দোটানা ২ পর্ব-০৪

0
497

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_০৪

সায়ান ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর করতে লাগলো,একের পর এক ম/দ্যের বোতল খালি করছে,আর ওগুলা ছুড়ে ফেলে ভাঙছে।রিফাত ওকে আটকাটে ব্যস্ত।

সায়ান কি করছিস ভাই অফ যা।এতো খেলে যে শরীর খারাপ করবে তোর।

ছাড় রিফাত শরীর খারাপ করে আর হবে কি?ওই ফকিন্নিটা আমার জীবন খারাপ করে দিচ্ছে। আমার বউ হবার সপ্ন দেখে দু’টাকার ফকিন্নি। ওই ফকিন্নির জন্য আজ জীবনে প্রথমবার ডেড আমার উপর হাত উঠিয়েছে।ছাড়বোনা ওই সস্তা মেয়েকে আমি।

দেখ মাথা গরম না করে তুই তোর বাবার সাথে কথা বল শান্ত ভাবে,আমার মনে হয় উনি বুঝবেন।

তুই কি জানিস আমার ডেডকে?ডেড ওই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইছে কারন ওই কাগজে আমার সাইন আছে আর জানিস যদি আমি এখন উনার কথা না শুনি তবে আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিবে,আমার সবকিছু নিয়ে নিবে আর এসব ব্যতীত কি আছে আমার বল?উইথ আউট মাই ডেড আই এম নো ওয়ান ইউ নো দেট ভেরি ওয়েল।আমাকে বাধ্য হয়ে ফ্যামিলি বিজনেস দেখতে হবে তখন আর তুই জানিস আমার মেন্টালিটি মোটেও ওই আয়ানের মতো না।

যদি সায়ান বিয়ে না করে তবে আমি ওর পকেট খরচ বন্ধ করবো,ওর কাছ থেকে সব আভিজাত্য কেড়ে নিবো তখনি ও ঠিক লাইনে আসবে।

ভাইয়া আমরা একটু বেশি রূঢ় হচ্ছি ওর সাথে।ওই বয়সে আমরা কি করেছি মনে আছে তোর।দেখ আমার মনে হয় ওর সাথে শান্তভাবে কথা বলা দরকার আমাদের, এভাবে জোর করে বিয়ে দেওয়া না তো ওর জন্য ভালো হবে আর না তো আরুশির জন্য।আমরা সায়ানকে ভালো করে জানি,ওকে জোর করে কিছু করানো মানে বিপরীতে পস্তানো।

তুই মুখ বন্ধ কর নিহান,এই তোদের সায় পেয়ে আজ ওর এই হাল।সারাদিন মেয়েবাজি করে বেড়ায়।যখন তখন ওকে ক্লাবে ক্লাবে পাওয়া যায়।আমাদের সোনাম যতোটা আয়ান ছড়াচ্ছে ততোটাই সায়ান মারছে,না আছে তার কোনো সত্য জ্ঞান আর না আছে দায়িত্ব জ্ঞান।

আমরা বুঝতে পারছি আপনার কথা নিরব স্যার।কিন্তু এখনও ওরা বাচ্চা, বাচ্চামোতে ভুল করে গেছে সায়ান,তাই বলে ওর সাথে জোর করে কিছু করা ওর আর আরুশির জন্যই খারাপ হবে আমার মনে হয়।দেখেন ও ফিরে আসলে আমি ওর সাথে কথা বলবো, এর আগে আপনারা কেউই ওকে এ বিষয় নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না দয়া করে।
________________

সায়ান আর বাড়ি ফিরলো না রাতে।পরদিন সকালে নিধী সুন্দর একটা থ্রিপিচ পরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসছিলো তখন সাইড দিয়ে আয়ানও যাচ্ছিলো,আরুশি ওর দিকে আর না তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে গেলে আয়ান আলতো করে পা বাড়িয়ে ওকে ল্যাংচি মারে যাতে আরুশি গড়িয়ে পরে সিঁড়ির নিচে,অনেক ব্যাথা পায় সে হাতে আর কোমড়ে,নিচে তখন কেউ নেই,আয়ান উপরে দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে উপহাসের দৃষ্টিতে,আরুশি অল্পক্ষণ বিনা বাক্যে ওর দিকে তাকালো,অতঃপর চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো,বড় মা ছোটো মা বলে ডাকছে আর চিৎকার করে কাঁদছে,যতোটা না ব্যাথা পেয়েছে তার চেয়ে দিগুণ কষ্টের ভান করে চিৎকার করছে।আরুশির এমন কান্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো আয়ান,আরুশির চিৎকারে অল্পক্ষণে সেখানে চাকরবাকর সব জরো হলো,নিধী আর কথা দৌড়ে আসলো রান্নাঘর থেকে,আয়ানের ভাগ্যভালো নিহান নিরব কোনো এক কারনে বাড়ির বাইরে কোথাও গেছে বর্তমানে। নিধী কথা ছোটে এসে আরুশিকে উঠালো,আরুশি এমন ভাব করছে যে উঠতেই পারছে না।নিধী কথা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো ওকে।

কি হয়েছে মা কিভাবে পরে গেলে তুমি?

মায়েরা গো,বড় মা,ছোটো মা আপনাদের ছেলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে, আমি তো একদম পাশ কেটে আসছিলাম তাও উনি জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলছেন আমায়।

ওই ফালতু মেয়ে,তোমার সাহস তো কম না,আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দাও। আমি তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে কেনো যাবো?ছুটো মা বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু করি নি ও মিথ্যে বলছে।

না গো মা,উনি খুব জোরে ধাক্কা দিয়েছেন আমায়,নইলে আমার উনার সাথে কি শত্রুতা যে আমি উনাকে মিথ্যা অপবাদ দিবো।

ইউ ব্লা/ডি স্টুপিড পুওর।আজ আমি তোমাকে।আয়ান ক্ষেপে আরুশির দিকে তেড়ে যেতে নিলে নিধী ওতে বাঁধা প্রদান করলো।

স্টপ ইট আয়ান।সরি বলো ওকে।

ছুটো মা,তুমি ওই ফালতু মেয়ের জন্য আমার সাথে রুড বিহেইভ করছো?তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না?

সরি বলো আয়ান।

কিন্তু মা।

সরি বলো।

নিজের মা থেকেও বেশি ভালোবাসে আয়ান নিধীকে,সায়ানের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য, নিধীর কথার বিরুদ্ধে ওরা কখনো যায় না।তাই আর কথা বাড়ালো না আয়ান,ছোটো মায়ের সম্মানে দাঁতে দাঁত চেপে আরুশির দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে সরি বলে চলে গেলো,আরুশি দুই মায়ের অগোচরেই আয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,যাতে আয়ানের ঘা রাগে আরও জ্বলে উঠলো,কোনো মতে রাগ দমন করে অফিস চলে গেলো সে।

সায়ান আসলো বাড়িতে ঘুমরো মুখ করে,চোখ দুটো লাল হয়ে আছে,উষ্ণ খুষ্ক তার চুল। সারারাত ঘুম হয় নি মুখ দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট।গেট দিয়ে ঢুকছিলো সে আরুশি তখন বারান্দার এক কোনে পা দুলিয়ে বসে আপেল খাচ্ছিলো তখনি সায়ানকে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে মনের সুখে গান তুললো।

বধু বেশে কন্যা যখন এলো রে, যেনো দুঃখের বন্যা বয়ে গেলো রে।এদিকে কারো যেনো গা জ্বলে গেলো রে,ও হো হো হো।

সায়ান বুঝতে পারলো আরুশি ওকে ব্যাঙ্গ করে গান গাইছে।যা গায়ে মাখতে পারলো না একদম সে,তেড়ে এসে আরুশির থুতনী চেপে ধরলো সায়ান।কটমট করে বলতে লাগলো।

ইউ বেগার,এখনও যাস নাই এখান থেকে,উপর থেকে আমাকে ব্যাঙ্গ করছিস।

সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে একটু দূরে সরালো আরুশি তারপর নিজের হাতে নিজেই খামছে চিৎকার করলো বড় মা ছোটো মা বলে।সায়ান কিছু বুঝে উঠার আগেই কথা নিধী আরুশির জন্য অস্থির হয়ে বেড়িয়ে এলো ঘর থেকে।

কি হয়েছে মা আরুশি।নিধী বললো।

আরুশি হেঁচকি টেনে কেঁদে কেঁদে বললো।

মা গো আমি এখনও যাই নি বলে ও আমাকে মেরেছে,দেখো খাঁমছি দিয়ে আমার হাতে রক্ত ফুঁটিয়েছে।

কেঁদে নেয়ে একাকার আরুশি,এদিকে সায়ানের অবাকত্বে চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো।

এই মেয়ে আমি তোমায় মারলাম কখন?মিথ্যুক মেয়ে।

দেখেন মায়েরা আমাকে কিভাবে বকছে,আমি কি আর নিজে থেকে নিজেকে খামছি দিবো বলেন আপনারাই।

হ্যাঁ তুমি তো নিজেই নিজেকে খাঁমছি দিলে,বেয়াদব মেয়ে নাটক কেনো করছো এখন?

সাট আপ সায়ান।আসলেই আমাদের সায় পেয়ে তোমরা দুজনই মাথায় উঠেছো,ও গরীব হলো বলে কি পাপ করেছে যে তোমরা দুই ভাই ওর প্রাণের শত্রু হতে চলেছো।এ কথা ভুলেও যেয়ো না সায়ান কথা আর আমারও কিন্তু বিয়ের আগের পরিচয় আরুশির পরিচয়ই ছিলো।তাই ওকে অসম্মান করা মানে আমাদের অসম্মান করা,আশা করি কথাটা মাথায় থাকবে তোমার,এ বিষয়ে তোমার সাথে আমি পরে কথা বলে নিবো এখন চুপচাপ ঘরে যাও।তেজি স্বরে কথাগুলো বললো নিধী।

সুইট মম তুমিও আমায় বকলে!

তুমি সে অবস্থা নিজেই সৃষ্টি করেছো সায়ান।এবার ঘরে যাও।

সায়ান আর কিছু না বলে রাগে কটমট করতে করতে ঘরে ঢুকে গেলো।

রুমে গিয়ে বেডের কোনে সজোরে লাথি মারলো সায়ান অতিরিক্ত রাগে,তারপরও রাগ দমনে ব্যস্ত হওয়ায় দেয়ালে পর পর কয়েকটা ঘুষি মেরে ভয়ার্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলো। ছাড়বোনা আরুশি তোমাকে মনে রেখো।তোমার জন্য ডেড আমার উপর হাত উঠালো তোমার জন্যই আজ আমার সুইট মমও আমায় বকলো।কি মনে করো তুমি ছোটো ছোটো খেলা খেলে তুমি সায়ান চৌধুরীর সাথে টক্কর নিবে,নো আরুশি।তোমাকে তো আমি দেখাবো আসল খেলা কাকে বলে।
____________________

আয়ান রাগে আজ অফিসে কোনো কাজেই মন বসাতে পারছে না,এটা ওটা নিয়ে শুধু শুধু সবার উপর ক্ষেপছে।মেনে নিতে পারছে না আজ একটা গরীব সস্তা মেয়ের কাছে আয়ান চৌধুরীকে সরি বলতে হয়েছে।

তুমি আয়ান চৌধুরীকে টক্কর দেওয়ার সাহস ঝুটিয়েছো সস্তা রাস্তার মেয়ে।এবার আয়ান চৌধুরী দেখাবে তোমাকে এই আয়ান চৌধুরী আসলে কি।আমাকে সরি বলানোর সখ না মিটিয়েছি তবে আমার নামও আয়ান না।

চলবে……..