দুষ্টু মিষ্টি প্রেম পর্ব-০৪

0
300

গল্পঃ দুষ্টু মিষ্টি প্রেম
পর্বঃ ০৪
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

বিকেলে ফেসবুকে স্ক্রল করছিলাম হঠাৎ দেখি ক্রাশ ডক্টর আমায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আমি একসেপ্ট করার সাথে সাথেই আমাকে ম্যাসেজে- ‘কেমন আছেন’ লিখে পাঠালো।রিপ্লাই দেওয়ার আগেই আরেকটা ম্যাসেজ দিল যা দেখে আমি তো অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গেছি।
ম্যাসেজটা ওপেন করে দেখলাম, “কিছু না মনে করলে আপনার সাথে কথা বলতে পারি।”
এ তো মেঘ না চাইতেই জল ভেবে মনে মনে হাসলাম। আমি ‘ওকে’ লিখে সেন্ড করলাম। সেন্ড করার পরপরই ক্রাশ ডক্টর আমাকে ম্যাসেন্জারে কল দিলেন। একি! ওনি ফোনে কথা বলতে চাইছে, আমি তো ভেবেছি চ্যাটিং করার বলেছে। আর কিছু না ভেবেই কলটা রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে তিনি বলে উঠলেন,

— আসলে সেদিন আপনি রাগ করে চলে আসছিলেন তাই আপনাকে আটকাতে ভুলবশত আপনার হাত ধরে ফেলেছি। আপনি নাকি অর্পাকে পড়াতে আসছেন না? যদি পড়াতে না আসার কারণ এটা হয়ে থাকে তাহলে সরি।

আমি ওনার হাত ধরাতে অস্বস্থিবোধ করেছি ঠিকই কিন্তু এটা পড়াতে না যাওয়ার কারন নয়। দুইদিন ধরে আমার ভালো লাগছিল না তাই পড়াতে যাই না।
আমি কোনো উত্তর না দেওয়ায় ওপাশ থেকে তিনি আবারও বললেন,

–কি হলো? কিছু বলবেন না?

–আরে এই সামান্য একটা কারনে আপনি বারবার সরি কেনো বলছেন? আমি ওই ব্যাপার নিয়ে মোটেও রাগ করি নি,তবে রাগ করেছি তখন গল্প নিয়ে কথা প্যাঁচাচ্ছিলেন।যদিও পড়াতে না যাওয়ার কারন এইগুলা না। ভালো লাগছিল না এমনিতেই তাই পড়াতে যাই নি। যাইহোক, ওইদিন হাসপাতালের কাহিনির জন্যও আপনার কাছেও আমার সরি বলা উচিত ছিল। এতোগুলো মানুষের সামনে আপনাকে কতকথা বলে ফেলেছি।

–আরে বাদ দিন সেসব কথা। সত্যিকথা বলতে কি আমি ছোটবেলা থেকেই একটু দুষ্টু প্রকৃতির। সকলের সাথে মজা করতে ভালো লাগে।

— ওহহ,আচ্ছা।। আর কিছু বলবেন?

–না,কিছু বলার নেই। তবে একটা কথা জানার ছিল
আপনি কি খুব বেশি রাগী?

ওনার কথা শুনে আমি হেসে দিলাম,

–কেনো, আমাকে দেখে কি রাগী মনে হয়?

–হ্যাঁ, আপনি অল্পতেই অনেক রাগ হয়ে যান।

এরকম আরো টুকটাক কথা বললাম ক্রাশ ডক্টরের সাথে, শেষমেষ কোন কথা না পেয়ে দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তারপর মা ডাকছে এই বাহানায় কলটা কেটে দিয়ে তাড়াতাড়ি রিহাকে ফোন দিলাম,

–হ্যালো রিহা,শোন না ওই ক্রাশ ডক্টর না আজকে আমাকে ফোন দিয়েছিল। ওনার নাম নির্ঝর।

আমার কথা শুনে রিহা চিৎকার দিয়ে বলল,

–কি বলিস? তোর নাম্বার পেলো কই?

–আরে, ম্যাসেন্জারে কল দিয়েছিল।৷

–কিহ! ম্যাসেন্জারে? ওই তোর সাথে এড হলো কীভাবে? কাহিনি কি? একটু খুলে বল তো..

আমি রিহাকে অর্পাদের বাড়িতে তাকে দেখার কাহিনি, টুনটুনির গল্প নিয়ে প্যাঁচ ধরা,তারপর ফেসবুকের এড হওয়া সব কাহিনি বললাম।আমার কথা শুনে রিহা আমাকে বলল,

— আচ্ছা, এতকিছু ঘটে গেল আর তুই মাত্র কাহিনি বলচ্ছিস।প্রেম করছিস তোরা, তাই না? প্রেমের শুরুতেই বেস্টুকে ভুলে গেলি বাকি দিন তো পড়েই রইলো। বিয়ে হলে তো মনে হয় দাওয়াতও দিবি না।তোর কাছে আমি এটা আশা করি নি নিঝুম।
(কথাগুলো রিহা কিছুটা অভিমান নিয়ে বলল)

–কিসের প্রেম? কিসের বিয়ে? তোকে এক লাইন বললে তুই আরো দশ লাইন বেশি বুঝিস। সামান্য একটা কাহিনিকে তুই এমন করে হাইলাইট করিস না,অসহ্য একেবারে! আমাদের মধ্যে এমন কিছুই নেই।এই দুইটা দিন মনটা ভালো ছিল না রে তাই তোকে জানাই নি।

–আরে শোন, আমি নিশ্চিত ওই ডাক্তার তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। তোকে পটানোর জন্য ফেসবুকে এড হয়েছে। এখন থেকে দেখিস প্রতিদিন তোকে ম্যাসেজ দিবে,তোর খোঁজ খবর নিবে।

— তুই সবসময় বেশি ভাবিস, এতো বেশি ভাবা উচিত না। তারপর আবার ডাঃ রিয়াদের মতো ডস খাব।

–আরে বাদ ওই রিয়াদের কথা। তুই তো ডাক্তার প্রপোজাল শুনেই লাফাচ্ছিলি ক্রাশ ডক্টর বলে।সেটা তোর দোষ। তুই তো বিশ্বাসও করিস না ওই ক্রাশ যে তোকে পছন্দ করে, কিন্তু আমি প্রমান দিব ওই ডাক্তার যে তোকে পছন্দ করে।

–কীভাবে?

— তুই ওনাকে কোনো একভাবে বল যে তুই অনেক একাকীবোধ করছিস, কোথা ঘুরতে যেতে পারলে তোর মাইন্ড ফ্রেশ হতো ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বলবি৷ তারপর সে যদি বলে তার সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা তাহলে একদম শিওর যে ওই ছেলে তোর প্রেমে একবারে হাবুডুবু খাচ্ছে। আর শোন যদি আমার কথা সঠিক হয় তবে বড় রকমের ট্রিট দিবি?

— সব তো ঠিক আছে কিন্তু আমাদের বাড়িতে যদি জানে তাহলে তো….

–আহারে, বাড়ির কথাও চিন্তা করো আবার প্রেমও করতে চাও, তাইলে হবে না। ফোন রাখ,,,তোর প্যানপ্যানানি শুনতে চাই না।
.
.
.
রিহার প্ল্যান অনুযায়ী আমি একটা স্টোরি দিলাম।
অবাক করার বিষয়, নির্ঝর তাতে রিপ্লাইও দিয়েছেন। আমি ভেবেছিলাম তিনি সিন করলেও রিপ্লাই দিবেন না।তাহলে রিহার কথাই কি সত্যি!
পরদিন বিকেলে আমাদের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান হলো। আমি, রিহা আর ক্রাশ ডক্টর যাব।
.
ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমি রেডি হচ্ছি মা এসে বললেন-“বাইরে যাওয়ার দরকার নেই, তোকে এখন পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।”

–কিহ! বলা নেই,কওয়া নেই দেখতে আসবে মানে কি?

–আমাদের আগেই বলছিলো, তারা আসবে কিন্তু তোকে বলি নি।

–কেনো বলো নি?

–সবকথার কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে?

মায়ের কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ক্রাশের সাথে প্রথমবার ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি, সেটাও হলো না। আমি রিহাকে আর নির্ঝরকে ম্যাসেজে না করে দিলাম। এর কিছুক্ষন পরে, আপু আর মা এসে আমাকে শাড়ী পড়ালো। তাদের কর্মকাণ্ডে পুরোই অবাক! আমি তাদের বললাম,

–দেখতেই তো আসবে, এখানে এমন শাড়ী পরার কি আছে? বিয়ে তো হয়ে যাচ্ছে না…

আপু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
–হতেও তো পারে।

আপুর কথা শুনে আমি অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছালাম,
–মানে, আমার বিয়ে,অথচ আমিই জানি না। সবাই আমার কাছ থেকে কি লুকাচ্ছো? আমি এখন বিয়ে-টিয়ে করতে পারব না।

— ঢং কম করবি! তোর তো বিয়ের বয়স হয়েছেই, এমনো না যে তুই ছোট। তোকে বিয়ে দিয়ে তিয়াশকে বিয়ে করাব, ওরো তো বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। আর শোন পাত্রপক্ষের সামনে উল্টা-পাল্টা কিছু করবি না। এর আগে যে তুই ডাঃ রিয়াদকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে বিয়ে ভেঙেছিস সেটা খুব ভালো করেই জানি। (মা খানিকটা রাগ নিয়ে কথাগুলো বলল)
.
.
.
সন্ধ্যায় আমার এনজেংমেন্ট হয়ে গেল। একসপ্তাহ পরে নাকি বিয়ে একথা শুনে আমি পুরোই থ! তারা আজকেই ঘরোয়াভাবে কাবিন করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু বাবা রাজি হয় নি, তার ইচ্ছে বড়মেয়ের মত ছোটমেয়ের বিয়েটাও ধুমধাম করে দিবে। তাই একসপ্তাহ সময় নিয়েছে।আমি আমার ২০ বছরের জীবনে তেমন অবাক করার কোনো কাহিনি ঘটেনি।কিন্তু কয়েকটা দিন ধরে যে কত অবাক করার মতো কাহিনি ঘটছে বলার বাইরে। ছেলে ব্যাংকে চাকুরী করে। বাড়ির সকলে সবকিছু জানতো শুধু আমায় জানায় নি। তাদের ধারণা এর আগের বিয়ের প্রস্তাবটা আমি ভেঙেছি। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল আমাকে ঘাড় থেকে নামাতে পারলেই হলো। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছিল। কান্নার কারণ আমি নিজেও জানি না।
ওই নির্ঝর তো শুধু আমার ক্রাশ,মাত্র দুদিনের পরিচয়। তার জন্যই কি আমার এত খারাপ লাগছে? আমরা দুজন দুজনকে ভালোও বাসি না,তারপরও মনটা কেমন খারাপ হয়ে আছে। আমার পাশে রিহা চুপচাপ বসে আছে। আমার মন খারাপের কারনটা হয়ত রিহা বুঝতে পেরেছে।

–সরি রে,দোস্ত। আসলে আমি সবকিছু একটু বেশিই ভাবি।সিনেমা দেখে দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিল তাই তোদের সামান্য কাহিনিকে অনেক রংচংয়ে বানিয়ে ফেলেছিলাম। বাস্তবে তো আর এগুলো হয় না।বাদ দে নির্ঝরের কথা।

–আমি নির্ঝরের কথা ভেবে কষ্ট পাব কেনো? তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক আছে নাকি,আজব কথাবার্তা তোর। আমি ভাবছি আমার পরিবারের কথা আমার বিয়ে ফাইনাল অথচ একবারও আমার সাথে এ ব্যাপারে কথা বললো না।
.
.
.
আমার হবু বর আবীর কিছুটা লাজুক প্রকৃতির। আগে আত্মীয়স্বজনদের দেখতাম হবু বরের সাথে ফোনে কত কথা বলে অথচ আমার হবু বর ফোনে কথা তো দূরে থাক,একটা ম্যাসেজ পর্যন্ত দেয় না।কিন্তু সবসময় ফেসবুকে অ্যাক্টিভ থাকে, আমিই সেধে তাকে ম্যাসেজ করি।তার ম্যাসেজের উত্তর দেখে আমি হতাশ হই।
.
অবশেষে আমার বিয়ের দিনটা ঘনিয়ে এলো। বউ সেজে বসে আছি। আজকে নিজেকে সেলিব্রিটি সেলিব্রিটি লাগছে কারণ সবাই আমার সাথে ছবি তুলছে। হঠাৎ বাইরে অনেক চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। ঘর থেকেই শুনতে পেলাম বিয়ের বর পালিয়েছে আরেক মেয়েকে নিয়ে। একথা শুনে
আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। বাবা-ভাইয়া ওনারা বাইরে রাগারাগি করছে।
.
.
বর না আসায় আমার বিয়ে হয়ে গেল আমার ক্রাশ ডক্টরের সাথে। এখন গাড়ীতে করে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। একরকম সিনেমার কাহিনির মতো বিয়ে হয়েছে আমাদের দুজনের। এমন তো নয় যে ক্রাশের সাথে বিয়ে হওয়ার ঘটনাটা স্বপ্নের কাহিনি! ঘুম ভাঙলেই স্বপ্নটা চলে যাবে…..

#চলবে
#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেম
#নিঝুম_জামান

(ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।)