দেওয়া নেওয়া সানাই পর্ব-০৬

0
289

#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব:6
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

Good morning সোনাপাখি বউটা।(ইফরাজ ঐশানীর গালে কিস করে)

ইয়াক ছি ইফরাজ মুখ না ধুয়ে কিস করলেন কেন?(ঐশানী উঠে গাল মুছে)

গালে একটা কিস করছি তাও মুখ ধুয়ে করতে হবে?(ইফরাজ উঠে বসে)

কিস করতে বলছেই বা কে আপনাকে।সরেন উঠি সকাল আটটা বাজে সবাই নিশ্চিত উঠে গেছে।(ঐশানী )

আচ্ছা যাও।(ইফরাজ আবার শুয়ে)

কালকে রাতে আপনি কেন বললেন আপনার সাথে জদি আর আমার দেখা না হয় তাই আমার কাছে থাকবেন আপনি?এটাই আপনার শেষ আবদার বলেন কেন বললেন?(ঐশানী ইফরাজ এর দিকে ঘুরে)

মজা করে বলছি।আসলে ওমন করে না বললে তুমি আজকে আমার সাথে থাকতেনা।দাদাজান এর কাছে চলে যেতে।সেই জন্য বলেছি।(ইফরাজ)

আপনার কি কিছু হয়েছে ইফরাজ প্লিজ বলুন।আমার থেকে লুকাবেন না প্লিজ?(ঐশানী ইফরাজ এর হাত ধরেই)

আরে বউ কিছু হয়নি।সত্যি আমি মজা করেছি।(ইফরাজ উঠে বসে)

সত্যি তো মজা করছেন?(ঐশানী)

সত্যি মজা করছি।(ইফরাজ)

আমার কসম খেয়ে বলেন যে আপনি মজা করেছেন?(ঐশানী)

আমি কি চোর নাকি ডাকাত কসম খাবো কেন?এইসব ফালতু কথা বলবা না।আমি সত্যি মজা করেই বলেছি।যাইহোক তোমাকে এত্ত উদ্বিগ্ন লাগছে কেন?আমার জন্য টেনশন হচ্ছে?প্রেমে পড়ার লক্ষন দেখছি আমার বউ এর?(ইফরাজ ঐশানীর কাছে এসে)

সরেন ব্রাশ করে আসেন খচ্চর পাবলিক।
বলেই আমি ওনার হাত ছেড়ে ওয়াশরুম এ দৌড়ে গেলাম। নাহলে উনি ঢুকলে এক ঘন্টা লাগাবে।আমি জলদি ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে নিলাম।তারপর বের হতেই দেখি ইফরাজ ওয়াশরুম এর সামনে দেওয়াল এ হেলান দিয়ে মোবাইল টিপছে।(ঐশানী)

বউ মোবাইল টা চার্জ দাও।আমি শাওয়ার নিবো একটা টাওয়াল আর শটস দাও।(ইফরাজ বলেই ওয়াশরুম ঢুকে গেলো)

কিছুক্ষণ পর

ইফরাজ আপনার টাওয়াল আর শটস নিন।(ঐশানী)

আমি টাওয়াল এর সাথে ঐশানী এক প্রকার জোর করে ওয়াশরুম এ নিয়ে আসছি।
দাও গোসল করায়।(ইফরাজ)

আপনি কি বাচ্চা যে আপনাকে গোসল করায় দিব?(ঐশানী রাগ করে)

বাচ্চা যতোদিন না হয় বাচ্চার বাপকেই হেল্প করো।সাবান টা দিয়ে দাও প্লিজ।পিঠে হাত যায়না।(ইফরাজ)

এত্ত বড় হাত পিঠে যায় না এটা বললেই মানতে হবে আমার?(ঐশানী)

ঠিক আছে যায় তাও দাও প্লিজ। একটু সাবান দিতেই তো বলছি রোমান্স তো আর করতে বলিনাই।অন্য সব পুরুষ হলে এত্তক্ষন এ বউ এর সাথে কত্ত রোমান্স করতো।আমি ভালো মানুষ তাই কিছু করলামনা।(ইফরাজ হেসে)

আপনি ভালো মানুষ এটা ও শুনার বাকি ছিলো।উফফফ আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা দেন মাঝোনি টা।(ঐশানী)

মাঝোনি কোই পাবো?(ইফরাজ)

সাবান দিবো ঐটা দেন।(ঐশানী)

ওরে ঢং সোবা এটা মাঝোনি আবার কি?দাঁত মাঝে মাঝোনি দিয়ে।নাও ।(ইফরাজ)

আমি মাঝোনি এই বলি আপনার সমস্যা?(ঐশানী)

না সোনাপাখি বউ কোন সমস্যা নাই।একটা কথা মনে পড়ল বলি?(ইফরাজ)

আমি না করলেও বলবেন। (ঐশানী)

তাও ঠিক।শোন না বউ আমি না তোমার সাবান ঘসার মাঝোনি হতে চাই।(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই মুচকি হেসে)

অসভ্য পুরুষ হাত ছাড়েন। (ঐশানী)

________

সকাল এর ব্রেকফাস্ট করে ইফরাজ আমাকে নিয়ে বাড়ি তে ফিরে আসল।ও সন্ধ্যার দিকে যাবে ইন্ডিয়াতে।তাই আম্মুর থেকে বলে নিয়ে আসল।ওকে এয়ারপোর্ট এ দিয়ে আব্বু আমাকে এই বাসায় দিয়ে যাবে রাতে।ইফরাজ এসে আমাকে নিয়ে মামমাম দের রুমে বসে কফি পান করল।তারপর আমাকে নিয়ে উপরে চলে আসল। যদিও আমি মামমাম এর সাথে থাকতে চাইছিলাম। কিন্ত এই বদমাশ ইফরাজ এর বাচ্চা মামমাম কে বলে আমাকে উপরে নিয়ে আসছে।আমি এসে সোফার উপর বসে টিভি অন করলাম। ইফরাজ ওর রুমে গেলো।(ঐশানী)

সোনাপাখি বউটা একটা কথা বলি প্লিজ রাখো।(ইফরাজ ঐশানীর পাশে বসে)

কি কথা আগে বলেন রাখার হলে রাখব।(ঐশানী)

এই শাড়ি টা পরো তোমাকে শাড়ি পরা দেখতে মন চাইছে।(ইফরাজ)

এত্ত পাতলা শাড়ি আমি পরব জীবনেও না।শরীর দেখা যাবে।(ঐশানী)

আমি এইতো দেখব।এক ঘন্টার মতো পরো তারপর চেঞ্জ করে ফোলো।(ইফরাজ)

না এই পাতলা শাড়ি আমি পরবা না বলেছি যখন পরবনা।(ঐশানী)

প্রতিটা কথা তেই না বলতে হয়।স্বামী হোই তোমার একটা শাড়ি পরতে ও বলতে পারিনা আমি?এই টুকু অধিকার ও নেই আমার?(ইফরাজ)

অবশ্যই বলতে পারেন কিন্ত এই শাড়িটা আমি পরবনা।অন্য কোন শাড়ি থাকলে দেন ঐটা পরি।(ঐশানী)

লাগবেনা থাকো নিজের মতো।(ইফরাজ বলেই হাটা দিলো)

বেয়াদপ বেটা মন চায় এই শাড়ি দিয়া গলাতে জড়ায় মাইরা ফালাই।(ঐশানী শাড়িটা হাতে মুচড়ে)

________

লাঞ্চের পর

সেই সকাল এর পর থেকে ইফরাজ সাহেব এখন ও গাল ফুলায় বসে আছে।একটা কথাও বলে নাই আমার সাথে থাকুক বেটা রাগ করে আমার এই ভালো।আমি গিয়ে ঘুমাই।নিজের রুমে যেতে চাইলেও মন চাইল ইফরাজ এর রুমে যেয়ে ঘুমাই।যাই বেটাকে একটু জ্বালাতন করে আসি।আমি সোজা ইফরাজ এর রুমে ডুকে ওর বেডে শুয়ে পড়লাম। ইফরাজ মোবাইল টিপছিল বেডে শুয়ে।আমার শোয়ার সাথে সাথেই উঠে হেলাল দিয়ে বসল।আমি কোল বালিশ জড়িয়ে কাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
বের হবার আধা ঘন্টা আগে ডাকে দিয়েন।(ঐশানী)

ঠেকা লাগছে আমার?(ইফরাজ ভাব নিয়ে)

অবশ্যই ঠেকা লাগছে আপনার এই।(ঐশানী বসে)

এখানে কি আপনার নিজের রুমে যান।আমি অসভ্য পুরুষ আবার কখন কি করে দেই তখন আবার আপনার কথা শুনতে হবে।(ইফরাজ)

এটা কার রুম?(ঐশানী)

আমার। (ইফরাজ)

আমি আপনার কি?(ঐশানী)

জানিনা।(ইফরাজ)

বলেন আমি আপনার কি?(ঐশানী চোখ বড় করে)

দুর সম্পর্কের বউ।(ইফরাজ)

মানে কি ?(ঐশানী অবাক হয়ে)

মানে আপনাকে তো ধরা ছোয়া যায়না তাই এখন ও আপনি আমার দূর সম্পর্কের বউ। যেদিন ঠিকঠাক সব হবে মানে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক সেদিন কাছের বউ হবেন।(ইফরাজ)

দূর আজাইরা কথা বলাই বৃথা।(ঐশানী বলেই আবার শুয়ে পড়লাম)

এইযে দূর সম্পর্কের বউ পাশের রুমে যান।নাহলে সত্যি এখন অসভ্য পুরুষ হয়ে যাবো।(ইফরাজ)

দূর ছাতার মাথা ঘুমাতে দেনতো।(ঐশানী)

আমি কি এখন এখানে বসে আপনার স্টাইল করে শুয়ে থাকা দেখব?(ইফরাজ)

ইফরাজ এর বাচ্চা সমস্যা কি আপনার?ঘুমাচ্ছি এত্ত কথা কেন বলেন?(ঐশানী বসে চিৎকার করে)

নিজের রুমে যান নাহলে এখন সত্যি আপনাকে না খেয়ে ফেলে অসভ্য পুরুষ এ পরিনত হবো।(ইফরাজ ফিসফিস করে)

রাক্ষস নাকি আপনি?(ঐশানী ইফরাজ এর দিকে তাকিয়েই)

উফফ মেরে বিবিজান এই মুহূর্তে রাগ গুলো দমন করতে চাইছি আপনি কেন এত্ত উতলা হয়ে আমাকে রাগানোর চেষ্টা করছেন?(ইফরাজ)

ঢং কম করেন ইফরাজ বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে এইবার।(ঐশানী)

মেয়েদের মন জদি পুরুষের মনের কথা বুঝতো তাহলে তো হতোই।ঠিক আছে ঘুমান।আমি এই চলে যাই।(ইফরাজ)

আপনার ইচ্ছা।
বলেই আমি শুয়ে পড়লাম।বেশ কিছুক্ষন পর হঠাৎই ইফরাজ আমাকে পেছনের থেকে জড়িয়ে ধরল।আমি কোন কথা না বলেই চুপচাপ শুয়ে থাকলাম।থাকুক না কিছু সময় তার নিজের মতোন।পারিনাই হয়তো ভালোবাসতে কিন্ত তার অধিকার থেকে কত্ত আর দূরে রাখব।পুরুষ মানুষের মন নিজের ভালোর জন্য হলেও ধরে রাখতে হয় হোক ভালোবাসে নাহয় আপসে।সে যতোটুকুন আমাকে ভালোবাসে তা হয়তো আমার কারণে দমন ও করে নেয়।উনি আরো কিছুক্ষণ এভাবেই থেকে উঠে চলে গেলো।কেনো তা বুঝলাম না।চোখ খুলতেই দেখি আলমারির থেকে জামাকাপর নামিয়ে বেডের এক সাইট এ রাখছে।আমি উঠে বসে ওনার দিকে তাকিয়েই থাকলাম। উনি ওনার মতো ব্যাগে শার্ট পেন্ট নিয়ে নিচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।
কি হয়েছে ইফরাজ?(ঐশানী)

কিছুনা।(ইফরাজ)

রাগ করে আছেন এখন ও?(ঐশানী)

না রাগ করব কেন?আমি আমার অধিকার এর বাইরে গিয়ে সব কাজ করে ফেলি।তাই রাগ করার কোন মানেই হয়না।(ইফরাজ বেডে বসে)
_______

বিকেল পাঁচটা বাজে

ইফরাজ তখন জামাকাপর গুছিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।এই পাচঁমিনিট হলো ঘরে আসছে।আমি জলদি ওর দেওয়া শাড়িটা পরে নিলাম।চুল গুলো খোলা রেখে ঠোঁটে হালকা নুড লিপস্টিক দিলাম।হালকা বেবি পিংক এর সিফন শাড়িটা শরীর এর সাথে মিশে আছে।এতে পেট দেখা যাচ্ছে।আমি শাড়ির আচল ভাজ করে নিলাম যাতে একটু হলেও ডাকা যায়।ইফরাজ রুমে বসে কফি খাচ্ছে। আধা ঘন্টার পর বের হবে।আমি রেডি হয়ে সোজা ওর রুমে এসে ওর পাশে বসে পরলাম ডিভানের।ও কফি খেতে খেতে আমার দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে তাকালো সাথে সাথেই।
কি হলো দেখেন আপনার দেওয়া শাড়ি পরলাম ভালো করে দেখেন।(ইফরাজ এর হাত ধরেই ঐশানী)

আমার ভালোবাসাতে কি কোন ক্ষুধার্ত মনোভাব প্রকাশ পায় তোমার কাছে ঐশানী?(ইফরাজ ঐশানীর চোখের দিকে তাকিয়েই)

আমি এমন কখন বললাম?(ঐশানী)

তাহলে এমন ভাবে শাড়ি কেন পড়লা?তুমি আমার বউ না কোন ___।আমার সামনে বউ এর মতো এই থেকো।ভালবাসি বলে তা ঐভাবে প্রকাশ না আমি কোনদিন করেছি না করব।কিস করেছি শুধু সেখানে কোন হিংস্রতা ছিলো বলে আমার মনে পড়ছেনা।তাহলে কেন কি কারণে তুমি নিজেকে আমার সামনে এইভাবে প্রদর্শন করলা বলো?(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)

বুঝলাম না আপনাকেতো বললাম তখন এই শাড়ি পড়লে পুরো শরীর দেখা যাবে।এত্ত পাতলা এটা।(ঐশানী)

তো ফুলহাতা টপস পরে শাড়ি পড়তে।এত্ত চিকন হাতার টা কেন পড়লা?(ইফরাজ)

ওমা এটাই ছিল আমার কাছে এই শাড়ির সাথে মেচিং তো আমি কি করতাম।(ঐশানী)

যাও চেঞ্জ করো।এই শাড়ি পড়া লাগবেনা।(ইফরাজ)

কেনো দেখেন ভালো করে তারপর চেঞ্জ করব।কত্ত কষ্টে শাড়িটা পড়লাম। (ঐশানী)

এটা পড়া না পড়া একি সমান।পাল্টে আসো।(ইফরাজ ঘুরে বসে)

আবার রাগ দেখালে তখন মাথা ফাটায় দিবো বেয়াদপ বেটা।(ঐশানী বলেই পাশের রুমে চলে আসল)

আধা ঘন্টার পর আমরা এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।এক ঘন্টার পর এয়ারপোর্ট পৌঁছে ইফরাজ কে বিদায় দিয়ে আব্বু আমাকে আমাদের বাড়িতে রেখে চলে গেলেন।
পরের দিন থেকে এই খান থেকেই ক্লাস করতাম মাঝে মধ্যেই। ইফরাজ গিয়ে কল করে কথা বলেছিল পরের দিন ভোরে।ঘুম জড়ানো কন্ঠে কথা বলছিলো অনেকক্ষন।ওর কথা শুনতে শুনতে আমিও ঘুমায় যাই।প্রতিদিন কল করে আধা ঘন্টার পর পর এই।সারাদিন কি কি করি সব খবর নেয় আবার ও কি কি কিনল তাও বলে।
আর এভাবেই এক সপ্তাহ পার হয়ে যায়।ইফরাজ আসবে আজকে তাই আমার বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে একেবারেই ভার্সিটিতে যাই।ভার্সিটির থেকে বাড়ি ফিরে আসি ইফরাজ এর।(ঐশানী)

********(চলবে)*******