দেওয়া নেওয়া সানাই পর্ব-০৮

0
290

#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব:8
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

(রোমান্টিক পার্ট ভালো না লাগলে ইগনোর প্লিজ)

আমরা যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে কিছুটা দুরেই একটা রেস্টুরেন্ট এ গেলাম।ফারাজ এর সাথে দেখা না হলে যমুনার রেস্টুরেন্ট এই যেতো ইফরাজ। এই ছেলের এত্ত খুদা কেমনে লাগে আল্লাহ মালুম।রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে একটা টেবিল এ মাত্র বসেছি।হঠাৎই আমার সামনে একজন আসতেই আমি উঠেই তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
কেমন আছো?কত্তদিন পর দেখা?বাংলাদেশে আসলা কবে?কল করলা না কেন?(ঐশানী)

আরে থাম একসাথে এত্ত প্রশ্ন করলে কেমনে বলব?ভালো আছি।এক সপ্তাহ হলো আসছি।কল করছিলাম তোর ফোন অফ ছিলো আমি কি করতাম বল।আর আসার পর থেকে দৌড়ের উপর আছি তাই খালামনির সাথে দেখা করা হয়নি।(হৃদয়)

বসো এখানে।ও তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ও ইফরাজ আমার হাজবেন্ড ইফরাজ ও হৃদয় ভাইয়া আমার ছোট খালামনির ছেলে।(ঐশানী)

হ্যালো হৃদয় ভাইয়া।(ইফরাজ)

হাই।এই ঐশানী ফারাজ কোথায়?ওর জায়গাতে অন্য কেউ কেন?(হৃদয় ফিসফিস করে)

ওর কথা আমার সামনে বলবা না প্লিজ। (ঐশানী)

ও ভাইয়া ফারাজ অন্য কোথাও বিয়ে করেছে তাই আপনার বোনকে আমি বিয়ে করে নিয়েছি।কিন্ত কেনো আমাকে পছন্দ হয়নি?(ইফরাজ মুচকি হেসে)

না তেমন কিছুনা।আচ্ছা চলো আমাদের বাসায় আম্মু ভিশন খুশি হবে।(হৃদয়)

আজকে না অন্য কোনদিন যাবো।তুমি এই চলো আমাদের বাসায়।(ঐশানী)

নারে তোর ভাবির জন্য কিছু চাইনিজ খাবার কিনতেই আসছিলাম ওগুলো নিয়ে যাচ্ছি। ঠান্ডা হলে খেতে মজা লাগবে না।ভাইয়া ঐশানী কে নিয়ে একদিন আমাদের বাড়ি আসবেন।(হৃদয়)

ঠিক আছে আপনিও আসবেন।(ইফরাজ মুচকি হেসে)

আচ্ছা আসিরে।বাসায় আসিস।(হৃদয় ঐশানীর উদ্দেশ্য)

ওকে।(ঐশানী)

কিছুক্ষণ পর

এত্তগুলো খাবার কে খাবে ইফরাজ?(ঐশানী কপালে হাত দিয়ে)

তোমার জামাই খাবে টেনশন নিও না।তুমি তোমার যত্তটুকু মন চায় খাও।(ইফরাজ)

ইফরাজ দুইটা বার্গার,দুইটা কোল্ড কফি,অনথন,সুপ,আবার কোক এসব অর্ডার করছে।এত্ত কেমনে খায় তাও এক ঘন্টার আগে ব্রেকফাস্ট করে।আমি কোনরকম একটা বার্গার আর কোল্ড কফি খেয়েছি।বাকি সব ইফরাজ সাভার করে দিয়েছে।খাওয়ার পর আমরা বের হয়ে আসলাম। ইফরাজ ড্রাইভ করছে আমি সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি।হঠাৎই ইফরাজ এর কথাতে আমার ভিষন হাসি আসল।
হিংসুটে কেন আপনি এত্ত?হৃদয় আমার ভাইয়া হয়।চার বছর পর ফ্রান্স থেকে আসছে।এত্তদিন পরে দেখা হয়েছে একটু হাগ করছি তাই নিয়েও হিংসা হয়?(ঐশানী)

হিংসা হতোনা যদি আমাকে ও একটু আদর করতা।হৃদয়কে জড়িয়ে ধরলা তা নিয়ে আমি কিছু বলছিনা।মানে খারাপ ভেবেছি এমন ও না।খালি বললাম আমাকে একটু ধরোনা কোনদিন?(ইফরাজ)

হিংসুটে পাবলিক।(ঐশানী)

_________

আসার পর আমি শাওয়ার নিয়ে রুমে আসতেই ইফরাজ এসে আমার পাশেই বসল।
কিছু বলবেন?(ঐশানী চুল মুছতে মুছতে)

হুম। (ইফরাজ)

বলেন।
কথাটা বলতে দেরি ইফরাজ আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার গলাতে মুখ গুজলো।
কি করছেন ছাড়েন না।আহ ইফরাজ কামর কেন দেন এত্ত খেয়ে এসেও পেট ভরেনাই এখন আবার আমাকে কামড়াচ্ছেন?ইফরাজ সরেন না।(ঐশানী ইফরাজ কে সরানোর ট্রাই করে)

না।(ইফরাজ)

আহ সরেন তো সারাদিন জ্বালাতন করতে হয় কেন আপনার অসভ্য পুরুষ ।(ঐশানী ইফরাজ এর মুখে হাত দিয়ে)

এক সপ্তাহ দুরে ছিলাম।অল্প অল্প সব আদর পোষায় নিতে হবেতো বউ।এমন দূরে দূরে রাখো কেন?একটা মাত্র জামাই আমি।(ইফরাজ ঐশানীকে নিজের সাথে চেপে ধরে)

মানুষের কয়টা জামাই থাকে?মেয়ে মানুষ পুরুষদের মতো অসভ্য না যে দুই তিনটা জামাই রাখবে।(ঐশানী )

আচ্ছা যাইহোক একটু আদর করব প্রমিচ।(ইফরাজ ঐশানী গালে কিস করেই)

খবরদার সরেন আপনি অনেক অসভ্য।আদর এর নামে আমাকে কামর দেন আমি ব্যাথা পাই।সরেন আমি এখন নিচে যাবো মামমাম কে হেল্প করতে হবে।(ঐশানী)

সোনাপাখি বউটা একটু আদর করি না?(ইফরাজ)

না না না।
কে শুনে কার কথা অসভ্য ইফরাজ অসভ্যটার মতো করেই যাচ্ছে। (ঐশানী)

আমি ওর গালে কয়েকটা কিস করে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে কোমর জড়িয়ে ধরলাম।এই মেয়েটা এই কয়েকদিন এই আমার নেশা হয়ে গেছে।যেই নেশার থেকে বের হতে মন চায়না।অনেক বেশি ভালোবাসতে মন চায়।ওকে গভীর ভাবে নিজের করে পেতে মন চায়।কিন্ত ওর পারমিশন ছাড়া আর যাই করিনা কেন আমি ওকে এখন ও স্ত্রী রুপে পেতে চাইছিনা।আমি চাই ও আমাকে ভালোবাসুক তারপর সব হবে।এসব ভাবনার মধ্যেই আমি ঘুমিয়ে গেলাম।(ইফরাজ)

________

আজকে ইফরাজ এর বড় বোন আসবে লন্ডন থেকে।ইফরাজ গেছে তাদের আনতে।আমি যেতে চাইছিলাম কিন্ত ইফরাজ অসভ্য টা আমাকে নিলনা।আমি মামমাম এর সাথে কাজে হেল্প করছি।প্রায় ছয়বছর পর আপুরা বাংলাদেশে আসছে।মামমাম এর খুশি দেখে কে।বিয়ের পর সে আর আসেনি বাংলাদেশ।এত্তদিন পর মেয়েকে দেখতে পাবে একজন মা।এর থেকে খুশির কিছু হতেই পারেনা।
আপুরা আসতেই আমি আর মামমাম নানা রকম খাবার তাদের সামনে দিলাম। আপু এসে বেশ কিছুক্ষন মামমাম কে জড়িয়ে ধরে ছিল।ইফরাজ তা দেখে মুচকি মুচকি হাসছিল।আমার সাথে খুব অল্প কথাই বলল।তবে দুলাভাই অনেক আলাপ করলেন।তারা ফ্রেস হতেই তাদের সন্ধ্যার নাস্তা দিলাম। আপু আমাকে তার পাশে বসিয়ে দিলেন।ইফরাজ তো অনাকে নিয়ে খেলতে ব্যস্ত। (ঐশানী)

কিরে খাবার সামনে তুই না খেয়ে খেলছিসযে?এত্ত ভালো কবের থেকে হলেন?(ইতি)

আমি কি খাদক যে এখন খাব।আমি খেয়েছি দুপুর এ।এখন ও পেট ভরা।তোমরাই খাও।(ইফরাজ)

ও বাবা এত্ত ভদ্র নাকি আমার ভাই?ভালো।ঐশানী তুমি কিছু নিচ্ছ না কেন?(ইতি)

না আমি অবাক হয়ে গেলাম আপনার ভাইয়ের কথা শুনে।কত্ত বড় মিথ্যুক।আপনারা যখন ফ্রেস হচ্ছেন তখন সে রান্নাঘর থেকে এই সব কিছুর থেকে অল্প অল্প খেয়ে এখন কি সুন্দর মিথ্যা বলল।(ঐশানী)

অসভ্য টা এমনি ভাব নেয় ওর দুলাভাই এর সামনে।ওতো ভুলে গেছে আমি ওর বড় বোন।আর যাই করুক না কেন ও খাবার থেকে দূরে থাকার পাবলিক যে না তা আমি জানি।টোকাই একটা।(ইতি)

খবরদার টোকাই বলবানা।(ইফরাজ রাগ করে)

তোরে তো টোকাই আনছি এই জন্য তুই টোকাই এই।জানো ঐশানী তোমার বর কিন্ত আমাদের সত্য কিছু লাগেনা।ওরে আমরা সুন্দর বন থেকে টোকায় আনছি।(ইতি)

খবরদার আমার বউ এর সামনে বানায় কথা বলবানা।(ইফরাজ চোখ রাঙিয়ে)

আরে থাম তুই।শোন ঐশানী সেইবার আমরা সুন্দরবনে বেড়াতে যাই।আমার বয়স তখন তিনবছর।সেখানে ঘুরতে ঘুরতে দেখি একটা বেবি কান্না করছে।তখন আমি আব্বুকে বলে এই অসভ্য টাকে নিয়ে আসি।তোমার কপাল খারাপ এই অসভ্য তোমার কপালে ঝুটছে।(ইতি)

এটাও বলো যে আমি একটা বাদরের কোলে ছিলাম।তুমি বাদরকে আন্টি বলে বলে আমাকে নিয়ে আসছ।এইসব বানানো কথা আমার ছোট ছোট ফ্রেন্ডদের বলছ ওরা বিশ্বাস করছে।এখন সেই গল্প আমার বউ এর কাছেও বলতে হয়।(ইফরাজ)

হুম হুম এটাও ঠিক। (ইতি)

ও তাইতো বলি উনি এমন বাদরের মতো আচরণ করে কেন?কেন যে ওনাকে আনলেন ঐখানে থাকলে তো সুন্দরবনের টারজেন হয়ে যেতো।ভাবতে পারছেন ইফরাজ খান গাছের বাদরদের সাথে।(বলেই হাসতে লাগল ঐশানী)

আসলেই কেন যে আনছি।(ইতি ও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ে)

আজকে ঘরে চলো তারপর দেখাব এই টারজেন কি করতে পারে।(ইফরাজ ঐশানীর সামনে এসে ফিসফিস করে)

_______

রাতের খাবার শেষ করে আপুরা ঘুমাতে চলে গেল মামমাম কে হেল্প করে আমিও উপরে চলে আসলাম।এসে আমি ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম।চেঞ্জ করে এসে শুতেই হঠাৎই ইফরাজ আমার উপর একটা লাফ মারল।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম ।(ঐশানী)

আয়ুউউউউউউউউউ (ইফরাজ চিৎকার করে)

সরেন।(ঐশানী ধাক্কা দিয়ে ইফরাজ কে)

ওমা টারজেন এর টার্গেট তুমি এখন ছাড়বনা তো টারজেন এর মতো রোমান্স করব।(ইফরাজ ঐশানীকে টেনে বসিয়ে)

খবরদার এখন আমি ঘুমাব জ্বালাতন করবেননা।(ঐশানী)

কেনো বাদরের বাদারামী দেখবানা।
বলেই ওকে সুরসুরি দিতে লাগলাম।অনেকক্ষন সুরসুরী দেওয়ার কারণে ও হাসতে হাসতেই কান্না করে দিছে।
আর পিছনে লাগবে?(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)

না প্লিজ সরেন।আর একটু হাসলে আমি মরেই যাব।(ঐশানী)

ওকে ছাড়তে পারি আগে একটা কিস করো।(ইফরাজ)

জীবনেও না।(ঐশানী)

ঠিক আছে বলেই আবার ওকে সুরসুরি দিতে লাগলাম। ও কোন মতে আমাকে ছাড়িয়ে ঘরের মধ্যেই দৌড়াদৌড়ি করছে।ওর পেছনে আমি ও দৌড়ে যাচ্ছি। হঠাৎই ওকে ধরতে গিয়ে আমরা দুইজন এই পরে গেলাম।ও ব্যথার কারণে চিৎকার করে উঠল।কারণ ওর মাথাটা দেওয়াল এ লেগেছে।আমি ও হাল্কা ব্যথা পাইছি কিন্ত আমি ওকে কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে ব্যাথার জায়গাতে ঔষধ দিয়ে দিলাম
সরি সোনাপাখি।(ইফরাজ ঐশানীর দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে)

সরেন ধরবেন না।সারাদিন শুধু পেছনে পরে থাকেন। আপনার জন্য ব্যথা পাইলাম।(ঐশানী মাথায় হাত দিয়ে)

সরি সোনাপাখি।ঠিক আছে ঘুমাও আর জ্বালাতন করবনা।(ইফরাজ সরে বসে)

আপনি কোই ব্যথা পাইছেন দেখি।(ঐশানী)

পাইনিতো।ঘুমাও তুমি।(ইফরাজ)

মেজাজ গরম করবেন না ইফরাজ। কোথায় ব্যাথা পাইছেন দেখি।
উনি ওনার হাত টা দেখাতেই আমি চমকে উঠলাম বেশ খানিকটা ছিলে গেছে।আমি ওনার হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিতেই উনি চোখ বন্ধ করে নিল।
জ্বলে?(ঐশানী)

না।(ইফরাজ চোখ বন্ধ করেই)

ঔষধ দেওয়া শেষ।চলেন ঘুমাই।সকালে উঠতে হবে।(ঐশানী)

আচ্ছা।
তারপর আমি লাইট নিভিয়ে ঐশানীর পাশে শুয়ে পড়লাম। অনেকক্ষণ ওকে না ধরেই শুয়ে ছিলাম।(ইফরাজ)

কেউ চাইলে আমাকে ধরে ঘুমাতে পারে আমি রাগ করবনা।(ঐশানী)

থ্যাঙ্কস সোনাপাখি বউ।
বলেই ওকে জড়িয়ে ঘুম দিলাম। (ইফরাজ)

**********(চলবে)*********