দেওয়া নেওয়া সানাই পর্ব-০৪

0
310

#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব:4
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

মামমাম আমার হাতে কফি দিয়ে উপরে যেতে বললেন। আমি ও তাই কফি নিয়ে উপরে চলে আসলাম।গেট এ এসে কলিংবেল দিতেই উনি গেট খুলে দিলেন।মনে হলো এখানেই দাড়িয়ে ছিলো।
এই নিন আপনার কফি।(ঐশানী)

কফি পরে খাবো।একটু কষ্ট করে মামমাম এর থেকে একটা স্যালাইন নিয়ে আসো প্লিজ।(ইফরাজ সোফার উপর হেলান দিয়ে)

স্যালাইন দিয়ে কি করবেন?(ঐশানী ব্রু কুচকেই)

স্যালাইন দিয়ে গোসল করব বউ। (ইফরাজ পেটে হাত দিয়ে)

আজব স্যালাইন দিয়ে কেউ গোসল করে নাকি?(ঐশানী)

তাহলে কি করে স্যালাইন দিয়ে?(ইফরাজ)

খায়।এই ওয়েট আপনার কি পেট খারাপ হয়েছে নাকি?(ঐশানী)

হুম।প্লিজ স্যালাইন টা আগে আনো পরে কথা বলো।নাহলে আজকে সারাদিন ঐ ওয়াশরুম এই থাকতে হবে।(ইফরাজ)

আচ্ছা আনছি।
আমি কফির মগটা টেবিল এ রেখে আবার নিচে আসলাম।
মামমাম তোমার ছেলের পেট খারাপ হয়েছে।একটা স্যালাইন চাইছে।(ঐশানী)

খাবার এর সময় মুখে লাগাম থাকে না অসভ্যটার।এখন কয়েকদিন ভুগে আল্লাহ মালুম।চলো আমি যেয়ে দেখি কি হলো।(মামমাম)

আচ্ছা ।
তারপর মামমাম কয়েকটা টেবলেট আর স্যালাইন নিয়ে গেট লক করে আমার সাথে উপরে আসল।এসে দেখি উনি ওয়াশরুম এই আছে।বেশ কিছুক্ষন পর বের হয়ে বেডের উপর ধপাস করে শুয়ে পড়লেন।শোয়ার সাথেই বেডটা একটু নড়ে উঠলেন।মামমাম স্যালাইন গুলিয়ে ওনাকে দিলেন।উনি বসে স্যালাইন টা খেয়ে আবার শুয়ে পড়লেন।আহারে বেচারা।একদম ঠিক হয়েছে আমার ফোনটা ভেঙ্গেছেন এর শাস্তি পাচ্ছেন।(ঐশানী মুখ টিপে হেসে মনে)

এই ছেলে তোর মুখে লাগাম থাকে না খাওয়ার সময়।জানিস অতিরিক্ত কিছু খেলে পেটে সমস্যা হয় তাও খেতেই হবে কেন ইফু?(মামমাম তুবা বেগম)

বুঝলাম না তোমাদের মা বউমার আমার খাবার নিয়ে এত্ত কিসের কষ্ট। কথায় কথায় খাওয়ার খোটা দাও।তোমরা খেতে পারো না এটা তোমাদের ব্যর্থতা আমি খেতে পারি এটা আমার পরে এসে বলছি।(ইফরাজ বলেই আবার ওয়াশরুম এ দৌড়)

হাহাহা।(ঐশানী ও মামমাম একসাথে হেসে)

________

রাতে ডিনার টেবিলে

আমি এই পাতলা সুপ খাবোনা।(ইফরাজ)

এগুলো এই খেতে হবে।নাহলে ভাত আর ডাল খাও।মাছ মাংসে হাত দিবিনা।(মামমাম)

আব্বু দেখো আমাকে খেতে দেয়না।(ইফরাজ কান্নার ভান করে)

বাবা পেট টা তোমার এই খারাপ আমাদের না।তাই এসব তালবাহানা দিয়ে লাভ নেই।সুপটা এই খাও।(আব্বু)

সবাই আমার খাবার এর শত্রু।(ইফরাজ রাগ করে)

আহারে বেচারার সামনে ওর প্রিয় চিকেন কসা আর ও খাচ্ছে সুপ।বারবার সবার দিকে তাকাচ্ছে।এমন ছেলে আমি জীবনেও দেখিনাই।32 বছরের ছেলে কিনা খাবার খাওয়ার জন্য কান্না করে।আমার যেমন হাসি ও আসছে আবার একটু কষ্ট ও লাগছে।এদিকে মামমাম আমার প্লেটে ভর্তি করে মাংস দিয়েছে।সাথে বাটিতে ইলিশ মাছ।আমি বসে বসে প্লেট এর খাবার নাড়াচড়া করছি।আব্বু খেয়ে চলে গেল।মামমাম ও খেয়ে রান্নাঘর এ চলে গেল।
এই নিন জলদি হা করুন।(ঐশানী মাংস ইফরাজ এর মুখের সামনে ধরে)

থ্যাঙ্কস বউ।
বলেই কয়েকটা খেতে লাগলাম। জদিও ঐশানী দিয়ে দিচ্ছে মুখে আমি কোনরকম চাবিয়ে গিলছি।মামমাম দেখলে ঐশানীকে ও বকবে।ওর প্লেট এর বেশির ভাগ মাংস আমি শেষ করে দিলাম কয়েক মুহূর্তেই।
বউ এক প্লেট ভাত আর একটা ইলিশ মাছ নিয়ে উপরে আসো এই কয়েকটা মাংসে পেট ভরে নাই।(ইফরাজ ঐশানীর কানে ফিসফিস করে)

পারবনা।(ঐশানী)

তাহলে আমি এখন বাইরে গিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে আসব বলে দিলাম। (ইফরাজ)

আপনার শরীর আপনি এই বুঝবেন।(ঐশানী)

প্লিজ সোনাপাখি বউ আমার সারাদিন ওয়াশরুম এ দৌড়ে পেট পুরা খালি হয়ে গেছে।একটু সহায় হোও।এক প্লেট ভাত দাও।(ইফরাজ)

কালকে আমার মোবাইল টা ভাঙ্গার পর ও মাংস খেতে দিয়েছি এতেই শুকরিয়া আদায় করেন।পেটুক খাদক পাবলিক।(ঐশানী)

ভাত দিবানা তুমি?(ইফরাজ রাগ করে)

মামমাম তোমার ছেলে দেখো ভাত চাইতাছে।(ঐশানী চিৎকার করে)

আমার খাবার এর দুশমন।(ইফরাজ বলেই হাটা দিলো)

আমি আমার খাবার খেয়ে প্লেট গলো রান্নাঘরে নিয়ে ধুয়ে দিলাম।তারপর মামমাম এর থেকে বিদায় নিয়ে উপরে চলে আসলাম।এসে দেখি ইফরাজ মন খারাপ করে সোফার উপর বসে টিভি দেখছে।আমি ওনার সামনে থেকে সোজা নিজের রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়লাম।(ঐশানী)

________

পরের দিন সকাল

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে সোজা নিচে চলে আসলাম। মামমাম এর সাথে ব্রেকফাস্ট তৈরি করতে হেল্প করলাম।রান্নার দ্বায়িত্ব মামমাম এর এই।আর ঘরের সব কাজ সুটা বুয়া এসে করে যায়।ব্রেকফাস্ট বানানোর পর সব টেবিল এ দিয়ে আমি আব্বুকে ডাকতে গেলাম।মামমাম ইফরাজ কে কল করে আসতে বলেছে।
আব্বু আজকে হাটতে যাওনি?(ঐশানী)

নারে মা।আজকে একটু ট্রায়াড লাগছিল তাই ঘুমিয়েছি।পাচঁমিনিট হলো উঠলাম।ইফু উঠেছে?শরীর কেমন এখন ওর?(আব্বু)

আমি যখন আসলাম তখন তো ঘুমিয়ে ছিলো।(ঐশানী)

ও।আচ্ছা যাও আমি আসছি।(আব্বু)

ঠিক আছে।(ঐশানী)

ব্রেকফাস্ট টেবিলে

রেডি হতে বলো তোমার বউমাকে তাকে নিয়ে ভার্সিটিতে যাবো।(ইফরাজ)

আবার কি নিয়ে ঝগড়া হলো ইফু?(মামমাম)

আমার খেয়ে দেয়ে অনেক কাজ আছে।এত্ত ঝগড়া করার টাইম নেই বুঝলে।(ইফরাজ বলেই হেটে চলে গেল)

কি হয়েছে?(মামমাম)

কালেকে ভাত আর ইলিশ মাছ খেতে চাইছিল তা দেইনাই বলে মনে হয় রেগে আছে।(ঐশানী)

যত্তসব পাগল আমার ঘরেই আছে।যাওতো মা রেডি হয়ে নাও।আবার ক্ষেপে গেলে কি না কি করে।(মামমাম )
________

আচ্ছা আসি।
তারপর আমি উপরে এসে একটা ব্লু কালার লং টপস,জিন্স আর সাথে হিজাব পরে রেডি হয়ে নিলাম।একটা পার্স ও ফাইলে প্রয়োজনিও কাগজ নিয়ে ডাইনিং এ আসলাম। একটু পর ইফরাজ রুম থেকে বের হয়ে আসল।আমি ওনাকে দেখে কিছুক্ষণ ওনার দিকে তাকিয়েই ছিলাম। তারপর নিজেকে মনে মনে কয়েকটা বকা মেরে নিজেকে সংযতো করেছি।এভাবে কোন পুরুষ কে দেখতে লজ্জা করেনা তোর?উনি কোন কথা না বলেই আমার হাত ধরেই বেরিয়ে গেট লক করে লিফটে উঠে গেল।লিফট থেকে নেমে আমার হাত ছেড়ে পার্কিং এরিয়ার দিকে চলে গেলেন।তারপর ওনার গাড়ি এনে আমার সামনে দাড় করালেন।আর হরণ দিতেই থাকলেন।আমি ও ঠায় দাড়িয়ে থাকলাম। কথা না বললে গাড়িতে উঠবনা।(ঐশানী)

মেজাজ টা খারাপ না করলে হচ্ছে না এই মেয়ের।আমি আবার গাড়ির থেকে নেমে ওকে ধরে গাড়িতে উঠাতে চাইলাম। কিন্ত ও নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।আমি ওকে তাড়াতাড়ি কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলাম। হঠাৎই এমন করাতে ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়েই আছে।আমি ওকে বসিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে হঠাৎই ওর কপালে একটা কিস করে জলদি গেট লক করে দিলাম। ঐশানী গাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার করে যাচ্ছে। আমি জলদি গিয়ে গাড়িতে বসে সিট বেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টাট করলাম। (ইফরাজ)

আপনার মতো অসভ্য মানুষ আমি জীবনে দেখিনাই।কোন সাহসে আপনি আমাকে কিস করলেন?(রাগ করে ঐশানী)

আমার সাহস এর এখন ও তো কিছুই দেখিনাই বউ। এক সপ্তাহ তিনদিন এ একটা কিস এই নাহয় করছি তাও কপালে এতে সাহস এর কি দেখলা।এখন ওতো অনেক কিছু করার বাকি আছে।(ইফরাজ চোখ টিপ দিয়ে)

খবরদার আমার ধারেকাছেও জদি আসেন আপনার খবর আছে।(কান্না সিক্ত নয়নে ঐশানী)

সরি আচ্ছা সরি বললাম তো।আর তোমার পারমিশন ছাড়া তোমার ধারেকাছেও ঘেসবোনা।(ইফরাজ)

নিশ্চুপ। (ঐশানী)

এটা বলবো ভাবলে ভুল ভাবছো বউ। আমি নির্লজ্জ পাবলিক এসব ধরে বসে থাকবোনা।একটা কিস যখন করেই ফেলেছি এখন থেকে হুটহাট অত্যাচার এর জন্য প্রস্তুত থেকো(ইফরাজ )

আমার সাথে এমন করলে আমিও চলে যাবো।(ঐশানী কান্না করে)

কোই যাবা বাপের বাড়ি?(ইফরাজ)

হুম। (ঐশানী)

ঠেং ভেঙ্গে নিয়ে আসবো আমি তোমাকে।আর হ্যা কান্না করছো কেন তুমি?(ইফরাজ গাড়ি থামিয়ে)

আপনি কিস করছেন কেন না বলে?(ঐশানী)

আচ্ছা বউ একটা কিস করি ।
বলেই আরেকটা কিস করে দিলাম ওর গালে।
এইবার কিন্তু জিজ্ঞেস করে কিস করছি।এইবার কান্না থামাও।(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)

আপনি কিন্ত বেশি বেশি করছেন।(দাঁতে দাঁত চেপে ঐশানী)

কান্না থামাও আগে নাহলে আবার এমন কিছু করে বসব।(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই কাছে এসে)

অসভ্য নির্লজ্জ পাবলিক ছাড়েন আমাকে।(ঐশানী চিৎকার করে)

হুম জানি সবাই তাই বলে।(ইফরাজ)

_______

কালকে ভার্সিটিতে ভর্তির পর এসে আমি সোঝা রুমে ডুকে গেট লক করে বসে ছিলাম।দুপুর আর রাতের খাবার এর জন্য বের হয়ে আবার এসে গেট লক করে দিতাম।সকালে ব্রেকফাস্ট এর পর রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম।আজকের থেকে ভার্সিটিতে যাব।তবে আব্বুর সাথে।ঐ অসভ্য ইফরাজ এর সাথে তো ভুলেও যাবোনা।ব্যাগ নিয়ে বের হতেই ইফরাজ আমার হাত ধরেই সোফার উপর বসিয়ে দিলো।
কি সমস্যা?(ঐশানী)

সোনাপাখি বউ টা এমন পালাই পালাই করছো কেন কালকের থেকে?(ইফরাজ)

আপনার মতো অসভ্য মানুষের থেকে পালাবো নাতো কোলে এসে বসে থাকব।(ঐশানী)

চাইলে বসতে পারো আমি মাইন্ড করবোনা সোনাপাখি বউটা।(ইফরাজ মুচকি হেসে)

ছাড়েন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। (ঐশানী)

ওয়েট।হ্যালো আব্বু তুমি হসপিটাল এ চলে যাও তোমার বউমাকে আমি ভার্সিটি নিয়ে যাবো।(ইফরাজ)

ওতো বলল আমার সাথে যাবে।(আব্বু)

আমার বউ এর সাথে একটু টাইম স্পেন করব আব্বু তুমি বেঘাত ঘটাতে পারোনা এতে।তাই বলছি যাও।(ইফরাজ)

নির্লজ্জ ছেলে একটা।বাপ লাগি আমি তোর কি বলিস বুঝে বলবিতো।(আব্বু রাগ করে)

হয়েছে আব্বাজান আমার আপনি ও আমার আম্মাজান এর সাথে ওমা কেটে দিলো কেন?(ইফরাজ ফোনের দিকে তাকিয়েই)

অসভ্য ছেলে মুখে কিছু আটকায়না।(আব্বু)

আপনার মাথায় সমস্যা আছে সিওর। (ঐশানী)

ও বউ কেন কি করলাম আবার?(ইফরাজ)

সরেন আমার চোখের সামনে থেকে অসভ্য পাবলিক। (ঐশানী)

চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বলেই ওকে নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম। ভার্সিটির সামনে এসে।
শোন সোনাপাখি বউ। (ইফরাজ)

এসব কি নামে ডাকেন?আমার নাম ঐশানী এই নামে ডাকেন।(ঐশানী রাগ করে)

এটা আদর করে ডাকি সোনাপাখি বউটা।যাইহোক শোন ভর্তি করাইছি পড়ার জন্য পড়বা ভালো করে।ফ্রেন্ড হবে নতুন নতুন হোক সমস্যা নেই।কিন্ত সেই লিস্টে কোন ছেলে যেন না থাকে।(ইফরাজ)

সন্ধেহ করেন?(ঐশানী ব্রু কুচকেই)

না সন্ধেহ করিনা।বাট ছেলেদের বিশ্বাস করিনা।আর একটা কথা নিশ্চিত শুনেছ একটা ছেলে আর মেয়ে কোনদিন ফ্রেন্ড হতে পারেনা।তারা একে অপরের প্রতি এক মিনিটের জন্য হলেও আক্রশন ফিল করবেই।আর আমি চাই ঐ এক মিনিট এর ফিলিংস টাও আমার জন্য আসুক তোমার বোঝা গেল।(ইফরাজ)

হিংসে লাগে?(ঐশানী মুচকি হেসে)

এইসব ব্যাপার এ আমি হিংসুটে বরাবরই তা তোমার জানা উচিত। (ইফরাজ)

হুম এই জন্য এই আমার ফোনটা মরে গেছে।(ঐশানী)

হুম। ও বলা হয়নি তোমার জন্য ফোন কিনেছিলাম পরশু এই দেওয়া হয়নাই।এই নাও এটা তোমার। আর ঐ ফোনের সিম এটাতে লাগায় দিছি আর ফারাজ এর নাম্বার টা ব্লোক লিস্টে রেখেছি।ঐটা যেন কনদিন এনালগ না হয় বোঝা গেল। (ইফরাজ)

হুম এইবার আসি।(ঐশানী)

আচ্ছা সোনাপাখি বউ। (ইফরাজ )

উফফফ পাগল।(ঐশানী)

********(চলবে)*******