দুই_পৃথিবী পর্ব-০৫

0
859

#দুই_পৃথিবী
#লেখিকা- রিতু
#পর্ব-৫
চারিদিক থেকে অন্ধকার কেটে যাচ্ছে।হালকা আলো উঠতে শুরু করেছে চারিদিকে।দু একটা পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে আসছে আফসানের।সে সিগারেট হাতে বসে আছে বিছানায়।আজ সারাটা রাত আফসানের ঘুম হয় নি।কেমন যেন মাথার মাঝে ফাকা ফাকা লাগছে।স্নেহা কি ওর রাতের নেশা হয়ে দাড়িয়েছিল?হয়তো বা দাঁড়িয়েছিল।না হলে এক রাত কথা বলতে না পেরে আফসান কে অনিদ্রায় ভুগতে হত না।রাতে ঘুম না আসায় আফসান উঠে ছবি আঁকতে বসে গিয়েছিল।কিন্তু সেটা তেও মন দিতে পারছিল নাহ।তারপর ও মন দেওয়ার চেষ্টা করে একটি থিম মাথায় নিয়ে বিশাল একটা বট গাছের ছবি আঁকতে শুরু করেছিল আফসান।কিন্তু সেটাও বাদ দিতে হলো কারণ সবুজ রঙ টা কেমন যেন মানাচ্ছিল না,বার বার লেপ্টে যাচ্ছিল।

সকাল ৮ টা।স্নেহার রুমে হালকা রোদ এসে ঢুকছে।এই এক চিমটি রোদ স্নেহার ঘুম ভাঙাতে যথেষ্ট।কারণ রোদ টা এসে পড়েছে ঠিক স্নেহার মুখের উপর।স্নেহা একটি হাই তুলে বিছানা ছেড়ে উঠল।তার পরণে কালকের বিয়ের শাড়িটা।স্নেহা একটি সুতি শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এসে স্নেহা তার স্বভাব মত রান্না ঘরে চা করতে গেল।ময়নার মা রান্নাঘরেই ছিল।স্নেহা কে দেখেই সে বললো
-আম্মাজান,ভাই জান তো নাই।ভোরেই বাইর হইয়া গেছে।
স্নেহা হাই তুলতে তুলতে বললো
-অহ।
-চা কইরা দিমু?
-নাহ দরকার নেই।বাবাই যেহেতু নেই তখন আর চা খাব না।আমি একটু ঘুমাবো।আমার ঘুম ছাড়ে নি।মুহিব ভাই কোথায় গেছে জান?
-হায় হায় কি সরমের কথা!!
আবারো হাই তুলতে তুলতে স্নেহা বললো
-কি সমস্যা?
-জামাইরে কেউ ভাই ডাকে?আম্মাজান তারে ভাই ডাকবেন না।তারে ডাকবেন এই বলে।
-চুপ করে থাক তোহ।তোমার জ্ঞান এখন আমার শুনতে ইচ্ছা করছে নাহ।
বলেই স্নেহা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এল।সে এখন ঘুমাবে।তার চোখে রাজ্যের ঘুম এখন জড়ো হয়েছে।সারারাত ঘুমিয়েও এত ঘুম কিভাবে তার চোখে এ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত সে।

মুহিব খুব ভোরেই বের হয়ে এসেছে স্নেহাদের বাড়ি থেকে।সারারাত তার ঘুম হয় নি।অবশ্য এ নিয়ে সে বিচলিত না।সে এখন অন্য এক কারণে চিন্তিত।স্নেহা রাতে কিছু কথা বলছে ওকে।যেটা ওর মাথা থেকে যাচ্ছেই নাহ।মুহিব এসে বসেছে মিজান মামার চায়ের দোকানে।তাদের সব বন্ধুদের আড্ডা খানা এটা।অবশ্য মুহিব আড্ডাতে বেশিরভাগ সময় থাকে নাহ।কিন্তু মাঝেমধ্যে চলে আসে মিজান মামার চা য়ের লোভে।অসম্ভব মজার চা বানায় সে।একবার খেলে ১ বছর এই চায়ের স্বাদ লেগে থাকবে ঠোটে,,এটিই মুহিবের ধারণা।সে চা চুমুক দিতে দিতে স্নেহার সাথে কাল রাতের কথা ভাবতে লাগলো ঠিক তখনি রাকিন মুহিবের পিঠে চাপড়ে বললো
-আরে শালা,এত সকালে তুই?
মুহিব জবাব না দিয়ে চা তে চুমুক দিতে থাকলো।রাকিন মিজান মামা কে চা দিতে বলে মুহিবের সামনে বসে বললো
-মামা রাতে কি খেল্লা?টি টুয়েন্টি,ওয়ান্ডে নাকি টেস্ট?
মুহিবের নিরবতা দেখে রাকিন আবার বলতে শুরু করলো
-কি ব্যাপার?কিছু হইছে?তোর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বিছানা কাপানোর পরিবর্তে তুই নিজেই কাইপা কুইপা অস্থির।
বলেই রাকিন প্রাণখোলা একটা হাসি দিল।মুহিব রাকিনের দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বললো
-ফালতু কথা বলিস না।সব কথা সব সময় ভালো লাগে না।
রাকিন এবার মুহিবের দিকে ঝুকে এসে বললো
-খুলে বল তো?কি সমস্যা?
-কাল রাতে অন্তির কাছে যেতেই অন্তি আমাকে বললো
‘তুমি তো ম্যাথের স্টুডেন্ট।তোমাকে আমি এখন একটা অংক দিব।যদি তুমি উত্তর দিতে পার তাহলে আজ রাতের জন্য আমি তোমার পুতুল।হাসতে বললে হাসবো,শাড়ি খুলতে বললে খুলবো।’
রাকিন ভ্রু কুঁচকে বললো
-অংক দিছে?
-হ্যা।
-অংক তে পাস করতে হবে কেন?স্নেহা তো এখন সব রাতের জন্যই তোর।তুই কি ইন্টার্ভিউ দিতে গেছিস নাকি?
মুহিব আহত স্বরে বললো
-আমি এত কথা বুঝি নাহ।আমি এই অংকের জন্য সারা রাত ঘুমাতে পারি নি।আমি এত কঠিন অংক সমাধান করি অথচ ওর দেয়া অংকটা কেন পারব না?আমার মাথা থেকে অংকটা যাচ্ছে না কোন ভাবেই।
রাকিন বিরক্তি নিয়ে বললো
-দেখি কি অংক বল।
মুহিব রাস্তার দিক তাকিয়ে বলতে শুরু করলো
-একজন তার এক ছেলেকে দিল ৫০০ টাকা অন্য ছেলেকে দিল ৩০০ টাকা।দুই ভাইয়ের টাকা এক করে দেখা গেল তাদের কাছে একত্রে আছে ৬০০ টাকা।কি করে সম্ভব এটা?
তারা দুজনেই কিছুক্ষণ নিরব হয়ে রইলো।তারপর রাকিন মুহিবের কাধে হাত দিয়ে বললো
-আরে গাধা এই অংকের জন্য তুই তোর বাসর রাত মিস করলি?তোর মত পাগল দেশে দুইডা নাই।এখনি স্নেহার কাছে যা।আর কোন অংক ফংকের উত্তর দিবি নাহ।সরাসরি ঝাপাইয়া পড়বি।

মুহিব স্নেহাদের বাড়িতে ঢুকলো দুপুর ১২ টার দিক।দোতালায় উঠতেই ময়নার মা তাকে বললো
-আব্বাজান আছিলেন কোথায়?সকালে তো কিছু খাইয়া বাড়াইলেন না।
-কাজ ছিল।দুলাভাই কই?
-সে সকালে খাইয়া চইলা গেছে।
-ফুপাজি কি বাসায় নেই?
-না।শুধু আম্মাজান আছে।তার ঘরে শুইয়া আছে।আপনি যান।আমি দুই কাপ চা নিয়া দিয়া আসবো নি।
মুহিব হাটা ধরলো স্নেহার ঘরের দিকে।স্নেহার রুমে ঢুকতেই তার চোখ কপালে উঠে গেল।
কালো চাদর মুড়িয়ে শুয়ে আছে স্নেহা।সেই কালো চাদরের আড়াল থেকে তার একটি পা বের হয়ে আছে।সে পায়ে কোন কাপড় নেই।শঙ্খের মতো ধবধবে সাদা পা।মানুষের পা এত সাদা হয়!স্নেহার পা না দেখলে জানতো না মুহিব।সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো স্নেহার পায়ের দিকে।ঠিক তখনি স্নেহা ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে উঠলো
-মুহিব ভাই একটা কাজ করো তো।
মুহিব এতোক্ষণ তাকিয়ে ছিল স্নেহার পা য়ের দিকে।স্নেহার কথা শুনে থতমত খেয়ে বললো
-কি কি?
-আমার শরীরের উপর থেকে চাদর টা সরিয়ে দাও তো।
মুহিব ধীরেধীরে এগুলো স্নেহার দিকে।চাদর হাতে নিয়ে সরাতেই মুহিবের চোখ আটকে গেল স্নেহার পেটের দিকে।সাদা ধবধবে মেদহীন পেটটি লুটিয়ে আছে বিছানার সাথে। সুতি শাড়ি পড়েছে স্নেহা।আর এতোক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার কারণে কাপড়ের কোন ঠিক ঠিকানা নেই।মুহিবকে পেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্নেহা বললো
-মুহিব ভাই আমার মুখের তাকাও।
মুহিব অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে পেটের দিক থেকে নজর সরিয়ে স্নেহার মুখের দিকে দিল।
-মুহিব ভাই।অংকটা সমাধান করতে পেরেছ?
-না।
-তুমি ম্যাথে ফেল।আগামি ১ মাস তুমি আমার থেকে দূরে থাকবা।
মুহিব করুন চোখে স্নেহার দিকে তাকিয়ে বললো
-আচ্ছা।
-অবশ্য তুমি যদি আমার আরো একটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পার তাহলে এই ৩০ দিন টা কমিয়ে ১৫ দিনে নামিয়ে নিয়ে আসবো।বলো রাজি?
-রাজি।
স্নেহা হালকা হেসে বললো
-মুহিব শব্দের অর্থ টা কি?
মুহিব খানিকটা সময় চুপ থেকে বললো
-প্রেমিক।
স্নেহা বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো
-তুমি পাস।১৫ দিন কমিয়ে নেওয়া হলো।কিন্তু আসলেই কি তোমার নামের সাথে তোমার মিল আছে?আচ্ছা তুমিই বলো তুমি প্রেমিক হিসেবে কতো টা ফিট?১০০ তে নিজেকে কতো দেবে তুমি?
মুহিব কিছুই বললো নাহ।স্নেহাও উত্তরের অপেক্ষা না করে শাওয়ার নেওয়ার জন্য চলে গেল।কিছুক্ষণ পর স্নেহাকে রেডি হয়ে বাইরে বেরোতে দেখে মুহিব স্নেহার দিকে তাকিয়ে বললো
-কোথাই যাচ্ছিস?
-আমি এক জনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।তার সাথেই দুপুরে খাব।তুমি খেয়ে নিও।
মুহিব অস্পষ্ট স্বরে বললো
-আচ্ছা।
স্নেহা দোতালা থেকে নিচে নামার সময় আবার ঘরে ফিরে আসলো।মুহিবের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো
-আমি প্রেমিক হিসেবে তোমাকে দিতাম ১০০ তে ৩০।কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্য।

আফসানের দরজায় কে যেন কড়া নারছে।আফসান আজ ভার্সিটিতে যায় নি।সারা রাত ঘুম না এলেও সকালের দিকে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছিল সে।সেই ঘুম ভাঙল দুপুর ২ টায় কারো দরজার ধাক্কায়।আফসান বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খুললো।কিন্তু তার এই বিরক্তি নিমেষেই আনন্দে পরিবর্তন হলো।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা।গাঢ় সবুজ রঙের একটি সুতি শাড়ি পড়েছে সে।এই সবুজ রঙ টাই সে রাতে ঠিক মতো দিতে পারছিল না।কিন্তু এখন পারবে সে।তার মন টা স্নেহা কে দেখে এত ভালো হয়ে গিয়েছে তা কল্পনার বাইরে।আফসান স্নেহা কে হাত ধরে ফ্লাটে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করলো।তারপর স্নেহার দিকে এগিয়ে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বললো
-ফোন বন্ধ ছিল কেন তোমার?
স্নেহা হেসে বললো
-ফোন একটা ইলেকট্রিক যন্ত্র।এটা বন্ধ থাকা কোনো কঠিন ব্যাপার না।
আফসান আর কোন কথা না বলে স্নেহার হাত ধরে নিজের বুকে টেনে নিল স্নেহা কে।স্নেহা নিজেকে ধাতস্থ করার পূর্বেই আফসান তার দুই হাতে স্নেহার মুখটা উপরে তুলে ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিল।তারপর কানের পাশে গিয়ে চুল সরিয়ে দিয়ে বললো
-ভালোবাসি।ভালোবাসি তোমাকে ভালোবাসি।
স্নেহার পুরো শরীর কেপে উঠতে শুরু করলো আফসানের ঠোঁটের ছোঁয়ায়।তারপর ধীরেধীরে বরফের মতো জমে গেল স্নেহা ভালোবাসি কথা টি শুনে।অদ্ভুত একটা ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে তার মনে।এই প্রথম কোন পুরুষের এতো টা কাছে এল সে।ঠিক তখনি তার মনে পড়লো সে এখানে এসেছে তার বিয়ের খবর টা আফসান কে জানাতে।স্নেহা আফসানকে বাধা দিতে চেষ্টা করলো।কিন্তু তার হাত টা কেন যেন আজ কাজ করছে নাহ। আফসান ও স্নেহার তেমন একটা বাধা না পেয়ে পুড়ো ঠোট জোড়া দখল করে নিল।স্নেহা আফসানের গরম নিশ্বাসে মেতে গেল।দূরে যাবা পরিবর্তে আফিসানের শরীরের সাথে মিশে গেল সে।ধীরেধীরে হাত দুটো আফসানের গলায় উঠিয়ে দিয়ে মেতে উঠলো এক অজানা খেলায়।কিন্তু এখন যে বড্ড দেরী করে ফেলেছে তারা এটা কি তাদের অজানা???
(চলবে)