দিওয়ানা পর্ব-০৪

0
2963

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৪

মেঝেতে পড়ে আছে সোহা ঠোঁটের কোল থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। মাথা ফেটে রক্ত কপাল চুইয়ে পড়ছে। উঠে বসার মত শক্তি পাচ্ছে না সোহা। শরীরে এত গুলো ঘা থাকার পরেও চোখ দিয়ে এক ফোটা ও পানি পড়ছে না। মুখে ফুটে আছে তাচ্ছিল্য আর ঘৃণা ভরা হাসি। এতদিন সোহার মনে যেটুকু সহানুভূতি ছিল সেটুকু ও আজ শেষ হয়ে গেছে। ঘৃণা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাজিদ মল্লিক এর দিকে। না সে তার বাপি না। এতদিন যে টুকু ও মনে জায়গা ছিল সেটাও নেই। এখন শুধু এখন একটা রাক্ষস জানোয়ার ছাড়া আর কিছু ভাবে না।

টেবিলের ওপরে থেকে গরম পানির পাত্র টা সোহার গায়ের ওপর ছুড়ে মারে। সোহার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে রুমের দিকে চলে যায়। সোনিয়া শয়তানী হাসি দিয়ে সোহার দিকে এগিয়ে আসে। মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে সোহার ঠোঁটের কোন রক্ত আঙুল দিয়ে তুলে নিয়ে বাঁকা ভাবে দেখতে থাকে।

-“তুই কি জানিস তোর এই মল্লিক পরিবারে কোনো দাম নেই। আমি যদি চাই তাহলে তোর বাপি তোকে এখানেই জানে মেরে ফেলবে। তুই মনে করিস তুই এই পরিবারে হুকুম চালাতে পারিস। মনে হয় এতদিন ও বুঝতে পারলিনা যে তোর এখানে কানা কড়ি ও দাম নেই তোকে এখানে ছেঁড়া জুতোর মত ফেলে রাখা হয়েছে যখন চাইব তখন বাইরে ছুড়ে ফেলে দেবো। তোর মা তো তোকে কিছু শেখাতে পারল না তার আগেই ওপরে চলে গেলো। হয়তো তুই এখনও জানিস না যে তোর যে মার গুলো এতদিনে পড়েছে সেটা কম হয়েছে এখনও অনেক বাকি। এখন আমাকেই তোকে শেখাতে হবে কি করতে হবে আর না হবে। তোর বাপি আমাকে বিয়ে করেছে আমি মিসেস মল্লিক সম্পর্কে তোর মা তাই আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। এটা তো কিছুই না এখনও অনেক বাকি আছে। বলেই একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে উঠে চলে যায় সোনিয়া।

সোহা কোনো কথা বলে না। কারণ তার মনে এত দিন যে নরম দিক ছিল যেটা এখন এই মুহূর্ত থেকেই শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু আছে ঘৃণা ভরা। চোখের সব পানি শুকিয়ে গেছে। মাথা আর ঠোঁট থেকে রক্ত পড়ছে কিন্তু মুখে কোনো কষ্ট যন্ত্রণার চিহ্ন মাত্র নেই। কাজের লোক সোহার ফুল কাকু সোহা কে মেঝে থেকে তুলতে গেলে সোহা দৃষ্টি সামনে রেখে অতি কষ্টে উঠে বসে। আসতে নিজের শরীর টাকে ঘসটে ঘসটে উপরের দিকে চলে যায়। চোখে পানি নিয়ে তাকিয়ে থাকে সোহার চলে যাওয়ার দিকে কাজের লোক।

সোহা নিজের রুমে গিয়ে বেড এর গায়ে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে। শরীরে বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে। শাড়ির আঁচল ছিড়ে গেছে। কিন্তু সোহা কে দেখে মনে হচ্ছে না যে সোহার কোনো কষ্ট হচ্ছে। এখন সোহা কোনো পুতুল ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না।

কিছুক্ষণ আগে….

সোহা ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে বাড়ি ঢুকতেই দেখতে পায় সোনিয়া সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে তরমুজ খাচ্ছে আর দানা গুলো চারিদিকে ছড়িয়ে ফেলছে। কাজের লোক আর সোহার ফুল কাকু কে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বলছে। কারণ একটু আগেই কাজের লোক পাশে থেকে দাঁড়িয়ে বলেছিল।

-“নোংরা মহিলা যখন থেকে এই পরিবারে এসেছে পুরো পরিবার কে খেয়ে ফেললো ডাইনির মত। এই শয়তান মহিলা কে তো বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া উচিত।

এই কথা গুলো সোনিয়া শুনতেই এখন বের করে দিতে চাইছে সোনিয়া কাজের লোক কে। সোহা এই সব দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যায় সোহা।

-“সোনিয়া তুমি আমার লোক কে এই ভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারো না। আমি তোমাকে আগেও বলেছি এটা। সোহা রেগে বলে ওঠে।

-” তোমার সাহস কি করে হলো তোমার মায়ের সাথে এই ভাবে কথা বলার ।সাজিদ মল্লিক তখনই লিভিং রুমে আসে।

-“তোমার মা আমাকে এতদিন তোমাকে আমার কাছে আড়াল করে এসেছে। কিন্তু আমি আজ নিজে দেখলাম তুমি কি ব্যবহার করো। সাজিদ মল্লিক আবার ও বলে ওঠে।

-“হাবি ও বাচ্চা বুঝতে পারে না তাই বলে ফেলেছে। সোনিয়া মিষ্টি মিষ্টি ভাবে বলে ওঠে নাটক করে।

-“তোমাকে আর বেশি নাটক করতে হবে না। এটা বাপি বুঝতে না পারলেও আমি জানি তাই এই ভালো মানুষ এর মুখোশ পরে থাকতে হবে না। আর আমার বাপির মাঝে কোনো কথা বলবে না সোহা রাগে চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” ঠাসসসসস ।

সাজিদ মল্লিক কোনো কথা না বলে সোহার দিকে এগিয়ে এসে গায়ের সব শক্তি দিয়ে সোহা কে থাপ্পড় মারে সাথে সাথে ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়। আর গালে পাঁচ আঙুল এর দাগ বসে যায়।

-” তোমার মায়ের থেকে ক্ষমা চাও। এই ভাবে কথা বলার সাহস কোথায় থেকে পাও। সোনিয়া তোমার মা হয়।

-” আর আমি আপনার মেয়ে বাপি। সোহা চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“আমি যখন তোমাকে জন্ম দিতে পেরেছি তখন আমি তোমাকে মেরে ফেলতে ও পারি। আমি চাইলে আবারো বাচ্চা জন্ম দিতে পারতাম কিন্তু সোনিয়া। বাচ্চা খুব খারাপ হয়। আমি ভুল করেছি তোমার মত একটা নোংরা মেয়ে কে জন্ম দিয়ে। আমি তোমাকে নাম দিয়েছি কিন্তু তুমি কি করলে। সাজিদ মল্লিক চিৎকার করে বলে সোহা কে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয়।

-“আমি নোংরা কারণ আপনি নিজেই একজন নর্দমার কীট। সোহা মেঝেতে পড়ে ঘৃণা ভরা চোখে বলে ওঠে।

সাজিদ মল্লিক এর বলা প্রতিটা কথা গিয়ে সোহার বুকে এক একটা তীরের মত গেঁথে গেছে। এই দুনিয়ায় কোনো বাপ কি কখনো তার মেয়ে কে এইসব কথা বলতে পারে এই ভাবে তার সাথে আচরণ করতে পারে। আজকের সব কথা গুলো শুনেই সোহার মনে থাকা তার বাপির প্রতি বেঁচে থাকা কিঞ্চিৎ পরিমাণ ভালোবাসা টা ঘৃণা তে পরিনত হয়েছে। তাই চোখের পানি শুকিয়ে গেছে কিন্তু বুকের মধ্যে শুরু হয়েছে রক্তক্ষরন।

সাজিদ মল্লিক সোহার কথা শুনেই ফুটবলে সট এর মত সোহা কে একটা লাথি মারে। পাশের দেয়াল থেকে টানানো চাবুক নামিয়ে এনে সোহা কে পেটাতে থাকে। শেষে টেবিল থেকে গরম পানির পাত্র নিয়ে সোহার গায়ে ফেলে। আর তার সাথে সোনিয়ার নোংরা কথা সোহা কে ভেঙে গুড়িয়ে ইমোশনলেস পাথর বানিয়ে ফেলেছে।

————-

-” ড্যাড তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল। আমন স্টাডি রুমে তার ড্যাড এর কাছে এসে বলে ওঠে।

সম্রাট চৌধুরী জানেন আমন কি কথা বলতে এসেছে। তাই তিনি ফাইল থেকে মুখ উঠিয়ে আমন কে বসতে ইশারা করে।

-” আমি জানি তুমি কি বলতে এসেছ। তুমি সোনাই এর ব্যাপার জানতে চাও তাইতো? সম্রাট চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন ভ্রু কুঁচকে।

-” হ্যাঁ ড্যাড । সোহা যদি আমার জেলেবি হয় তাহলে তো ও মল্লিক পরিবারের মেয়ে তাহলে ওকে দেখে কেন মনে হয়না। আর তাছাড়া ওর নাম তো সোহা জৈন হিসাবে রেজিস্টার করা আছে। আর ওর এই অবস্থা কি করে হল। আর ওর জন্মদিন আর মায়ের মৃত্যু দিন মানে আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি সব কিছু শুনতে চাই ড্যাড। আমাকে সব বলো ।আমন অস্থির ভাবে বলে ওঠে।

-“সোহাই তোমার সেই ছোটবেলার জেলেবি। ও মল্লিক পরিবার এর মেয়ে সাজিদ মল্লিক আর আরিনা মল্লিক এর মেয়ে। আমরা যখন হায়দরাবাদ থাকতাম আমরা একটাই পরিবার ছিলাম সব কিছু আমাদের একসাথে ছিল। সাজিদ আর আমি দুই বন্ধু হলেও কখন ও আমরা নিজেদের কোনো দিনও দুই ভাই ছাড়া আর কিছু মনে করিনি। আর আমাদের মত তোমার আর সোনাই এর বন্ধুত্ব ছিল কেউ কাউকে ছাড়া চলতে না। সেদিন টা ছিল সোনাই এর ছয় বছর এর জন্মদিন এর দিন সোনাই এর মায়ের মৃত্যু হয় সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে। আকস্মিক এই ঘটনায় সোনাই পুরো মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলো তখন ওর কতই বা বয়েস আর চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখে পাথর হয়ে গেছিল আর সেদিন থেকে ওর জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। আমরা তখন তোমাকে নিয়ে লন্ডন ছিলাম তোমার অ্যাক্সিডেন্ট এর জন্য চিকিৎসা করাতে। আমরা থাকতে পারিনি সোনাই মায়ের জন্মদিনে। আর এতেই সব থেকে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা যখন ফিরে এসেছিলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছিল। তোমার আন্টি মরে যাওয়ার পর সোনিয়া সহানুভূতিশীল সোনাই আর তোমার আংকেল এর খেয়াল রাখার দায়িত্ব নিয়ে তোমার আংকেল কে নিজের জালে ফাঁসিয়ে ভালোবাসার মোহতে ফেলে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। তোমার আংকেল এর চোখে সোনাই কে খারাপ আর চোখের বিষ করে তোলে তোমার আংকেল কে বোঝায় সোনাই এর জন্য তোমার আন্টি মারা গেছে। তখন থেকেই শুরু হয় অত্যাচার। একেই মেয়েটা মায়ের মৃত্যু শোক মেনে নিতে পারিনি আর তার ওপরে ছিল বাবার মার আর কটু কথা আর সোনিয়ার অত্যাচার।মেয়েটা সেখান থেকেই চুপচাপ হয়ে গেছে নিজেকে সব কিছু থেকে সরিয়ে নিয়েছে হাসি খুশি প্রানোচ্ছল মেয়েটা হারিয়ে যায়। সোনিয়া কে তোমার আন্টি বাড়িতে নিয়ে এসেছিল রাস্তা থেকে মায়ায় পড়ে গিয়ে। সোনিয়ার কেউ ছিল না। তোমার আন্টি তাকে নিজের বোন করেছিলো কিন্তু তোমার আন্টি জানতো না সে দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছে যে তারই সংসার কেড়ে নেবে নিজের করে। তোমার আন্টি মারা যেতেই কিছুদিন পর তোমার আংকেলরা হায়দরাবাদ থেকে কলকাতা চলে আসে। আর তারপর পর সোনিয়ার ভালোবাসার মায়ায় পড়ে বিয়ে করে নেয় সোনিয়া কে। আর তারপর থেকে চলতে থাকে সোনাই এর ওপর অত্যাচার। আমরা যখন দেশে ফিরে আসি তখন তোমার আংকেলরা হায়দরাবাদ থেকে চলে এসেছিলো। ওই বাড়ি ছিল তোমার আন্টির আর তার পরবর্তীতে সোনাই এর তাই ওটা বিক্রি করতে পারিনি। আমরা ফিরে এসে ওই বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেই জানতে পারি আমি। সাজিদ মল্লিক বলে ওঠে ভাঙা গলায়।

-“তারমানে আমরা এই জন্য তখন হায়দরাবাদ থেকেই কলকাতা এসেছিলাম শুধুমাত্র আমার জেলেবির জন্য। ভেজা ভেজা গলায় বলে ওঠে আমন।

-” একদমই তাই আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওরা কলকাতা চলে এসেছে। তাই আমরাও এখানে ফিরে আসি আমার বাবার কাছে । আমি হায়দরাবাদ থেকে পড়াশোনা করে ওখানেই সেটেল করেছিলাম তাই তোমার দাদু আমাদের ওপর নারাজ ছিল আর এই সূত্রে আমরা আবারো ফিরে আসি কলকাতা। আর তোমার আংকেল জানতো না যে আমার পৈতৃক বাড়ি কলকাতাতে । তোমার আন্টি আমাকে নিজের ভাই মনে করত আর আমি তাকে আমার বোনের মত ভালোবাসতাম। তাই ওর শেষ চিহ্ন কে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা এখানে। সাজিদ মল্লিক ব্যাথা ভরা গলায় বলে ওঠে।

-“বাঁচিয়ে রাখতে মানে কি বলতে চাইছ? আমন অবাক হয়ে যায়।

-” তোমার আন্টির শেষ কথা ছিল আমি যেনো সোনাই কে দেখে রাখি। কারণ তোমার আন্টির মৃত্যু স্বাভাবিক কোনো মৃত্যু ছিল না। আরিনা হয়তো কিছু বুঝতে পেরেছিল তাই মৃত্যুর আগে এটা রেখে যায়। আমি যখন ওই বাড়িতে খুঁজতে গেছিলাম তখন এটা সিঁড়ির পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাসের মাঝে পেয়েছিলাম। সাজিদ মল্লিক ছোট্ট একটা চিরকুট আমন এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।

আমন চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলতেই আমন এর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কারণ ওতে রক্ত দিয়ে আকা বাঁকা ভাবে আঙুল এর সাহায্যে লেখা আছে “ভাইয়া আমার লাডো কে দেখো ওর সামনে বিপদ” বিপদ এর ” দ” টা পুরো লেখা নেই ওটা টানা হয়ে গেছে মনে হয় আর সময় পাইনি তখন। এটা দেখতেই আমন এর চোখে মুখের পরিবর্তন হয়ে যায়। এটা দেখেই সম্রাট চৌধুরী আবারো বলে ওঠে।

-“আমি খোঁজ নিয়ে সোনাই কে খুঁজে বের করি ওকে সব সময়ে চোখে চোখে রাখি। আমি শুধুমাত্র ওর জন্মদিন ও ওর মায়ের মৃত্যু দিন এই দিনেই দেখা করতে পারি ওর সাথে। আর তাছাড়া ওকে দূর থেকেই দেখে রাখি। ওকে মেরে ফেলার ও চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সফল হয়নি তাই ওকে প্রতিদিন অত্যাচার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। কিন্তু আমি চেয়ে ও কিছু করতে পারিনি শুধু মাত্র সোনাই এর জন্য। কিন্তু আর নয় দিন পার হয়ে গেছে এবার আমি ওদের কে শেষ করব সোনাই এর আঠারো বছর না পর্যন্ত ও ওর বাবার কাছে থাকার নির্দেশ পেয়েছে কোট থেকে। আমি কেস করেছিলাম আর তার থেকেই এই রায় বের হয়। তাই আমি চেয়েও নিতে পারিনি নিজের কাছে সোনাই কে। আর সেই থেকে আমাদের বন্ধুত্ব শত্রু তে পরিনত হয়। প্রোপার্টির শেয়ার সেভেন্টি পার্সেন্ট তোমার আন্টির নামে ছিল আর থার্টি পার্সেন্ট তোমার আংকেল এর নামে। তোমার আন্টির মৃত্যুর পরে তার শেয়ার সোনাই এর নামে হয়ে যাবে এই ভাবে উইল করা হয়েছিলো। তাই তোমার আন্টির মৃত্যুর পরেই সোনাই এর জীবনের ঝুকি ছিল ওকে মারার চেষ্টা হয়েছিলো। কিন্তু এরপরেই জানতে পারে যে এই প্রোপার্টি সোনাই আঠারো বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত কোনও ট্রান্সফার হবে না। তার আগে যদি সোনাই এর মৃত্যু হয় তাহলে পুরোটা অনাথ আশ্রমে চলে যাবে। তাই এতদিন ধরে মেয়েটা প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহূর্ত অত্যাচার সহ্য করছে। এবার দিন শেষ আর খেলা ও। দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে সম্রাট চৌধুরী।

-“মানে এই পুরোটা ছিল প্রি-প্ল্যান। সোহার বাপি ও এতে যুক্ত? আমন বিস্ময় আর রাগ নিয়ে বলে ওঠে।

-” সাজিদ এর ব্যাপারটা আমি জানি না তবে এটা সোনিয়ার প্ল্যান। আর এর সাথে ও কোন খেলা আছে। তবে এখনও এর ইনভেস্টিকেট চলছে। শুধু এটা জানা গেছে এই সব কিছুর পিছনে আছে সোনিয়া। কিন্তু এর সাথে আরো কিছু মিস্ট্রি আছে যেটা জানা বাকি আছে। কিন্তু তার আগে সোনাই কে ওই নরক থেকে মুক্ত করতে হবে। সম্রাট চৌধুরী বলে ওঠে।

-“কিন্তু ড্যাড আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছিনা জেলেবি সুহানী সোহা মল্লিক থেকে জৈন কি করে হলো? আর তার সাথে আমাকে কি তাহলে ও চেনে না? আমন প্রশ্ন করে।

-” তোমার আন্টির নাম ছিল আরিনা জৈন। তোমার আন্টি আর তোমার আংকেল এর লাভ ম্যারেজ ছিল। তোমার আন্টি জৈন এর সাথে মল্লিক সারনেম ইউজ করত। আর তাই বড় হয়ে সোনাই তার বাপির ব্যবহার থেকে তার নামের থেকে শুধু সোহা জৈন বলে পরিচয় দেয়।সোহা নামটা তোমার আন্টির দেয়া। ও কখনই নিজেকে মল্লিক নামে পরিচিত করে না। আর ছোটবেলা থেকে ও আমাকে সিম সিম বলে ডাকত এটা নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে। ও শুধু জানে আমাদের টাইটেল চৌধুরী আমার নাম ও জানে না আর না তোমার। তোমার নিশ্চয় মনে আছে ও তোমাকে কি বলত? সাজিদ মল্লিক বলে ওঠে।

-“ইয়েস ড্যাড । আর নয় অনেক হয়েছে। এবার আমি আমার জেলেবি কে আমি ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। ওর সাথে হওয়া প্রত্যেকটা অন্যায়ের হিসাব ও সুদে আসলে বুঝে নেবো। আমন দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে বেরিয়ে যায়।

————

রাতের অন্ধকারে পুরো রুম অন্ধকারে ঢেকে আছে। রুমের বারান্দার থেকে বাইরের আলো এসে পড়ছে রুমে সেই আলোতে আবছাওয়া পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বারান্দা থেকে ভিতরে ঢুকে আসে আমন। রুমে ঢুকতেই চোখ যায় বিছানায় হেলান দিয়ে মেঝেতে হাঁটুর ওপর মাথা দিয়ে বসে আছে সোহা। আসতে আসতে এগিয়ে যায় আমন সোহার দিকে। হাঁটু মুড়ে নিচে বসে সোহার দিকে ঝুঁকে দেখে সোহা ঘুমিয়ে গেছে। আমন মাটিতে বসে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

-“আই অ্যাম স্যরি জেলেবি। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভুলে গেছ তুমি আমাকে ছোটো বেলায় ছেড়ে চলে এসেছিলে তাই আমিও তোমার ওপর খুব রেগে ছিলাম মনে ছিল তোমার জন্য একরাশ অভিমান। লন্ডন থেকে ফিরে তোমাকে না পেয়ে মনে করেছিলাম তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো। কিন্তু আমি জানতাম না তুমি এত কষ্টের মাঝে ছিলে। তাই আমি ও ড্যাড এর সাথে ফিরে এলাম দাদুর বাড়ি। কিন্তু তোমাকে ভুলতে পারিনি। ছোটো থেকেই তোমার পরে আর কোনো বন্ধু হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যতো বড় হতে থাকলাম ততই সবাই আমার চেহারা আর আমার টাকার প্রেমে পড়তে লাগলো আর আমিও খেলতে লাগলাম সবার সাথে। আমার রূপে সবাই কে পড়াতে লাগলাম। কিন্তু কাউকে মনে জায়গা দেই নি। কিন্তু সেদিন এর পর থেকে তুমি আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছ। ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন তোমাকে দেখেই আমার পা দাঁড়িয়ে গেছিলো। তুমি যখন আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে গিয়ে আমাকে আকড়ে ধরে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বেঁচে ছিলে। তোমার চোখে থেকে চশমা খুলে নিচে পড়ে যেতেই যখন মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে তখনই তোমার চোখের মাঝে হারিয়ে গেছিলাম। তোমার ভ্রু এর নিচে তিলে আটকে গেছিলো আমার চোখ। তোমার ঠোঁটের কোণে তিলে আমি আমার জেলেবি কে দেখেছিলাম। অশান্ত মনটা তোমাকে দেখে নিমেষে শান্ত হয়ে গেছিল সাথে সাথে আমার হার্ট বিট টাও দ্রুত গতিতে রান করছিলো। তোমার সাথে আমি আমার সেই জেলেবির অনেক মিল পেয়েছিলাম আর তার সাথে সাথে তোমার মাঝে ডুবে যাচ্ছিলাম ঠিক চোরাবালির মত। কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারিনি তুমিই আমার সেই জেলেবি। কারণ তোমার ওপর ছিল আমার রাগ আর অভিমান তাই হয়তো আমি তোমাকে চিনতে পারিনি। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে আমন।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে…..

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন রি-চেক করা হয়ন। প্লিজ সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊