দূর দ্বীপবাসিনী পর্ব-০৫

0
451

#দূর_দ্বীপবাসিনী (কপি করা নিষিদ্ধ)
#৫ম_পর্ব

মাথার ক্লিপের জন্য হাত দিয়ে হাতড়াতেই হাতে বিধলো শক্ত একটা পাথরের অংশ। চোখ কচলে নজর দিলো সেখানে। একটা লাল কাগজের ধলা। চারুর ভেতরটা একটু নড়ে উঠলো। কাঁপা হাতে খুললো লাল কাগজটি। লাল মোটা কাগজ পাথরে মোড়ানো। তাতে গোটা গোটা কালো বর্ণে লেখা,
“কেমন আছো দূর দ্বীপবাসিনী? হয়তো ভালোই আছো! কারণ নিষ্ঠুর মানুষেরা ভালোই থাকে। তুমি যে খুব নিষ্ঠুর দূর দ্বীপবাসিনী, তা কি তোমার জানা আছে? হয়তো নেই। তাইতো আমার ভালোবাসাকে অস্বীকার করে অন্যের ঘরের প্রদীপ হতে গিয়েছিলে। আমার কঠিন ভালোবাসাটা কি এতোটাই ঠুঙ্কো! আজ অবধি কতোশত চিরকুট লিখলাম, উত্তর পেলাম না একটিরো, কিন্তু আমি জানি তুমি আমার চিরকুট পড়ো, পড়ে সযত্নে রেখে দাও। তবে কিসের বাধা! এই দেখোই না, পরম করুণাময়ও চান তুমি আমার হও, একান্ত আমার। তাই তো বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো। তবুও তুমি বুঝো না, বড্ড অবুঝ তুমি। আমার বড্ড অভিমান হয় জানো, অভিমান হয় যখন তোমাকে অন্যের সাথে দেখি। রাগ হয়, ক্রোধের অনলে জ্বলি। ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে তোমাকে নিজের মাঝে ধারণ করি। কিন্তু পারি না। আমি তোমার নেত্রে আমার জন্য কৃষ্ণভয় দেখতে ভয় পাই। খুব ভয় পাই। আমি সইতে পারবো না দূর দ্বীপবাসিনী, তোমার চোখে নিজের প্রতি শীতলতা। তবে একদিন আমাদের দেখা হবেই, হতেই হবে। সেদিন আমার প্রতি কোনো ভয় থাকবে না তোমার হৃদয়ে। থাকবে শুধু ভালোবাসা। রংধনুর ন্যায় সাত রঙ্গের ভালোবাসা।

ইতি
তোমার পাগল প্রেমিক”

চারু বসে রয়েছে। অজান্তেই চোখটা ভিজে এসেছে। এই নোনাজলের কারণ তার জানা নেই, ভয়, আবেগ নাকি অন্যকিছু। স্তব্দ ঘর, নীরবতা গিলছে শান্ত ভোরের মুহুর্ত। চারু নীরব চোখে দেখলো জানালার খোলা পাল্লা থেকে আগত এক সরু হলদে আলোর রেখা। প্রতিবারের মতো গতরাতেও সে এসেছিলো। এসেছিলো নিজের দূর দ্বীপবাসিনীর এক ঝলক দেখতে। চারু নিজেকে সামলে নিলো। উঠে গেলো নিজের টেবিলের কাছে। পিতলের একটা বাক্স বের করলো ডেস্ক থেকে। সেটায় রয়েছে লাল নীল হাজারো চিরকুট, পরম যত্নে আগলে রাখা হাজারো প্রেমঘন শব্দ। চারু এই চিরকুটটাও রাখলো যত্নে। চাইলেও ফেলে দিতে পারে না এগুলো, মায়া হয়। চিনচিনে ব্যাথা হয় বুকের বা পাশে। এই চিরকুটগুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে হাজারো বিচিত্র মিশ্র অনুভূতি। একে একে চল্লিশখানা চিরকুট বের করলো। আজকেরটা যোগ দিলে হবে একচল্লিশটা। চিরকুটে চোখ বুলাতে বুলাতে অতীতের রঙ্গ বেরঙ্গের স্মৃতিগুলো সেলুলয়েডের চিত্রের মতো ভেসে উঠলো চারুর মস্তিষ্কে।

অকথিত এই যাত্রাটি শুরু হয়েছিলো বছর তিনেক পূর্বে। তখন চারু মাত্র কলেজের দরজা পেরিয়েছে। বয়স তখন মাত্র উনিশ। কলেজের গণিত বই এর ফাঁকে আবিষ্কার করলো একখানা চিরকুট। সাদা রঙ্গের ছোট চিরকুট। তাতে গোটা গোটা হাতে লেখা। মানুষের নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মোহ প্রবল থাকে। কিশোরী মেয়েদের সেই মোহ মারাত্নক আকার ধারণ করে। চারুর বয়সটিও ছিলো তার কিশোরী বয়সের দাঁড়প্রান্তে। ফলে আবেগ বাড়তে লাগলো। হৃদয়ের কোনে এক অন্য অনুভূতি জন্মাতে লাগলো। অচেনা একজন মানুষের স্নিগ্ধ অনুভূতিগুলো তার হৃদয়ে্র আঙ্গিনায় ভালোবাসার রঙ্গধনু এঁকেছিলো। প্রতি নিয়ত অপেক্ষায় থাকতো সেই মানুষের অগোছালো অনুভূতিতে ভরা চিরকুটের। লোকটাকে জানার চেষ্টাও কম করে নি সে। কিন্তু লোকটা কিভাবে, কখন সেই চিরকুটগুলো দিতো খোঁজ পেতো না চারু। তবে লোকটাযে তাকে ঘিরে রয়েছে সেই খবরটা তার ছিলো। কলেজের গেটে দাঁড়ালেই রিক্সা, ক্যান্টিনে গেলেই তার আপ্পায়নে সব কিছু প্রস্তুত ব্যাপারগুলো ঠিক টের পেতো চারু। কয়েকবার নিজেও চেষ্টা করতো তার জন্য কিছু লেখার। কিন্তু সাহসে কুলায় নি, বাবা-চাচা জানলে যে সে আস্তো থাকবে না সেই খবর তার ছিলো। সবকিছু ঠিক ই ছিলো, কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়ের ন্যায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেলো। এক গোধুলী বিকালে কলেজের একটা ছেলে চারুকে মনের অনুভূতি ব্যাক্ত করে বসলো। চারু তাকে খুব শান্ত ভাবেই বুঝালো কিন্তু সেই ছেলেটা চারুর “না” বুঝতে পারলো না। নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতার বড়াই দেখাতে লাগলো। সকলের সামনে চারুর হাত টেনে ধরলো। চারুর ভাগ্য ছিলো সেদিন ধ্রুব তাকে নিতে এসেছিলো। ফলে কিছু হবার আগেই ধ্রুব সেখানে উপস্থিত হয়। ছেলেটাকে প্রথমে চড় থাপ্পড় মারে, তারপর প্রিন্সিপালের কাছে কমপ্লেইন করে। প্রিন্সিপাল ছেলেটাকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেন। চারু ভেবেছিলো সব কিছু থেমে গেছে। কিন্তু সে ভুল ছিলো। পরদিন কলেজেই যেতে জানতে পারে সেই ছেলেটা হাসপাতালে আধ মরা হয়ে পড়ে রয়েছে। কেউ বাজে ভাবে তাকে মেরেছে। মেরুদন্ড পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলেছে। সেদিন থেকে এক বিশ্রী ভয় চারুর মনে জন্মায়। নিকষকৃষ্ণ ভয়ে তার সদ্য জন্মানো অনুভূতির গাছটা মরে যায়। যে মানুষটাকে দেখার জন্য উদ্গ্রীব ছিলো সে, যেই মানুষটার প্রতি ত্রাশ জন্মায়। প্রথমে অনুমান ছিলো, কিন্তু যখন সেদিনের চিরকুটটি পায় সেই ভয়টা গাঢ় হয়। চিরকুটের ভয়ংকর লাইনগুলো এখনো মনে গেঁথে রয়েছে তার,
“আমি খুব ভালো, আবার আমি খুব ভয়ংকর। আমার প্রেয়সীকে যদি কেউ ছুঁতে যায় তবে এই মানুষের খোলশ ছেড়ে আমি দানব হবো। যে হাত দিয়ে তোমায় ছুঁয়েছে সেই হাত আমি ভেঙ্গে দিয়েছি। তুমি একটা কথা মস্তিষ্কে ছাঁপিয়ে নাও, তুমি আমার, কেবল আমার। আমি মরে গেলেও তুমি আমার”

সেদিন চারুর মনে হয়েছিলো এই অনুভূতিগুলো সব মিথ্যে, নিতান্ত পাগলামীর নাম এই অনুভুতি। চারুর প্রতি তার ভালোবাসাটা স্বাভাবিক নয় বরং বিশ্রী আসক্তি, উম্মাদনা। যে অনুভূতিকে গোলাপের পাপড়ির ন্যায় কোমল ভেবেছিলো তা নিতান্ত কন্টকের ন্যায় তার গলায় বিঁধছিলো। সেদিনের পর থেকে চারুর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারে নি। চারু দু তিন বার চেয়েছিলো এই কথাগুলো বাড়িতে জানাতে কিন্তু পারে নি। সাহস হয় নি তার। ভয় হয়েছে যদি আপনজনের কোনো ক্ষতি হয়! নাহিয়ানের সাথে বিয়ে ঠিক হবার পর যখন সব শান্ত ছিলো, চারু ভেবেছিলো লোকটি হয়তো তার পিছু ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করেছে লোকটি। চারুর দৃঢ় বিশ্বাস নাহিয়ানের মৃত্যুর পেছনেও এই লোকটির হাত আছে। আশরাফ গনি সাহেব এতো কাঁচা মানুষ নয়, নিজের ছেলের খু/নীকে ঠিক খুঁজে বের করবেন সে। হয়তো সেদিন চোখের সম্মুখে দেখবে তাকে চারু। সেদিনের প্রতীক্ষায় রয়েছে সে। প্রতীক্ষা মুক্তির, প্রতীক্ষা এই বিশ্রী ভালোবাসার জাল থেকে পরিত্রাণের________

***

ল্যাপটপের সামনে বসে রয়েছে শ্রাবণ। তার আঙ্গুল যন্ত্রের ন্যায় চলছে কালো কী বোর্ডে। তার দৃষ্টি স্থির। আপাতত এই কাজটা শেষ না করা অবধি তার মন উঠবে না। বাবা আসার আগে কাজগুলো শেষ করতে হবে তার। এর মাঝে দরজায় টোকা পড়ে। কাজের গতিপথে বাঁধা পড়লে, মাথা তুলে ভ্রু কুঞ্চিত করে দৃষ্টি তাক করে সে।
“আসতে পারি শ্রাবণ সাহেব?”

অসি ফররুখ দাঁড়িয়ে আছে। অসময়ে ফররুখকে দেখে ঈষৎ বিরক্ত হলেও মুখে প্রকাশ করলো না শ্রাবণ। স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,
“আসুন, ফররুখ সাহেব”
“বিরক্ত হলেন বুঝি?”
“অসময়ে আপনাকে দেখবো আশা করি নি”

ফররুখ বাঁকা হাসি হাসলো, যা শ্রাবণের খুব একটা পছন্দ হলো না। ফররুখ কেবিনে প্রবেশ করলো, আয়েশ করে শ্রাবণের সামনের চেয়ারে বসলো সে। তার মুখে এখনো হাসি। শ্রাবণ ল্যাপটপটা বন্ধ করে ব্যাস্ত কন্ঠে বললো,
“বলুন, কি বিষয়ে এখানে আসা?”
“আসলে আপনার কেসের ব্যাপারে। ওই যে আপনার ঘরে ভাঙ্গচুর। সেটার ব্যাপারে কথা বলতে আসলাম”

এবার শ্রাবণের চোখে কৌতুহলের জন্ম হলো, ভ্রু জোড়া এক বিন্দুতে মিললো। কৌতুহলী স্বরে বললো,
“কিছু জানতে পারলেন?”
“তেমন কিছু না, তবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো বুঝলেন। আশরাফ গনি সাহেবের পুত্র নাহিয়ান আশরাফের সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। পুত্রশোকে সে এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে তার দিন দুনিয়ার কোনো খবর ই নেই”
“জ্বী, জানি। ব্যাপারটা খুব কষ্টের উনার জন্য”
“তা তো অবশ্যই। আরোও অবাককর কথা শুনবেন?”

ফররুখের কন্ঠে এক বিচিত্র টান, মুখে প্রসারিত তীক্ষ্ণ হাসি। যা গা জ্বালিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। একরাশ বিরক্ত নিয়ে শুধালো,
“কী?”
“নাহিয়ান সাহেবের মৃত্যুটি হয়েছে তার বিয়ের দিন। অবশ্য এটা অবাককর ব্যাপার নয়, অবাককর ব্যাপার হলো তার গাড়ির ব্রেক কেউ কেটে দিয়েছিলো। মানে এই দূর্ঘটনাটি কাকতালীয় নয়, ঠান্ডা মস্তিষ্কের নীল পরিকল্পনা”
“তো? আপনি আমাকে বলছেন কেনো?”

নির্লিপ্ত কন্ঠে কথাটা বললো শ্রাবণ। তার বিরক্তি বাড়ছে। অর্থলোভী পুলিশদের সে মোটেই সহ্য করতে পারে না। এদের কাজ ই মানুষকে বিরক্ত করা। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলবে আর সময় নষ্ট করবে। তার বাবা মোস্তফা কামাল সর্বদা একটা কথা বলেন,
“উকিল আর পুলিশদের কাছে শয়তান ও ঘুরে না। কারণ এরাই এক একটা শয়তান”

ফররুখ হাসি থামালো না, তীক্ষ্ণ হাসি অক্ষত রেখে বললো,
“কি অদ্ভুত দেখেন, আপনার যেমন সন্দেহটা উনার উপর, উনার সন্দেহটাও আপনার উপর”
“ফররুখ সাহেব, মুখ সামলে কথা বলুন। আপনি কি বলতে চাইছেন বলুন তো। আমি মেরেছি নাহিয়ানকে?”

রোষাগ্নি ঝড়লো শ্রাবণের কন্ঠে। তার ক্রোধ সামলাতে পারলো না সে। কিন্তু ফররুখ নির্বিকার। উলটো তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,
“আমি কিছুই বলছি না শ্রাবণ সাহেব, আপনি ই বলছেন। যাক তদন্ত চলছে। যদি আপনার ঘরের তছনছ এর পেছনে আশরাফ গনির লোকের হাত থাকে তবে সেটা আমি খুজে বের করবো। কিন্তু যদি তার ছেলের মৃত্যুতে আপনার হাত থাকে, সেটাও কিন্তু আমি ছেড়ে দিবো না শ্রাবণ সাহেব। ড্রাইভার মরে গেলে প্রমাণ হাপুস হবে এটা ভাবাটা ভুল”
“তাহলে প্রমাণ নিয়েই বড় বড় কথাটা বলবেন, এখন যেতে পারেন”

ফররুখ উঠে দাঁড়ালো। বাঁকা হাসি হেসে বললো,
“আসছি, তবে সাবধানে থাকবেন। গনি সাহেব কিন্তু মানুষটা ভালো নয়। আর মোস্তফা সাহেবকে তিনি ভয় পান না”

বলেই হাটা দিলো সে। শ্রাবনের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। রাগে কান গরম হয়ে গিয়েছে তার। জায়ান শাহরিয়ারকে এই অবধি হুমকি দেবার মত কেউ জন্ম নেয় নি। অথচ এই দুটাকার পুলিশ কি না তাকে হুমকি দিয়ে। শ্রাবণ নিজের ফোনটা হাতে নিলো। একটা নাম্বারে ডায়াল করলো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করতেই বললো,
“আমার কেবিনে আসো। ফাস্ট”

বলেই ফোন রেখে দিলো সে। একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনরায় কাজ করতে লাগলো সে। যেভাবেই হোক আজকের মাঝেই কাজ শেষ করতে হবে। এই কাজ শেষ না হলে আজও চারুলতার সাথে দেখা হবে না। মেয়েটা যে কি জাদু করেছে কে জানে। তবে এক নেশার মতো মস্তিষ্কে জেঁকে বসেছে। চারুলতার কথা ভাবতেই ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো, স্নিগ্ধ প্রশান্তির হাসি______

***

পলির বাসা থেকে বের হতে হতে রাত হয়ে গেলো চারুর। আগামী মাসে পরীক্ষার ডেট পড়েছে। এই বিয়ের চক্করে বড় চাচা বেশ কদিন ঘর থেকে বের করেন নি। ফলে অনেক পড়া পিছিয়ে আছে সে। তাই নোটের জোগাড়ের উদ্দেশ্যে আসা পলির বাসার। মেয়েটা খুব বেশি কথা বলে। সেই বিকেল থেকে উঠবে উঠবে করে এখন অবশেষে বেড়িয়েছে সে। চারু তো ভেবেছিলো মেয়েটা হয়তো রাতের খাবার না খেয়ে আসতেই দিবে না। কিন্তু অবশেষে বড় চাচার ভয় দেখিয়ে বের হয়েছে। ঘড়ির কাটা আটটায় ঘরে। এতোরাত হয়ে গেছে টের ই পায় নি। গলিতে একটা রিক্সাও দেখতে পারছে না সে। উপায়ন্তর না পেয়ে হাটতে লাগলো চারু।

সরু গলি, দুপাশে মসাবৃত পুরানো খসে পড়া দেয়াল। এই গলিটা ঢাকার সব থেকে পুরান গলি। বাড়িগুলো গায়ের সাথে লাগানো। যেনো একটা আরেকটার গায়ে উঠে পড়েছে। প্রতিটা বাড়ির নিচে কারখানা। রাত বলে মানুষের ভিড় নেই। ধীর পায়ে সোডিয়াম লাইটের নিচে হেটে চলছে চারু। গলিটা পাড় হলেই রিক্সা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাটার সময় খেয়াল করলো এককোনায় দু-তিনটা ছেলে ভাঙ্গা দেওয়ালের কাছে নেশা করতে ব্যাস্ত, তাদের চোখগুলো রক্তিম। চুলগুলো উশখুশে। উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। ছেলেগুলোর দৃষ্টি চারুকে অনুসরণ করছে। চারুর বুকে ত্রাশের জন্ম নিলো। গা টা ছমছম করে উঠলো। শীতল ঘামের বিন্দু গড়িয়ে পড়লো ঘাড় থেকে। ধ্রুবকে ফোন করলেই হতো। কেনো যে মাতব্বরি করলো সে। চারু থামলো না। পায়ের গতি বাড়ালো, গলি পার হলেই মেইন রোড। ওখানে যানবাহন পাওয়া যায় হর হামেশা। হঠাৎ পায়ের শব্দ কানে এলো চারুর। ভয়টা নিবিড় হলো, গলা শুকিয়ে এলো তার। ছুটতে লাগলো চারু। পেছনে তাকানোর সাহস হলো না। একপর্যায়ে ছুটতে ছুটতে হুমড়ি খেয়ে পিচের রাস্তায় পড়লো। পা মচকেছে, কিছুটা হয়তো ছিলেও গেছে। কিন্তু থামলে হবে না, পায়ের শব্দ প্রবল হচ্ছে। হয়তো কাছে চলেছে এসেছে ছেলেগুলো। চারু কোনোমতে উঠেই ছুটলো। পায়ের শব্দ একেবারে কাছে চলে এসেছে। ঠিক তখনই……

চলবে