দৃষ্টির অলক্ষ্যে পর্ব-১০

0
299

#দৃষ্টির অলক্ষ্যে
#পর্বঃ১০
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)

এক কাপ কফি হাতে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে প্রগাঢ়, দূর্ভেদ্য, নীরব, নিস্তব্ধ রাতের আঁধারিতে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে নাযীফাহ। বিশাল আকাশে চাঁদের অস্তিত্ব নেই অমাবস্যা চলছে। শহরটা ঘুটঘুটে অন্ধকারে আচ্ছাদিত হওয়ার কথা থাকলেও কৃত্রিম আলোয় আলোকিত। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় স্পষ্ট বিল্ডিং এর নিচের রাস্তা।নাযীফাহ ভেবে দেখলো এই নিস্তব্ধ, নিরিবিলি, কৃষ্ণাভ রাতের মতোই তার জীবন। কোথাও কোনো আলো নেই। কেউ এক ছটা আলো নিয়ে এসে বলেনি, আলো কিনবে? যা জীবন কে আলোকিত করবে। যে আলোর উজ্জ্বল শিখায় প্রদীপ্ত হয় জীবন। যে আলোর কারণে জীবনের গতিই বদলে যায়। তাহলে হয়তো নাযীফাহ তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো হা’ম’লে পড়তো। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে স্নিগ্ধ শীতল পবন নাযীফাহ’র গা এসে ছুঁয়ে দেয়। এলোমেলো ভাবে উড়তে লাগলো কপালের ছোট ছোট চুলগুলো। শীতলতায় পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। বাতাসের ধরন বলে দিচ্ছে নিশ্চয়ই বৃষ্টি হবে। বাবার কথা মনে পড়লো নাযীফাহ’র। কতদিন হলো কথা হয় না। কাজের প্রসারে দুদণ্ড শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই।

পরপর দুইবার রিং হওয়ার পর মোবাইল রিসিভ করলেন খালেদ মোশাররফ। অভিমানের স্বর টেনে বললেন,

‘ছেলের কথা মায়ের এতোদিন পরে মনে পড়লো?’

বাবার অভিমানী বাচন কর্ণকুহরে পোঁছাতেই প্রশস্ত হাসল সে।

‘ছেলের কি অভিমান হয়েছে? ছেলের মা যে কাজের চাপে একেবারে আলু ভর্তা হয়ে যাচ্ছে।’

এইবারে খালেদ মোশাররফের গলার স্বর একটু নরম হয়ে এলো।

‘কাজের চাপ কি বেশি?’

বাবার চিন্তিত, উৎকন্ঠিত গলার স্বর শ্রবন হওয়া মাত্রই নাযীফাহ তার বাবাকে আশস্ত করে বলল,

‘সব কাজেই চাপ থাকে বাবা। এই যে তুমি সারাদিন জমিতে ভালো ফসল ফলানোর জন্য কতকিছু করো।এটা চাপ না? এবার দোকানে গিয়ে বসো। আমার থেকেও তোমার চাপ বেশি।’

খালেদ মোশাররফ হাসলো মেয়ের কথা শুনে। উনার মেয়ে বরাবরই বুঝদার। খুব সহজেই সব কিছু আয়ত্ত করতে পারে। খালেদ মোশাররফ শুনতে পেলে মেয়ের পুনরুক্তি,

‘কি করছো বাবা?’

হিসেবের খাতাটা বন্ধ করে তিনি জবাব দিলেন,

‘এতোক্ষণ যাবৎ দোকানের হিসাব করলাম।’

আরো কিছু বলতে নিলেই আঁচলে হাত মুছতে মুছতে কক্ষে প্রবেশ করেন ফাহমিদা বেগম। কর্মব্যস্ত নিস্বনে বলেন,

‘অনেক তো করলে হিসেব। এবার খেতে এসো।’

স্বামীর কর্ণে মোবাইলে দেখে কপাল কুঁজিত হলো উনার। এবারে স্বামীর দিকে জিজ্ঞাসাসূচক চাহনি নিক্ষেপ করলেন। খালেদ মোশাররফ স্ত্রীর চাহনির নিমিত্ত বুঝতে পেরে তিনি বিস্তীর্ণ হেসে বলেন,

‘নাযীফাহ’র সাথে কথা বলছি। তুমি কথা বলবে?’

মেয়ের নাম শুনে অভিমানেরা ভর করলো ফাহমিদা বেগমের চোখেমুখে। শোনা গেল তার অভিমানী নিস্বন,

‘আমি কে? আমাকে তোমার মেয়ে চিনে নাকি? তোমরা বাপ মেয়ে কথা বলো।’

ফোনের ওপাশ থেকে অনর্গলে বলা মায়ের কথা গুলো ধ্বনি শ্রবণগোচর হতেই সশব্দে হাসল নাযীফাহ।

‘মায়ের কাছে দাও বাবা।’ মেয়ের কথা শুনে হাতে থাকা মোবাইল ফোন স্ত্রীর দিকে বাড়িয়ে দিলেন তিনি। ফাহমিদা বেগম মুখ কালো করে মোবাইল কর্ণের কাছে এনে চেঁচিয়ে উঠলো,

‘কি?’

অকস্মাৎ মায়ের চিৎকারে কান থেকে মোবাইল দূরে সরায় নাযীফাহ। কয়েক সেকেন্ড বাদে বিমর্ষ স্বরে বলে,

‘মিস ইউ মা।’ মেয়ের নিগদ কর্ণে এসে পৌঁছাতেই আঁখি পল্লব ভেজা অনুভব করলেন ফাহমিদা বেগম।

চলতে থাকল মা মেয়ের এতোদিনের আবেগঘন কথা ।

_________________

টিকটিক করে ঘড়ির কাঁটা এগারোটার ঘরে পৌঁছালো। ড্রয়িংরুমে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছেন মনোয়ারা বেগম। সেই যে ছেলে হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো এখনও ফিরেনি। বার কয়েক ফোন করেছেন কিন্তু রিসিভ করেনি তাহমিদ। প্রতিটা সেকেন্ড অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে উনার চিন্তার মাত্রাও তরতর করে বাড়তে লাগলো। কলিংবেল বেজে উঠলো। জানে পানি এলো উনার। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দ্বার খুলতেই পুনরায় চিন্তা ভর করলো উনার চোখেমুখে। সম্মুখে দন্ডায়মান তূবা। আর তাহমিদের স্কন্ধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে ফারিয়া। চোখের কোণে শুকিয়ে যাওয়া পানি আর বিধ্বস্ত রূপ অনেক কিছু জানান দিচ্ছে। মেয়ের দিকে অবিশ্বাস্য নেত্রে তাকিয়ে রইলেন মনোয়ারা বেগম।

‘ভেতরে যেতে দাও মা।’

ছেলের কথা শুনে একপাশ হয়ে দাঁড়ান তিনি। কিন্তু উনার চোখেমুখের বিস্ময় যেন কাটছেই না। ওরা ভেতরে যেতেই দ্বার বন্ধ করলেন তিনি। আতংকিত, তটস্থ, উদ্বিগ্ন কন্ঠে মেয়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,

‘কি হয়েছে তূবা? এতোরাতে তুই? ফয়সাল কিছু বলেছে?’

‘নতুন করে আর কি হবে মা? সব তো আগে থেকেই চলছে। তবে এইবারে তোমার মেয়ে হাঁপিয়ে গিয়েছে। বড্ড ক্লান্ত সে। একটু বিশ্রাম দরকার তার। কন্ঠ নিঃসৃত বাচ্যের বি’ষা’ক্ত তীর যে কলিজার মাঝ বরাবর গিয়ে আ’ঘা’ত করেছে। সেখানে অদৃশ্য র’ক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।’

নির্জীব, নিস্তেজ আর বিষন্ন স্বরে বলল তূবা। মেয়ের কথার অর্থোদ্ধার করতে সময় লাগলো না মনোয়ারা বেগমের। তূবার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালেন তিনি। ডান হাতটা চেপে ধরে বললেন,

‘কথার বাণে বিদ্ধ হওয়ার আগেই তো বলছিলাম ফিরে আয়। তাহলে আর এভাবে গুমরে গুমরে ম’র’তে হতো না।’

মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসলো তূবা। বিমর্ষতাপূর্ণ কন্ঠে বলল,

‘মানুষ একটা জিনিসেই আঁটকে যায়। আমিও গিয়েছি। মায়া নামক জিনিসে আমিও আঁটকে গিয়েছি।’

মেয়ের কাঁধে হাত রাখলেন মনোয়ারা বেগম। মায়ের স্পর্শে যেন অশ্রুকণা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইলো। দাঁতে দাঁত চেপে রইলো সে।

‘মা, আমি আজ একটু ঘুমাবো শান্তির ঘুম। ফারিয়া না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলো। ওকে তোমার কাছে রেখো। আর রাতে হয়তো খিদে লাগতে পারে। হালকা পাতলা খাবার সাথে রেখো। আমি আমার রুমে গেলাম। আর সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে টেনশন নিও না।’

ঘুমন্ত ভাগ্নীকে মায়ের কাছে দিয়ে নিজের কক্ষের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো তাহমিদ। মনোয়ারা বেগমও নাতনিকে নিয়ে ছুটলেন নিজের রুমে।

_____________________

হাত ভাঁজ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ফয়সাল। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তার কায়া। বুকের উপরিভাগ অর্ধ ভেজা। বিশাল নভোমণ্ডলও তার অন্তর্দেশের মতো বিষন্ন, খিন আর শোকার্ত। গুরুজনেরা বলেন,

‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।’

রাগের বশবর্তী হয়ে তো নিকৃষ্ট কটুক্তি করেই ফেলেছে। এখন আর ভেবে কি হবে। অন্তর কাঁদছে তার। আর তার রুম নিস্তব্ধ, নীরব। সবটা কক্ষ জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজমান। অক্ষিপটে ভেসে উঠলো মেয়ের সেই ভয়ার্ত মুখ। অতঃপর তার মুখ নিঃসৃত সেই নিকৃষ্ট, নিম্নতর, অধরিক মনে পড়তেই নিজের প্রতি রাগ হতে লাগলো। ঠিক যতটা রাগ হলে নিজেকে ধারালো অ’স্র দিয়ে ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত করা যায়। ফারিয়া তার মেয়ে। তার অংশ।ফারিয়ার শিরা উপশিরায় বইছে তারই র’ক্ত। সকালে সে যাবে ফারিয়ার নানু বাড়ি। দরকার হলে তূবার পায়ে ধরে বসে। অন্তত স্ত্রী আর মেয়ে কে ছাড়া দিনাতিপাত করা তার সম্ভব না। নিজের সুখের জন্য হলেও তার স্ত্রী আর মেয়েকে প্রয়োজন। এতে যদি সে স্বার্থপর হয় তো স্বার্থপর।

বিকট শব্দে মোবাইল খানা বেজে উঠলো। দ্রুত গতিতে সে রুমে এসে মোবাইল হাতে নিতেই দেখলো তামান্না ফোন করেছে। ফয়সাল রিসিভ করেই শুনতে পেল তামান্নার রাশভারি আর গুরুগম্ভীর নিস্বন,

‘নানা ছলেবলে কলেকৌশলে তো তূবাকে বাড়ি থেকে বের করলে। কাল সকালে মাকেও আমার এখানে দিয়ে যেও। তারপর চরিত্রবান কাউকে দেখে নিজের জীবন শুরু করো।’

ফয়সাল কিছু বলার জন্য অধর আলগা করতেই টুট টুট শব্দ কর্ণে ধাক্কা লাগলো। নিজের কথাগুলো অর্নগল বলে কল কে’টে দিয়েছে তামান্না।ফয়সালকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল সে। ইশ! দীর্ঘ নিঃশ্বাস এর বোঝা এতো ভারী?

ফয়সাল তূবার নাম্বারে ফোন করার ব্যর্থ প্রয়াস চালালো। ওপাশ থেকে শোনা গেল মহিলা কন্ঠ,

‘আপনি যেই নাম্বারে ফোন করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। অনুগ্রহ করে আবার চেষ্টা করুন, ধন্যবাদ।’

মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে থাকা নাম্বারে তাকিয়ে রইলো অপলক,অনিমেষ, অবিচল ভাবে। মোবাইল ফোন বন্ধ জেনেও আবারও কতগুলো মেসেজ পাঠালো সে। বক্ষপিঞ্জরে প্রকান্ড ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই ভয়ংকর, দুরূহ, ভীতি-উদ্রেককারী ঝড় কবে কখন থামবে জানা নেই ফয়সালের।

_________________________

কাক ডাকা ভোর! ফারিয়া হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় বসে আছে। তার মুখোমুখি বসে আছেন মনোয়ারা বেগম। নাতনির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে তিনি মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন কালকের ঘটনা। কথার প্যাঁচ সে না বুঝলেও অকপটে বলে গেলো, তার বাবা তার মাকে থাপ্পড় দিয়েছে। আবার দাদীও তার বাবা কে থাপ্পড় দিয়েছে। কথার মাঝে আচমকা প্রকান্ড শব্দে বেজে উঠলো উনার মোবাইল ফোন। ফারিয়ার দাদি ফোন দিয়েছে।

‘বেয়াইন, আপনার মেয়েকে যথাযথ সম্মান দিয়ে আমার সংসারে রাখতে পারিনি। তূবা যেই সিদ্ধান্ত নিবে আমরা মাথা পেতে নিবো।’

এবার সোজা হয়ে বসলেন মনোয়ারা বেগম।

‘বেয়াইন, আসলে তূবা তো বলল না কি হয়েছে। আপনি যদি একটু।’

রাশেদা খাতুন বিষন্ন আর ধরা গলায় বলেন,

‘আপনার মেয়ের থেকে না হয় শুনে নিয়েন। আমার নাতনিটাকে দেখে রাখবেন।’

বিলম্ব করলেন না রাশেদা খাতুন সাথে সাথে কল কে’টে দিলেন। গতকাল রাতে বেশ বড় ঝামেলাই হয়েছে বুঝতে বাকি রইলো না মনোয়ারা বেগমের।নতুবা উনার মেয়ে রাতের বেলা এই বাসায় আসার মানুষ না।

সকালের মিষ্টি রোদ রূপ নিয়েছে প্রখর, ঝাঁজাল, অগ্নিময় উষ্ণতায়। রোদ গায়ে এসে বিঁধে তীর্যক ভাবে। তাহমিদ অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে ঘন্টা পার হলো। বসার ঘরে মনোয়ারা বেগম নাতনির খেলছেন।

নিদাঘ,উষ্ণগম অনুভূত হতেই তন্দ্রাভাব হালকা হয়ে এলো তূবার। শেষরাতে ঘুমিয়ে ছিলো সে। সময় দেখার জন্য মোবাইলের পাওয়ার বাটন চাপতেই খেয়াল হলো তার গতকাল রাতে সে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিল। মোবাইল অন করে দেখল ইতিমধ্যে ঘড়ির কাঁটা এগারোটার ঘরে পৌঁছে গেছে। উঠে বসল সে। এলোমেলো চুল গুলো হাত খোঁপা করে কিয়ৎকাল সেখানেই থমথমে, বিবর্ণ, বিবস মুখে বসে রইলো। গত হওয়া কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনা মস্তিষ্কে খুব বিশ্রী ভাবে কড়া নাড়ল। বি’ষিয়ে গেলো অন্তর এবং সমস্ত কায়া। ভাইব্রেট করতে তার মোবাইল। স্ক্রিনে ভেসে থাকা নাম দেখে মোবাইল উল্টিয়ে রাখলো। বাজতে থাকুক কল রিসিভ করবে না সে।

মোবাইল ভাইব্রেট করা বন্ধ করে দিল। তপ্ত, সদুষ্ণ শ্বাস ফেলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় তূবা। এলোমেলো বেশভূষা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নিজের চোখের পানে তাকিয়ে রইলো অপলক, অনিমেষ। চক্ষু জোড়ায় হাজারো অব্যক্ত, অপ্রকাশিত অভিযোগ। সমস্ত অভিযোগ তার নিজের সম্পর্কে। পুনরায় ভাইব্রেট হলো মোবাইল। পরপর কয়েকবার কল দিয়েই গেলো ফয়সাল। এইবার বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরে তূবা। ওপাশ থেকে শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের নিনাদ তূবার কানে আসতে লাগল। তূবা স্বাভাবিক স্বর টানল,

‘ এতোবার কল করার কোনো দরকার নেই। সময় হলে ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবেন। সময় সাপেক্ষ ব্যপার তো। আজ যাবো এপ্লাই করার জন্য। বার বার ফোন মনে করিয়ে দিতে হবে না।’

ফোনের ওপাশ থেকে শোনা গেল ফয়সালের অসহায়, নিরাধার, নিরালম্বন নিস্বন।

‘এতো মেসেজ দিলাম রাত থেকে কোথাও কি লিখা ছিলো আমার মুক্তি চাই? আমার তোমাকে চাই। তোমার তুমিটাকে চাই। শেষ বয়স পর্যন্ত তোমার সঙ্গ চাই।’

‘ইশ! কি যে বলো। একজন চরিত্রহীনার সঙ্গে থাকলে তো তার দহনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবে। অদৃশ্য বৈশ্বানরের প্রজ্বলিত শিখায় তো দগ্ধ হলে। ভস্ম হলো তোমার বিশ্বাস। আর কত পুড়বে বলো?’

তূবার প্রতিটা কথা যেন ফয়সালের শরীরে সূচের মতো বিঁধছে।

‘ আই’ম স্যরি। কেউ একজন আমার আমার মাইন্ড খুব বাজে ভাবে ডাইভার্ট করেছে। প্রতিটা সেকেন্ড মনে হয়েছিল তুমি আমাকে ঠকিয়েছ। তাই মুখে যা এসেছে তাই বলে দিয়েছি।’

ফয়সালের কথায় সশব্দে হাসলো তূবা।

‘রাগের বশে কিন্তু মানুষের মুখ দিয়ে সত্য কথা বেরিয়ে আসে। তোমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। তোমার আর আমার পথ এখন আলাদা। এসবের মাঝে আমাদের মেয়েকে স্যরি আমার মেয়েকে টানবে না। কজ সে তোমার মেয়ে না। আমি হোটেলে হোটেলে পরপুরুষের কাছে গিয়ে নিজের শরীরের জ্বালা মিটানোর ফল আমার মেয়ে।’

চোখমুখের অভিব্যক্তি বদলে গেলো ফয়সালের। কঠিন গলায় বলল,

‘মেয়েও আমার আর মেয়ের মাও আমার। জীবন থাকতে বিচ্ছেদের খাতায় নাম উঠবে না।’

আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের উপর হাত রাখল তূবা।

‘তুমি চেষ্টা করতে পারেন।তবে আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। সমস্ত অভিযোগ আমার নিজের নামে। আসলে আমি কখনো নিজেকেই ভালোবাসতে পারিনি।’

এইবার স্বাভাবিক স্বর টেনে ফয়সাল বলল,

‘এক বাচ্চার বাবা হওয়ার পরও যদি বউকে নিজের কাছে আনার জন্য পাগলামি করতে হয় তো করবো। অনেক থেকেছি চুপচাপ আর গম্ভীর। এবার না হয় একটু পাগলামি করবো। এতোদিন চুপচাপ থাকলেও আমাকে এই বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি যে করেছে তাকে গর্ত থেকে টেনে বের করবো। যদি চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে হয় তবে বলবো যে, বিচ্ছেদ তো ঘটবে না তুমি না হয় একটা বিধবার থান কিনে রেখো।’

#চলবে

বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।