দেওয়া নেওয়া সানাই পর্ব-০৭

0
294

#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব:7
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

(রোমান্টিক পার্ট ভালো না লাগলে ইগনোর প্লিজ)

ভার্সিটির থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে দুপুর এর খাবার খেয়ে উপরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।মাথা ভিশন ব্যাথা করছে।ইফরাজ বারবার ফোনে বলেছে এত্তটা পথ এই গরমে যেনো রিক্সাতে না আসি।সিএনজি বা টেক্সি দিয়ে আসি।কিন্ত দুপুর টাইম রিক্সা পাওয়া ও যাচ্ছিলো না তেমন সিএনজি আর টেক্সি তো দুরেই থাক।তাই কিছুটা হেটে একটা রিক্সা নিয়েই বাড়ি ফিরে আসছি।ঘুম ভাঙ্গল ইফরাজ এর কন্ঠে।আমি ধীরে ধীরে তাকাতেই দেখি ইফরাজ খালি গায়ে দাড়িয়ে মাথা মুছছে আর ফোনে কথা বলছে।
কখন আসলেন?(ঐশানী উঠে বসে)

পরে কল করছি।আধা ঘন্টার মতো হলো আসছি।তুমি আমাকে আনতে গেলেনা কেন বউ?(ইফরাজ ঐশানীর পাশে বসে)

শরীর টা ভালো লাগছিল না।মাথা ব্যাথার কারণে ঘুমিয়ে গেছিলাম।শাওয়ার নিয়েছেন?(ঐশানী)

হুম।(ইফরাজ)

তো গেঞ্জি কোই পরেন।এমন ভাবে বডি দেখানো লাগে কেন সব সময়ই?(ঐশানী)

পুরুষ মানুষ আমি বডি দেখালেই কি আর না দেখালেই কি।আমি তো আর তুমি না যে বডি দেখাতে পারবনা।(ইফরাজ ফিসফিস করে)

আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেল আপনার অসভ্যতামি।(ঐশানী ইফরাজ দিকে রাগি লুক দিয়ে)

অনেক মিস করেছি সোনাপাখি বউটা।একটু জড়ায় ধরি?(ইফরাজ)

আপনি এত্ত ভদ্র কবের থেকে হলেন?জিজ্ঞেস করে জড়ায় ধরতে চাইছেন।(ঐশানী)

জিজ্ঞেস করলেও দোষ না করলেও দোষ।যাইহোক কেমন আছো?(ইফরাজ ঐশানীকে জড়িয়ে ধরে)

আলহামদুলিল্লাহ ভালো ছিলাম কিন্ত এখন মাথা ব্যথা করছে অনেক।(ঐশানী)

আব্বুকে বলে একটা ঔষধ খাইতা।(ইফরাজ )

চা বা কফি খেলেই ঠিক হয়ে যাবো।ইফরাজ প্লিজ গেঞ্জি পরে তারপর নাহয় জড়িয়ে ধরেন।(ঐশানী)

কেনো এভাবে সমস্যা লাগছে তোমার?(ইফরাজ সরে বসে)

না মানে কেমন কেমন যেন লাগছে।(ঐশানী মাথা নিচু করে)

আচ্ছা শোন না কফি বানাও না তোমার আর আমার জন্য ও।কফি খেয়ে একটু ঘুমাব অনেক ট্রায়াড লাগছে।(বেডে উপর শুয়ে ইফরাজ)

আচ্ছা।
তারপর আমি এসে কফি বানিয়ে নিলাম। খাবার আমরা নিচেই খাই।কিন্ত এখানে ও খাবার এর অনেক কিছুই থাকে।ইফরাজ এর জন্য এই।কফি বানিয়ে রুমে এসে দেখি ইফরাজ চোখ বন্ধ করে আছে।আমি কাপ গুলো টেবিল এ রেখে ওনার পাশে বসলাম।
ইফরাজ কফি খাবেন উঠেন।(ঐশানী)

হুম ঘুম পাচ্ছে। তুমি খাও কফিটা তারপর আমার কাছে আসো।অনেক দিন তোমাকে জড়িয়ে ঘুমাইনা।(ইফরাজ চোখ খুলে)

এত্ত কফি আমি খাবোনা।আপনার টা আপনি খান উঠেন।(ঐশানী ইফরাজ এর হাত টেনে)

একটু ঠান্ডা হোক।কফি খেতে খেতে মাথায় হাত বুলিয়ে দাওতো।ঘাড় ব্যথা করছে।কফি খাওয়ার পর ঔষধ দিয়ে দিও।(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)

আচ্ছা।
ওনার কথা মতো আমি ওনার চুল টেনে দিলাম। কফি প্রায় অর্ধেক শেষ হতেই উনি বসে ওনার কাপের কফি শেষ করে আবার শুয়ে পড়লেন।আমি কাপ রেখে এসে ওনার পিঠে ঔষধ মালিশ করে দিলাম। এরই মধ্যেই উনি আবার ঘুম।বেচারা খুব ট্রায়াড তাই কিছুক্ষণ পর পর ঘুমিয়ে যাচ্ছে। আমি উঠে গেঞ্জি আর প্লাজো নিয়ে ওয়াশরুম ঢুকলাম শাওয়ার নেওয়ার জন্য। সকালে শাওয়ার নিয়ে বের হলেও ভার্সিটির থেকে এসে শরীর খারাপ এর জন্য আর শাওয়ার নেই নাই।নাহলে দুপুর এই শাওয়ার নিতাম।এখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে ইফরাজ ঘুম তাই শাওয়ার নিচ্ছি নাহলে খুব বকা দিতো।আধা ঘন্টার পর আমি বাইরে এসে জামাকাপর মেলে আসলাম বারান্দার মধ্যেই।তারপর এসে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে আচড়ে নিলাম।এরপর গিয়ে বেডে বসে ফেনের বাতাসে চুল শুকাতে লাগলাম।ইফরাজ এর রুমে এসি আছে।কিন্ত আমি এই রুমে আসলে তা বন্ধ করে দেয় আমার ঠান্ডার সমস্যার জন্য।আমাদের বাড়ির সব রুমে এসি আছে আমার রুমে বাদে।বেশি ঠান্ডা আমার সহ্য হয়না।আমি বেডে হেলান দিয়ে বসে বাড়িতে কল করলাম।আম্মুর সাথে কথা বলছিলাম দাদাজান এর ব্যাপার এ।হঠাৎই ইফরাজ আমার পায়ের উপর মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরল।আমি তাও কথা বলতে থাকলাম।হঠাৎই ইফরাজ এর কান্ডে আমি শকড।
আম্মু পরে কল করব রাখি।ইফরাজ কি করেন এগুলা।(ঐশানী ইফরাজ এর মাথা সরানোর ট্রাই করে)

আদর করি বউ।প্লিজ একটু আদর করি না এমন করো কেন?(ইফরাজ বলেই ঐশানীর উন্মুক্ত পেটে আরো কয়েকটা চুমু খেল)

ইফরাজ ছাড়েন প্লিজ। (ঐশানী)

আমার কাছে আসো(ইফরাজ)

আমি নিচে যাব।
বলেই উঠতে নিবো ইফরাজ আমাকে টেনে তার সাথে জড়িয়ে ধরলেন।তারপর পুরো মুখে চুম্বন এর বর্ষণ শুরো করলেন।গলাতে ছোট ছোট বাইট ও করলেন।আমি বাধা দিতে যেতেই আমার হাত জোড়া তার হাতের মুঠোয় বন্ধি করলেন।আমাকে কথা বলার সুযোগ ও দিচ্ছেন না।(ঐশানী)

_________

রাতের ডিনার টেবিলে

কিরে ইফু ইন্ডিয়ার থেকে খেয়ে ও শুখিয়ে আসলি যে এইবার। প্রতিবারতো পাচঁ কেজি বাড়িয়ে আসিস।এইবার কি হলো যে শুখিয়ে গেলি?(মামমাম ইফরাজ এর হাত ধরেই)

এমনিতেই মামমাম।খেতে দাও খেয়ে ঘুমাতে যাব।অনেক ঘুম পাচ্ছে। (ইফরাজ)

ঐশানী মা তোমার মন খারাপ কেন?(আব্বু)

কোই নাতো আব্বু। আমি ঠিক আছি একটু মাথা ব্যাথা করছে তাই।(ঐশানী হাসার ট্রাই করে)

অনেক ব্যাথা করছে নাকি?(আব্বু)

না অল্প ঠিক হয়ে যাব।(ঐশানী)

খাবার খেয়ে আমি মামমাম এর সাথে সব গুছিয়ে দিলাম। ইফরাজ এখন ও টেবিল এ বসে আছে।আমার কাজ শেষ করে বের হতেই ইফরাজ ও পিছু পিছু আসল।ফ্লাট এর গেট খুলতেই আমি ঢুকে গেলাম।ও গেট লক করে হঠাৎই আমার হাত টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল।
ছাড়েন।(ঐশানী)

সরি সোনাপাখি।(ইফরাজ অপরাধীর সুরে)

যখন যা মন চায় করে সরি বললেই হয়না ইফরাজ। (ঐশানী)

জাস্ট একটু আদর এইতো করেছি সোনাপাখি।আমিতো আর ___ করি নাই।অনেক স্বামী তো জোর করে ঐটা ও করে ।আমি সেই হিসাবে অনেক ভদ্র। (ইফরাজ )

ঐটা আর বাদ দিবেন কেন করে ফেলেন।বারবার মানা করা সত্ত্বেও জোর করেন আবার বলেন আপনি ভদ্র?এই আপনার ভদ্রতার নমুনা।(ঐশানী)

করবোইতো সময় আসুক।এখন শোনো ঝগড়া করার কোন ইচ্ছে নেই আমার। তাই চলো ঘুমাই।এই কয়েকদিন ব্যস্ততার কারণে আর তোমাকে ছাড়া ঘুম হয়নাই।তোমার বিরহে বুড়া হয়ে গেছি।আসো বউ রাগ করে থেকোনা।(ইফরাজ ঐশানীকে জড়িয়ে ধরেই।)

অসভ্য পুরুষ। (ঐশানী)

______

সকালের ব্রেকফাস্ট করে ইফরাজ আমাকে নিয়ে চলল যমুনা ফিউচার পার্কে।ওনার শোরুম এ কালকের ইন্ডিয়ার থেকে আনা এক্সক্লুসিভ লেহেঙ্গা ও শাড়ি দেখাতে নিয়ে আসছে জোর করেই।কালকে এয়ারপোর্ট থেকে ওনার ফ্রেন্ডের সাথে এগুলো শোরুমে পাঠায় উনি বাসায় চলে গেছিলেন।আমাকে শোরুম এ রেখে উনি ওনার আরেক শোরুম এ গেলেন।আমি ঘুরে ঘুরে সব দেখছি এমন সময়ই হঠাৎই একজন এসে আমার হাত ধরল।
আপনার সাহস কি করে হলো আমার হাত ধরার?(ঐশানী চিৎকার করে)

ঐশানী প্লিজ আমার কথাটা শোন।আমার ভুল হয়ে গেছিল প্লিজ মাফ করে দিও।(ফারাজ)

হাত ছাড়েন।(ঐশানী দাঁতে দাঁত চেপে)

প্লিজ একটু কথা বলো এমন করোনা আমি তোমার ফারাজ ঐশানী।(ফারাজ)

চুপ করুন আর একটা কথাও আমি শুনতে চাইনা।আর আপনার সাহস কি করে হলো আমার হাত ধরার।আপনার মতো মানুষকে দেখতে ও আমার ঘৃণা লাগছে।সেই জায়গাতে আপনি কোন সাহসে আমার হাত ধরেন।(ঐশানী হাত ছাড়িয়ে)

প্লিজ ঐশানী আমার কথাটা শোন।(ফারাজ ঐশানীকে ধরার চেষ্টা করে )

আরে মিস্টার ফারাজ যে হঠাৎই এইখানে কি খবর বলুন?(ইফরাজ ফারাজ এর সামনে এসে)

মিস্টার খান আপনার সাথে পরে কথা বলি এখন আমি একটু বিজি আছি।(ফারাজ)

আমার বউ বারবার বলছে ওর থেকে দুরে থাকতে তাও কথা কেন শুনছেননা।(ইফরাজ)

আপনার বউ মানে?(ফারাজ ব্রু কুচকেই)

আমি ইফরাজ এর ওয়াইফ মিস্টার ফারাজ।আপনি দয়া করে নিজের ওয়াইফ নিয়ে হ্যাপি থাকেন। আমার আর আমার স্বামীর থেকে দূরে থাকুন।(ঐশানী ইফরাজ এর হাত ধরেই)

তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?(অবাক হয়ে ফারাজ)

তো কি আপনার বিরহে বসে কেদে জীবন পাড় দিতে বলছেন বুঝি।আপনি বিয়ে না করে চলে যাওয়ার পর এই আমি নিজে ইফরাজ কে বিয়ের কথা বলি আর সে রাজি ও হয়।আপনার মতো মানুষের জন্য আমি কেদে কেটে জীবন পার কেন করব?আপনি বিয়ে করতে পারলে আমি কেন পারবনা।যাইহোক থাকেন আপনি আপনার মতো।ইফরাজ চলো।
বলেই ইফরাজ এর হাত ধরেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম।লিফটে উঠতেই ইফরাজ আমাকে একহাতে ধরলেন।আমার কেন জানি না চাইতেও কান্না আসছে।উনি আমাকে নিয়ে বাইরে এসে গাড়িতে বসলেন তারপর তার সাথে জড়িয়ে ধরলেন।
ও কেন আসল আমার সামনে ইফরাজ কেন আসল?(ঐশানী)

পৃথিবীটা গোল এখানে চেনা মানুষ এবং বিশেষ করে যাকে দেখতে চাইবেনা সেই সবার আগে চোখে পরবে।অতিত টা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো বউ তোমার জন্য এই ভালো।প্লিজ বউ কান্না করেনা।প্লিজ সোনাপাখি বউ টা।(ইফরাজ)

হুম। (ঐশানী)

চলো কিছু খেতে যাই অনেক খুদা লাগছে।(ইফরাজ)

এক ঘন্টা আগে তিনটা পরোটা দুইটা ডিম এক কাপ কফি ঠুসে এখন আবার খুদা লাগছে।খাদক একটা।(ঐশানী চোখ মুছে)

আবার খাবার খোটা দিলা বউ?একটু নাহয় বেশি খাই তাই বলে কথায় কথায় খোটা দিবা?(ইফরাজ)

খেতে পারলে আমি বলতেও পারব।কোন দিন জানি খেতে খেতে পৃথিবীর খাবার টান পরায় ফেলেন।(ঐশানী)

আমার একমাত্র পেট ভরবে তোমাকে খেলে।(ইফরাজ ঐশানীর গাল কামরে)

আহ ছাড়েন ব্যথা পাইতো।(ঐশানী)

তুমি দিয়ে শোধ করে দাও।(ইফরাজ গাল এগিয়ে দিয়ে)

আমি সত্যি ওনার গালে একটা কামর মেরে সরে আসছি।ইফরাজ গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল। (ঐশানী)

*********(চলবে)*********