দিওয়ানেগি পর্ব-৪৬+৪৭+৪৮

0
489

#দিওয়ানেগি #পর্ব_৪৬+৪৭+৪৮
#M_Sonali

আলমির এর সামনেই ধিরে ধিরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল দিপু। এতে সে একটুও নাড়াচাড়া করল না। চুপচাপ পায়ের উপর পা তুলে ওর অবস্থা দেখতে লাগলো। তার মাঝে কোন রকম ভাবান্তর দেখা গেল না। একটু পর দিপুর পালস্ চেক করে আলমিরঃ নিশ্চিত হলো সে মারা গেছে। গার্ডদের ইশারা করে বললো লাশটা কোথাও দাফন করে ফেলতে। গার্ডেরা সময় বিলম্ব না করে দ্রুত দিপুর লাশ দাফন কার্যের ব্যবস্থা করতে লাগলো। সবার চক্ষু আড়ালে আলমিরের মুখে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি। সে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য কয়েকজন গার্ডকে সাথে নিয়ে রওনা হল।

বাসায় পৌঁছে সোজা নিজের রুমে চলে গেল আলমির। গার্ডদের বলল বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে। নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ভাল করে লাগিয়ে নিল সে। জানালার পর্দাগুলো ঠিকঠাক করে দিল। আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখে নিল কারো নজর আছে কিনা তার ওপর। তারপর ঘরের লাইট অফ করে দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল সে। ল্যাপটপের সামনে বসে মনযোগ দিয়ে কিছু একটা করতে লাগল। কিছুক্ষনের মাঝেই ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে উঠল কিছু দৃশ্য। যেটা দেখে আলমিরের মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল।

ল্যাপটপে কিছু সিসিটিভির ফুটেজ ভেসে উঠেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আলমিরের সাথে থাকা সর্বক্ষণের দুজন গার্ড যারা একে অপরের সাথে পরামর্শ করে দিপুর পানিতে কিছু একটা মেশাচ্ছে। আর আশেপাশের চোখ বুলিয়ে খেয়াল রাখছে কেউ দেখছে কিনা। গার্ড দুজন দ্রুত নিজের কাজ সেড়ে অন্য একটি গার্ডকে ডেকে তার হাতে পানির গ্লাসটা তুলে দেয়। সেই গার্ডটা কিছুই জানতো না। সে যখন পানিটা নিয়ে এসে দিপুকে দেয় সে পানি খেয়ে দিপুর মৃত্যু হয়। আলমিরের সন্দেহ এবার ঠিক হলো। সে আগে থেকেই সন্দেহ করেছিল তার গার্ডদের মাঝে কেউ তার শত্রু। আজকে সেটার প্রমাণ হাতেনাতে পেল। তবে এত সহজে তাদের কাছে ধরা দিবে না আলমির। সে ও দেখতে চায় গার্ডরা সারাক্ষণ তার সাথে থেকেও কেন তার ক্ষতি করছে না। কেন সব সময় নিজেদের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে। কি চায় তারা।

দিপুকে সেখানে আটকে রাখার পর, আলমির খুব সাবধানতার সাথে পুরো বাড়িটাতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখে। আর ক্যামেরাগুলো এমনভাবেই লাগিয়ে রাখে যে কারো বোঝার উপায় নেই ক্যামেরাগুলো লাগানো আছে। কিছু কিছু ক্যামেরা তো লাইট এর মধ্যেও লুকিয়ে রেখেছিলো সে। তাই ঐ গার্ডগুলো কোন কিছুই বুঝতে পারেনি। আর অসাবধানতায় ধরা পরে গেলো আলমিরের কাছে।
,
,
,
আগের বাসাটা ছেড়ে দিয়ে আলমিরের দেওয়া বাসাতে উঠেছে মেহরিমা ও মেহের। মেহের তো ভীষণ খুশি এ বাসায় এসেছে থেকে। একের পর এক লাফালাফি করছে সে। একবার বাগানে যাচ্ছে তো আবার বাসার মধ্যে যাচ্ছে। একদম পাগলামি শুরু করেছে মেয়েটা। কিন্তু মেহরিমার মনটা ভীষণ খারাপ। সে চায়না আলমিরের ছায়া তলে থাকতে। আলমিরের দেওয়া কোন জিনিস নিতে। কিন্তু তার কোনো উপায়ও নেই। সে চাইলেও আর আগের বাড়িতে থাকতে পারবে না। ঐ মহিলাদের কথা যে তার বিষের মত লাগে। ওই সকল কথা শোনার চাইতে এ বাড়িতে থাকা অনেক শ্রেয়। কিন্তু কখনোই সে আর আলমিরকে মন থেকে মেনে নিবে না। সে যা করেছে তার ক্ষমা হয় না।

বাসার সবকিছু গোজগাজ করে নিজের মত সাজিয়ে নিল মেহরিমা। তারপর মেহেরকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজে বেলকনিতে চলে গেল। আকাশ পানে নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবতে লাগল সে। ধীরে ধীরে চোখের সামনে ভেসে উঠলো মা-বাবা বেঁচে থাকাকালীন সুন্দর সুন্দর স্মৃতিগুলো। বড় ভাই, দুই বোন ও মা বাবা মিলে সংসারটা কতই না সুখের ছিল। সব কিছু যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে এক তিব্র ঝড়ে। হঠাৎ করে কেন জানেনা বড় ভাইয়ের কথা বড় বেশি মনে হচ্ছে মেহরিমার আজ। খুব ইচ্ছে করছে একবার তার সাথে কথা বলতে। লোকের মুখে শুনেছে বড় ভাই নাকি বাবার মত হয়। তাহলে ওদের কি অপরাধ ছিল যে ওদের ভাই এতোটা শয়তান এবং স্বার্থপর হল।

কথাগুলো ভাবতেই যেনো দু চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল মেহরিমার। সে চোখটা মুছে নিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমে প্রবেশ করল। দেখল তার ফোনটা কখন থেকে বেজে চলেছে। দৌড়ে গিয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিল সে। দেখল সরণ ফোন করেছে। ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতেই ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো সে। হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে উত্তেজিত কণ্ঠে সরণ বলে উঠলো,

“মেহরিমা কোথায় তুমি? আমি তোমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাড়িতে তালা কেনো। আশেপাশের লোক কে তোমার কথা জিজ্ঞেস করলে বললো কোথায় গেছো কেউ জানে না।”

ওর কথার উত্তরে কেন জানেনা এই মুহূর্তে রাগ হলো না মেহরিমার। সে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা নিয়ে আবারও বেলকুনিতে চলে গেল। আকাশ পানে তাকিয়ে বলল,

“ওই বাসা ছেড়ে দিয়েছি আমি সরণ। ঐখানে থাকলে হয়তো দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। শুধুমাত্র বাবা-মার স্মৃতি আছে বলেই বাসাটা বিক্রি করিনি। কিন্তু ওইখানে আর কখনোই ফিরে যাবো না আমরা।”

“কিন্তু তোমরা এখন কোথায়? সেটা তো বলবে! তুমি জানো আমি এখানে তোমাদের না পেয়ে কতটা টেনশনে পড়ে গেছি। ভেবেছি কোথাও চলে গেছো আমাকে ছেড়ে। তুমি জানো না তোমার জন্য আমি কতটা পাগল!”

এবার বেশ বিরক্ত হলো মেহরিমা। মন চাইলো ফোনটা মুখের উপর কেটে দিতে। কিন্তু সে ফোনটা কাটলো না। এ কান থেকে ফোনটা ওই কানে নিয়ে ধরে বেশ কড়া গলায় বলে উঠল,

“দেখুন সরণ আমি আপনাকে এর আগেও অনেকবার বলেছি। আবারো বলছি। দয়া করে এই ধরনের কথা আমার সাথে বলবেন না। তাহলে আর কখনোই আপনার ফোন রিসিভ করব না আমি। যদি শুধুমাত্র আমার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকতে চান। তাহলে এই কথাগুলো থেকে বিরত থাকুন। এখন অনেক রাত হয়েছে বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন। আমিও ঘুমাবো। আল্লাহ হাফেজ।”

কথাগুলো বলেই ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো মেহরিমা। তারপর যখনই ফোনটা নিয়ে রুমে আসতে যাবে আবারও তার ফোনটা বেজে উঠল। বেশ বিরক্ত নিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাল সে। দেখল একটি অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করল সে। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে আলমির মিষ্টি কণ্ঠে বলে উঠল,

“এই জান কত রাত হয়েছে দেখেছো! এখনো ঘুমাওনি কেন তুমি? এত রাত জেগে কার কথা ভাবছো? আমাকে নিশ্চয়ই! যদি বলো তো চলে আসবো নাকি? একবার শুধু বলেই দেখো!”

ওর এমন কথা শুনে বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল মেহরিমা। দাঁত কিড়মিড় করে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে ফেললো। তারপর টেবিলের উপর রেখে সোজা গিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো সে।

রাত প্রায় ১২:৫৫ মিনিট,
বিভোরে ঘুমিয়ে আছে মেহরিমা। পাশে ঘুমিয়ে আছে মেহের। দুজনকে কতইনা নিষ্পাপ লাগছে দেখতে। আলমির চুপিচুপি পা টিপে টিপে ওর রুমে প্রবেশ করে। ওর কাছে ডুপ্লিকেট চাবি থাকায় কোনো সমস্যা হয় না। তারপর মেহরিমার ঠিক মুখোমুখি এসে বসে। ওর মুখের দিকে হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তখনই চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে তার। নিজের ভুলের অনুশোচনায় ভিষন কষ্ট হচ্ছে তার। আজ নিজের ভুলের কারণে মেহরিমা তার থেকে এত দূরে। নিজের ভালবাসার মানুষটাকে কাছে পেয়েও এত দূরে থাকতে দেখে বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে তার কষ্টে। বড্ড ইচ্ছে করছে একবার মেহরিমা কে জাগিয়ে তুলে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিতে। কপালে চুমু দিয়ে বলতে “তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি জান। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।”

প্রায় ২ ঘন্টা এভাবেই মেহরিমার সামনে বসে কাটিয়ে দেয় আলমির। নয়ন ভরে দেখে নেয় তাকে। তারপর উঠে চলে যায় নিজ বাড়িতে। হঠাৎ ঘুমের মাঝে মেহরিমার মনে হয় তার আশেপাশে কেউ আছে। যে তাকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে। সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে বসে চোখ মেলে তাকায় সে। কিন্তু তাকিয়ে দেখে রুমে সে আর মেহের ছাড়া অন্য কেউ নেই। দরজাটাও লাগানো। মনের ভুল ভেবে আবারো শুয়ে পড়ে সে।
,
,
তীব্র মাথা ব্যথা ও শরীরে গরম কিছু ঢেলে পড়ায় জ্ঞান ফিরে আসে গার্ড দুটোর। তারা মিটিমিটি চোখে তাকিয়ে শরীরের যন্ত্রণায় কুকিয়ে ওঠে। সামনে তাকিয়ে দেখে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আলমির। মুখে তার তিব্র রাগের ছাপ। দেখে বোঝা যাচ্ছে রাগে যেন জ্বলছে সে। ওকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে যেন পিলে চমকে ওঠে গার্ড দুজনের। তারা ভয়ে গুটিসুটি মেরে উঠে বসে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে একদম অন্ধকার একটি রুমের মাঝে বসে আছে তারা। এটা কোন জায়গা কিছুতেই বুঝতে পারছে না। রুমের চারপাশে চারটি বড় আকাড়ের মোমবাতি জ্বলছে। তার মিটিমিটি আলোতে পরিবেশটা যেনো আরো গা ছমছমে হয়ে উঠেছে।

লোক দুটো ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল। মনে করার চেষ্টা করলো তারা এখানে কিভাবে আসলো। কি হয়েছিল তাদের সাথে। ভালো করে ভেবে দেখল গতকাল রাতে তারা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে ছিল। তারপর আর কিছু মনে নাই। তার মানে নিশ্চয়ই খাবারের মধ্যে এমন কিছু ছিল যার দরুন তারা জ্ঞান হারিয়েছিল। কথাটা ভেবে যেন আরো বেশি ঘাবড়ে গেল তারা। বুঝতে পারল আলমিরের কাছে ধরা পড়ে গেছে। ওর দেওয়া শাস্তি গুলোর কথা ভেবে তাদের শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ভয়ে গুটিসুটি মেরে পিছন দিকে পেছাতে চাইলে আলমির হুংকার ছেড়ে বলে উঠলো,

“কোথায় পালাতে চাচ্ছিস বেঈমানের দল। আমার হাত থেকে কোনোভাবেই রেহাই নেই তোদের। তোদের মৃত্যু অনিবার্য হবে যদি তোরা সব কিছু আমাকে না বলিস। বল কাদের হয়ে কাজ করছিস তোরা? কতদিন হল আমার সাথে থেকে আমার সকল রকম খবরা-খবর পাচার করছিস। কে তারা, যারা আমার পিছনে লেগে আছে? ভালই ভালো সবকিছু বলে দে। নইলে আমার শাস্তির কথা তোদের অজানা নয়।”

এবার লোক দুটোর যেনো প্রাণ পাখি উড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। তারা ভয়ে গুটিয়ে গিয়ে আলমিরের পায়ের কাছে পড়ে গেল। ওর পা দুটো জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“প্লিজ স্যার আমাদের কিছু করবেন না। আমরা টাকার লোভে এসব করেছি। আমাদের মাফ করে দিন। আমরা আর কখনো এমন ভুল করবোনা। যা জানি সবকিছু বলে দিব আপনাকে। তবুও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আমাদের কিছু করবেন না প্লিজ।”

ওদের কাকুতি-মিনতি দেখে আলমিরের মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল। পকেট থেকে নিজের পিস্তলটা বের করে ওদের দু’জনের মুখের সামনে তাক করে বলল,

“যা জানিস সবকিছু একে একে বল। একটা কথা যদি মিথ্যা বলেছিস। তাহলে এর মাঝের একটা গুলিও মিস হবে না। সবগুলো তাদের কপালে চালান করে দিব।”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_৪৭
#M_Sonali

ভোর ৫:০০ টা,
ফোনের ক্রিংক্রিং শব্দে ঘুম ভাঙে মেহরিমার। মাঝ রাতে ঘুমের ভেতরে ফোন চালু করে ঘুমিয়ে ছিল সে। ভোররাতে এমন শব্দ হওয়ায় বেশ বিরক্ত হয় সে। বিরক্তি নিয়েই ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরে হ্যালো বলে। তখনই ওই পাশ থেকে কেউ করুন কণ্ঠে বলে ওঠে,

“কেমন আছিস মেহরিমা?”

কন্ঠটা শুনতেই যেন আচমকা ঘুম ভেঙে যায় মেহরিমার। সে দ্রুত উঠে বসে কিছুক্ষণ চুপ থেকে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়। চোখের মাঝে মুহূর্তেই জমে যায় দু ফোটা জল। মেহরিমা একবার পাশে তাকিয়ে দেখে মেহের বিভোরে ঘুমাচ্ছে। তাই সে ফোনটা হাতে নিয়ে উঠে বেলকুনিতে চলে যায়। ওকে চুপ থাকতে দেখে ও পাশ থেকে আবারো বলে ওঠে,

“এখনো ভাইয়ের উপর রাগ করে আছিস বোন? কথা বলবি না আমার সাথে?”

মেহরিমা নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। এই মুহূর্তে দুর্বল হলে চলবে না তার। ভাই হলেও সে যা করেছে সে ক্ষমার যোগ্য নয়। তাই নিজেকে কঠোর করে কঠোর কন্ঠে বলে উঠে,

“কেনো ফোন দিয়েছেন আপনি আবার? আপনার সাথে কোন সম্পর্ক নেই আমাদের দু বোনের। আর কখনো আমার নাম্বারে ফোন করবেন না।”

কথাটি বলে ফোন কেটে দিতে নিলে ওপাশ থেকে মৃদুল করুন হলায় বলে উঠলো,

“প্লিজ মেহরিমা ফোন কাটিস না। আমার কথাটা একবার শোন। আমার ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার একটা সুজোগ দে বোন।”

মেহরিমা ফোন কাটতে গিয়েও কাটতে পারল না। হাজার হলেও মৃদুল বড় ভাই তার। ছোটবেলা থেকে কত আদর ভালোবাসা মানুষ করেছে তাকে। সে ফোনটা কানের কাছে ধরে নিয়ে চুপ করে রইলো। ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ওপাশ থেকে মৃদুল বলে উঠলো,

“মেহরিমা তোর সাথে আমার অতি প্রয়োজনীয় কিছু কথা আছে। তুই আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবি প্লিজ। তবে এ ব্যাপারে যেন কেউ কিছু না জানে। মেহেরও না।”

কথাটি বলেই মেহরিমার থেকে উত্তর শোনার জন্য চুপ করে রইলো মৃদুল। মেহরিমা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলেও কিছু একটা ভাবল সে। তারপর মৃদু গলায় বলে উঠল,

“কখন, কোথায় আসতে হবে?”

ওর কথাটি শুনে যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল মৃদুল। সে দ্রুত একটি ঠিকানা বলে দিলো। সাথে আরো বলে দিল ওখানে যাওয়ার সময় কাউকে কিছু না জানাতে। মেহরিমা আচ্ছা বলে ফোনটা কেটে দিলো।
,
,
বিকেল ৩:১৫ মিনিট,
সিএনজি নিয়ে এসে নিরিবিলি একটি বাড়ির সামনে দাঁড়ালো মেহরিমা। সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বাড়ির আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিল সে। তখনই দেখল গেটের সামনে মৃদুল দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার মৃদু হাসি। এতক্ষণ ওর জন্যই অপেক্ষা করছে সে। মেহরিমা জোরপূর্বক মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি এগিয়ে গেল। ওর আসতে দেখে দৌড়ে এসে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদুল বললো,

“কেমন আছিস মেহরিমা। কতদিন পর দেখছি তোকে। কত শুকিয়ে গেছিস।”

মেহরিমা কোন উত্তর দিল না। চুপ করে রইলো। ওর কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল মৃদুল। কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখলো মোহিনি দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখেও মিষ্টি হাসি। ওকে দেখেই সে বলে উঠলো,

“কেমন আছো ননদিনী। কতদিন পর দেখছি তোমায়। আমাদের তো ভুলেই গেছো।”

মোহিনীর এমন কথায় যেন মেহরিমার শরীর জ্বলে উঠলো। কিন্তু সে সেটা বুঝতে দিল না ওদের। মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে বললো,

“আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন আল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?”

ওর কথার উত্তরে মোহিনী ওর কাছে এগিয়ে এসে ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। হেসে দিয়ে বললো,

“এতক্ষণ ভালো ছিলাম না। তুমি এসেছো, তোমাকে দেখে এখন অনেক ভালো আছি। তুমি জানো কত মিস করেছি আমরা তোমাকে! কিন্তু তুমি রাগ করে আছো বলে সেভাবে কথা বলা হয়নি। আর কোন রাগ-অভিমান চলবে না। এখন থেকে তুমি এখানেই থাকবে আমাদের কাছে।”

মেহরিমা কিছু বলল না। মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল তার। তারপর ওকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল মোহিনী। ভিতরে গিয়ে ওকে সোফার উপর বসতে দিয়ে বলল,

“অনেক গরম পড়েছে, তুমি বস আমি তোমার জন্য একটু শরবত করে আনছি।”

মেহরিমা কিছু বলল না। মাথা নেড়ে সায় দিল শুধু। মোহিনী চলে যেতেই মৃদুল এসে ওর পাশে বসলো। ওর একটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

“মেহরিমা শুনেছি তোর নাকি বিয়ে হয়েছিল! তা কোথায় বিয়ে হয়েছিল রে? আমাকে তো কিছু জানালিও না। এতোটাই পর করে দিয়েছিস আমাদের?”

“তেমন কিছুই নয় ভাইয়া। আমার বিয়েটা আসলে একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিলো। যেটা থেকে এখন আমি বেরিয়ে এসেছি। তার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই। তাই সে বিষয়ে কোনো কথা না হলেই আমি খুশি হব। প্লিজ তুমি ঐ ব্যপারে কিছু বলোনা।”

মৃদুল আর কিছু বলল না। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“আচ্ছা ঠিক আছে। তুই একটু রেস্ট নে আমি তোর ভাবীর সাথে কথা বলে আসছি।”

কথাটি বলেই উঠে গেল মৃদুল। মেহরিমা দ্রুত নিজের ফোনটা বের করে সেটাতে কিছু একটা করল। তারপর আবারও ফোনটা ব্যাগে রেখে দিল সে। একটু পর মোহিনী এক গ্লাস শরবত নিয়ে এসে ওর সামনে রাখলো।

“এই নাও মেহরিমা। এই শরবত টা খেয়ে তারপর শুয়ে একটু রেস্ট নাও। কথা না হয় রাতেও বলা যাবে।”

মেহরিমা কিছু বললো না। শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে মৃদু হেসে বললো,

“ভাবী আমাকে আগে একটা টিশু এনে দেন। নাক দিয়ে ঠান্ডা আসতেছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি টিস্যু আনছি। তুমি শরবতটা খাও। পুরোটা খাবে কিন্তু কেমন।”

কথাটি বলে টিস্যু আনতে চলে গেলো মোহিনী। এই সুযোগে মেহরিমা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে উঠে গিয়ে শরবতটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো। তারপর খালি গ্লাসটা হাতে করে নিয়ে এসে, টেবিলের উপর রেখে সোফার সাথে হেলান দিয়ে মাথা ধরে কাতরাতে লাগলো। একটু পর টিস্যু হাতে নিয়ে মোহিনী ফিরে এসে ওকে এ অবস্থায় দেখে রহস্যময় হাসি দিল। ওর কাছে এগিয়ে এসে বলল,

“কি হয়েছে মেহরিমা! এমন করছ কেন তুমি?”

“ভাবি আমার ভিষন শরীর খারাপ লাগছে। মাথা হঠাৎ ভারি হয়ে আসছে। ভীষণরকম ঘুম পাচ্ছে।”

“আচ্ছা সমস্যা নেই তুমি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ঘুম থেকে উঠলে কথা হবে কেমন।”

কথাগুলো বলতে বলতে অজ্ঞান হওয়ার মতো করে সোফার উপর পড়ে গেল মেহরিমা। সাথে সাথে হাসি ফুটে উঠল মোহিনীর মুখে। মৃদুল কে ডেকে দুজনে একসাথে হাসতে লাগল। মোহিনী হাসতে হাসতে বলল,

“এইবার দেখব আলমির কিভাবে নিজেকে প্রটেক্ট করে। হয় নিজের পুরো সম্পত্তি আমার নামে লিখে দেবে। না হয় নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে যাবে। আমার বাবাকে মেরেছে ও। তার প্রতিশোধ তো আমি নিয়েই ছাড়বো। সব সম্পদ নিজের নামে পাওয়া মাত্র ওকে মেরে ফেলবো আমরা।”

অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করে এসব কথাই শুনতে পায় মেহরিমা। মনের ভিতরে অনেক বেশি কষ্ট হতে থাকে তার। মৃদুল কে নিজের ভাই বলে মনে করতেও ঘৃনায় যেন মনটা বিষিয়ে যাচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে এখনই উঠে দুজনের গালে থাপ্পড় লাগিয়ে দিতে। কতটা নিচু ও স্বার্থপর মানুষ হলে নিজের বোনকে ব্যবহার করে অন্যের ক্ষতি করতে চায়। তাও আবার নিজের বোনের স্বামীর। কথাগুলো ভেবে যেন চোখে জল চলে আসছে মেহরিমার। কিন্তু সে কাঁদে না। চুপচাপ জ্ঞান হারানোর মতো করে পড়ে থাকে। অপরপ্রান্ত থেকে ওদের সকল কথাই শুনতে পাচ্ছে আলমির। মেহরিমার জামার বোতামের সাথে একটি মাইক্রোফোন থাকায় সব কথা শুনতে পাচ্ছে আলমির। যেটা ওরা কেউই জানেনা।

আলমির আগে থেকেই মেহরিমা কে সাবধান করে দিয়েছিলো। গতকাল মাঝ রাতে মেহরিমার কাছে আসে আলমির। ওকে জোর করে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে আলাদা একটি রুমে যায়। সেখানে গিয়ে সকল কথা খুলে বলে ওকে। মেহরিমার ভাই ভাবি এবং সরণের বাবা ফিরোজ আহমাদ মেইন কালপ্রিট। যারা আড়ালে থেকে আলমির কে খুন করে ওর সম্পত্তি হাতাতে চাচ্ছে। এ সবকিছু জেনে গেছে আলমির। আর এসব কথা জেনেছে ওই গার্ড দুজনের কাছ থেকে।

মেহরিমার ভাবি মোহিনী হল দিপুর মেয়ে। যে কিনা দিপুর মতোই লোভী এবং স্বার্থপর। আর দিপুর মেয়ে মোহিনীর সাথে প্রেম করে তাকে বিয়ে করে মৃদুলও তার মতোই হয়ে গেছে। টাকা ও সম্পদের লোভ তাকে এতটাই আঁকড়ে ধরেছে যে নিজের বোনকে বিপদে ফেলতেও সে একবার ভাবছে না।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_৪৮
#M_Sonali

“মোহিনী তুমি যাই করো আমি তোমার সাথে আছি। কিন্তু তোমার কাছে একটাই অনুরোধ আমার বোনের যেন কোন কিছু না হয়। ওর কোন ক্ষতি হলে কিন্তু আমি তোমাদের কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না।”

কথাটি বলেই মোহিনীর দিকে গম্ভির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মৃদুল। মোহিনী সেদিকে তোয়াক্কা না করে বাঁকা হেসে বলল,

“সেটা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। তোমাকে যেটা বলা হয়েছে শুধু সেটাই করো। আর তাছাড়া তোমার বোনের কিছু করার সাহসও নেই আমার। তুমি কি ভুলে গেছো ফিরোজ আহমাদ কি বলে দিয়েছেন। উনি আমাদের বারবার সতর্ক করে বলেছেন মেহরিমার যেন কিছু না হয়। তার ছেলে ওর জন্য পাগল। আর এটাই তার কারণ। যদিও তার ছেলে সরণ এসবের কোনো কিছুই জানেনা। ও আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু তারপরেও ফিরোজ আহমাদ চান মেহরিমার সাথে সরণ এর বিয়ে দিতে। এসব ঝামেলা মেটার পরে।”

“হুম তা জানি। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো মোহিনী। ফিরোজ আহমাদ এর ছেলের বউ এর আগে মেহরিমা আমার বোন। যাকে আমি ছোটবেলা থেকে নিজে হাতে মানুষ করেছি। বড্ড ভালোবাসি ওকে। তাই ওর কোন কিছু হলে আমি কিন্তু মেনে নিতে পারবো না। আমি তোমার কথামতো সব করেছি। তুমি যা চেয়েছো সব করেছি। এমনকি আমার কারনে আমার বাবা-মা মারা গেছেন। তাই আমি চাইনা আমার বোনের কোন ক্ষতি হোক। এমন কিছু হলে তুমি কিন্তু আমার হাত থেকে রক্ষা পাবে না।”

মোহিনী কোন উত্তর দিল না। এমন ভাব করে চলে গেল যেন সব শুনেও কিছু শোনেনি। নিজের রুমে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে পড়ল। ফোন হাতে নিয়ে ফিরোজ আহমাদ এর নাম্বারে ডায়েল করে বলল,

“হ্যালো আঙ্কেল, আমি মোহিনী বলছি। আপনার কাজ হয়ে গেছে। এখন যা করার তাড়াতাড়ি করুন। মেহরিমা বেশিক্ষণ অজ্ঞান অবস্থায় থাকবে না। ওর জ্ঞান ফেরার আগেই সবকিছু করতে হবে।”

“দাঁড়াও মোহিনী এত উত্তেজিত হইও না। এখানে একটা গড়বড় হয়ে গেছে। যে গার্ড দুজনকে আমি আলমির এর আশেপাশে থেকে ওর সব খবরা খবর রাখার জন্য রেখেছিলাম। সেই গার্ড দুটোর কন্টাক্ট নাম্বারে এক্টিভ পাচ্ছিনা। এমনকি তাদের কোন খোঁজখবরও পাচ্ছিনা। একটু আগেই আলমির এর বাসা থেকে ফিরলাম আমি। সবাইকে দেখলাম কিন্তু ওরা দুজন ছিল না। বুঝতে পারছি না তারা কোথায়! ভয় হচ্ছে আলমির কি কোন কিছু আন্দাজ করতে পারল কি না। এমন হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তীরে এসে তরী ডুবে যাবে আমাদের।”

কথাগুলো বলেই মোহিনীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলেন ফিরোজ আহমাদ। মোহিনী ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে রইলো।
,
,
,
প্রায় ৫০ জনের মত গার্ডদের সাথে নিয়ে একঘন্টা সময় হলো তাদের সাথে নানা রকম প্ল্যান করে যাচ্ছে আলমির। ভীষণরকম উত্তেজিত দেখতে লাগছে তাকে। রুমে এসি চলার পরেও ঘেমে একাকার অবস্থা তার। বোঝাই যাচ্ছে মেহরিমার চিন্তায় পাগল প্রায় সে। যেন নিজের প্রাণ পাখিকে শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছে নিজ ইচ্ছায়। কথাগুলো ভাবেই যেন আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠছে আলমির। সে আর সময় বিলম্ব না করে গার্ডদের সাথে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ল বাসা থেকে। যাওয়ার আগে আরও দশ বারোজন গার্ডের কাছে মেহেরকে রেখে গেল। সবাইকে বলে গেল ওর যেন কোন রকম সমস্যা না হয়। ওর দিকে খেয়াল রাখতে।

একটু আগেই সুযোগ বুঝে মেহরিমা ম্যাসেজ করে সবকিছু জানিয়েছে আলমির কে। সাথে বলে দিয়েছে যে ফিরোজ আহমাদ এখন মোহিনীর কাছে যাচ্ছে। আলমিরের থেকে সব নিতে কি করতে হবে সে পরামর্শ করতে। সবরকম প্রমাণসহ এই মুহূর্তে এলেই ওদের ধরা যাবে। তাছাড়া নয়। তাই আলমির সব রকম প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়ে পড়েছে। আজ যেভাবেই হোক সবাইকে হাতেনাতে ধরবে সে। আর এমন শাস্তি দেবে যেনো জীবনে আর কারো এমন ক্ষতি করার স্পর্ধা দেখাতে না পারে।

ঘন্টা দুয়েকের মাঝেই নির্দিষ্ট জায়গায় এসে পৌঁছে যায় আলমির এর গাড়ি। তারা গন্তব্য থেকে বেশ কিছুটা দূরে গাড়ি থামায়। জায়গাটা বেশ জঙ্গল টাইপের। মেহরিমাকে এখানে নিয়ে এসেছে গাড়ি করে ওরা। মেহরিমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করে থাকতে। কিন্তু তারপরেও জিভে কামড় দিয়ে সহ্য করে যাচ্ছে সে। সে চায় আলমির এর সকল শত্রুরা শাস্তি পাক। কারণ তাদের জন্য ভালোবাসার দিদুন কে হারিয়েছে সে। সেই সাথে হারিয়েছে মায়ের মত শাশুরি শেফালী বেগম কে।

চারিদিকে রাতের অন্ধকার থাকায় বাসাটাকে ঘিরে ফেলতে কোন রকম অসুবিধা হয়না আলমিরের। তারা অন্ধকারে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ভিতরের অবস্থা বুঝে আক্রমণ করার জন্য। বাসার মধ্যে কারা কারা আছে সেটা এখনো সঠিক জানতে পারেনি আলমির। মেহরিমা সুযোগ বুঝে কিছু জানাতে পারেনি তাকে। তাই বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তারা। ফিরোজ আহমাদ প্রায় ঘন্টা খানেক আগেই এসেছে এই বাড়িটাতে। ভিতরে গিয়ে কি করছে কোন কিছুই জানা নেই কারও। ওর মনটা ভীষণ আনচান আনচান করছে। কিছুতেই মন কে শান্ত রাখতে পারছেনা সে। মেহরিমা কে এভাবে শত্রুদের মাঝে রেখে সে কোনভাবেই শান্ত থাকতে পারছে না।

হঠাৎ পকেটে থাকা ফোনটা কেপে ওঠায় দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে চেক করে আলমির। দেখে মেহরিমা মেসেজ করেছে। লিখেছে,

“বাসার ভিতরে চলে আসুন আপনারা। ভিতরে ভাই ভাবি ও ফিরোজ আঙ্কেল ছাড়া আর কাউকে দেখিনি। তারা আমায় রেখে আলাদা রুমে কি যেনো করছে।”

মেসেজটা পড়ে আর দেরি না করে দ্রুত গার্ডদের নিয়ে বাসার মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে আলমির। কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই যেন বড় রকমের একটা ধাক্কা খায় সে। পুরো বাড়িটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। কোন দিকে একটু আলোর ছিটেফোঁটাও নেই। যেন প্লান করেই অন্ধকারে রাখা হয়েছে সবকিছু।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,