দুষ্ট মিষ্টি প্রেম পর্ব-০৩

0
307

গল্পঃ দুষ্ট মিষ্টি প্রেম
পর্বঃ০৩
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

আমি আর রিহা তাড়াতাড়ি গেলাম ওনার সামনে। গিয়ে আমরা দুজনেই প্রচন্ড শকড হলাম।সামনে বসে থাকা লোকটাকে দেখে আমার মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। একি! এটা তো আমার ক্রাশ ডক্টর নয়।

অপরদিকে, ডাঃ রিয়াদ হাসান সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর মাঝে একজনের ছবি তার মায়ের ফোনে দেখছিলেন যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই চিনতে অসুবিধা হয় নি। কিন্তু ছবিতে শাড়ী পরা ছিল তাই দেখতে বেশ বড় মনে হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখতে তো নাইনে টেনে পড়ুয়া বাচ্চা মেয়েদের মতো দেখতে। চুলগুলো কাঁধ থেকে হালকা নিচে,একটা লং টপস পড়ে এসেছে, যার কারনে একবারেই বয়স কম লাগছে। এ মেয়ে কি আদৌ অনার্সে পড়ে?

নিঝুমের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আমার সামনে বসা থাকা ডাক্তার রিয়াদ বললেন,

–আপনিই তো মিস নিঝুম, রাইট? প্লিজ বসুন আপনারা।

–জ্বি,কিন্তু আপনি কে? (মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে গেল)

আমার প্রশ্ন শুনে লোকটা থতমত খেয়ে বলল,

–মানে? আমিই তো রিয়াদ হাসান। আমার সাথে তো আপনার বিয়ের কথাবার্তা চলছিল, তাই না?

তার কথা শুনে আমার হুঁশ এলো। ভাঙাচোরা মনটাকে নিয়ে ডাঃ রিয়াদের সামনে বসলাম।

–সরি। কি বলতে কি বলে ফেলেছি।

–ইট’স ওকে। তা নিঝুম আপনি কি সত্যিই অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন? না মানে আপনাকে দেখতে অনেক ছোট লাগে তো তাই জিজ্ঞেস করছি।

–জ্বি, আমি সত্যিকারীই অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। (ব্যাটার এমন গাঁ জ্বালানো প্রশ্ন শুনে বিরক্ত লাগছে।মনে মনে ক্রাশ ডক্টরের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছি)

–আসলে একটা কীভাবে বলব ভাবছি, আমি মেবি আপনার থেকে দশ বছরের বড় হবো। বলতে গেলে আমার তুলনায় আপনি একেবারেই বাচ্চামেয়ে।আমার ইচ্ছে আমি আমার জীবনসঙ্গী হবে আমার মন মানসিকতার সাথে মিলে এমন একজন। যার সাথে আমি আমার সুখ-দুঃখ শেয়ার করবো। আমার মায়ের আবার আপনাকে ভীষণ ভালো লেগেছে তাই আপনার সাথে আমাকে দেখা করতে বলেছে।আমার বউ হিসেবে মা আপনাকে দেখতে চায় কিন্তু আপনাকে দেখে সবাই ১৫/১৬ বছরের কিশোরী ভাববে,দেখা যাবে বিয়ের পর লোকজন বাল্যবিবাহ করেছি ভেবে মামলা ঠুকে বসল।
বলে রিয়াদ সাহেব হাসতে লাগল। তারপর হাসি থামিয়ে আবার বলল,
আপনি কিন্তু মেয়ে হিসেবে অসাধারণ। একটু চঞ্চল প্রকৃতির। তো আমিই তো সব বললাম, আপনিও কিছু বলুন।

–জ্বি। আসলে আমার আপনাকে কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না। এটা আমার বান্ধবী রিহা।
(রিহাকে দেখিয়ে) তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম,
–আপনার আমাকে বিয়ে করতে আপত্তি থাকলে সরাসরি বলতে পারেন, আমি কিছু মনে করব না।

— আরে না,আমি সেটা বলতে চাই নি।(কথা ঘোরানোর চেষ্টা) আচ্ছা, আপনারা কি খাবেন বলুন?

–না,,না, কিছু খাব না। আজ তাহলে আমরা আসি।

–আরে না,কিছু তো খেতেই হবে।

বলে তিনি ওয়েটারকে ডাক দিয়ে কোল্ড ড্রিংকস আর চিকেন শর্মা অর্ডার করলেন। আমরা কোনোমতে খেয়ে ডাঃ রিয়াদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে রিহাকে বললাম,

–আজকে কি ডস-টাই না খেলাম! আমরাও কি ছাগল, পেশায় ডাক্তার শুনে ক্রাশ ডক্টর ভেবে লাফাচ্ছিলাম, মাথায় একবারও আসে নি অন্য ডাক্তারও তো পারে।আর ওই রিয়াদ সাহেব কি আমাকে বাচ্চামেয়ে বাচ্চামেয়ে ঘ্যানঘ্যান করে গেল। মনে হয় আমাকে তার পছন্দ হয় নি।ইন্ডাইরেক্টলি না করে গেল।

–আমারও তাই মনে হয় রে নিঝুম। তবে বলতে হয় লোকটা বেশ সুন্দর ছিল।

–হ্যাঁ, তা ছিল বটে। তবে বিয়েটা ভেঙে গেছে ভালোই হলো বলে ওরা দুই বান্ধবী হাই ফাইভ করে নিল।

🥀🥀……

এর মাঝে আরো অনেকদিন অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে আপাতত আমার বিয়ে-শাদির আলাপ-আলোচনা বন্ধ। আজকে সরকারি ছুটি, তাই ভার্সিটিতে যাই নি। তাই তাড়াতাড়ি টিউশনি পড়াতে যাব,পড়িয়ে এসে সারাদিন আরাম করব। স্টুডেন্টের বাড়ি গিয়ে দরজায় দুটো টোকা দিতেই ভিতর থেকে একজন বলল,দরজা খোলাই আছে।ডোর লকটা মোচড় দিতেই দরজাটা খুলে গেল।খোলার পর দেখি সোফায় হাত-পা ছড়িয়ে ল্যাপটপ নিয়ে আমার ক্রাশ ডক্টর বসে আছে। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। সেদিন ডাঃ রিয়াদের সাথে ডস খাওয়ার পর ক্রাশ ডক্টরকে প্রায় ভুলেই গেছিলাম। আমাকে দেখে ক্রাশ ডক্টরও ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললেন,

–একি আপনি এখানে?

–তার আগে বলুন আপনি এই বাড়িতে কি করেন?(নিঝুম)

–প্রশ্ন আমি আগে করেছি আপনি তার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করছেন,আজব মেয়ে তো আপনি?
আর এটা আমার বাসা।

–আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না তাই দেই নি আর আপনার বাসা মানে ঠিক বুঝতে পারলাম না?

–এখানে না বোঝার কিছু নেই।

আমাদের ত্যাড়াব্যাঁকা কথোপকথন শুনে অর্পার মা ভাবী এলেন।
–কি হয়েছে? এতো চেঁচামেচি কিসের?

ভাবীকে দেখে ওনি জিজ্ঞেস করলেন,
–ওনি কে ভাবী? আপনার বান্ধবী?

–না, ও হচ্ছে নিঝুম। আমাদের অর্পার নতুন ম্যাডাম। তারপর ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ” ও হচ্ছে নির্ঝর,আমার একমাত্র ছোট দেবর। তা তোমরা দুজন দুজনকে চিনো নাকি? ”

–নাহ,ভাবী চিনি না। (নির্ঝর)

–না চিনলে দুজনে এত কি কথা বলছিলে ?আমি কিন্তু ওপাশ থেকে সব শুনতে পেয়েছি।

আমি ভাবীর কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে বললাম,
–ভাবী আসলে প্রায় একমাস ধরে অর্পাকে পড়াই কিন্তু ওনাকে কোনোদিন দেখি নি তো তাই আর কি জানতে চাইলাম ওনি অর্পার কি হন? (নিঝুম)

–ওহহ আচ্ছা। আসলে তুমি যেই সময়ে পড়াতে আসো ওই সময়ে তো নির্ঝর হাসপাতালে যায় তাই হয়ত দেখ নি।

এই কথার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অর্পাকে পড়ানো শুরু করলাম। কিন্তু ডক্টর সাহেব তো ড্রয়িং রুমেই বসে বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে। রুমে কেউ বসে থাকলে আমি ঠিকমত পড়াতে পারি না তার ওপর সামনে বসে আছে ক্রাশ। কি অসস্তিকর ব্যাপার!
আজকে আবার ছাত্রী অর্পা বায়না ধরেছে সে পড়বে না,আমাকে তার সাথে গল্প করতে হবে, তাকে কবিতা – গান এসব শোনাতে হবে। ওর এমন অদ্ভুত আবদারে ভীষণ রাগ লাগছে।প্রথমত আমার টিউশনি করা একেবারেই ভালো লাগে না, প্রচুর ধৈর্যের ব্যাপার আমি আবার অল্পতেই অধৈর্য্য হয়ে পড়ি,দ্বিতীয়ত নার্সারিতে পড়া ছোট বাচ্চা মেয়ে। মনে মনে রাগ হচ্ছে কেনো যে মিথিলা আপুর পটানোতে পটে টিউশনিতে এসেছিলাম। তার ওপর আবার এই লোকটার বাড়ি। আসলে আমি টিউশনি পড়াই না। আমার চাচাতো বোন মিথিলা আপুর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় অর্পার নতুন টিচার লাগবে,তাই আপু আমাকে বলে গিয়েছে অর্পার নতুন টিচার পাওয়ার আগপর্যন্ত আমি যাতে পড়াই। প্রায় একমাস ধরে অর্পাকে পড়াই অথচ এই একমাসে আমার জীবনে কত অদ্ভুত কাহিনি ঘটেছে। রাস্তায় পাগলের দৌড়ানি খাওয়া, কুকুরের দৌড়ানি,গরুর দৌড়ানি সব যেন টিউশনি পড়াতে আসতে গেলেই এমন হবে তা ফিক্সড করা। যাইহোক অর্পাকে উত্তর দিলাম,

–আমি গান গাইতে জানি না। (গান জানলেও তো বলব না,কারন সামনে নির্ঝর সাহেব বসে আছেন)

–তাহলে কবিতা শোনাও ম্যাম,সেটাও না পারলে গল্প বলো….

— কবিতা শোনানোর চেয়ে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলা অনেক ভালো।ওকে গল্প বলা শুরু করলাম,

” একদেশে ছিল একটা টুনটুনি। সে একদিন রাজার রোদে শুকাতে দেওয়া চুরি করে নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখল।তারপর….

–একমিনিট ম্যাম, আমার একটা প্রশ্ন -একটা দেশে কি একটাই টুনটুনি বাস করতো? (নির্ঝর)

নির্ঝরের কথা শুনে অর্পাও বলল,
–হ্যাঁ, ম্যাম একটা দেশে কি একটাই টুনটুনি বাস করে?আর ও যদি একাই বাস করে তাহলে অসুখ হলে কে সেবা করবে? তখন টুনটুনি কীভাবে রান্না করে খাবে?
ওদের এমন উদ্ভট মার্কা প্রশ্নে আমি থতমত খেলাম। কি উত্তর দিব মাথায় আসছিল না।
ওদিকে নির্ঝর খিকখিক করে হেসে দিল। নির্ঝরের হাসির শব্দ শুনে নিঝুম চোখ গরম করে নির্ঝরের দিকে তাকায়।তারপর অর্পাকে বলে,

–অসুস্থ হলে তোমার চাচ্চু গিয়ে টুনটুনির সেবা করবে।তিনি তো ডক্টর, তাই না?(কথাটা বলে নিঝুম হেসে দেয়)

–কিন্তু চাচ্চু তো টুনটুনির বাসা চিনে না,এখন কি হবে?(অর্পা)

গল্প বলতে গিয়ে আচ্ছা মুশকিলে পড়লাম
তো! (মনেমনে)
–আমি ঠিকানা জানি, তোমার চাচ্চুকে ঠিকানা দিব নে।

–আমার অনেক কাজ আছে অর্পার ম্যাম,আমি টুনটুনিকে দেখতে যেতে পারব না। তাছাড়া টুনটুনিকে দেখতে যাওয়ার গাড়ী ভাড়ার টাকা নেই।
শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে নির্ঝর কথাগুলো বলল।

নির্ঝরের কথা শুনে নিঝুম বেশ রেগেই বলে উঠল,
— ধুর, আমি আর গল্পই বলবো না। গল্পের মধ্যে নাকি কেউ এত প্যাঁচ ধরে,অসহ্য একেবারে।দু লাইন গল্প বলতে চার লাইন প্রশ্ন। আপনি একজন বড় মানুষ তার ওপর ডাক্তার , আপনি কীভাবে এমন উদ্ভট কথা বলছেন? আপনাকে কি কেউ গল্প শুনতে বলেছে?
(অসভ্য লোক আমাকে জব্দ করে আজকেই তোকে ক্রাশ লিস্ট থেকে ডিলেট করব…মনে মনে)

–ডাক্তার বলে কি গল্প শোনার অধিকার নেই ম্যাম?(নির্ঝর)

–ফালতু যত্তসব! বলে রাগ দেখিয়ে উঠে আসতে নিলে নির্ঝর আমার হাতটা টেনে ধরে বলে,

–সরি,আর এমন করব না। আপনি প্লিজ রাগ করে চলে যাবেন না।আমি জাস্ট মজা করছিলাম।

আমি ওনার কথা শুনে একবার ওনার চেহারা আরেকবার আমার হাতের দিকের তাকাতেই ওনি আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল,

–সরি,আ’ম এক্সট্রিমলি সরি। বুঝতে পারি নি।

তার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই আমি বাসায় চলে এলাম। রাস্তা দিয়ে আসার সময় বারবার মনে হচ্ছিল সাধারণ একটা ঘটনায় আমি বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছি। ছোটবেলা থেকেই আমি অল্পতে রেগে যাই।

🥀🥀…..

সেদিনের পর দুইদিন ধরে পড়াতে যাই না।কেনো যাই না নিজেও জানি না। বিকেলে ফেসবুকে স্ক্রল করছিলাম হঠাৎ দেখি ক্রাশ ডক্টর আমায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আমি একসেপ্ট করার সাথে আমাকে ম্যাসেজ- ‘কেমন আছেন’ লিখে পাঠালো।রিপ্লাই দেওয়ার আগেই আরেকটা ম্যাসেজ দিল যা দেখে আমি তো অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গেছি…….

#চলবে
#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেম
#নিঝুম_জামান (ছদ্মনাম)

( ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।)