দুষ্টু মিষ্টি প্রেম পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
470

গল্পঃ দুষ্টু মিষ্টি প্রেম
পর্বঃ ০৫ (শেষ পর্ব)
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

বর না আসায় আমার বিয়ে হয়ে গেল আমার ক্রাশ ডক্টরের সাথে। এখন গাড়ীতে করে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। একরকম সিনেমার কাহিনির মতো বিয়ে হয়েছে আমাদের দুজনের। এমন তো নয় যে ক্রাশের সাথে বিয়ে হওয়ার ঘটনাটা স্বপ্নের কাহিনি! ঘুম ভাঙলেই স্বপ্নটা চলে যাবে।
কিন্তু ক্রাশ ডক্টরের সাথে আমার স্বপ্নে নয় বাস্তবেই বিয়ে হয়েছে। আমাদের বিয়েরটা হয়েছে একবারেই কাকতালীয়ভাবে।

★★★অতীত★★★

কিছুকথা বাতাসের আগে ছড়ায় ঠিক আমার হবু বর আবীর বিয়ের দিন অন্য মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে
যাবার কাহিনিটা মুহূর্তেই পুরো গ্রামে রটে গেল। আবীরদের বাড়ি আমাদের এলাকায়ই। আবীর ওর এক দুঃসম্পর্কের চাচাতো বোনকে নিয়ে পালিয়েছে।
এখানেও অনেক বড় কাহিনি ঘটছে, আবীরের প্রেমিকারও আজকে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। লোকমুখে জানতে পারলাম, আবীরের বাবার সাথে ওই মেয়ের বাবার সম্পর্ক একেবারেই খারাপ ছিল। বলা যায়, দা-কুমড়া সম্পর্ক।ওদের সম্পর্কের কথা দুই পরিবারের কেউ মেনে নিতে পারে নি। তাই আবীরের পরিবার আমার সাথে তাড়াহুড়ো করে বিয়ের ব্যবস্থা করে। ওইদিকে ওই মেয়ের পরিবার থেকেও বিয়ের ব্যবস্থা করে আমার ক্রাশ নির্ঝরের সাথে। ওদের দুই পরিবারের মধ্যে চ্যালেন্জ হয় যে, কে কার আগে বিয়ে দিতে পারে। আবীরের পরিবার স্নেহার পরিবারকে আগে চ্যালেন্জ জানিয়েছে- তারা স্নেহাকে অন্য কোথাও বিয়ে হওয়ার আগেই আবীরকে বিয়ে দিয়ে বৌ ঘরে তুলবে। একথা শুনে স্নেহার বাবাও রেগে গিয়ে চ্যালেন্জ করে আবীরের বৌ ঘরে উঠার আগে স্নেহার বিয়ে অন্যকোথাও দিবেন। একসপ্তাহ আগে বা পরে না একেবারে একইদিনে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়। কিন্তু দুই পরিবারের অমতে দুজন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পালিয়ে যায়।একারনেই হয়ত আবীরের সাথে আমি কথা বলতে চাইলেও ও আমাকে ইগনোর করত।
.
বাবা ভীষণ রাগ হয়ে বলল,বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে আবীর আর ওর প্রেমিকা কই ছিল,তখন পালিয়ে যেত।এত কাহিনি করে লোক হাসানোর কি দরকার ছিল? এখন কি হবে আমার মেয়ের?
এলাকার মানুষজন তখন ঠিক করে যে যেহেতু আমার হবু বর আর ওদিকে নির্ঝরের হবু বউ চলে গেছে তাই আমাদের দুজনের মধ্যে যাতে বিয়েটা হয়।
সেদিনই আবীর আর ওর প্রেমিকা স্নেহাদের দুই পরিবারের মিল হয় তাও আমাদের বিয়ের মাধ্যমে মানে আমার সাথে নির্ঝরের বিয়ের বিষয়টাকে নিয়ে। আবীর আর স্নেহার দুই পরিবারই সেদিন আমার আর নির্ঝরদের পরিবারের কাছে লজ্জিত ও বারবার ক্ষমা চাইছিল। তারপর….

তারপর আর কি, সকলের সম্মতিতে নিঝুম এবং নির্ঝরের বিয়েটা হয়ে গেল।
আসার সময় রিহা আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,

–কিরে নিঝুম! আমার কথা মিললো তো…
সেই তোর ক্রাশের সাথেই বিয়ে হলো। যা কিনা সিনেমার কাহিনিকেও হার মানালো।

ওর কথা শুনে আমি লজ্জামিশ্রিত একটা হাসি দিলাম।

————★★★———-

★★★★বর্তমান★★★★

বাসরঘরে বসে বসে ফেসবুক চালাচ্ছি। নির্ঝর এখনো আসে নি। আগামীকাল বৌভাত তারপর আমাদের বিয়ের ঝামেলা কাটিয়ে উঠতে পারে নি। আমার কাছে নতুন পরিবেশ লাগছে না,নিজের বাড়ির মতোই লাগছে তার কারন এই বাড়িতেই টিউশনে আসতাম। যেদিন অর্পাকে আর পড়াব না বলে যাই সেদিন অর্পা অনেক কেঁদেছিল।আর আজকে আমাকে দেখে কি খুশি! আমাকে বলে,
–তুমি এখন থেকে আমার ম্যাম আর মামনি। চাইলেও আমাকে আর না পড়াতে পারবে না।
ওর কথা শুনে বাড়ির সবাই হেসে দেয়।
.
ফোন হাতে নিয়েই বসে আছি।হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে।বলা যায় ছোটখাটো রচনা। ম্যাসেজটা পাঠিয়ে আবীর।সেখানে লেখা-

“আমি জানি নিঝুম,আজকে তোমার সাথে যা করেছি তা অন্যায়।তবে আজকে তোমাকে বিয়ে করলে স্নেহার সাথে সবচেয়ে বড় অন্যায় করা হত।ওর সাথে আমার সাত বছরের সম্পর্ক। আজকে ওকে বিয়ে করার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পেল।তুমি আমাকে মাফ করে দিও। তোমার জন্য অনেক শুভকামনা। ”

আমি আবীরের ম্যাসেজ পড়ে মনে মনে কিছুক্ষন হাসলাম। ব্যাটা নিজেও জানে না, সে নিজের অজান্তে আমাকে আমার ক্রাশের সাথে বিয়ে হওয়ার সুযোগ করে দিল। আমি তাদেরকে নবদম্পতি হিসেবে শুভকামনা জানালাম।
.
এর মধ্যেই নির্ঝর রুমে এলো। এসে আমার পাশে বসলো।আজকে ভালো করে খেয়াল করলাম নির্ঝর হাসি দিলে একগালে টোল পড়ে,যার কারনে ওকে আরো কিউট লাগে।

–কি ব্যাপার এতো হাসছো কেন? (নির্ঝর)

–এই দেখুন না (মোবাইলটা সামনে ধরে) আবীর আমাকে ম্যাসেজ করেছে…

ম্যাসেজটা পড়ে নির্ঝর হেসে দিয়ে বলল,

–আহারে বেচারা আমাদের উপকার করে দিয়ে আবার নিজেই মাফ চাইছে।

আমি জানি যে নির্ঝর আমাকে কিছুটা পছন্দ করত, কিন্তু ওর মুখে শোনার জন্য আমি না জানার ভান করে বললাম,

–কই কিসের উপকার করলো? ওদের জন্য আজকে কত ঝামেলা হলো।

আমার মনের ভাবটা মনে হয় নির্ঝর বুঝে ফেলল।তারপর বলল,

— আহারে এমন ভাব করছো যেন কিছু বুঝ না। আমি যে তোমাকে পছন্দ করি, সেটা তো তুমি জানতে আর তোমার ভাবভঙ্গি দেখেও তো মনে হত তুমি আমাকে পছন্দ করো….

–ইশ! আমি না, আপনিই আমাকে পছন্দ করতেন।
তা আমাকে যখন আপনি পছন্দ করতেন তাহলে আবীরের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগেই আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতেন তাহলেই তো হতো।
আপনি তা না করে স্নেহাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।

— তোমরা মেয়েরা ভেঙে যাবে,তবুও মচকাবে না।
শোনো, তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান ছিল মনে আছে? সেদিন তোমাকে প্রপোজ করার ইচ্ছে ছিল,তুমি আমার প্রপোজ একসেপ্ট করলে সরাসরি তোমাদের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতাম। কিন্তু তুমি না আসায় খবর নিয়ে জানতে পারি তোমার ওইদিন এনজেংমেন্ট ছিল। তারপর আর কি? পরপর দুই-দুইবার ছ্যাঁকা খেয়েছি,এবার আর না। লাভ ম্যারেজের চিন্তা বাদ দিলাম।সিদ্ধান্ত নিলাম এবার একেবারে বিয়েই করে ফেলব।যাদের একটু পটাতে চাই তারাই আমাকে রেখে অন্য ছেলেদের বিয়ে করে ফেলে।এরপর এই কয়দিনের মধ্যেই স্নেহার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা হয়, স্নেহা দেখতেও যথেষ্ট সুন্দরী। না করার কোন কারন নেই।ওর পরিবার চাইছিল এই সপ্তাহেই যাতে বিয়েটা হয়ে যায়। আমরাও আর আপত্তি করি নি। তারপরের কাহিনি তো জানোই…

আমি গাল ফুলিয়ে উত্তর দিলাম,
— নিজের স্ত্রীর সামনে আরেক ব্যাটার বউয়ের প্রশংসা করতে লজ্জা লাগে না।

–কই আরেক ব্যাটার বউয়ের করলাম? (অবাক হয়ে নির্ঝর জানতে চাইল)

–এই যে, আমার সামনে মিসেস আবীরের প্রশংসা করছেন ” ও দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী, ওর চেয়ে কি আমি কম?” আর পরপর দুবার ছ্যাঁকা খেয়েছো মানে কি? সত্যি করে বলো বিয়ে আগে কয়শো প্রেম করছো? (রাগ দেখিয়ে)

–আরে ওইটা বুঝানোর স্বার্থে স্নেহাকে সুন্দরী বলেছি। তুমিই তো আমার দেখা বিশ্বসুন্দরী। আর প্রেমের কথা বলছো! যেখানে একটা প্রেমও ঠিক মত করতে পারি নি সেখানে তুমি বলছো কয়েকশ! হাসালে নিঝুম….

–তাহলে দুইবার ছ্যাঁকা খেয়েছো কীভাবে সেটা বলো?

— একটা হচ্ছে তোমাকে দিয়ে ছ্যাঁকা খাইছি। মানে তোমাকে আমার মনের কথা জানানোর আগেই তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় আর আরেকটা হচ্ছে
মেডিকেল থার্ড ইয়ারে যখন পড়তাম তখন একটা মেয়ের সাথে ফেসবুকে অনেক কথাবার্তা হতো। অনেক ভালো একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। একদিন ফেসবুকে ঢুকে কি দেখি জানো?

–জানার জন্যই তো শুনছি, এখানে প্রশ্ন করছো কেনো? বলে ফেলো তাড়াতাড়ি।

–আচ্ছা, বলার আগে একটা কথা বলি। সেটা হচ্ছে তুমি কথার মাঝে তোমার নিজের অজান্তেই আমাকে ‘তুমি’ বলে ডাকছো।

–তো? তুমি এখন আমার হাজবেন্ড, তোমাকে কি
আজ্ঞে – আপনি বলে ডাকতে হবে?তুমি কিন্তু ফালতু কথা বলে তোমার এক্সের কথা ঘোরাতে চাইছো…

–আরে ধুর…কিসের এক্স?

–কাহিনিটা বলো তাড়াতাড়ি…

–একদিন ফেসবুকে ঢুকে দেখি ওর বিয়ের ছবি দিয়ে পোস্ট করা- “আলহামদুলিল্লাহ, বিয়ের মাধ্যমে আমাদের চার বছরের সম্পর্কের পূর্ণতা পেলো”
সেটা দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছিলো।এরপর তোমাকে দেখে ভালো লাগার পরও সেইম কাহিনি ঘটতে গিয়েও ভাগ্য আমাদের মিলিয়ে দিয়েছে।

–হ্যাঁ,আমাদের বিয়ের কাহিনিটা বলা যায় পুরোই সিনেমার কাহিনি। তুমি নায়ক আর আমি তোমার নায়িকা। (লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে)
সবই ঠিক আছে কিন্তু তোমার রুমের সাথে বারান্দা না থাকায় আমরা চাঁদ দেখে রোমান্টিক কথা বলতে পারছি না।

–বারান্দা নেই ঠিক আছে।কিন্তু চাঁদ দেখা যাবে।
তুমি ওই উত্তর পাশের জানালার পর্দাটা সরিয়ে থাইটা খুলে দাও…দেখো চাঁদের আলো আমাদের রুমে এসে পড়েছে।

আমি নির্ঝরের কথা শুনে জানালা খুলে দিলাম।সত্যিই চাঁদের আলোয় বাইরের সবকিছু ঝলমল করছে।হয়তো আজকে পূর্নিমা।এবার নির্ঝরকে বললাম,

–এবার তুমি আমাকে ওই চাঁদকে দেখিয়ে সিনেমার নায়কদের মতো কথা বলো..

–আমি সিনেমার নায়ক না তাই ওইসব চাঁদ দেখিয়ে কথা বলতে পারি না।চাঁদ কি মানুষ? ওর সাথে তোমার তুলনা করবো…

আমি গাল ফুলিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ও আমার হাতে চিমটি কেটে বলল,

–আর রাগ করতে হবে না…আমি নায়কদের মতোই সবকথা বলছি, খুশি তো?

–হ্যাঁ…অনেক।।


এভাবেই কাটতে থাকুক ওদের খুনসুটিতে ভরা ভালোবাসা। ভালোবাসায় ভরে যাক ওদের সংসার।
.
(সমাপ্ত)

(ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন? আপনাদের ভালোলাগাই আমার লিখার অনুপ্রেরনা)

★★★………..★★★………★★★………★★★