দেওয়া নেওয়া সানাই পর্ব-০৫

0
316

#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব :5
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

তোমার কি মনে হয় আমি বোকা?(ইফরাজ রাগ করে)

হঠাৎই এই কথা বললেন কেন?(ঐশানী ব্রু কুচকেই)

কি বলছিলাম?(ইফরাজ)

কত্ত কিছুই তো বলেন।এখন কিসের কথা বলছেন ঐটা বলেন।(ঐশানী)

বলেছিলাম তো ছেলেদের সাথে কথা না বলতে।তাহলে কেন তুমি ছেলেদের সাথে কথা বলছো?(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)

কখন বলছি?আজিব আন্দাজে কথা কেন বলেন?(ঐশানী)

তুমি ক্লাসে একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলোনি তাও পাক্কা তিন মিনিট।।(ইফরাজ রাগ করে)

উফফ আপনার এইসব কথাতে মন চায় কচু গাছের সাথে ফা*সি খাইয়া ম*রে যাই।ছাড়েন তো আমাকে আপনার এইসব আজাইরা কথা শোনার টাইম নাই।(ঐশানী)

আমার কথার উত্তর দাও।কেন কথা বললা?বলেছিলাম তো ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে।কেন শুনো নাই আমার কথা?(ঐশানীকে কাছে এনে চিৎকার করে ইফরাজ)

বেশ করেছি কথা বলেছি।আরো বলবো আপনার কি?আর আপনি আমার স্বামী হয়ে কি আমার মাথা কিনে নিয়েছেন যে যা বলবেন তাই শুনবো।আর আমি তিন মিনিট কথা বলেছি তা আপনি কি করে জানলেন?আমার পেছনে কি গোয়েন্দা লাগিয়েছেন?(চিৎকার করে ঐশানী)

আরো কথা বলবি তুই ছেলেদের সাথে?(ইফরাজ ঐশানীর মুখ চেপে)

তুই তোমারি করবেন না।আমি ও করতে পারি।(ঐশানী ইফরাজ এর হাত সরিয়ে ধাক্কা দিয়ে)

আমার সামনে থেকে যা।নাহলে আজকে তোকে আমি মে*রেই ফেলব।(ইফরাজ)

যাবোনা।আমি এখানেই থাকব।অসুবিধা আপনার আপনি যান।(ঐশানী বারান্দার দোলনাতে বসে)

রাগে আমার শরীর রীতিমত কাপছে।আমি দেওয়াল এর উপর কয়েকটা ঘুসি মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। ও আমার বউ ওর যত্ত কথা সব আমার সাথে হবে।কেন ও অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলবে কেন?ওকে যে আমি ভালোবেসে ফেলেছি তা ও কেন বুঝেনা।বিয়ে যেভাবেই হোক ওকে এখন আমি অনেক ভালোবাসি।ওকে আমি ভালো রাখতে চাই বলে ওকে আবার ভর্তি করাইছি।যাতে ও পড়াশোনা শেষ করতে পারে।সারাদিন বাসায় বসে যেন না থাকতে হয়।ওর ভালোটা আমি বুঝলেও ও কেন বুঝেনা।ভার্সিটির থেকে আনতে গেছিলাম ওকে আমি কিন্ত ও আগেই বাড়ি ফিরে আসে।আমি কল করে তাই জানতে পারি।বাড়ি ফিরে এসে দেখি বারান্দার মধ্যেই বসে ফেসবুক এ ফারাজ এর আইডি চেক করে ছবি দেখছে।এতে আরও মাথা গরম হয়ে গেছে।ওর ক্লাস এ আমার ফ্রেন্ড এর ছোট বোন পড়ে।তাই ওকে বলেছিলাম যেন ঐশানীর খবর আমাকে জানায়।মানে ছেলেদের সাথে কথা বলার খবর গুলোই।যদিও এটা ঠিক না।তাও মন মানে নাই।ও যখন কল করে বলেছিল ভাইয়া ঐশানী ভাবী আজকে একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।তখন থেকেই মাথা আমার হ্যাং হয়ে গেছে।তার উপর ফারাজ এর পিক চেক আউট করা আমার মনে আরো আগুন লাগানোর জন্য যথেষ্ট।আর এই মেয়ের মনে না আছে আমার জন্য ভালোবাসা আর না ভালোলাগা।ওর বোঝা উচিত স্বামী হোই আমার কথা একটু শুনলে ক্ষতি কি?(ইফরাজ মনে)

______

রাত প্রায় বারোটা বাজতে চলল ইফরাজ এখন ও বাড়ি ফিরেনাই।মামমাম খাবার খাওয়ার কথা বলছে।এমন লেইট হয় নাকি ওনার মাঝেমধ্যেই। কিন্ত আমিতো আর মামমাম কে বলতে পারছিনা তার ছেলে রাগ করেছে আমার সাথে ।আমি আমার আর ওনার খাবার নিয়ে উপরে চলে আসলাম মামমাম আর আব্বুকে ঘুমাতে বলে।এসে অনবরত ওনাকে কল করছি।ইফরাজ আমার ফোনে তার নাম সেভ করেছে My heart লিখে।আমি তা চেঞ্জ করে ইফরাজ এই লিখেছি।ওনাকে অনেকবার কল করে ও যখন ধরল না।আমি একটা মেসেজ দিলাম।
ইফরাজ আপনার জন্য না খেয়ে বসে আছি প্লিজ জলদি আসেন আমার খুদা লাগছে অনেক।
আমি এই কয়েকদিন এ যা বুঝেছি উনি আর যাই করুক আমার কষ্ট সহ্য করে পারেনা।মাত্র এক সপ্তাহ চারদিন এই হয়তো ওনার মনে আমার জন্য মায়া জন্মে গেছে।হয়তো অল্প ভালোবাসাও।কিন্ত এটা আমার স্বাধীনতার মধ্যেই বাদ সাধছে।জদিও আমি ফারাজের পিক দেখেছি বলে উনি রাগ করেছে মানলাম।কিন্ত ক্লাসে তো আমি কারো সাথে কথা বলিনাই তাও হেসে।কে এই উল্টাপাল্টা কথাটা বলল ওনাকে?হুম কথা বলেছিলাম ভার্সিটির স্যার এর সাথে তাকে আমার পরিচয় দেওয়ার সময়।তখন হেসেই কথা বলেছিলাম। কেউ সেই কথাইতো বলেনাই।আরে এক গাধা ছেলে আরেক গাধা কে দ্বায়িত্ব দিয়েছে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য। আজকে আসুক তারপর বুঝাবো বেয়াদপ টাকে আমার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করার মজা।হঠাৎই কলিংবেল এর আওয়াজ আসতেই আমি দৌড়ে গিয়ে গেট খুলে দিলাম।ইফরাজ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।আমি একটু সরে দাঁড়ালাম এতে উনি আস্তে ঘরে প্রবেশ করলেন।তারপর জুতা গুলো খুলে রুমে ঢুকে গেলেন।আমিও পেছনে গেলাম।জদিও উনি রুমে থাকলে আমি ওনার রুমে যাইনা দরকার ছাড়া।উনি ঢুকেই বেডের উপর ধপাস করে পড়লেন।
ইফরাজ ফ্রেস হয়ে আসেন।অনেক রাত হয়েছে আমার খুদা লাগছে খাবো আমি।(ঐশানী)

আপনার খেতে ইচ্ছে হলে খেয়ে নেন আমি ঘুমাব।(ইফরাজ )

ঢং কম করেন।চলেন খাবেন।(ঐশানী)

বললাম তো আপনার খুদা লাগলে আপনি খেয়ে নেন।আমি ঘুমাব।(ইফরাজ উঠে বসে হালকা চিৎকার করেই)

বাবা চাঁদ কোনদিকে উঠল আজকে ইফরাজ খান নাকী খাবেনা।আবার আমাকে আপনি করে ও বলছে।(ঐশানী ইফরাজ এর পাশে বসেই)

নিজের রুমে যান।মাথা গরম আছে আর রাগাবেননা।(ইফরাজ)

বিকেল থেকে কোথায় ছিলেন আপনি?(ঐশানী)

আপনাকে বলতে বাধ্য না আমি।(ইফরাজ)

তাহলে আমাকে কেন এত্ত বাদসাধেন আপনি?নিজের বেলায় ষোল আনা আর বউ এর বেলা চার আনা।(ঐশানী)

ঠিক আছে আর বাদসাধব না।একশোটা ছেলে ফ্রেন্ড বানান তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।যা মন চায় করেন কিছুই বলব না এখন থেকে।প্লিজ তাও এখন আমার সামনের থেকে যান।(ইফরাজ ঘুরে বসে)

আজকের থেকে আমি আপনার সাথে এই রুমেই থাকব।আর ভার্সিটিতে আমি একটা ছেলের সাথে না স্যার এর সাথে কথা বলেছিলাম ইফরাজ।আর ফারাজ আমার দশ বছরের ভালোবাসা ছিল তাকে তো দশদিনে ভুলা সম্ভব না তাই মাঝেমধ্যেই ওর ছবিটা দেখে একটু অভিযোগ করি কেন আমাকে ঠকালো?এখন প্লিজ আর রাগ করবেন না ফ্রেস হয়ে খেতে চলুন।(ঐশানী ইফরাজ কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে )

খাবনা আমি।আপনি খেয়ে ঘুমাতে যান বললাম তো।(ইফরাজ নিজেকে ছাড়িয়ে)

বেশি বেশি করছেন না এইবার?আপনার কি মনে হয় আপনি ঘাড় ত্যারামি করবেন আমি তা চুপচাপ মেনে নিব।দেখেন ইফরাজ আপনি যদি ঘাড় ত্যারা হোন আমিও তো আপনার এই বউ আমি যদি ঘাড় ত্যারামি শুরু করি আমাকে ফেরাতে পারবেন আপনি?(ঐশানী)

হাত ছাড়েন।(ইফরাজ)

ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে আসেন।নাহলে বলে দিচ্ছি আমি এখন এই মুহূর্তেই বাপের বাড়ি চলে যাব।(ঐশানী)

ভয় দেখাচ্ছেন?(ইফরাজ)

সত্যি বলছি।আমি আবার আপনার মতো ঢং করতে জানিনাতো।তাও আজাইরা ঢং।(মুখ ভেংচি কেটে ঐশানী)

ঠিক আছে যেয়ে দেখান তো দেখি।(ইফরাজ ভাব নিয়ে)

সিওর তো?(ঐশানী ব্রু নাচিয়ে)

হুম যান দেখি কত্ত সাহস আপনার। (ইফরাজ)

ওকে।
বলেই পাশের রুমে এসে মোবাইল আর পার্স নিয়ে মাথায় ওরনা দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম।আর সোজা গেট খুলে বাইরে এসে লিফটে উঠে গেলাম। যেহেতু এত্ত রাতে আর কেউ নেই লিফট ফাকাই ছিল। লিফট এর গেট বন্ধ হওয়ার আগেই ইফরাজ ঢুকে গেলো।আর সোজা আমাকে লিফটের দেওয়াল এর সাথে টেলে দাড় করিয়ে রাগি লুক দিল।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। (ঐশানী)

সিন ক্রিয়েট করতে চাও এত্ত রাতে?(ইফরাজ)

সেম টু ইউ।(ঐশানী)

রুমে চলো।(ইফরাজ)

যাবোনা।(ঐশানী)

তুমি যাবে সাথে তোমার ঘাড় ও যাবে।(ইফরাজ)

না আমি যাবো না আমার ঘাড়।সরেন আমার চোখের সামনে থেকে।(ঐশানী ইফরাজ কে ধাক্কা দিয়ে )

রুমে নিজে থেকে যাবা নাকি কোলে করে নিয়ে যাবো।(ইফরাজ)

আর গোয়েন্দাগিরি করবেন?যদি না বলেন তাহলে যাবো।(ঐশানী)

একশোবার করব।আমার বউ এর সিকিউরিটি আমার কাছে।(ইফরাজ)

তাহলে আমি বাপের বাড়ি এই চলে যাই।সেখানে তো আর আপনার মত সন্দেহজনক পাবলিক নেই।সেখানে আরাম এ থাকতে পারব।(ঐশানী)

লিফটের থেকে এক পা বের করে দেখাও পারলে?(ইফরাজ)

ওকে ।
যেই আমি বের হতে নিব ইফরাজ আমাকে কোলে তুলে নিল।তারপর আবার লিফটের সাত এ দিতেই লিফট উপরে উঠতে লাগল।এই ফাকে আমি নামার জন্য কোলেই এক প্রকার যুদ্ধ করছি।লিফট থাকতেই উনি আমাকে নিয়ে নেমে কোন রকমে গেট খুলে ফ্লাটে ঢুকেই আমাকে একটা কিস করে বসলেন।আমি আমার হাত দিয়ে ওনাকে মেরেই যাচ্ছি। কিন্ত তাতে কোন লাভ হলোনা।বেশ কিছুক্ষন পর আমাকে নিয়ে ওনার বেড রুমে প্রবেশ করেই আমাকে বেডের উপর শুইয়ে দিয়ে আমার উপর দিয়ে আরেক সাইটে গিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
অসভ্য লোক কোথাকার?আপনার অসভ্যতামি দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে।ছা
আর বলতে দেইনি আবার কিস করতেই এইবার আমি কান্না করেই দিলাম। মানলাম স্বামী আমার সব অধিকার আছে।কিন্ত আমাকে তো একটু সময় দিবে।(ঐশানী)

কান্না করছো কেন?(ইফরাজ ঐশানীকে বসিয়ে)

আপনি খুব খারাপ মানুষ।(ঐশানী কান্না করে)

রাগ উঠাইলা কেন?তোমার এইতো দোষ।(ইফরাজ)

ছাড়েন আমাকে।(ঐশানী)

আজকের থেকে আমার সাথেই না থাকবা বললা।(ইফরাজ)

আপনার মতো অসভ্য পুরুষ এর সাথে আমি থাকবনা।ছাড়েন। (ঐশানী)

একবার যখন এইখানে এনেছি আর তো যেতে দিবনা বউ। (ইফরাজ)

_______

ভার্সিটির ক্লাস করে সোজা আমাদের বাসায় চলে আসছি।ঐ বাড়ি আমি আর যাচ্ছি না।অসভ্য পুরুষটার অত্যাচার দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। কালকে সারারাত আমার রুমে যেতে দেইনাই গেট তালা মেরে তার সাথে রাখছে।সকালে ভার্সিটিতে আসার সময় একটু পরপর এই জ্বালাতন করছে।গাড়ির থেকে বের হওয়ার সময় ধরে কিস করে তারপর ছেড়েছে।আম্মু বারবার জিজ্ঞেস করছে ঝগড়া করে আসছি কিনা।আমি বলেছি কয়েকদিন থাকতে আসছি এত্ত প্রশ্ন করো কেন?তারপর রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে দুপুর এর খাবার খেয়ে মাত্র রুমে এসেছি।খুব ঘুম পাচ্ছে তাই গেট ভিড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙ্গল গালে হালকা কামর এই।আমি ঘুম থেকে উঠতেই চোখ জোরা যেন খুলতে কষ্ট হল।সন্ধ্যার সময়ের আবছা আলো রুমে আসছে।ঝাপসা চোখে ইফরাজ এর মুখটা ভেসে উঠল।আমি বিরক্ত হলাম ওর কাজে।এখানে এসেও হাজির বান্দা।দুর ঘুমাই ও থাকুক। ভেবেই আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্ত অসভ্য পুরুষ এর জ্বালাতন যেন কমার কোন নাম এই নিছে না।
ঘুমাতে দেন ইফরাজ।আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।(ঐশানী)

জামাই কে না বলে আসতে নেই বউ এটা জানোনা?(ইফরাজ ঐশানীর গাল চেপে)

ঘুমন্ত বউ কে জ্বালাতন করতে নেই অসভ্য জামাই এটা জানেন না।(ঐশানী)

আচ্ছা ঘুমাও এখন। আজকে সারারাত জাগ্রত থাকার জন্য প্রস্তুত থেকো বউ। (ইফরাজ বলেই ঐশানীকে জড়িয়ে ধরল)

অসভ্য পুরুষ ছাড়েন আমাকে ধম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। (ঐশানী ইফরাজ কে ধাক্কা দিয়ে)

অভ্যাস করো সোনাপাখি বউ। (ইফরাজ)

অসহ্য। (ঐশানী)

_______

হসপিটাল এর করিডোরে বসে আছি আমি।ঐখানে ইফরাজ দৌড়াদৌড়ি করছে।রাতের খাবার এর টেবিলে সবাই যখন বসা দাদাজান হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন।ইফরাজ দাদজান কে কোলে নিয়ে গাড়িতে উঠায়।দিদা কান্না করতে করতে শেষ।আব্বু গেছে ঢাকার বাইরে একটা কাজে।আম্মু আর দিদা একটা ক্যাবিন এ আছে।দাদাজান এর হার্ট এটাক এর কথা শুনে দিদা অসুস্থ হয়ে গেছে।তাকেও তাই ভর্তি করানো হয়েছে।আম্মু সেখানেই বসে আছে। ইফরাজ দাদাজান এর জন্য যাবতীয় ঔষধ আনতে দৌড়াদৌড়ি করছে।বেশ কিছুক্ষন পর এসে আমার পাশে বসতেই আমি ওনার দিকে তাকালাম।ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে।ঘাম গুলো কপাল থেকে গাল বেয়ে দাড়িতে পরছে আর তা টুপ করে নিচে পরে যাচ্ছে।আমি আমার ওরনা দিয়ে ওর কপালের ঘাম মুছে দিতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল।
দাদাজান ঠিক হবেতো ইফরাজ?(কাপা গলায় ঐশানী)

অবশ্যই ঠিক হবে আল্লাহ সহায়ক।আমার আরেক জানের কি খবর?(ইফরাজ হেলান দিয়ে হাপানো কন্ঠে)

দিদা কে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে।এখন সে ঘুমায়।আপনার কি খুব ক্লান্ত লাগছে?পানি এনে দিবো?(ঐশানী)

না আমি ঠিক আছি।আব্বু মামমাম আসতে চাইছিল তাদের বললাম এত্ত রাতে না আসতে। সকালে আসতে বলেছি।রাগ করোনা আবার?(ইফরাজ)

রাগ কেন করব।আব্বুর শরীর ওতো ভালো নেই ইদানিং।একজন অসুস্থ মানুষ দেখতে এসে আরেকজন অসুস্থ হোক এটা আমি চাইনা।(ঐশানী)

না আছে না অনেক এই ধরো যখন দেখতে আসতে চাইল তাও আসল না অনেক এই রাগ করে।আমার এক ফ্রেন্ড এর শশুর অসুস্থ ছিল। তাকে আমার ফ্রেন্ডের বাবা মা দেখতে যেতে পারেনাই কারণ ওর মা ও অসুস্থ ছিল।আর এটা ওর বউ যানতো।আমার ফ্রেন্ড ভালো ছিল খুব ও নিজে বলেছিল তুমি তোমার আব্বুকে দেখে রেখো আমি আমার মাকে দেখব।কিন্ত পরে যেয়ে ওর বউ এর বাবা মা নানান কথা শুনায়। কারণ ওর বাবা অসুস্থ ছিল দেখতে কেন গেলনা আমার ফ্রেন্ড এর মা বাবা।এটা সমাজের নিয়ম বলা চলে।তাই বললাম আবার রাগ করোনা।যাইহোক তুমি আমার বুঝদার বউ। ভালো লাগল। আচ্ছা বসো আমি পানি আর কিছু খাবার কিনে আনি সবার জন্য। (ইফরাজ)

কেউ এখন খাবেনা ইফরাজ। আপনি বরং একটু পানি খান।অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে। (ঐশানী)

আমি স্ট্রেস নিতে পারিনা বউ।আমার হার্ট ভিশন দুর্বল।কেউ আমার প্রিয় এর তালিকার হলে তার কিছু হলে আমি নিতে পারিনা।তোমার সামনে ঐদিন বললাম না আপুকে দূরে বিয়ে দিয়েছি যাতে আমার ভালোবাসার কম না পড়ে।সত্যি বলতে আমার আপু আমার জান কলিজা ছিলো।আপুর ইচ্ছে ছিলো আব্বুর মতো ডাক্তার হবে।কিন্ত তা হয়নি।ওকে একটা ছেলে খুব পছন্দ করতো।কিন্ত ও করতোনা।এই জন্য ঐ ছেলে আপুকে কিডনাফ করে চারদিন নিজের কাছে রেখে অত্যাচার করেছিল।শারিরীক কোন ক্ষতি না করলেও মানসিক অত্যাচার করেছিল।যার পর ওর জীবনটাই পাল্টে যায়।ও পড়ালেখা ছেড়ে দেয়।নিজকে ঘড় বন্ধী করে নেয়।পুরো চারবছর লেগেছিল ওর ঠিক হতে।আব্বুর এক ফ্রেন্ড এর ছেলের সাথে আপুর বিয়ে ঠিক করা হয়।আফতাব ভাই আপুর অতিত এর কথা জেনেও আপুকে বিয়ে করে বিয়ের রাতেই লন্ডন চলে যায়।কারণ ভাইয়া চায়নি আপুর অতিত আবার সামনে আসুক।এতে সবচেয়ে একা আমি হয়ে যাই।আপুকে যেই ছেলে কিডনাফ করে তাকে ঐ সময় জেলে দেওয়া হয়।কিন্ত ছেলেটা জেলেই নিজেকে শেষ করে দেয়।এটা আমরা পরে জানতে পারি।এখন এত্ত কথা কেন বললাম যানো?(ইফরাজ)

এই জন্য ছেলেদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছেন?(ঐশানী)

না আমি এই জন্য কথা বলতে নিষেধ করিনাই।আমি চাইনা তোমাকে হাড়াতে।আমাকেতো ভালবাসোনা।যদি অন্য কেউ তোমার মনে বাসা ভেধে ফেলে।একটা কথা কি জানো একাকীত্ব এর সময় যদি কেউ ভরসা হতে পারে তাকে মনে জায়গা দিতে তুমি বাধ্য।তাই এই দুইদিন ধরে তোমার মনে জায়গা করতে অসভ্য পুরুষ হয়ে গেছি।যদিও আমি চাইনা এমন কিছু করি।কিন্ত ঐযে ভরসা নেই আমার নিজের উপর আর না তোমার উপর।রাগ করোনা যানোই তো আমি ঠোঁট কাটা যা মুখে আসে বলে দেই।সত্যি ভরসা পাইনা তোমার উপর।(ইফরাজ)

কেন ভরসা পাননা?দশ বছরের পুরুষ কে ভুলে সাথে সাথেই আপনাকে বিয়ে করার জন্য?(ঐশানী)

ধরে নাও তাই।এত্ত বছরের ভালোবাসা ভুল করে অন্য জায়গাতে চলে গেল আর তুমি সাথে সাথেই আমাকে বিয়ের কথা বললে সেই জন্য এই বলেছি ভরসা পাইনি।সেই জন্য ধীরে ধীরে নিজের করে নিচ্ছি যাতে দূরে যেতে না পারো।(ইফরাজ)

আপনার কি মনে হয় এখন আপনাকে রেখে আরেক বেটার সাথে চলে যাবো আমি?(ঐশানী)

মানুষ তো তুমি যেতেও পারো।(ইফরাজ)

অসভ্য পুরুষ সরেন আমার সামনে থেকে।(ঐশানী রাগ করে)

সরার জন্য তো কাছে আসিনি।এসেছি তোমার মনটাকে ভালো করতে।রাত শেষ হতে চলল দেখলে তোমার মন এখন আরেকদিকে বহমান।বসো আমি দাদাজান এর খবর নিয়ে আসি।(ইফরাজ বলেই চলে গেল)

এত্ত কিছুর মধ্যেই দাদাজান এর কথা ভুলেই গেছি।এই ছেলে আসলেই পাগল।(ঐশানী)

______

আজকে দাদাজান কে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।আব্বুও চলে আসছিল পরের দিন সকালেই।ইফরাজ এখানেই থেকেছে এই তিনদিন।আজকে দাদাজান কে দিয়ে মামমাম আর আব্বুর সাথে ফিরে গেল কিছুক্ষণ আগেই।একটা কাজ আছে নাহলে আজকেও যেতনা।মামমাম বলল কিছুদিন যেনো এখানে থাকি।আম্মুর হেল্প করি দাদাজান এর দেখাশোনা ও করি।এত্ত ভালো কেন তারা?আমার শশুর শাশুড়ি আমার এই আব্বু আম্মুর থেকেও ভালো মনে হয় কারণ তারা আমাকে বকেনা কিছুর জন্য। মামমাম তো আমার মনের কথা বলার আগেই বুঝে। যদিও আম্মু ও বুঝতো কিন্তু মাঝেমধ্যেই মারতো দুষ্টামি করার জন্য। সারাদিন দাদাজান এর সাথে সাথেই থেকেছি।একলা ওয়াশরুম যেতে পারেনা।খেতে ও কষ্ট হয়।তাই সাথে সাথে থাকতে হয়।দিদা ও একলা পারেনা দাদাকে টানতে।রাত বাজে একটা।আমি দাদাজান এর রুমের সোফায় শুয়ে আছি।আজকে এখানেই থাকব।রাতে জদি দরকার পরে সেই ভেবেই।হঠাৎই ইফরাজ এর কল আসল।
হ্যালো আসলামুআলাইকুম। এত্ত রাতে কল করলেন যে?(ঐশানী)

ওলাইকুম আসসালাম।কোই তুমি?(ইফরাজ)

আমি দাদাজান এর রুমে কেন?(ঐশানী)

ও বউ এত্ত রাতে বুড়োর সাথে কি তোমার?(ইফরাজ)

অসভ্য পুরুষ।তার ওয়াশরুম এ যেতে কষ্ট হয় সেই জন্য আজকে রাতে এখানেই ঘুমাব।(ঐশানী)

আমি যে নিচে দাড়িয়ে বউ এর জন্য সেটা একটু এসে দেখে যাবেন কি?(ইফরাজ)

এত্ত রাতে এখানে কেন আসছেন?(ঐশানী)

দেখা করতে আর একটু আদর করতে।করা হলেই চলে যাব।(ইফরাজ)

বাড়িতে যান আমি আসবনা।(ঐশানী)

না আসলে আমি এখন চিৎকার করব।আর বলব আমার বউ এর থেকে একটু আদর চাই দেয়না আর আমি করব তা ও করতে দেয়না।(ইফরাজ)

অসভ্য।
বলেই কল কেটে আস্তে করে রুমের বাইরে চলে আসলাম। তারপর পা টিপে সিরি বেয়ে নিচে এসে গেট খুলে বাইরে আসলাম।এসে দেখি ইফরাজ বাইকে হেলান দিয়ে বসে আছে।বাইক আসলো কোই থেকে আবার?
কি সমস্য আপনার রাত একটা বাজে এখানে কি?(ঐশানী)

আসো আগে একটু জড়িয়ে ধরি তারপর বলি।(ইফরাজ)

এই আপনি কি কিছু খেয়েছেন?(ঐশানী)

একটা সিগারেট খেয়েছিলাম উপস পান করেছিলাম।(ইফরাজ)

সিগারেট পান করে কেমনে?(ঐশানী)

ঐ আরকি সিগারেট ধরিয়ে ধুয়া নিয়েছিলাম।(ইফরাজ)

বাইক টা কার?(ঐশানী)

তোমার জামাই এর।আজকে কিনলাম সুন্দর না?(ইফরাজ)

হুম সুন্দর। এখন বাইকে বসে বাড়ি তে যান।(ঐশানী)

এক সপ্তাহের জন্য ইন্ডিয়া যাবো কাল।এক সপ্তাহ জ্বালাতন করবনাতো।আজকে একটু আদর করতে দাও।(ইফরাজ)

কেনো যাবেন?(ঐশানী)

কিছু প্রোডাক্ট আনতে যাব।এখন তো আদর দাও।(ইফরাজ)

পারবনা।(ঐশানী)

আমি দেই ?(ইফরাজ)

জানিনা।(ঐশানী)

আচ্ছা বাদ দেই।ইন্ডিয়ার থেকে কি কি আনবো বলে দাও।(ইফরাজ)

আপনার মাথা আনবেন।(ঐশানী)

রাগ করো কেন?(ইফরাজ)

তো কি করব?কালকে জাবেন আজকে বলেন তা তো কি করবো?(ঐশানী)

আমি তোমার কাছে আজকে থাকতে চাই রাখবে আমাকে?(ইফরাজ)

না।(ঐশানী)

প্লিজ রাখো।আর জদি ফিরে না আসি শেষ আবদার টা রাখো প্লিজ!(অনুনয়ের সুরে ইফরাজ)

মানে কি?(ঐশানী)

চলো রুমে তোমার সাথে ঘুমাব।আর কোন কথা নেই চলো।
বলেই ওকে ধরে ভেতরে আসলাম।ওকে দাড় করিয়ে বাইক এনে গেটের ভেতর রেখে গেট লক করলাম।ও অনবরত জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে আমি উত্তর না দিয়ে ওকে নিয়ে উপরে এসে জুতা খুলে ওকে নিয়ে ওর রুমে গিয়ে ওকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।তাও ও কথা বলেই যাচ্ছে। তাই চুপ করাতে একটা কিস করে কিছুক্ষণ পর ওকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম ।(ইফরাজ)

*********(চলবে)********