দুই_পৃথিবী পর্ব-০৬

0
880

#দুই_পৃথিবী
#লেখিকা-রিতু
#পর্ব-৬
ঠিক কতক্ষণ হলো স্নেহা আফসানের বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে ছিল এটা তাদের কারোরই খেয়াল নেই।আফসানের শরীরের সাথে একদম মিশে দাঁড়িয়ে ছিল স্নেহা।দু জনের চোখই ছিল বন্ধ।তাদের দুইজনের ঘোর ভাঙলো স্নেহার ফোনে কল আসায়।আফসান প্রায় সাথে সাথেই তার বাহুডোর থেকে স্নেহাকে ছেড়ে দিল।কিছুটা অপ্রস্তুত কণ্ঠে বললো
-সরি,সরি।প্লিজ কিছু মনে করো না।আমার যে কি হয়েছিল!আই অ্যাম সরি স্নেহা।
স্নেহা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে করতে বললো
-ইটস ওকে।তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।আমি কল টা এটেন্ড করে আসি।কেমন?
-সিউর।আমি অপেক্ষা করছি।
স্নেহা ফোন নিয়ে বের হয়ে এল ড্রয়িং রুম থেকে বারান্দায়।মুহিব ফোন করেছে।স্নেহা শান্ত মুখে ফোন রিসিভ করে বললো
-বলো
-খেয়েছিস?
-না খাব।আর কিছু বলবে?
-না।
-আচ্ছা তাহলে এখন রাখছি।এসে কথা হবে।আজ আছো তো তুমি?
-হুম আছি।
স্নেহা ফোন কেটে দিয়ে রুমে ঢুকলো আফসানের খোঁজে।আফসান রান্নাঘরে ছিল।দুপুরের খাবারের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করছিল।স্নেহা কে দেখে হালকা হেসে বললো
-দুপুরে কি আমার সাথে খাবে?
-হুম
-কি খাবে বলো?
-তোমার ইচ্ছা।
-আমি বাইরে থেকে কিছু একটা নিয়ে আসি?
-যাও।
আফসান একটা শার্ট গায়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।২০ মিনিট এর মাথায় ফিরে এসে দেখলো স্নেহা রান্নাঘরে কিছু একটা করছে।আফসান খাবার টা টেবিলে রেখে রান্না ঘরে এসে পিছন থেকে স্নেহাকে জড়িয়ে ধরলো।স্নেহা একটু ও চমকালো না।যেন এতক্ষণ হলো সে এইটার অপেক্ষা তেই ছিল।
-কি করছো স্নেহা?
-চোখ কি বন্ধ?দেখতে পাচ্ছো না?
আফসান স্নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
-পাচ্ছি।সব সময় এমন পেঁচিয়ে কথা বলবা না।
-আচ্ছা বলবো নাহ।
-আমি যে তোমাকে ভালোবাসি এটা আমি আজ বুঝতে পেরেছি।আর শুধু মুধু ভালোবাসা না।এ এক কঠিন ভালোবাসা।
স্নেহা হেসে বললো
-ভালোবাসা কঠিন তরল ও হয় নাকি?
-অবশ্যয় হয়।আমার ভালোবাসা টা কঠিন,বরফের মত।আর আমার চেয়ে একটু কম যাদের ভালোবাসা তাদের টা তরল,পানির মতো।আর তার থেকেও কম যাদের ভালোবাসা তাদের টা বায়বীয়।এদের ভালোবাসায় যথেষ্ট খুত আছে,তাই যে কোন সময় উড়ে মনের জানালা দিয়ে পালায়।
বলেই স্নেহার কাধ থেকে মাথা উঠালো আফসান।স্নেহা আফসানের দিকে তাকিয়ে বললো
-খাবার এনেছো?
-হ্যা।ভেবে বলো তো কি এনেছি?
-উম্ম,,তেহারী?
-জ্বি ম্যাডাম।আর তেহারী খেয়ে আপনার হাতের পায়েস টা অমৃত লাগবে আশা করছি।

আফসান আর স্নেহা খেতে বসলো দুপর শাড়ে তিনটার পর।স্নেহা বেশি খেতে না পারলেও আফসান খেল আরাম মতো।পায়েস টা খেতে খেতে বললো
-এত মজার পায়েস আমি সত্যি খাই নি।
স্নেহা ভ্রু কুঁচকিয়ে বললো
-একদম মিথ্যা বলবে না।
আফসান প্রাণ খুলে খানিকক্ষণ হেসে বললো
-আমি সত্যিই মিথ্যা বলেছি।আমার মা য়ের হাতের পায়েসের কাছে এটা কে কি বলবে জানো?
-কি?
-ছাগলের লাদি।
বলেই আবারো হাসতে শুরু করলো আফসান।স্নেহার কঠিন চোখ দেখে নিজের হাসিটা থামালো আফসান।তারপর স্নেহার দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় বললো
-সরি স্নেহা।চোখ টা কি একটু নরম করা যায় না?
-যায়।
আফসান হালকা হেসে বললো
-থ্যাংকইউ।আচ্ছা তুমি যেন কি বলতে চেয়েছিলে?
স্নেহা প্লেট নিয়ে টেবিল থেকে উঠতে উঠতে বললো
-তোমার প্লেট টা দাও।আমি ধুয়ে রেখে এসে বলবো।ততোক্ষণ তুমি আমার ফোন টা চার্জে লাগাও।
স্নেহা প্লেট ধুতে শুরু করলো।তার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা তার সংসার।তার আর আফসানের সংসার।আফসান তার বর।তারা অনেক সুখে আছে।এখন সে যাবে আফসানের রুমে।তারপর বিছানায় গিয়ে আফসানের বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষণ ঘুমাবে।কিন্তু এটা তো বাস্তব নয়।বাস্তবে মুহিব ভাই তার বর।যাকে সে ভাই হিসেবে চেনে।স্নেহা ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো
“বাস্তব টা এখন বাদ।এখন আমি আমার ভাবনার জগতেই থাকতে চাই।ভাবতে তো আর পয়সা লাগে না।আফসান কে বর ভাবতে যদি তার ক্ষণিকের সুখ লাগে তাহলে ক্ষতি কি?”
আমরা নিজেরাও এমন অনেক কিছুই ভাবি যেটা হয়তো কখনওই ঘটবে না আমাদের জীবনে।তবুও আমরা ভাবি।ভাবতে ভালো লাগে।কেমন যেন একটা শান্তি অনুভব হয় ভেতর থেকে।

আফসান ড্রয়িং রুমে বসে সিগারেট টানছিল।স্নেহা কে আসতে দেখেই সে সিগারেট টা ফেলে দিল।স্নেহা আফসানের সামনে একটা চেয়ার নিয়ে এসে বসলো।তারপর বললো
-যে কথা গুলো তোমাকে এখন বলবো তার জন্য তোমার সামনে বসা টা জরুরি।তাই চেয়ার আনলাম।
আফসান একটু ঝুকে এসে বললো
-কি এমন কথা?আমারো কিছু কথা ছিল।
-বলো?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা বলেছি।এখন আবারো বলছি।
স্নেহা কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো
-আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
আফসান জয়ের একটা হাসি হেসে বললো
-জানতাম আমি।এখন বিয়ে করতে চাই তোমাকে।তোমাকে ছাড়া এ জীবন বড়ই অসহায়।হাত ধরতে চাই তোমার সারাজীবন এর জন্য।ধরবে?
স্নেহা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো
-তুমি তো জানই আমার মা আমাকে ছেড়ে ছোট থাকতে চলে গিয়েছিল।
-জানি।
-তারপর আমার জগৎ টা অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল আফসান।আমি মা কে সব সময় ঘৃণা করতাম।এই ভেবে যে সে আমার সহজ সরল বাবাকে রেখে চলে গিয়েছে।
-হুম।
-আমি তখন ঠিক কতোটা একা হয়ে পড়েছিলাম সেটা তুমি বুঝতে পারছো?
-হুম।
-আমার বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু সে ও আমাকে তেমন একটা বেশি সময় দিতে পারতো না।ব্যবসা ননিয়েই সারাদিন কাটাত।হয়তো এটা তাকে মা কে ভুলতে হেল্প করত।আমি একা বন্দি হয়ে থাকতাম বাসায় আর বাবার রাতে ফেরার জন্য অপেক্ষা করতাম।আমার সাথে থাকতো ময়নার মা।ময়নার মা সারাদিন কি সব বলতো আমি চুপচাপ শুনতাম।
-এগুলো এখন কেন বলছো স্নেহা?আমার কোন সমস্যা নেই এগুলো নিয়ে।
স্নেহা আফসানের কথায় জবাব না দিয়ে বলতে শুরু করলো
-আমার স্কুল কলেজে যেতেও ভালোলাগতো না।কেন জান?কারণ আমার মা।আমার মাকে নিয়ে স্কুলের স্যার,ম্যাডাম,বাচ্চার মায়েদের আগ্রহের সীমা ছিল নাহ।আমার মা কিভাবে চলে গেছে,কার সাথে চলে গেছে এই কথা গুলো শোনার জন্য প্রতিদিন তারা ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতো।আমার জীবন টা আমার অসহ্য লাগতো।তাই বাবাকে একদিন এসে বললাম আমি স্কুলে আর যাব না।বাবা ও হেসে উড়িয়ে দিলেন কথা টা।কারণ আমাদের সমাজ টাতে টিকে থাকতে হলে আমাকে যে পড়তেই হবে।তাই আবারো যেতে শুরু করলাম স্কুলে।আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়াল আমার।
আফসান একটু নড়ে চড়ে বসে বললো
-তারপর?
-আমি কি খুব সুন্দরী আফসান?
-অবশ্যই।তোমার মতো সুন্দরী ঢাকা তে আর একটাও পাওয়া যাবে নাহ।কিন্তু পুরো বাংলাদেশে খুঁজলে ১/২ টা পাওয়া যেতেই পারে।আমার কথায় কি তোমার কোন সন্দেহ আছে?
স্নেহা হালকা হেসে বললো
-নাহ,নেই।আমি নিজেও জানি আমি সুন্দর।কিন্তু আমি এত সৌন্দর্য কখনোই চাই না।
-যার যেটা থাকে সে সেটা কখনোই চায় না স্নেহা।
-চায়।কোটিপতি মানুষদের অনেক টাকা।তাহলে কেন তারা আরো টাকার পেছনে ছোটে?যাক বাদ দেই এটা।আমার বয়স ধীরেধীরে বাড়তে শুরু করলো সাথে আমার রূপটা ও।আর মানুষ সেটা তাকিয়ে উপভোগ করতে শুরু করলো।আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি।সে সময়ের ঘটনা।আমাদের সমাজ স্যার নাম ইমরান সিদ্দিকি উনি আমাকে ডাকলেন অফিসরুমে।আমি ও সরল মনে চলে গেলাম।স্যার ডেকেছে।যেতে তো হবেই।অফিসরুমে ঢুকতেই দেখি অফিসরুমে কোন স্যার নেই।আমি ক্লাসে ফিরে যাব এমন সময় সে আমাকে ডাকলো ওয়াশরুম থেকে।অফিস রুমের সাথেই ওয়াশরুম টা লাগানো।আমি স্যারের ডাকে ওয়াশরুমের দিকে এগোতেই স্যার আমাকে বললো ওয়াশরুমে ঢুকতে।আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।কারণ স্যারদের ওয়াশরুম ছাত্রীদের যাওয়ার অনুমতি ছিল নাহ।
বলেই স্নেহা হাসতে শুরু করলো।আফসান হতভম্ব হয়ে বললো
-হাসছো কেন?
হাসি থামিয়ে স্নেহা বললো
-তো হাসবো না?আমি তখন এই ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম যে কোন স্যার যদি দেখে আমি তাদের ওয়াশরুমে যাচ্ছি তাহলে আমাকে বকবে,কারণ ছাত্রীদের নিষেধ ছিল।অথচ আমার ভয় পাওয়া উচিৎ ছিল স্যার কেন আমাকে ওয়াশরুমে ডাকছে এটা ভেবে।তাই না?
আফসান মাথা নাড়িয়ে বললো
-হুম
-তারপর আমি ওয়াশরুমে ঢুকতেই স্যার প্রথমে আমার হাত চেপে ধরে দরজা টা লাগিয়ে দিল।আমার তখন চিৎকার করা উচিৎ ছিল তাই না?কিন্তু আমার মুখ দিয়ে তখন আওয়াজ বের হচ্ছিল না।তারপর যা হবার তাই হলো,স্যারের হাত আমার হাত ছেড়ে আমার বুকে গেল।আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম তখন,জান?
একটু দম নিয়ে স্নেহা আবার বলতে শুরু করলো
-১০ মিনিট পর আমি অফিস রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।খুব স্বাভাবিক ভাবে আবার জীবন শুরু করলাম।কাউকে কিচ্ছু বললাম না।বাবা কেউ না।অবশ্য এই কথা আমি বাবা কে বলতেও পারতাম নাহ।
আফসানের মুখ রক্ত শুন্য হয়ে গেছে।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।আফসান কে ঢোক গিলতে দেখে স্নেহা বললো
-ভয় পেও না।তার হাত আমার বুক ছাড়া কোথাও যায় নি।কেন যায় নি জান?কারণ সে যখন আমার বুক থেকে হাত নামিয়ে ক্রমশ নিচের দিকে যাচ্ছিল তখন আমি তাকে বললাম ‘স্যার আপনি কি করছেন এগুলো?আমার কষ্ট হচ্ছে।আমি বাসায় যাব।’অবশ্য অফিস রুমের বাথরুমে স্যার বেশি কিছু করতেও পারতো না।বলো পারতো??
-নাহ।
-আমি যে আজ স্বাভাবিক না।অস্বাভাবিক আচারণ করি,কথা বলি এগুলো সব আমাদের সমাজের কল্যানেই।আশেপাশের মানুষের খোঁটা দেওয়া,স্যারের কাজের জন্যই।আমি আর দশ টা মেয়ের মতো না।আমি মানুষিক ভাবে অসুস্থ।
আফসান নিরব হয়ে স্নেহার কথা শুনছিল।স্নেহা এবার আফসানের হাত ধরে বললো
-আমি ভূল করে ফেলেছি আফসান।অনেক বড় ভূল।আমি সব সময় চিন্তা করি আমি আর দশ টা মেয়ের মতো না।তাই যখন কোন কাজ করি তখন ভাবি আর দশ টা মেয়ে হলে এই কাজ টা কিভাবে করতো।ভাবার পর যা উত্তর আসে আমি তার বিপরীত টাই করি।কাল দুপুরে যখন বাবা বিয়ের কথা বলতে এল তখন আর দশ টা মেয়ের উত্তর হতো ‘নাহ’ কারণ তারা যাকে ভালোবাসে তাকে বিয়ে করে।আর আমি তাই বাবাকে বলে দিলাম ‘হ্যা’।আর রাতে বিয়ে করে ফেললাম।
এতক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল আফসান।স্নেহার কথা টা শুনে সে বিস্মিত চোখে স্নেহার দিকে তাকাল।স্নেহা আফসানের দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে বললো
-আমার এটা করা ঠিক হয় নি।আর এটা আমি এখন বুঝতে পারছি।আমি তোমাকে ভালোবাসি,আর তোমাকেই আমার বর ভাবি।কিন্তু বাস্তবে মুহিব ভাই আমার বর।
বলেই স্নেহা কাঁদতে শুরু করলো।আফসান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।সে কি এখন স্নেহা কে সান্তনা দিবে?না কি সেটা দেওয়া ঠিক হবে নাহ!কারণ স্নেহা এখন অন্যের বিয়ে করা বউ।কিন্তু তাতেই বা কি!সে ভালোবাসে স্নেহা কে।
স্নেহা কাঁদতে কাঁদতেই বললো
-আমি এখন অথৈ সাগরে ডুবে আছি।আমি কি করবো,আমার কি করা উচিৎ আমার মাথায় আসছে নাহ।আমি তোমার সাথে থাকতে চাই আবার মুহিব ভাই কে ও বাবার মতো একা করে ফেলে আসতে পারবো নাহ।সবাই আড়ালে আমাকে দেখে বলতো’মায়ের যা কার্যকলাপ।দেখবেন মেয়েটাও তেমনি হবে।’আর আজ দেখ পরিস্থিতি টা তেমনই।তাই নাহ?
স্নেহা কিছুক্ষণপর কান্না থামিয়ে বললো
-আমি এখন আর আমার মা কে ঘৃণা করি না।কিন্তু ভালো ও বাসি নাহ।সে যেটা করেছে সেটা এখনো আমার কাছে ভূলই।কিন্তু আমি ভূল টা করবো নাহ।
এবার আফসান মুখ খুলে বললো
-কি করতে চাও তুমি?
-আমি মুহিব ভাইয়ের কাছে ফিরে যেতে চাই।
বলেই এক মুহূর্ত দেরি না করে স্নেহা ব্যাগ নিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে গেল স্নেহা।দু মিনিট পর ফিরে এসে ফোন টা চার্জ থেকে খুলে আফসানের সামনের চেয়ারটায় বসে বললো
-আমি আমার এই সিক্রেট কারো সাথেই কখনো শেয়ার করি নি।শুধু তোমার সাথে করেছি।
তারপর দু হাতে আফসানের মুখ টা ধরে বললো
-এটাই কি যথেষ্ট নয় প্রমাণ করতে আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি?
আফসানের চোখ লাল হয়ে গেছে।যে কোন সময় চোখ দিয়ে আগুন বের হবে এমন অবস্থা।স্নেহার হাত টা আফসান তার মুখ থেকে নামিয়ে এনে তার হাতে চেপে ধরে বললো
-তাহলে যাচ্ছ কেন চলে?ভালোবাসলে কি ফেলে রেখে যেতে হয়?
স্নেহার চোখে পানি।তবুও সে হালকা হাসি ঠোঁটে এনে বললো
-সমাজ।সমাজের কারণে।কারণ সমাজ আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি আর দশ টা মেয়ের মতো নাহ।তাহলে তারা যেটা করবে আমি তো সেটা করবো নাহ।ভালো থেক আফসান।একটা কথা,,,রূপবতী কাওকে বিয়ে করবে নাহ,কারণ সমাজ রূপবতীদের ভালো চোখে দেখে নাহ।
আফসান তাকিয়ে আছে স্নেহার হেটে যাওয়া পথের দিকে।চারিদিক কেমন যেন নিরব হয়ে আছে।আর আফসানের চোখ থেকে অঝোর ধারায় আগুনের ফুলকি বের হয়ে আসছে।

স্নেহা রিক্সায় বসে আছে।রিক্সাওয়ালা এর মাঝে বার বার জানতে চেয়েছে সে কোথায় যাবে।কিন্তু কোন উত্তর দেয় নি স্নেহা।স্নেহার এখন অজানা কোন এক ঠিকানায় যেতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু কোথায়??সে ভাবতে লাগলো আর দশ টা মেয়ে হলে কোথায় যেত,কোন ঠিকানায় যেত?সে যাবে ঠিক তার বিপরীত ঠিকানায়।

(চলবে)