ্ছা সরি ভুল হয়ে গেছে। এবার তো এটা নে। বলে হাতে থাকা বক্স টা এগিয়ে দে সোহার দিকে।

সোহা ও মুখে মলিন হাসি টেনে বক্স নিতে হাত বাড়ায়। আর এদিকে সবার যেনো সামনে হতে থাকা দৃশ্য গুলো মাথার ওপর দিয়ে যেতে থাকে।

-” একি এটা কি করে হলো। এতটা বিশ্রী ভাবে তোর হাত পুড়ে গেলো কি করে সোনাই। সোহার পোড়া হাত ধরে বলে ওঠে সম্রাট চৌধুরী চিন্তা নিয়ে।

সম্রাট চৌধুরীর কথায় আমন ও সচকিতে তাকায় সোহার হাতের দিকে। সোহার হাতের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে যায়। চোখ গুলো রাগে ফুলে ওঠে। সোহা কোনো কথা না বলে সম্রাট চৌধুরীর হাত থেকে নিজের হাত টেনে নেয়।

-“এটা কিছু না সিম সিম। আমি এখন আসছি হ্যাঁ। আমার ক্লাস আছে। কোনো রকমে বলেই সোহা ওখানে ছুটে বেরিয়ে যায়।

-” সোনাই মা। শুনে যা. পিছন থেকে ডাকতে থাকে।

আর ওখানে থাকা বাকি সবাই এর মাথা যেনো বাজ পড়ে গেছে এতক্ষণ কি হল তাদের সব কিছু মাথার ওপর দিয়ে গেছে।

————–

সোহা ওখান থেকে ছুটে নিজেকে লাইব্রেরি এক কোণে আড়াল করে নেয় পাশের এক বেঞ্চ এর ওপরে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে এতক্ষণে কান্না গুলো দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসে। আজ তার জন্মদিন অথচ ও এটা ভুলে যেতে চায়। তার এই জন্মদিন টা কে সোহা কোনো দিন মনে রাখতে চায় না। কখনই সেই অভিসপ্ত দিন টা কে মনে রাখতে চায় না। সোহা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে ভেসে ওঠে সকালের দৃশ্য চোখের সামনে।

“” “” ”

-“উফ মাগো। সোহা গগন বিধারি চিৎকার করে বসে পড়ে ফ্লোরে নিজের হাত আর পা ধরে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মুখে স্পষ্ট যন্ত্রণার ছাপ ফুটে উঠেছে।

-“তোর সাহস হলো কি করে এগুলো বানানোর এত জিনিস নষ্ট করে খাবার বানাতে কে বলেছে টাকা কি তোর মরা মা এসে দিয়ে যাবে নাকি। সোনিয়া সোহার ওপরে চিৎকার করে বলে ওঠে।

সোনিয়া কিচেনে এসে সামনে থাকা সবে নামানো পায়েস এর ডিশ টা উল্টে ফেলে দেয় সোহার ওপর আর তার সাথেই সোহার এই চিল চিৎকার ছিল। হাতে গরম পায়েস পড়তে সঙ্গে জায়গা টা পুড়ে গেছে। পায়ে ও একই অবস্থা। সোহার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে আর চোখ দিয়ে অবিরত পানি পড়ে যাচ্ছে।

-“টাকা আমার মরা মা কেনো আমার বাপি দেবে। আর দেখতে গেলে আমার মা ও দিচ্ছে বেঁচে না থেকেও। কারণ এই প্রোপার্টিতে আমার মায়ের ও শেয়ার আছে। যেটা তোমার এক কানাকড়ি ও নেই। কারণ তুমি শুধু মাত্র আমার বাপির রক্ষিতা তাই সোকল্ড মিসেস সোনিয়া মল্লিক । আমার বাপি কে তুমি তোমার এই নাটক আর এই ভোলা ভালা চেহারা দিয়ে বস করে রেখেছ তাই আমার বাপি তোমাকে চিনতে পারছে না। সব সময়ে ভালো মানুষের মুখোশ আড়ালে তোমার শয়তান রূপ টা সে দেখতে পায় না তাই জানে তুমি কতটা কুৎসিত আর জঘন্য মহিলা। সোহা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-“তোর এত বড় সাহস তুই আমার উপরে কথা বলিস। তোর মা তো মরে গেছে সাথে তোকে কেনো নিয়ে যায়নি। সোনিয়া সোহার দিকে তেড়ে এসে বলে ওঠে।

-” আমার মা জীবনে একটাই ভুল করেছিলো তোমার মত ঘাটিয়া একজন রাস্তার মেয়ে কে নিজের বোন এর জায়গা বসানো যে তার পিঠ পিছে এখন ছুরি মারছে। তুমি চিন্তা করো না।এই সব কিছু একদিন তোমার হাত থেকে চলে যাবে। তখন আমিও দেখব মিস্টার মল্লিক কিভাবে তোমাকে বাঁচাতে পারে। সোহা সোনিয়ার হাত মুছড়ে ধরে বলে ওঠে।

-“তোর এত বড় সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুলেছিস। আজকে তো তোর কি অবস্থা করবে তোর বাপি আমি নিজেও জানি না। বাঁকা হেসে বলে ওঠে সোনিয়া।

-” কি আর করবে আবার ও আমাকে মারবে জানোয়ার এর মত।এটাতে আমি অভস্ত্য। আজকের দিনে আমি তোমার মত খারাপ মহিলার সাথে কোনো কথাই বলতে চাইছি না। তুমি যে এখন আমার থেকে আমার বাপি কে কেড়ে নিয়ে এই বিশাল সাম্রাজ্য এর মালিকানা নিয়ে বসে আছো না। একদিন আমি সোহা জৈন মল্লিক তোমার থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়ে তোমাকে যদি ভিক্ষা করাতে না পেরেছি তো আমার নাম ও সোহা নয়। আর তুমি যে এই খাবার টা নষ্ট করেছো এর হিসাব তো তোমাকে করতে হবে। তোমার জীবন এই এক দানা খাবারের জন্য আমার কাছে তোমাকে হাত পাততে হবে এটা আমার প্রমিস আমার মায়ের নামের । বলে সোহা ডিশে বাকি থাকা পায়েস সোনিয়ার পায়ের ওপর ফেলে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যায়।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন ।প্লিজ সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊