দীর্ঘ রজনী পর্ব-০৩

0
409

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩
,
,
,
,
,
হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিলো সাদ। দশটা বাজতে এখনো পাঁচ মিনিট বাকি। ঘড়ির থেকে চোখ সরিয়ে সাজিঁর মুখের আদলে দৃষ্টিপাত করলো।

সাজিঁ চেহারায় একটা খুশি খুশি ভাব দেখা যাচ্ছে। কপালে পড়ে থাকা ছোট চুল গুলো আলতো হাতে কানের পেছনে গুঁজে দিচ্ছে বার বার। বিরক্তির রেশ না থাকলেও বুঝে ওঠা টপিক গুলো নোট করতে ব্যাস্ত সে। সাদ শান্ত দৃষ্টিতে সাজিকে অবলোকন করছে। সাজির উচ্ছাস দেখে মনে মনে হাসলো সাদ। ঘন্টা কয়েক আগে যেই মেয়ে অর্থনীতিবিদদের ধুয়ে দিচ্ছিলো, সে এখন দিব্যি তাদের দেওয়া তত্ব গুলো বুঝে নিতে উদ্যত। তার মানে সাদ সাজিকে পড়া বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। সাদের কাছে এখন মনে হচ্ছে অর্থনীতি নিয়ে পড়ালেখা করাটা সার্থক ।

বিনা বাক্যে সাজিঁর খাতা টেনে নিয়ে বন্ধ করে দিলো। সাজি চমকে উঠে সাদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে টেবিলের উপর দৃষ্টি স্থির করলো।

সাদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিরেট স্বরে বলল,, এখন আর পড়তে হবেনা। পরে পড়ে নিস। আর হ্যা! যে টপিকটায় সমস্যা বা বুঝে উঠতে পারছিস না সেটার জন্য অবশ্যই আমাকে বলবি। প্রয়োজনে কল করবি, আমি বাসায় এসে বুঝিয়ে দিবো। আপাতত এক বিষয় নিয়ে এতো সময় ব্যায় করা উচিৎ না। এতে বিষটার প্রতি অনিহা চলে আসে বুঝেছিস!

সাজি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।

সাদ দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,, ডিনার টাইম হয়ে গেছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোকে যেন ডাইনিং টেবিলে দেখতে পাই।

হাতের কলমটা টেবিলের উপর রেখে দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো সাজিঁ। তাড়াতাড়ি মুখে পানি দিয়ে আবার দৌড় লাগালো।

সাদ প্রসস্ত হেসে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।
অনিলা রহমান ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কিচেনের দিকে অগ্রসর হলো।

নিজের বড় ননাসকে কিচেনে দেখে রেগে গেলো সেঁজুতি হাসান। তাই কপাট রাগ দেখিয়ে হাত ধরে তাকে আবার ডাইনিং টেবিলে কাছে দাড় করিয়ে বললো,, খবরদার আপা এইখান থেকে এক পাও নড়বেন না। এই বাড়িতে আসলেই আপনার কিচেনে যেতে হয় কেন! শান্তি মতো আমাকে একটু খাতিরদারি করতেও দেন না। আপনার ভাইকে বলবো আপনি আসলেই কাজ করতে উঠে পড়ে লাগেন।

সেঁজুতি কথায় মুচকি হাসলো অনিলা। তার এই ভাইয়ের বউটা ভারী লক্ষী। এই বাড়িতে পা রাখলেই মন উজাড় করে যত্ন নেয়। একদম ছোট বোনের মতো।মনে হচ্ছে বড় বোন তার ছোট বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। অনিলা সেঁজুতির কাঁধ জড়িয়ে ধরে বললো,, ঠিক আছে! ঠিক আছে! এতো রাগতে হবে না। আমি এইখানেই আছি।

সেঁজুতি হেসে উঠে কিচেনে পা বাড়ালো। অনিলা রহমান তার ননাস কম বড় বোন বেশি। জুবায়েরের সাথে বিয়ের পর অনিলা তাকে বড় বোনের মতো আগলে রেখেছিলো। বড় জায়ের সব রকম খোঁ*টা আর অ*ত্যা*চা*র থেকে তাকে বাঁ*চি*য়ে নিয়ে ছিল। যেখানে তার শ্বাশুড়ি তাকে কখনোই উচ্চবাচ্য করেনি, সেখানে শ্বাশুড়ি থাকার সত্বেও বড় জা সব সময় তার সঙ্গে খা*রা*প শ্বাশুড়িদের মতো খবরদারি করতো। এই সব ঝামেলা থেকে সব সময় অনিলা রহমান তাকে বাঁচিয়ে নিতো।বড় বোনের মতো করে আগলে রেখেছিলো তাকে ,অবশ্য এখনো আগলে রেখেছে। শুরু থেকেই অনিলার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা বোধ আর ভালোবাসা কাজ করে। তাইতো অনিলা বাড়িতে পা রাখলেই ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। অতীতের সব তিক্ত অভিজ্ঞতা আর ভালোবেসে আগলে রাখার কথা গুলো ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার রান্নায় মনোযোগ দিলো সেঁজুতি।

সোফায় বসে এতক্ষণ দুই মমতাময়ী ও পছন্দনীয় রমনীর ভালোবাসা ঘেরা মূহুর্ত দেখছিলো সাদ। এই বাসায় মাকে নিয়ে আসলে মামুনীর সাথে এমন কয়েকটি মূহুর্তের দেখা মেলে তার। আজকেও তার ব্যাতিক্রম হলো না।

সাজি সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নেমে এসে এক প্রকার ঝাঁপিয়ে প*ড়*লো অনিলা রহমানের বুকে। অনিলাও দুহাত দিয়ে জাপটে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। এই মেয়েটাকে বুকের ভেতরে জড়িয়ে ধরলে বুকের ভেতরটা কেমন ভরা ভরা লাগে। আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু আটলো অনিলা।

সাজিঁ তার ফুপ্পির বুকে মাথা রেখে আদুরে গলায় বললো,, এতো দিন এলে না কেন? ভুলে গেছিলে আমাকে তাই না?

অনিলা রহমান সাজিঁর দু গালে চুমু খেয়ে বললো,, তিনদিন আগে না এলাম! এতো দিন কোথায় হলো?

~ তিন দিনে কতো সেকেন্ড হয় জানো! তোমার উচিত প্রতিদিন আসা।

~ হুম আমি প্রতিদিন আসবো আর আপনি এইভাবে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবেন। পড়ালেখা করবেন না তাইতো!

~ হুহ্! ঠিক আছে! ঠিক আছে! পরীক্ষা শেষ হলে পুরো একমাসের জন্য আমি তোমাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসবো। তখন কোনো বাহানা শুনবো না।

সাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,, আমি আমার মাকে ছাড়া থাকতে পারি না। সো কারো আসা হবে না।

সাজি অনিলার দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললো,, ফুপ্পি তোমার ছেলেটাকে কোথাও দত্তক দিয়ে দাও। এইটা বেশি জ্বা*লা*চ্ছে।

অনিলা সাজির কথা শুনে মুখ চেপে হাসছে।

সাজি ভেবেছে সাদ শুনতে পায়নি। কিন্তু সাদ ঠিকই শুনেছে। শুধু উত্তর করছে না।সাজি যদি জানতে পারে সে তার বলা কথা শুনে নিয়েছে তাহলে আজ আর তার ভাত খাওয়া হবে না। ভয়ে ভয়ে সিটিয়ে থাকবে।
,
,

অনিলা রহমান সাজিকে সোফায় বসিয়ে হাতে শপিং ব্যাগ গুলো ধরিয়ে দিলো। সাজি একরাশ কৌতুহল নিয়ে ব্যাগে রাখা জিনিস গুলো বের করছে। চোখ মুখে খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে।

সাজি বোরখা দেখে অনিলা রহমানের দিকে তাকালো।

অনিলা রহমান মৃদু হেসে সুধালো,, পছন্দ হয়েছে?

সাদ গুরুত্ব সহকারে এতক্ষণ মোবাইলে নিউজফিড স্ক্রল করছিলো। অনিলা রহমানের করা প্রশ্নে হাত থেমে গেল। তবে মোবাইল থেকে চোখ সরালো না।

সাজিঁ অনিলা রহমানকে জাপটে ধরে চঞ্চল কন্ঠে বললো,,, খুউউউব পছন্দ হয়েছে। তোমার পছন্দের তুলনা হয়না ফুপ্পি। কালার গুলো খুব সুন্দর। একদম আদুরে সুন্দর। আগে বলো সব গুলো কি আমার?

সাদ মুচকি হেসে আবার নিউজফিড স্ক্রল করায় মনোযোগ দিলো।

অনিলা রহমান সাজির কথায় হেসে উঠে বললো,, হ্যা সব গুলো আমার মায়ের। তবে এখন থেকে কলেজে, কোচিংয়ে, প্রাইভেটে বোরখা পরে যেতে হবে কিন্তু।আমি চাইনা আমার পুতুল মেয়েটার দিকে কেউ নজর দিক বুঝলি?

সাজিঁ মাথা নেড়ে সায় দিয়ে তিনোটা বোরখা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। হিজাব গুলো মাথায় দিয়ে তার ফুপ্পিকে দেখাতে ব্যাস্ত সে।

এইদিকে একজোড়া চোখ চুরি করে সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করছে। দেখে বুঝার উপায় নেই সে এমন কাজ করছে। কেউ দেখলে বলবে মোবাইলে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে রিসার্চে ব্যাস্ত সে।

,
,
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সাদ আর তার মা।

সেঁজুতি হাসান অনেক বার থাকার জন্য বললেও থাকেনি তারা। এই দিকে সাজি মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। তার ধারণা তার ফুপ্পির না থাকার পেছনে সাদের হাত আছে। অবশ্য সাজিঁর ধারনা পুরোপুরি ভুল নয়। সাদকে সকাল সকাল অফিসে যেতে হয় তাই অনিলা রহমান ছেলের কথা ভেবেই থাকেনি।সাদ নিজেও বলেছিল তাকে থেকে যেতে। কিন্তু অনিলা রহমান আজ থাকবেনা বলে পন করে নিয়েছে।

সাদ সাজির মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছে তার সাঁজবাতি ভীষণ ক্ষেপে আছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। কাল বোর্ড মিটিং আছে আর সেটাতে এটেন্ড করতেই হবে তাও পুরো প্রস্তুতি সহ। কাজের প্রতি ভীষণ ডেডিকেটেড সাদ। পার্সনাল লাইফের জন্য প্রফেশনাল লাইফের কোনো প্রকার ক্ষতি করতে চায় না সে। তাইতো প্রেয়সীর সকল অব্যাক্ত অভিযোগ মাথা পেতে নিলো। কোনো এক বিনিদ্র দীর্ঘ রজনীতে না হয় সব অভিযোগ ভাটা পড়বে। আপাতত সেই দীর্ঘ রজনীর অপেক্ষায় আছে।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,,

(ভুল গুলো সুধরে দিবেন। )