#দৃষ্টির_অলক্ষ্যে
#পর্বঃ১১
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)
বিলম্ব না করে খট করে কল কে’টে দিলো ফয়সাল। শেষোক্ত উক্তি শুনে বক্ষস্থলে মোচড় দিয়ে উঠলো তূবার।শুকনো ঢুক গিলে সে। কঠিন দুটো কথা বলার আগেই বুঝতে পারলো ফয়সাল কল কে’টে দিয়েছে। ফয়সালের কথার প্রেক্ষিতে দৃশ্যটি কল্পনা করতেই আঁতকে উঠল তূবা। আঁখি পল্লবে অশ্রু ভর করলো। কান থেকে মোবাইল সরিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো নিশ্চল, স্থির আর অনড় হয়ে। শেষোক্ত বাচ্যের ঝংকারে নিঃশ্বাস আঁটকে এলো তার।
ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে আসলো তূবা। কার্টুন দেখছে ফারিয়া আর পাশে বসে আছে মনোয়ারা বেগম। গলা খাঁকারি দিয়ে মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো সে। মনোয়ারা বেগম মেয়ের দিকে তাকালেন। মাকে দেখে দৌড়ে মায়ের কাছে গেলো ফারিয়া। মৃদুস্বরে হেসে মেয়েকে কোলে তুলে নিলো তূবা।
‘খাওয়ার জন্য কি আছে মা? প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।’
‘খিচুরি আর ডিম ভাজা করেছি।’
তূবা একটা হাত পেটে রেখে অসহায় ভঙ্গিতে বলল,
‘তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো।আর সহ্য করতে পারছি না।’
প্লেটে খিচুড়ি নিয়ে ঝাল ঝাল করে একটা ডিম ভাজলেন মনোয়ারা বেগম। প্লেট হাতে অঙ্গজার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিস্তেজ স্বরে বললেন,
‘আমি খাইয়ে দেই?’
ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করে হ্যা বোধক মাথা নাড়ে তূবা। মনোয়ারা বেগম কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য হাসফাস করতে লাগলেন। কিন্তু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ আর নীরব রইলেন।
_____________________
ফাহিমের দরজায় শব্দ করে কড়া নাড়লেন ফাহমিদা বেগম। দরজা খোলার কোনো নামগন্ধ নেই। এবারে তিনি উচ্চ শব্দে ”ফাহিম” বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। কয়েকবার ডাকাডাকির দরজা খুলল ফাহিম।
পারফিউম এর কড়া ঘ্রাণেন্দ্রি ফাহমিদা বেগমের নাসারন্ধ্রে এসে ধাক্কা দিলো। ছেলের দিকে সন্দিহান নজরে তাকান তিনি?
‘রুমের মধ্যে গায়ে পারফিউম লাগিয়েছিস কেন?’
আতংকিত আনন, শুকনো অধর জোড়া জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো সে।
‘পড়ার টেবিলের ফাঁকে একটা ইঁদুর ম’রে খুব বাজে গন্ধ ছড়াচ্ছিল তাই।’
মুখের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা গেল না ফাহমিদা বেগম কথাটা ঠিক কতটুকু বিশ্বাস করেছেন।
‘সারাদিন দরজা আঁটকে রুমের ভিতরে কি করিস? আমাকেও রুমে ঢুকতে দিস না। আবার বাহিরে গেলে রুম তালা মে’রে যাস। কি এমন আছে তোর রুমে?’
এইবার মুখের দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালালো ফাহিম। মেকি হাসি দিয়ে বলে,
‘কি আর করবো মা।সারাদিন পড়ি। হায়ার ম্যাথ ইকুয়েশন সলভ করি। দরজা খোলা রাখলে বাহির থেকে আগত শব্দে আমার পড়ায় সমস্যা হয় তাই। আর রুম তালা মে’রে যাই কারন, পুরো রুম জুড়ে খাতা আর শীট। আমি আমার সুবিধা মতো এক একটা একেক জায়গায় রেখেছি।তুমি যদি আমার রুম গোছাও তাহলে তো সব এলোমেলো করে দিবে, তাই।’
ছেলের কথা ঠিক হজম হলো না ফাহমিদা বেগমের।তারপরও আচ্ছা বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। মা চলে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফাহিম। যেন সে এতোক্ষণ বাঘের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো।
______________________
নিজের কেবিনে চিন্তিত মুখে বসে আছে তাহমিদ। ফয়সাল কি এমন বলতে পারে যে তার বোন রাতের বেলাই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।উপরন্তু বলেছে ফয়সালের ফোন যেন রিসিভ না করে।
নাযীফাহ’র ডাকে সম্বিত ফিরে পেল তাহমিদ। একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল,
‘এ্যানি প্রবলেম?’
হাতের ফাইলটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘স্যার, ফাইলটা কমপ্লিট করেছি।
তাহমিদ উদাস হয়ে বলে,
‘টেবিলে রেখে যান।’
ফাইল টেবিলের উপর রেখে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়েও ফিরে এলো সে।
‘আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?’
অতর্কিতে নাযীফাহ’র নিস্বন শুনে চমকে উঠে তাহমিদ। অতঃপর ম্লান, বিষন্ন মুখে মাথা নেড়ে না বলে। নাযীফাহ কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় টাইলসে পা স্লিপ কে’টে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। অকস্মাৎ কান্ডে হতবিহ্বল, স্তম্ভিত, অবরুদ্ধ নাযীফাহ। সেকেন্ডের মাথায় কি হয়ে গেলো কিছুই বোধগম্য হলো না তার। আহাম্মকের মতো মেঝেতে তাকিয়ে রইলো সে।
নাযীফাহ’র অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দিলো তাহমিদ। হাসির ধ্বনি শুনে তাহমিদের দিকে অসহায় চাহনি নিক্ষেপ করলো সে। তার সবসময় তাকে নিষেধ করতো এমন এলোমেলো হয়ে হাঁটার জন্য। হাসি বন্ধ করে মুখে গাম্ভীর্যের রেখা টানল। এভাবে হাসা তার ঠিক হয়নি। মনে মনে নিজের কদুক্তি করলো । আসন ছেড়ে নাযীফাহ’র সমীপে গিয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে বলল,
‘দেখি উঠে আসুন।’
চমৎকৃত হয় নাযীফাহ। বুকে থুথু দেয় সে। অতঃপর তাহমিদের হাতটা ধরে উঠে দাঁড়ায়। তাহমিদ রগড় গলায় বলল,
‘এজন্যই বলেছি বেশি বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার জন্য। শরীরে বল পাবেন। শক্তি উৎপাদন হবে। তাহলে আর যেখানে সেখানে পা ফসকে যাবে না।’
নাযীফাহ তেজ দেখিয়ে যেতে নিলেই তাহমিদ উপহাসের সুর টানে।
‘আজ যাওয়ার সময় হাঁসের ডিম কিনে নিয়ে যাবেন। নিয়ম করে তিনবেলা ছয়টা হাঁসের ডিমে খাবেন। কারন এতে পুষ্টি বেশি থাকে। আর সাথে এক গ্লাস দুধ।’
নাক ফুলিয়ে নাযীফাহ অগ্রসর হয় সামনের দিকে । নাযীফাহ’র রাগান্বিত আনন অবলোকন করে উচ্চ শব্দে হাসলো তাহমিদ।
____________________________
খাবার টেবিলে বসে আছে তাহমিদের পরিবার। যত্নসহকারে ফারিয়া কে খাইয়ে দিচ্ছে তূবা। তাহমিদ বোনের দিকে এক পলক অবক্ষেণ করলো।
‘ফয়সাল ভাই এর সাথে তোর কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে?’
হাত থেমে গেলো তূবার। কিন্তু ভাইয়ের অভিমুখে দৃষ্টিপাত করলো না সে। মনোয়ারা বেগম উৎসুক, অনুসন্ধিৎসু হয়ে চেয়ে রইলো মেয়ের পানে। শোনা গেল তূবার স্বাভাবিক গলার স্ফুরণ।
‘যা নিয়েই হউক আমি তোদের সাথে এসব আলোচনা করতে চাই না।জল কতদূর গড়ায় তা তো আর জানি না। কিন্তু আমি চাই না ফয়সাল সম্পর্কে তোদের মনে কোনো নেতিবাচক ধারণা জন্মাক।আমাদের বিবাদ, বাতচিত ওই বাড়ির চার দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকুক। ওর কথাগুলো এখানে বলা মানে ওকে ছোট করা। ওর অনুপস্থিতিতে ওর অসম্মান করা। অস্বীকার করতে পারবো না মানুষটাকে আমি ভালোবাসি, সম্মান করি। তাকে যদি অসম্মান করি তাহলে আমার ভালোবাসার কোনো মূল্যই রইলো না। আমি চাই না তুই বা মা এসব নিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস কর। বিশ্বাস রাখতে পারিস কোনো ভুল হবে না।আমি শুধু দেখতে চাই জল কতদূর গড়ায়।’
মনোয়ারা বেগম মেয়ের দিকে চেয়ে রইলেন অপলক, অনিমেষ। কি সুন্দর করে কথাগুলো বলল অকপটে। কোনো দ্বিধা ছাড়া।
গাঢ়, দূর্ভেদ্য, নিগূঢ় রাত! আশেপাশের অধিকাংশ ফ্ল্যাটের আলো নিভিয়ে গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন মানুষজন। নিজের রুমের আলো নিভিয়ে জানালার পর্দা কিঞ্চিৎ ফাঁক করে স্তিমিত, নিশ্চল, নিমিষহারা, স্থিরদৃষ্টিতে বাসার নিচের সরু গলির দিকে তাকিয়ে রইলো তূবা। হলদেটে নিয়ন আলোয় স্পষ্টত পরিচিত সুঠাম দেহি পুরুষের অভয়ব। মানুষ কদর করতে জানে তবে বেলা ফুরাবার পরে।
_______________
জীবন থেকে গত হয়ে গেলো সাতটা দিন। কারো এই সাতটা দিন কে’টে’ছে চরম অস্থিরতা আর ধৈর্য্যহীনতায়। বাসায় একা একা দিনাতিপাত করছে ফয়সাল। তামান্না মাকে নিজের কাছে নিয়ে গেছে। দূর্বিষহ হয়ে গেছে ফয়সালের জীবন। কোথাও এক বিন্দু শান্তি নেই। প্রিয়জনের শূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে তার অন্তর্দেশ। নিদারুণ যন্ত্রণা সেখানে যা ব্যক্ত করা যায়। সাতদিন আগেই তূবার সাথে তার শেষ কথা হয়েছে। এরপর আর তূবা তার ফোন তুলেনি। বউ আর মেয়েকে একটা নজর দেখার রোজ রাতে গিয়ে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে।
কাউকে কল দিয়ে অনুভূতিহীন চোখে শূণ্যে তাকিয়ে রইলো সে।সাথে সাথেই ওপাশের মানুষটা ফোন তুলল। কর্মব্যস্ত স্বর টেনে বলে,
‘ভাইয়া কি বলবে তাড়াতাড়ি বল। কাজ আছে আমার।’
ফয়সাল ধরা গলায় বলল,
‘আই বেডলি নিড তূবা এন্ড ফারিয়া। হয় ওদেরকে এনে দে। না হয় আমাকে মে’রে ফেল। এই শূন্যতা আমার আর সহ্য হচ্ছে না।’
তামান্না বিস্ফোরিত গলায় বলল,
‘ফারিয়া কে?’
ফয়সাল চাপা আর্তনাদ করে উঠল।
‘আমার সাথে এমন করিস না। অসহ্য লাগে সবকিছু। আজ তিনদিন অফিস যাই না।’
তামান্না গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
‘এসব বলা বা করার আগে মনে ছিলো না? তূবার সাথে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা কে করেছিল? আমি তো নাকি। কেউ তোমাকে কিছু বলল কিছু দেখালো আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে, কেন? আমাকে জিজ্ঞেস করতে। আর যার সাথে এতোগুলো দিন পার করলে তাকে চিনলে না? আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা। যে বার বার তোমাকে দিয়ে গেল বলে গেল তাকে বের ধরার চেষ্টা করলে না, কেন? তুমি তো আর টিএনজার নও যে হিতাহিতজ্ঞান নেই। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ। তাহলে এমন ভুল হলো কি করে? মেয়েটার কাছে ফোন দিতেও আমার লজ্জা লাগে।কি বলবো বলো?’
‘আমি জানি না। কিচ্ছু জানি না।আমার ওদের চাই। যেমন করে হউক যেকোনো মূল্যে।’
তপ্ত, উষ্ণ শ্বাস ফেলে তামান্না। ভাইয়ের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারে সে। কিন্তু ব্যপারটা খুব গভীরে চলে গেছে।
‘তোমাকে যেই নাম্বার থেকে এসব দেওয়া হয়েছে ওটা সেন্ড করো তো আমাকে।’
নাম্বারটা পাওয়া মাত্রই নিজের কিবোর্ডে কপি করলো সে। আগে থেকেই সেভ হয়ে সেই নাম্বারের দিকে তাকিয়ে তার মুখ দিয়ে আপনা-আপনি বেরিয়ে এলো, ‘ওহ্ শিট।’ নিজের মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো সে।
________________________
ভরসন্ধ্যা! চতুর্দিকে টিমটিমে আলো বিদ্যমান।হালকা পাতলা কেনাকাটা করতে বেরিয়েছে নাযীফাহ। লেডিস কর্ণারে ঢুকতে গিয়ে দেখা হলো তনয়ার সাথে। দু’জন দু’জনকে দেখা সৌজন্য হাসলো। তনয়া দু পা এগিয়ে এসে নাযীফাহ’র মুখোমুখি দাঁড়ালো। প্রানবন্ত হেসে জিজ্ঞেস করলো,
‘আরে নাযীফাহ! কেনাকাটা করতে এসেছেন বুঝি?’
প্রতিত্তোরে নাযীফাহ মুচকি হেসে বলে,
‘এই টুকটাক।’
নিজের পার্শে দন্ডায়মান পুরুষটিকে দেখিয়ে বলল,
‘মিট মাই হাসবেন্ড আফিফ।’
চমৎকৃত, বিস্ফোরিত চোখে তাকায় নাযীফাহ।
‘আপনি বিবাহিত?’
আহাম্মক, নির্বোধের মতো চেয়ে রয় তনয়া।
‘কেন আপনি জানেন না?’
না বোধক মাথা নাড়ে নাযীফাহ।
‘আপনাকে দেখে বোঝার জো নেই।’
লাজুক হেসে তনয়া বলল,
‘লাভ ম্যারেজ আমাদের।’
‘নজর না লাগুক আপনাদের উপর কারো।’
পাশ থেকে তনয়ার হাসবেন্ড মিষ্টি হাসলো।
‘তা কি কিনতে এলে?’ তনয়া প্রশ্ন করলো নাযীফাহ কে।
‘বার্থডে গিফট।’
‘কার জন্য?’
‘নিজেই নিজেকে গিফট করবো।’
‘ওয়াও তোমার বার্থডে?’
প্রশস্ত হেসে মাথা দুলায় নাযীফাহ।
‘কবে?’
‘আগামীকাল।’
আচমকা তনয়া নাযীফাহকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘হ্যাপি বার্থডে ইন এডভান্স।’
প্রথমে হকচকিয়ে যায় নাযীফাহ। পরে নিজেও আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ধন্যবাদ।’
গলা খাঁকারি দেয় আফিফ।
‘বউয়ের আমার মানুষের সাথে মিশতে সময় লাগে।মানুষ আপন করে নেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে। আসুন আপনার বার্থডে গিফট কিনতে আমরাও সাহায্য করি।’
নাযীফাহ সশব্দে হেসে বলে,
‘ভালো মানুষের কপালে ভালো মানুষই জুটে।’
_____________________
সন্ধ্যার অস্তমিত সূর্যটার দিকে নিমিষহারা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তূবা। মোবাইলের শব্দে ভাবনাচ্ছেদ হয় তার।স্ক্রিনশট ভাসমান নামটা দেখে রিসিভ করবে না করবে না করেও রিসিভ করলো সে। লম্বা একটা দম নিয়ে বলল,
‘যদি তোর ভাইয়ের হয়ে উকালতি করতে ফোন দিয়ে থাকিস তো কথা বাড়ানোর দরকার নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত তোর ভাইকে বলে দিয়েছি।’
ওপাশ থেকে শোনা গেল হাসির ঝংকার।
‘ আমি লজ্জিত। তোর জীবনটাকে আমি মাঝ সমুদ্রে এনে দাঁড় করিয়েছি। হয়তো এসব এখন বলে লাভ নেই। তবে আমার রিগ্রেট ফিল হয়।’
সদুষ্ণ শ্বাস ফেলে তামান্না পুনশ্চ বলল,
‘আমি আমার ভাইয়ের বউয়ের কাছে না। বান্ধবীর কাছে ফোন দিয়েছি। হুমায়রা আর আমি মিলে ডিসাইড করেছি আমাদের তিনজনের একটা গেটটুগেদারের ব্যবস্থা করবো। কতদিন হলো তিনজন একসাথে বসে আড্ডা দেই না। আর তোর মনের যেই অবস্থা তোর এটা ভীষণ প্রয়োজন।’
কিয়ৎকাল ভাবলো তূবা। আসলেই কোথাও একটা বের হলে মনটা হালকা হতো। নরম হয়ে এলো তূবার গলার স্বর।
‘কবে যাবি?’
‘তুই বললে আগামীকাল।’
‘তবে ফারিয়াকে আনিস না সাথে। সারাদিন ঘুরবো তো ও এই ধকল নিতে পারবেনা।’
‘হুমায়রা আমার সাথে কথা বলে না।কিন্তু তোর সাথে ঠিকই বলে।’
তামান্না আমতাআমতা করে বলে,
‘আমি তোর আর ভাইয়ার ঝামেলার কথা ওকে বলে দিয়েছি।’
রাগ হলো তূবার। ভীষন রাগ।
‘আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিস? আমি আমার মায়েরও কাছেও বলি।তোর ভাই কিন্তু এখনো আমার স্বামী। আর কোনো স্ত্রী চাইবে না তার স্বামীকে কেউ খারাপ বলুক।’
‘আসলে ও তোকে ফোন দিতে চেয়েছিল। আমি তোর মনের অবস্থার কথা ভেবে ওকে নিষেধ করি। পরে ও চাপাচাপি শুরু করে কি হয়েছে বলার জন্য
তাই আরকি।’
‘বাদ দে।’ বলে কল কে’টে দিল তূবা। কান থেকে মোবাইল নামিয়ে ক্রোর হাসলো তামান্না আর পাশে বসে থাকা মানুষটাও।
_______________________
দুজনের জন্য আধঘন্টা যাবৎ রেস্টুরেন্টে বসে অপেক্ষা করছে তূবা। সাদা, স্বচ্ছ কাঁচের ফাঁক দিয়ে দেখল একটা পার্পলে কালার লং কুর্তি গায়ে জড়িয়ে এই দিকে আসছে হুমায়রা। অধর কোনে হাসি ফুটলো তূবার। কতদিন পরে প্রাণপ্রিয় বান্ধবী কে দেখল। আসন ছেড়ে রেস্টুরেন্টের বাইরে গিয়ে হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো সে। ময়লা, ছেঁড়া জামা পরিহিত একটা বাচ্চার হাতে দুটো কিটক্যাট দিয়ে এক গাল হাসলো হুমায়রা। ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে সেদিকে অপলক তাকিয়ে রইলো তূবা।
তূবার কাছে এসেই তূবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো হুমায়রা। তূবাও বান্ধবীকে নিজের হাতের বেষ্টনীতে আবদ্ধ করলো। কতদিন পরে দেখা হলো ওদের।
‘জানিস তোর এই গুনটা আমাকে তৃপ্তি দেয়।তুই হুট করে কিভাবে যেন মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারিস।’
তূবাকে ছেড়ে দাঁড়ালো হুমায়রা।বান্ধবীর শুকনো, মলিন, নিস্তেজ মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎকাল। একটা হাত তূবার গালে রেখে বলল,
‘তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে। সারারাত আমি হাসফাস করেছি বলাস জন্য। তোকে মোবাইল করে বলতে পারতাম। কিন্তু আমি তোকে সরাসরি বলতে চাইছিলাম। তামান্না এসেছে?’
না বোধক মাথা দুলায় তূবা।
‘চল ভেতরে যাই।’
দুটো চেয়ার টেনে বসলো দুজন। তূবার একটা হাত ধরলো হুমায়রা। নিম্ন, অপরাধীর স্বরে বলল,
‘এসব কথা হয়তো আমার আরো আগে তোকে বলা উচিৎ ছিলো। আমি ভেবেছিলাম ব্যপারটা তখনই ডিসমিস হয়ে গেছে।তাই আর তোকে মুখ ফোটে বলিনি। তামান্নার কাছ থেকে সব শুনার পর নিজের কাছে নিজেই অপরাধী হয়ে গেছি। সারারাত আমি ঘুমোতে পারিনি। প্রহর গুনেছি কখন রাত পোহাবে আর আমি তোকে সব বলতে পারবো। তোর জীবনকে দূর্বিষহ আর সংসার ধ্বংস করার পিছনে একজনই আছে। আর সে হলো,,,,
#চলবে
বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।