দিওয়ানা পর্ব-০৩

0
3109

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩

আমন আর ওখানে থাকা বাকিরা সবাই অবাক হয়ে এতক্ষণ ওখানে হওয়া দৃশ্য দেখ ছিল সাথে ছিল মণিকা ও তার চোখ তো মনে হচ্ছে কোটোর থেকে বেরিয়ে আসবে এমন মনে হচ্ছে। সম্রাট চৌধুরী তার সামনে দাঁড়ানো সবাই এর অবাক হয়ে থাকা মুখ দেখে বুঝতে পারে তাদের মনের কথা।

-“ড্যাড জেলেবি সোহা? আমন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে তার ড্যাড কে।

-” হ্যাঁ । সোহা সেই জেলেবি। সম্রাট চৌধুরী আমন এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

বাকিরা শুধু চোখ বড় বড় করে সম্রাট চৌধুরী আর আমন এর কথা শুনে যাচ্ছে। তারা বুঝতেই পারছে না যে কি কথা হচ্ছে আর আমন এর ড্যাড এর মত লোক কি করে ওই সামান্য বেহেনজি টাইপ মেয়ে কে চেনে আর তার সাথে এতক্ষণ এত কথা বলছিল যেনো মনে হচ্ছে নিজের মেয়ে।

-“সোহা মল্লিক পরিবারের মেয়ে। সুহানী সোহা জৈন মল্লিক । ওর পরিচয়। ওর বাবা সাজিদ মল্লিক ও দেশের জানি মানি একজন শিল্পপতি। আর আমার বন্ধু। সোহা কখন ও নিজের পরিচয় নিয়ে গর্ব করে না। আর না লোক দেখানো কোনো জিনিস করতে ও পছন্দ করে তাই ও সব সময়ে সাধারণ ভাবে থাকতে পছন্দ করে। নিজের পরিচয় আর স্ট্যাটাস নিয়ে তোমাদের মত অহংকার করে না। আর স্ট্যাটাস দিকে থেকে দেখতে সোহা তোমাদের কারোর থেকে কম কিছু না বরং তোমাদের থেকেও উঁচু বংশের থেকে বিলং করে তাই নিজেদের ব্যবহার ওর সাথে ঠিক করো। নাহলে এর পরের কোনো ওয়ার্নিং হবে না। আমি কখনই আমার সোনাই এর অপমান মেনে নেবো না। মাইন্ড ইট। সম্রাট চৌধুরী শেষের কথা গুলো মণিকার দিকে তাকিয়ে খুব রূঢ় ভাবে বলে।

ওখানে থাকা সবাই এর মাথা নিচু হয়ে যায়। লজ্জায় কেউ আর চোখ তুলে তাকাতে পারে না। সোহার পরিচয় পেয়ে তাদের কোনো কথা বলার মত থাকে না। আমন ও এতক্ষণ চুপচাপ সব কিছু শুনে যায়। আর তার ড্যাড এর কথা শুনে আমন এর রাগ বেড়ে যায়।

-“ড্যাড জেলেবির জন্মদিন…

-“আজ সোহার জন্মদিন। কিন্তু ও কখনো নিজের জন্মদিন এর কথা মনে করতে চায় না। আর কখনই কারোর থেকে এই দিনে উইশ ও নিতে চায় না। কারণ আজ ওর জন্মদিন এর সাথে সাথে ওর মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী। সম্রাট চৌধুরী করুন ভাবে বলে ওঠে।

ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবার মুখ চুন হয়ে যায়। তারা কখনো ভাবতে পারিনি যে মেয়েটা কে তারা এত বিরক্ত করেছে সেই মেয়ে এত বড় পরিবার থেকে। তার ওপরে আজ মেয়েটার জন্মদিন এর সাথে মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী ছিল তাই হয়তো আজ ও পথ শিশুদের খাওয়াচ্ছিল। এগুলো ভাবতে সবার নিজের নিজের কাছে মানসিকতা ছোটো লাগছে। তাদের আজকের ব্যবহারের জন্য নিজেদের ওপরেই লজ্জা লাগছে। আর আমন এর বুকের মধ্যে যেনো কেউ হাজারো ছুরির আঘাত মনে হচ্ছে। সম্রাট চৌধুরী ওখান থেকে চলে যেতেই আমন ও ছুটে বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।

————

লাইব্রেরির এক কোণে মাথা নিচু করে বসে আছে সোহা। তার চোখ থেকে এখনও পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখ মুখ পুরো ফুলে লাল হয়ে গেছে। সোহার আজকের দিনের কথা ভাবতেই নিজের বুকের যন্ত্রণা টা যেনো আরো বেশি বেড়ে যাচ্ছে। শ্বাস নিতে ও কষ্ট হচ্ছে। ওর জন্মদিন সেটা ও সব দিনের জন্য ভুলে যেতে চায়। কখনই মনে রাখতে চায় না ওর জন্মদিন টা। আজ সোহার জীবনে কোনো খুশির দিন নয় এটা একটা অভিশপ্ত দিন তার মায়ের মৃত্যু দিন। এটা ভেবেই সোহার যন্ত্রণা যেনো হাজার গুন বেড়ে যাচ্ছে। এই দিনের পর থেকেই নেমে এসেছিল সোহার জীবনে কালো অন্ধকার যেটা এখনও তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। সোহা চেয়েও নিজের জীবন থেকে ঘোর অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে পারছে না। টেবিলে মাথা নিচু করে বসে এখনও ফুফিয়ে যাচ্ছে। হটাৎ সোহা নিজের হাতে কারোর স্পর্শ পেয়ে চমকে ওঠে। মাথা তুলে পাশে তাকাতে দেখতে পায় আমন বসে আছে। এটা দেখেই যেনো সোহার মাথা ঘুরে যাচ্ছে।

আমন সোহার হাত নিজের হাতে নিয়ে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে। আমন কোনা চোখে তাকিয়ে দেখে যে সোহা তার দিকে চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমন বুঝতে পারে সোহার এমন ভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ। এই একমাস তাকে কম বিরক্ত করে নি। তারা সবাই মিলে প্রতিটা মুহূর্ত এই মেয়েটার জন্য দুর্গম করে তুলেছিল। আর এখন হঠাৎ করে এসে তারই শত্রু তার হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে এটা দেখলে যে কারোর অবাক হয়ে যেতে হবে। এটা কোনো না বোঝার জিনিস নয়। আমন কোনো কথা না বলে কোনা চোখে সোহা কে দেখে ভালো ভাবে সোহার হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দেয়। শেষে হাত নিজের মুখের সামনে তুলে ধরে হাতের পুড়ে যাওয়া জায়গায় চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয়। আর এটা দেখেই সোহার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে অজ্ঞান হওয়ার জোগাড় হয়েছে। হাতে মেডিসিন লাগানোর ব্যাপার টা তবুও মেনে নেওয়া যায় কিন্তু চুমু খাওয়া এটা কি করে হতে পারে সোহা কি কোনো স্বপ্ন দেখছে মনে হচ্ছে।

-“আর কোথায় লেগেছে দেখাও। আমন সোহা কে দেখতে দেখতে বলে ওঠে।

কিন্তু এদিকে সোহার কোনো নড়চড় নেই সে এখনও স্টাচু হয়ে আছে। আমন সোহার কোনো রকম রেসপন্স না দেখে মাথা তুলে সোহা কে দেখে সে তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুতুলের মতো।আমন সোহার ওই ফোলা ফোলা লাল চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। যে চোখে আছে হাজার ও অভিমান আর কষ্ট আর অবাক হওয়ার ছাপ। সোহা কে এই ভাবে দেখতে আমন একটা অবাক এর চূড়ান্ত কাজ করে ফেলে। মুখ নিচু করে সোহার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বসে।

সোহা কিছুক্ষণ চুপচাপ হয়ে থাকার পর বুঝতে পারে তার সাথে কি করে ফেলেছে আমন। এবার রাগী চোখে তাকায় আমন এর দিকে সোহা ।কিন্তু আমন এর এতে কোনো হেলদোল নেই তার যেনো এই রাগের কোনো যায় আসেনা। সে নিজের মত সোহার শরীরে আর কোথাও পুড়ে গেছে কিনা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

-“আমার হাত ছাড়ো। এত জ্বালিয়ে মন ভোরেনি এখন অন্য উপায়ে যন্ত্রণা দিতে চলে এসেছ। সোহা রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।

-” তোমার আর কোথায় পুড়ে গেছে? দেখে কাজ করতে পারো না। তুমি কি এখনো বাচ্চা আছো নাকি যে সারাক্ষণ ছুটে বেড়াও। আমন খানিক টা রেগে বলে ওঠে সোহার কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে। আসলে তার সোহার হাতের এই পুড়ে যাওয়া জায়গা দেখেই যন্ত্রণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। আর তখনকার মণিকার থাপ্পড় মারা টাও আমন কে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে তেমনই তার রাগ ও দ্বিগুণ করে দিয়েছে। সেই সোহাগ কে জেলাস করানোর জন্য মণিকা কে মাথায় তুলে ছিল। কিন্তু এতে তো কিছু হয়নি বরং সোহা কে কষ্ট পেতে হয়েছে।

-“আমি কি করি সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নই। তুমি আমার হাত ছেড়ে দাও। কোন অধিকারে আমার হাত ধরেছ। এখন কি নতুন ভাবে আমাকে শায়েস্তা করার কথা ভাবছ। সোহা আমন থেকে ও দ্বিগুণ রেগে কথা গুলো বলে ওঠে আর নিজের হাত ছাড়াতে থাকে আমন এর হাতে থেকে।

আমন সোহার এমন ছোটাছুটি করতে দেখে একটা হ্যাচকা টান দিয়ে সোহা কে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে। এক হাত দিয়ে সোহার মুখ তুলে ধরে সোহার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। সোহা এমন কাণ্ডে হতভম্ব হয়ে যায়। চোখ গুলো যেনো বেরিয়ে আসবে মনে হচ্ছে। সোহা দু হাত দিয়ে আমন এর বুকে কিল ঘুষি মারতে থাকে কিন্তু এদিকে আমন এর কোনো সাড়া নেই আমন তার এতদিনের বহু প্রতীক্ষিত আনমোল জিনিস পেয়েছে সে কি এত সহজে ছাড়ে আমন সোহার ঠোঁটে ডুবে যেতে থাকে। আমন এর এমন পেটাই মার্কা শরীরের সাথে কি সোহা পেরে ওঠে শেষে সোহা কেঁদে দেয়। আমন এর মুখে সোহার পানি পড়তে আমন সোহা কে ছেড়ে দেয়। মাথা উঁচু করে সোহার চোখের পানি তার ঠোঁট দিয়ে শুষে নেয়।

-“আর একটা কথা বললে এর থেকে আরো বেশি কিছু হবে। এখন বল আর কোথায় পুড়ে গেছে। আমন সোহা কে বলে ওঠে।

-” আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। আমাকে এত জ্বালিয়ে বিরক্ত করে তোমাদের শান্তি হয়নি। এবার আমাকে এই ভাবে অপমানিত করতে চাইছ। ছিঃ। সোহা আমন এর বুকে ধাক্কা মেরে বলে ওঠে। তারপরেই নিজেকে আমন এর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে যায় কাঁদতে কাঁদতে।

এদিকে আমন পিছন থেকে ডেকে ও সোহা কে পায় না আমন ও সোহার পিছন পিছন বেরিয়ে আসে। সিড়ির কাছে আসতে মণিকা আমন এর সামনে এসে দাড়ায়। হাত বাড়িয়ে আমন এর গলা জড়িয়ে ধরতে নিলে আমন সরিয়ে দেয়। তার মনে পড়ে সকালের কথা গুলো। মণিকার মারা সোহা কে থাপ্পড় টা। এটা ভাবতেই আমন এর মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। আজ সে সোহা কে সবার সামনেই থাপ্পড় দিয়েছে। এত বড় সাহস হলো কি করে তার। এগুলো ভাবতেই মাথার রগ যেনো ছিড়ে যাচ্ছে আমন এর।

মণিকা আবার ও আমন কে জড়িয়ে ধরতে গেলে আমন পিছনে সরে যায়। আর সাথে সাথে মণিকা সিড়ির থেকে পা পিছলে পড়ে যায় নিচে। আমন একদম সিড়ির কানায় দাঁড়িয়ে থাকায় এটা হয়েছে। আমন মণিকা কা কে নিচে পড়তে দেখে দু হাত পকেটে রেখে দেখতে থাকে মণিকা কি ভাবে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ছে। মণিকা আমন এর দিকে হাত বাড়িয়ে ও ধরতে পারিনি নিচে পড়ে যায়। মাথা থেকে রক্ত পড়ছে শেষ সিঁড়ি থেকে পড়ে সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যায় মণিকা। এদিকে সবাই ছুটে এসে মণিকা কে তোলে।

-“এটা কি হল? তুই ওকে ধরে নিলি না কেনো? পিছন থেকে তাহির এসে আমন এর কাঁধে হাত রেখে বলে ওঠে।

-” এটা ছিল কর্মের ফল। যেমন কর্ম তেমনই তো ফল পাবে তাই না। ওর এত বড় সাহস ও সোহার গায়ে হত তোলে। এটা তো ওকে পেতেই হবে। আমন দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে বেরিয়ে যায়।

এদিকে তাহির অবাক হয়ে আমন চলে যাওয়ার দিকে দেখতে থাকে। আমন এর বলা কথা গুলো শুনে ও খুব অবাক হয়ে যায় তার সাথে আমন এর করা কাজ আরো হয়রান করে।

-” আমন লাভ সোহা? বিড়বিড় করে বলে ওঠে তাহির।
.
.
.
. 💚💚💚
.চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । প্লিজ সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন আপনাদের সাপোর্ট একমাত্র কাম্য আমার উৎসাহ বাড়ানোর জন্য 😊😊😊