দুই হৃদয়ের সন্ধি পর্ব-০৪

0
278

#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মুসকান আরিফের মাথায় ঠাণ্ডা পানি ঢালার পর আরিফের মাথাও ভীষণ পরিমাণে গরম হয়ে যায়। আরিফও নিজের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না৷ সহসা হাত উঁচু করে মুসকানের নরম গালে আ’ঘাত করার জন্য। মুসকান ত্বরিত ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। আরিফ থেমে যায়। কঠিন স্বরে বলে,
“আমার শিক্ষা আজ আমায় আপনার গায়ে হাত তোলা থেকে আটকাল। তবে মনে রাখবেন, পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না হয়ে শুধুমাত্র সন্দেহর বেসিসে কারো সাথে এত জ’ঘন্য ব্যবহার করবেন না। সবাই কিন্তু আমার মতো এত মহান নয়। আমার স্থলে অন্য কেউ থাকলে আপনাকে আস্ত রাখত না।”

রাগী কন্ঠে কঠিন বাক্য গুলো উচ্চারণ করেই ধুপধাপ পা ফেলে সেখান থেকে প্রস্থান করে আরিফ। মুসকান হতবাক নয়নে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। মুসকানের মনের মধ্যে হঠাৎ করে খারাপ লাগা তৈরি করে। যাকে বলে অনুশোচনা। তারও এবার মনে হতে থাকে আরিফ নির্দোষ এবং শুধু শুধুই সে তার সাথে এমন করল।

মুসকান ভাবল আরিফের কাছে ক্ষমা চাইবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আর এক মুহুর্ত নষ্ট না করে মুসকান দ্রুত হাটতে লাগল লাগল আরিফের পেছন পেছন।

আরিফ নিজের রুমে পৌঁছে বিরক্তির সাথে আয়নার সামনে তাকায়। তার পুরো শরীর বাজে ভাবে ভিজে গেছে। রাগে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। পড়নে থাকা কালো পাঞ্জাবিটার কয়েকটা বোতাম খুলে। তারপর পাঞ্জাবিটা খুলতে উদ্যত হয়। পাঞ্জাবিটা পুরোপুরি খোলার আগেই মুসকান কোনরূপ নক করা ছাড়াই রুমে চলে আসে। রুমে এসেই বলতে শুরু করে,
“শুনুন, আই এম সরি। আসলে আমি….”

নিজের পুরো কথা শেষ করার আগেই আরিফকে এই অবস্থায় দেখে দুহাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেলে পিছন ফিরে তাকায় মুসকান। আরিফ তড়িঘড়ি করে পাঞ্জাবিটা পুনরায় পরিধান করার চেষ্টা করতে করতে বলে,
“আপনার মধ্যে যে মিনিমাম ম্যানার্স নেই সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এভাবে নক না করে যে কারো রুমে ঢুকতে নেই সেটা জানেন না? নাকি আমাকে খালি গায়ে দেখার খুব শখ ছিল।”

আরিফের বলা এরূপ কথা মুসকানকে রাগিয়ে দেয়। মুসকান দুচোখ পাকিয়ে আঙুল উঁচিয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এই যে শুনুন, আমার রুচি এতটাও খারাপ হয়নি যে আপনার ঐ পাটকাঠির মতো বডি দেখার জন্য উতলা হয়ে থাকব। যেই না তার চেহারা নাম তার পেয়ারা। বলি হৃত্বিক রোশানকে দেখেছেন? কি সুন্দর বডি তার। আর আপনাকে দেখে তো মনে হয়..থাক আর বললাম না। এমনিতেও এখানে আমি ক্ষমা চাইতে এসেছিলাম। আপনার এইরকম ব্যবহারের জন্য এত গুলো কথা বলে ফেললাম।”

আরিফের বেশ আত্মসম্মানে লাগল কথা গুলো। সেও ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। মুসকানকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বলল,
“আমাকে পাটকাঠি বলার আগে আপনি নিজেকে একবার আয়নায় দেখুন। আপনাকে তো ছোটখাটো একটা হাতির বাচ্চা মনে হয়। আর আপনার খাওয়ার যে স্টাইল সেটা তো গতকাল রাতেই দেখেছি। রাক্ষসের মতো গাসান আপনি। রিডিকিউলাস।”

মুসকান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এগিয়ে আসে আরিফের সামনে। আরিফের হাত টেনে ধরে বলে,
“কি বললেন আপনি আমি রাক্ষসের মতো খাই?”

“ভুল কি বলেছি? হাত ছাড়ুন আমার।”

মুসকান ছেড়ে দিলো আরিফের হাত। এভাবে খাওয়া নিয়ে খোটা দেওয়ার তার বেশ খারাপ লাগল। তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিল। রুম থেকে বেরিয়ে যাবার আগে একবার পিছু ফিরে দেখে নিলো আরিফকে। সে বহু চেষ্টা করেও পাঞ্জাবিটা খুলতে পারছে না। পাঞ্জাবিটা আটকে গেছে বাজেভাবে।

মুসকানের বেশ মায়া হলো আরিফকে এই অবস্থায় দেখে। তাই তো সব দ্বন্দ ভুলে এগিয়ে এলো। আরিফের সামনে যেতেই আরিফ বলল,
“আপনি আবার আমার সামনে কেন এলেন?”

মুসকান সেই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে আরিফকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে তার পাঞ্জাবিটা খুলতে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো।

মুসকান আরিফের পাঞ্জাবিতে হাত দিতেই সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“কি করছেন আপনি? আমার পাঞ্জাবিতে হাত দিচ্ছেন কেন?”

“আপনার সাহায্যই করছি।”

“আপনার সাহায্য আমার লাগবে না।”

মুসকান আরিফের কোন বারণই শুনল না। এক প্রকার জোর পূর্বকই বল প্রয়োগ করে আরিফের শরীর থেকে পাঞ্জাবিটা খোলার চেষ্টা করতে লাগল। অবশেষে মুসকান সফলও হলো।

আরিফ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। পাঞ্জাবিটা খোলা হয়ে যেতেই মুসকান আরিফের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। অতঃপর বিছানার দিকে তাকাতেই দেখল কয়েকটা শার্ট বিছানার মাঝে পড়ে আছে। মুসকান সেখান থেকে কালো রঙের একটা শার্ট তুলে নিয়ে আরিফের দিকে না তাকিয়েই বাড়িয়ে দিলো। কোমল স্বরে বলল,
“এই শার্টটা পড়ে নিন। আপনাকে ভীষণ মানাবে। বাকি শার্টগুলো আমি গুছিয়ে রাখছি।”

আরিফ হাত বাড়িয়ে শার্টটা নিতেই মুসকান বাকি শার্টগুলো খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নিলো। অতঃপর সেগুলো রেখে দিলো বিছানার মধ্যেই। আরিফকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
“আমার কাছে তো আপনার ওয়ারড্রবের চাবি নেই। তাই আপনিই এগুলো ভালো ভাবে রেখে দিয়েন ওয়ারড্রবে। আমি এখন আসি।”

মুসকান ধীর পায়ে হেটে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আরিফ মুসকানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,
“মেয়েটা ভীষণ অদ্ভুত। এই ভালো তো এই খারাপ! নিজে ভিজিয়ে দিয়ে আবার নিজেই পড়ার জন্য শার্ট চয়েজ করে দিয়ে গেল।”

★★★
আতিফা বেগম আতিকা চৌধুরীর সাথে গল্পে মজে ছিলেন। গল্প করার একপর্যায়ে তিনি বলেন,
“আচ্ছা তোর ছেলের বউ কই আপা? তাকে তুই একটু ডেকে দে না।”

আতিকা চৌধুরী মুসকানকে ডাকতে যাবেন তার আগেই মুসকান সেখানে এসে যায়। আতিকা চৌধুরী বলে ওঠেন
“ঐ তো ডাকার আগেই চলে এসেছে। মুসকান এসো এইদিকে। খালামনি তোমায় কিছু বলবে।”

মুসকান কাছে এসে আতিফা বেগমের কাছে বসেন। আতিফা বেগম মুসকানের কপালে আলতো চুমু খেয়ে বলেন,
“মাশাল্লাহ। খুব সুন্দর লাগছে তোমায়।”

মুসকান লাজুক হাসে। আতিফা বেগম আতিকা চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপা তুই একটু আমাদের আলাদা করে কথা বলার সুযোগ দিলে ভালো হতো।”

আতিকা চৌধুরী কোন আপত্তি না করে সেখান থেকে উঠে যান। তিনি যেতেই আতিফা বেগম বলে ওঠেন,
“তোমাকে আমার কিছু কথা বলার ছিল। এই কথাগুলো না বললে আমি শান্তি পেতাম না।”

“হ্যাঁ বলুন।”

“আমার মেয়ে নকশিকে তো তুমি দেখেছ।”

“হ্যাঁ, খুব মিষ্টি মেয়ে।”

” তুমি হয়তো জানো না, নকশি অনেকদিন থেকে আরিফকে একতরফাভাবে ভালোবাসে।”

আতিফা বেগমের কথা শুনে মুসকানের মুখে অন্ধকার নেমে আসে। আতিফা বলতে থাকেন,
“জানি কোন মেয়ের পক্ষেই তার স্বামীকে কেউ পছন্দ করে এটা শুনতে ভালো লাগবে না তবে আমি তোমার ভালোর জন্যই কথা গুলো বলছিলাম। আমি নিজেও এতদিন জানতাম না নকশির মনের কথা। ও গোপনে ভালোবেসে গেছে আরিফকে। যেদিন তোমাদের বিয়ের কথা আমরা জানতে পারি সেদিন ও কি পাগলামি শুরু করেছিল বলে বোঝাতে পারব না। জানো নকশি অনেক ছোট থাকতেই ওর বাবা মারা গেছে। আমি একা হাতে ওকে মানুষ করেছি। ভীষণ আদরের মেয়ে আমার। তাই প্রথম প্রথম আপার উপর আরিফের উপর এবং বিশেষত তোমার উপর আমার রাগ হয়েছিল। কিন্তু আমি পরবর্তীতে বাস্তবটা মেনে নেই। এই পৃথিবীতে সবকিছু তো আল্লাহর হুকুমেই হয়৷ তার হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨